২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতে এসে পাকিস্তানের প্রশংসা সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের - সংগৃহীত

ভারত সফরে এসে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসলামাবাদের ভূমিকা অসামান্য এবং এই যুদ্ধে দেশটি তাদের হাজার হাজার সেনাসদস্য ও বেসামরিক মানুষকে হারিয়েছে। সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সফরসঙ্গী হিসেবে ভারতে এসে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তান যথেষ্ট আন্তরিক কিনা এবং সৌদি আরব এই বিষয়ে কি মনে করে- সাক্ষাৎকারে এমন প্রশ্নের জবাবে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের বলেন,‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তান সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে, বিশেষ করে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এবং তারা যখন সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদেরকে দমন করতে গেছে তখন ইসলামাবাদ বিশালসংখ্যক সেনা হারিয়েছে। তাই তারা (ইসলামাবাদ) মনে করে যে, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে তারা মহান আত্মত্যাগ করেছে এবং সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদেরকে দমন করতে তারা সকলরকম প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে।’

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমন করতে বিশ্বের সকল দেশেরই উচিত তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করা।

ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামা জেলায় আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা ও এর জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের জোর দিয়ে বলেন, নয়া দিল্লী-ইসলামাবাদের মধ্যকার উত্তেজনা কমিয়ে আনতে হবে। তিনি আরো বলেন, পারস্পারিক দ্বন্দ্বের বিষয়গুলো সমাধানে আলোচনার পথ বেছে নিতে হবে, আর সেটা হলে বেসামরিক মানুষের জীবনকে আমরা নিরাপদ রাখতে পারবো।

সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘সৌদি আরবের কাছে পাকিস্তান খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ, পাশাপাশি ভারতও সৌদি আরবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই দুই দেশ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তা আমাদেরকে ব্যথিত করে। আমরা বিশ্বাস করি ভারত-পাকিস্তান একে অপরের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশে পরিণত হবে। সৌদি আরব বিশ্বাস করে যে, উপমহাদেশের এই দুই দেশের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বাকি বিশ্বের জন্য একটি বড় হুমকি।’

কাশ্মিরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণ ভারতের কাছে রয়েছে বলে জানানো হলে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘নির্দিষ্ট নিরাপত্তা চ্যানেলের মাধ্যমে এই সকল তথ্য নয়া দিল্লী পাকিস্তানের সাথে বিনিময় করতে পারে এবং আমি বিশ্বাস করি যে, ভারতের হাতে থাকা প্রমাণ ইসলামাবাদের সাথে বিনিময় করবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের আরো বলেন, হামলার বিষয়ে আমরা পাকিস্তানী কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি এবং এই হামলায় তারা জড়িত নই বলে জানিয়েছে।

 

পাকিস্তান-সৌদি আরব বন্ধুত্ব, অস্বস্তিতে ভারত
নয়া দিগন্ত অনলাইন, (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান পাকিস্তান সফর করলেন। সফরের সময় তিনি পাকিস্তানকে কেবল বিপুল অর্থ সহায়তা প্রদান করার কথাই ঘোষণা করেননি। সেইসাথে তিনি কূটনৈতিকভাবেও পাকিস্তানকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছেন। এদিকে কাশ্মিরে ভয়াবহ এক হামলা হয়েছে। এই হামলার প্রেক্ষাপটে সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের এই ঐতিহাসিক সফরকে ভারত কিভাবে মূল্যায়ণ করে তা নিয়ে কলকাতা ভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনটি এখানে প্রকাশ করা হলো।

পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক স্তরে একঘরে করতে আদাজল খেয়ে নেমেছে নয়াদিল্লি। কিন্তু কূটনৈতিকভাবে একঘরে হওয়া দূরস্থান, পুলওয়ামা কাণ্ডের চার দিনের মধ্যে সৌদি আরবের কাছ থেকে দু’হাজার কোটি ডলারের উপঢৌকন পেল ইসলামাবাদ। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাউথ ব্লকের কাছে সবচেয়ে বড় অস্বস্তির বার্তাটি এলো দিনের শেষে। পাকিস্তান ও সৌদি আরবের যৌথ বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, ‘‘জাতিসঙ্ঘ উগ্রবাদী তালিকায় নাম তোলা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়।’’

ভারত যখন মাসুদ আজহারকে ওই তালিকায় আনতে চাইছে তখন এই ধরনের বিবৃতি খুবই অস্বস্তিকর নয়াদিল্লির কাছে। যৌথ বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদ দমনে পাক ভূমিকার ঢালাও প্রশংসা করে ও যৌথ সহযোগিতার কথা বলেও সাউথ ব্লকের রক্তচাপ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন সৌদির যুবরাজ। আর এই জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে আসছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

প্রথম বার পাকিস্তানে গিয়ে যুবরাজ সালমান শুধু দু’হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তিই করেননি, তিনি বলেছেন, ‘‘সৌদি আরবে তিনিই পাকিস্তানের দূত!’’ এর পরে যুবরাজের সংযোজন, পাকিস্তানের ডাকে তিনি ‘না’ বলতে পারেন না। কৃতজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বলেছেন, ‘‘যুবরাজের এই সব কথাই মন জয় করে নিয়েছে আম পাকিস্তানির।’’

প্রশ্ন উঠেছে, ভারতে এত বড় হামলা ও এত প্রাণহানির পরেও সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের প্রশংসা ও বিপুল বিনিয়োগ ঠেকানো গেল না কেন? কূটনীতির লোকজন বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কের ভিত বহু দিন আগে থেকেই মজবুত। পাকিস্তানে উগ্রবাদীদের অর্থ জোগানের ক্ষেত্রেও সৌদি আরবের নাম উঠেছে অতীতে। তা ছাড়া, ওই বিপুল অঙ্কের লগ্নি চুক্তি অনেক আগে থেকেই ঠিক হয়ে ছিল। তবে এটা ঠিক, পুলওয়ামায় জইশ-ই-মোহম্মদের হামলার পর সৌদি-পাক সমীকরণে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ, সৌদি আরব বরাবর ভারতেরও মিত্র দেশের তালিকায়।

রীতি ভেঙে ইমরান নিজে গাড়ি চালিয়ে যুবরাজকে নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে, ২১টি গান স্যালুটে স্বাগত জানানো হয়েছে তাকে— সখ্যের এই সব মুহূর্ত ও বিভিন্ন চুক্তি সইয়ের কথা খবরের শিরোনামে আসার পর থেকেই এই প্রশ্নটা আরো বেশি করে উঠছিল। অবশেষে সোমবার সৌদি আরবের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল জ়ুবেইর দেখা করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির সঙ্গে। ওঠে পুলওয়ামা প্রসঙ্গ। কুরেশি তাকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান।

যুবরাজ সালমানের ভারত সফরের আগে এই মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য (ভারত ও পাকিস্তান) দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানো। আমরা চাই মতানৈক্য দূর করার কোনো শান্তিপূর্ণ পথ।’’ তার মতে, ‘‘দু’টি দেশই সন্ত্রাস-সহ একই ধরনের সমস্যায় রয়েছে। আমরা চাই, দু’দেশই বিরোধ দূরে ঠেলে সমাধানের পথে হাঁটুক।’’

সৌদি যুবরাজ সে দেশের জেলে থাকা ২০১৭ জন পাকিস্তানি বন্দিকে মুক্তি দেবেন বলে জানিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, তার দেশে কর্মরত ২৫ লক্ষ পাক শ্রমিকের অবস্থার উন্নতির বিষয়টি দেখবেন।

কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি মোদি সরকারকে সমালোচনা করে টুইট করেছেন, ‘‘অস্বস্তিকর! কালই যুবরাজ ভারতে আসছেন।


আরো সংবাদ



premium cement