২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতের কাশ্মির নীতির সমালোচনায় ওআইসি

কাশ্মির
ওআইসির সভায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ - ছবি : এনডিটিভি

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সফরের একদিন পরেই ভারতের কাশ্মির নীতির সমালোচনা করল অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি)। ৫৭টি দেশকে নিয়ে তৈরি এই সংগঠনটি বলল, ২০১৬ সাল থেকে কাশ্মিরে আরো বেশি বর্বর আচরণ করছে ভারত। এছাড়া নিজেদের বক্তব্যে ভারতীয় সন্ত্রাসবাদের মতো শব্দও ব্যবহার করেছে তারা।

ওআইসি আরো বলেছে, ভারতীয় বাহিনী অকারণে কাশ্মিরিদের আটক করে।

তবে এ নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দিল্লি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, কাশ্মির নীতি ভারতের একান্ত নিজস্ব বিষয়। আমরা আবারো বলছি কাশ্মির ভারতের অংশ এবং এর নিরাপত্তাও ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

ওআইসির সভায় গিয়ে শুক্রবার সন্ত্রাস প্রসঙ্গে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন সুষমা। নাম না বলে পাকিস্তানকে কড়া আক্রমণ করে সুষমা বলেন, যেসব দেশ সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় তাদের বিরুদ্ধে অন্য দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। তার কথায়, আমরা যদি মানবতাকে রক্ষা করতে চাই তাহলে যেসব দেশ সন্ত্রাসকে আশ্রয় দেয়, অর্থ সাহায্য করে তাদের এ ধরনের কাজ করা থেকে সরে আসার বার্তা দেয়া উচিত। সন্ত্রাস এবং চরমপন্থার দুটি আলাদা নাম আছে। কিন্তু এই দুটিই ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে তৈরি হয়।

সুষমার এই ভাষণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাশ্মির প্রসঙ্গে নিজেদের প্রস্তাব পেশ করে ওআইসি। ভারতের সমালোচনার পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রশংসা করা হয় প্রস্তাবনায়।

ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে দ্রুত ফিরিয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রশংসা করা হয় ওআইসির পক্ষ থেকে।

এবারই প্রথম ভারতকে ইসলামিক দেশগুলোর এই সভায় ডাকা হয়েছিল। এরই মাঝে পুলওয়ামার উগ্রবাদী হামলার পাল্টা হিসেবে আজাদ কাশ্মিরে বিমান হামলা চালায় ভারত। তারপর ভারতকে যাতে এই সভায় ডাকা না হয় তার দাবি তুলে ইসলামাবাদ। তবে সেই প্রস্তাব গৃহিত হয়নি। প্রতিবাদে বৈঠকে হাজির হননি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মামুদ কুরেশি। সূত্র : এনডিটিভি

আরো পড়ুন :
ওআইসি প্রতিষ্ঠার অর্ধশত বছর ও মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ০৪ অক্টোবর ২০১৮
১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ২৪টি স্বাধীন ও সার্বভৌম মুসলিমপ্রধান দেশের প্রধানরা মরক্কোর রাবাতে মিলিত হয়েছিলেন। মুসলিম বিশ্বের যৌথ আওয়াজ সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে। তারাই দ্য অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

মূলত এক অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত ইহুদির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণেই মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ সংস্থা গঠনে আগ্রহী হন। ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর সহায়তায় ডেনিস মিচেল রোহান নামের ওই ইহুদি আল-আকসা মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয় তখন দেখা যায় অগ্নিকাণ্ডে সেখানে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমনকি সালাহউদ্দিন আইয়ুবির উপহার দেয়া ৯০০ বছরের পুরনো কাঠ ও হাঁতির দাঁতের তৈরি ভাষণমঞ্চটিও পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায় ুব্ধ হয়ে ওঠে এবং প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ একটি প্লাটফর্ম ওআইসি। এখন সংস্থাটির শুধু ৫৭টি সদস্য রাষ্ট্রই নয়, বরং এতে অনেক অনুমোদিত, বিশেষায়িত ও সহায়ক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। এর বাইরে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান এর মিশন ও দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন দিয়ে থাকে।

সৃষ্টির পর এখন প্রায় অর্ধশতাব্দী পার করেছে ওআইসি। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে সংস্থাটির অর্জন কতটুকু? যেহেতু সংস্থাটির যাত্রাই শুরু হয়েছিল ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাই সবাই মূলত প্রথমেই দেখতে চায় ইসরাইল ইস্যুতে ওআইসির ভূমিকা কী? জেনে রাখা উচিত, ইহুদি কংগ্রেস ১৮৯৭ সালে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। অর্ধশতাব্দীর মধ্যেই তারা সেটি বাস্তবায়ন করে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। মার্কিন এ ঘোষণায় গর্বিত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, একসময় মানুষ ইসরাইলের একঘরে হয়ে যাওয়ার কথা বলত; কিন্তু শিগগিরই দেখা যাবে, যেসব রাষ্ট্র আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখেনি, তারাই বিচ্ছিন্ন বা একঘরে হয়ে যাবে। নেতানিয়াহু এ কথা বলে যেসব রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেন, সেগুলোর অধিকাংশই আরব ও মুসলিম রাষ্ট্র। এ দেশগুলো ফিলিস্তিনে ইসরাইলি রাষ্ট্র স্থাপনের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। কেন তারা বিরোধিতা করেছিল? কারণ অধিকাংশ ইসরাইলিই ছিল ভিন্ন অঞ্চলের। তারা নানা কারণে ফিলিস্তিনে এসেছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। তারা আসার পরপরই ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোতে হামলা চালিয়ে নতুন আগন্তুকদের জন্য জায়গা তৈরি করছিল এবং সেখান থেকে স্থানীয় লোকজনকে বের করে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। এর ফলে সে সময় বড় ধরনের শরণার্থী সঙ্কট তৈরি হয়েছিল।

যখন ওআইসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন তার সনদে উল্লেখ করা হয়েছিল, এটি জেরুসালেমসহ পবিত্র স্থানগুলোর রক্ষাকারী হিসেবে কাজ করবে এবং নিজেদের অধিকার ও ভূমির অধিকার অর্জনে সংগ্রামরত ফিলিস্তিনিদের সাহায্য-সহযোগিতা করবে। নিজেদের ভূমিসহ অন্যান্য অধিকার রক্ষায় ফিলিস্তিনিদের অন্যের সহায়তার প্রয়োজন পড়ার কারণ ছিল ইসরাইলিরা তাদের দখলকৃত জায়গা থেকে কেবল ফিলিস্তিনিদেরকেই তাড়িয়ে দিচ্ছিল না, বরং তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির জন্যও সেখানে জায়গা প্রস্তুত করছিল। তৃতীয়বারের প্রচেষ্টায় তারা জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ লাভে সক্ষম হয়। এ সময় ইসরাইল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আবারো তাদের পুরনো আবাসস্থলে ফিরতে দেবে, জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে জেরুসালেম বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ এলাকা হিসেবে বহাল থাকবে। ইসরাইলের এসব প্রতিশ্রুতির কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত ওআইসি ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের মর্যাদাপূর্ণ জীবন ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়।

ওআইসি প্রতিষ্ঠার পর আজ প্রায় অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি করা প্রতিশ্রুতির কতটুকু তারা বাস্তবায়িত করতে পেরেছে? ফিলিস্তিনিদের পরিস্থিতি কি ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এখন আরো খারাপ নয়? তাদের অবস্থা কি দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে না? গাজা এখন একটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলি অধিকৃত জায়গায় প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হচ্ছে। সেই সাথে ইসরাইলে থাকা প্রকৃত আরব অধিবাসীদের আজ তাদের ভূমিতেই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য গাজাবাসীকে প্রায়ই সীমান্তে ইসরাইলি বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হতে হচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নির্বিচারে মারা যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। এ অবস্থায় ওআইসির সদস্যরা কী করছে? এখন তারা কেবল ইসরাইলি সেনাদের হাতে কতজন ফিলিস্তিনি মারা যাচ্ছে তার খবরটি প্রকাশ করছে। বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক মুসলিম রাষ্ট্রই এখন ইসরাইলের সাথে হাত মিলিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ওআইসির একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরাষ্ট্র মিসর গাজায় অবরোধ আরোপে ইসরাইলকে সাহায্য করছে। এর ফলে ফিলিস্তিনের এই উপকূলীয় এলাকাটি এখন উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরে এটি ওআইসির কার্যতালিকাতেই তেমনভাবে নেই। ১৯৭৫ সালে ওআইসির সদস্যরাষ্ট্রগুলো জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একটি রেজুলেশন গ্রহণ করিয়েছিল, যাতে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ইসরাইল প্রতিষ্ঠার যে দর্শনÑ ইহুদিবাদ এটি বর্ণবাদেরই সমার্থক। ইসরাইল যেসব জায়গা দখল করে নিয়েছিল, সেসব জায়গার স্থানীয় বা মূল লোকজনের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে দেশটি একপর্যায়ে একঘরে হয়ে পড়ে। ইসরাইলকে তখন সভ্য আচরণ করতে এবং ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের মতো থাকতে দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু ইহুদি রাষ্ট্রটি এ ধরনের উপদেশে খুব কমই কান দিয়েছে। বরং এটি জাতিসঙ্ঘের এ ধরনের নির্দেশের বিপরীতে গিয়ে আগ্রাসী ভূমিকা গ্রহণ করে। এক বছরের মধ্যে ইসরাইল তাদের সাথে মিসরকে যুক্ত করে নেয়, পরে একই পন্থা অনুসরণ করে আরো কয়েকটি দেশ। এরই জোরে সর্বশেষ জাতিসঙ্ঘ ভাষণে গর্বিত নেতানিয়াহু মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে একসাথে কাজ করার উদাহরণ দিয়ে ঘোষণা দেন, এখন ইসরাইল ও অনেক আরব রাষ্ট্র আগের তুলনায় অনেক ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। আমি আমার পুরো জীবনে এ ধরনের চিত্র দেখিনি। আর কয়েক বছর আগেও এ ধরনের চিত্র কল্পনাই করা যেত না।

ইসরাইলের এ ধরনের অগ্রগতি কি বঞ্চিত ও ভাগ্যবঞ্চিত ফিলিস্তিনিদের বিনিময়েই আসেনি? বিশ্বের অন্যান্য অংশের মুসলমানদের মানবতা কি বড় আকারে ফিলিস্তিনিদের প্রতি দায়বদ্ধ নয়? ওআইসির নিজের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা ও তার নিজের সনদের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্নির্মাণে এটিই কি সেরা সময় নয়? এখন ওআইসির অন্তত সেসব সদস্যরাষ্ট্রের অবদানের প্রতি স্বীকৃতি দেয়া দরকার, যারা ওআইসির সনদের প্রতি তাদের জাতীয় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক ওআইসির এ সনদের প্রতি কঠিনভাবে তাদের দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করেছে। মুসলিম বিশ্বের যেখানেই সমস্যা দেখা গেছে, তুরস্ক সে দিকেই এগিয়ে গেছে এবং আলোচনার ডাক দিয়েছে, কখনোবা তা সম্মেলনে রূপ নিয়েছে। কিন্তু ওআইসির সদর দফতর যে দেশে তারা এ ধরনের সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য আকারে অংশ নেয়নি। এ অবস্থায় যে দেশগুলো ওআইসির প্রতিষ্ঠাকালীন নীতি, দর্শন, মিশনের প্রতি কঠিনভাবে দায়বদ্ধ, সেসব দেশে ওআইসির সদর দফতর স্থানান্তর করা প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ সেসব দেশের কথা ভাবা যেতে পারে যেসব দেশে গণতান্ত্রিককভাবে নির্বাচিত সরকাররা ওআইসির মিশন ও ভিশন মেনে চলছে। এ ক্ষেত্রে তুরস্ক, মালয়েশিয়া অথবা পাকিস্তান পছন্দের দেশ হতে পারে।

ওআইসির মিশন ও ভিশনের প্রতি প্রতিশ্রুতির বিষয়টিকে নতুনভাবে আবারো শুরু করার মাধ্যমে ওআইসি নতুন প্রজন্মের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটাতে পারে। আর এর মাধ্যমেই সংস্থাটি মুসলিম বিশ্বের উৎসাহ-উদ্দীপনাকে আবারো জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হবে।
সূত্র : আনাদোলু


আরো সংবাদ



premium cement

সকল