২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতের জবাব দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান সেনাবাহিনী, সীমান্তে সফরে সেনাপ্রধান

সীমান্তে সফরে সেনাপ্রধান - সংগৃহীত

পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর সুরেই এ বার সুর চড়াল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)–এর ডিজি জেনারেল আসিফ গফুর জানান, আগ বাড়িয়ে যুদ্ধে যাবে না পাকিস্তান। কিন্তু ভারত আক্রমণ করলে তারাও ছেড়ে কথা বলবেন না। তার স্পষ্ট কথা, ‘‘ভারত আমাদের চমক দিতে গিয়ে নিজেরাই চমকে যাবে।’’

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপি বাহিনীর উপর হামলার পরে দু’দেশের মধ্যে ফের তিক্ততা বেড়েছে। গোটা ঘটনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর সরকারকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে ভারত। সেই সঙ্গে তাদের অভিযোগের তীর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের দিকে। হামলার কয়েক দিন পরে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম মুখ খোলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। হামলায় ইসলামাবাদের ভূমিকার কথা অস্বীকার করে ইমরান জানিয়েছিলেন ভারত যদি প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানে হামলা করে তা হলে ফল ভালো হবে না। পাল্টা আঘাত করবেন তারাও।

এ বারও পাকিস্তান সেনাবাহিনীও একই কথা বলেছে। তাদের দাবি, কোনো প্রমাণ ছাড়াই হামলার দায় পাকিস্তানের উপরে চাপাচ্ছে ভারত। উল্টে জেনারেল আসিফ এর জন্য ভারতের কাশ্মীর নীতিকেই দায়ী করেছেন। তার কথায়, ‘‘৭২ বছরের ইতিহাস আমাদের। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে তৈরি হয় স্বাধীন পাকিস্তান। ভারত এখনো তা মানতে পারেনি।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি না। কিন্তু ভারত আমাদের চমকাতে চাইলে আমরাই চমকে দেব।’’ একই সঙ্গে শুক্রবারভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে নিশানা করে আসিফ বলেছেন, যুদ্ধ বাধলে তাতে ভারতীয় সাংবাদিকদেরও বড় উস্কানি থাকবে।

তবে মুখে পাল্টা হামলার কথা বললেও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বসবাসকারীদের জন্য গত কাল আলাদা সতর্কতা জারি করেছে পাকিসতআন সরকার। ভারতীয় বাহিনী যদি হামলা করে তার প্রস্তুতি হিসেবে ভিমবের, নীলম, রাওয়ালকোট, হাভেলী, কোটলি, ঝিলম এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা জারি হয়েছে। বলা হয়েছে, রাতে অযথা আলো জ্বেলে না রাখতে, দল করে না ঘুরতে এবং বাঙ্কারের ব্যবহার বাড়াতে।

পাকিস্তানের দিকে পানি যেতে দেবে না ভারত পানিসম্পদমন্ত্রী
রয়টার্স ও এএফপি

পাকিস্তানের দিকে বয়ে চলা নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেবে ভারত। কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার জেরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। গত বৃহস্পতিবার ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি এই তথ্য জানিয়েছেন। বেশ কয়েকটি টুইটে নীতিন উল্লেখ করেন, ‘আমাদের সরকার পাকিস্তানের দিকে যাওয়া নদীর পানির প্রবাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলো থেকে পানির প্রবাহ ঘুরিয়ে নিয়ে তা জম্মু ও কাশ্মির এবং পাঞ্জাবের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।’

পানিসম্পদমন্ত্রী আরো বলেন, ইরাবতী, বিপাশা এবং শতদ্রু নদীর পানির প্রবাহ মুখ ঘুরিয়ে নেয়া হবে। টুইটে তিনি উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যেই ইরাবতী নদীর ওপর বাঁধ দেয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে। ‘আমাদের ভাগের বাকি দু’টি নদীর ওপরও বাঁধ দিয়ে অভিমুখ ঘুরিয়ে দেয়া হবে। সবক’টি প্রকল্পকে জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’

১৯৬০ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান মোট ছয়টি নদীর পানি ভাগাভাগি করে। এর মধ্যে তিনটি নদীর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে ভারতের হাতে। সেই তিনটি নদী ইরাবতী, বিপাশা এবং শতদ্রু। অন্য দুই নদী ঝিলম ও চন্দ্রভাগা পাকিস্তানের দিকে। এছাড়া সিন্ধু নদের পানির সম্পূর্ণ অধিকারও পাকিস্তানের। 
পাকিস্তানের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পানি প্রবাহের বন্ধের সিদ্ধান্ত পুরোপুরিই ভারতের। পানিসম্পদমন্ত্রী খাজা সুমাইল বলেছেন, ‘তাদের দিককার তিন নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। এতে সিন্ধু চুক্তিও ভঙ্গ হবে না।’ তিনি আরো বলেন, গড়কড়ির টুইটে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

তবে ২০ কোটি জনগোষ্ঠীর কৃষিভিত্তিক এই দেশে পানি প্রবাহ বন্ধ হলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন পাকিস্তানের বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত ও পাকিস্তানে তিনটি বড় যুদ্ধ হলেও সিন্ধু পানিচুক্তি অব্যাহত ছিল।

এদিকে ভারতীয় গোয়েন্দারা দাবি করছেন, কাশ্মিরে ফের বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। তাই সতর্কতা ও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

আসিফ জানান, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া শুক্রবার নিয়ন্ত্রণ রেখার আশপাশ ঘুরে দেখেছেন। পাকিস্তান বাহিনী প্রত্যাঘাত করতে কতটা প্রস্তুত সেটাও খতিয়ে দেখেছেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement