২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে আবারো গোলাগুলি

পাকিস্তানের দিকে গুলি চালাচ্ছে ভারতীয় সেনারা - ছবি : সংগৃহীত

পুলওয়ামা ঘটনার জেরে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে আবারো গোলাগুলি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ভারতের গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশ করা হয়।


ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খানের বক্তব্যের পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৫.৩০টায় অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে নৌসেরা সেক্টরে হামলা চালাতে শুরু করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। গুলির পাশাপাশি তারা মর্টার শেলও ছোড়ে। ভারতও এর জবাবে ভারী গোলাবর্ষণ করে।


দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা এ লড়াই চলে। ৬.২০ নাগাদ এ গোলাগুলি বন্ধ হয়। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকেই হতাহতের বা অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।


তবে এ ব্যাপারে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বা পাকিস্তানের গণমাধ্যমে কোনো কিছু জানা যায়নি।


আরো পড়ুন : ভারতের বিভিন্ন স্থানে কাশ্মিরিদের ওপর হামলা

আনন্দবাজার ও এনডিটিভি, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৯:১২

উত্তরাখণ্ডের দেরাদূন শহরে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন কাশ্মিরের কয়েক জন ছাত্র। পুলওয়ামা হামলার পরই বাড়িওয়ালা তাদের বলে দিয়েছেন, ঘর খালি করতে। বিহারে চাকরি সূত্রে ৩৫ বছর ধরে পটনায় থাকেন কাশ্মিরের বাসিন্দা বসির আহমেদ। পুলওয়ামা হামলার পর আচমকাই কয়েকজন তার বাড়িতে চড়াও হন। ওই হামলাকারীরা বাড়িতে ভাঙচুর চালান এবং তাকেও মারধর করেন বলে অভিযোগ।

পাটনায় কাশ্মিরি ব্যবসায়ীরা এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, উচ্ছৃঙ্খল জনতা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ব্যবসায়ী বসির আহমেদ বলেছেন, ‘একদল লোক লাঠিসোটা হাতে আমার দোকানের সামনে হাজির হয়। তারা শ্লোগান দিতে থাকে। তখনও পর্যন্ত পুলওয়ামার ওই হামলার ঘটনার কথা জানতাম না আমি। কিন্তু তারা দোকানের জিনিপত্র ধ্বংস করে আমাকে ও কর্মচারীদের মারধর করে।’

তিনি বলেন, ‘আমি গত ৩৫ বছর ধরে পাটনায় কাজ করছি, কিন্তু কখনো এ রকম পরিস্থিতিতে পড়িনি। আমি রাজনীতি করি না, আমি এতো ব্যস্ত থাকি যে খবর দেখার সময়ও পাই না।’

পঞ্জাবের অম্বালার একটি পঞ্চায়েত থেকে ফতোয়া জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কারও বাড়িতে কাশ্মিরি কেউ থাকলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের বের করে দিতে হবে।

বিহার ও হরিয়ান থেকেও একই ধরনের খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

এই তিনটি ঘটনা ভারত জুড়ে কাশ্মিরিদের উপর অত্যাচারের কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। দেশের বেশ কিছু জায়গায় কাশ্মিরিদের উপর অত্যাচার, হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে রাজ্যগুলিকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে দিল্লির সরকার। সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে পাঠানো ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, কাশ্মিরিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলওয়ামা হামলার পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রদের হেনস্থা, মারধরের খবর আসছে। সেই কারণে রোববার এই একটি নির্দেশ জারি করেছে স্বরাষ্টমন্ত্রণালয়।’’

এ বিষয়ে হেল্পলাইন খুলেছে সিআরপিএফ। সিআরপিএফ জানিয়েছে, কাশ্মির থেকে গিয়ে অন্য রাজ্যে থাকা ছাত্র বা সাধারণ নাগরিক হেনস্থার শিকার হলে ফোন করে বা এসএমএস করে সাহায্য চাইতে পারেন। দ্রুত তাদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করা হবে।

অন্য দিকে পুলওয়ামায় হামলার চতুর্থ দিনেও অশান্ত কাশ্মির উপত্যকা। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল, প্রত্যাঘাতের দাবিতে মিছিল বিক্ষোভ হয়েছে। মিছিল থেকে গাড়ি ভাঙচুরের মতো ঘটনায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে দফায় দফায়। তবে সেখানেও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। কার্ফু উপেক্ষা করেই রোববারও বহু মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। মিছিল, বিক্ষোভ, পাকিস্তানবিরোধী স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে উপত্যকার বিভিন্ন এলাকা।

সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ছড়িয়েছে জম্মুতে। সেখানে পুলিশের একাধিক জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে বিক্ষোভকারীদের। ১২ থেকে ১৫টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নানা জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। বেশ কিছু জায়গায় কয়েকটি বাড়িতেও হামলা হয়েছে। জম্মুতে সরকারি একাধিক সরকারি অফিস থেকে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। কিছু সরকারি অফিস খুললেও হাজিরা ছিল হাতে গোনা।

অন্য দিকে তীব্র আতঙ্কে কার্যত ঘরবন্দি কাশ্মিরিদের একটা বড় অংশ। বিক্ষোভকারী ছাড়া সাধারণ মানুষ এ দিনও কার্যত ছিল ঘরবন্দি। দোকানপাট কিছুই খোলেনি। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর জওয়ানরা টহল দিয়েছেন রাস্তায়। তবে বিকেল থেকে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়। কিন্তু কাশ্মিরিদের অভিযোগ, হামলার সময় পুলিশ হয় নীরব দর্শক হয়ে থেকেছে, নয়তো অন্য দিকে সরে গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের কনভয়ে হামলায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ৪৯ জন জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement