১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাশ্মিরে সেনা নির্যাতন : কথা বলায় হিন্দু শিক্ষিকাকে ধর্ষণ-খুনের হুমকি

পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় - ছবি : সংগৃহীত

কাশ্মির নাগরিকদের পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন তিনি। এর পর থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত ধর্ষণ ও খুনের হুমকি আসতে থাকে। কলেজ থেকেও সাসপেন্ড করা হয় তাকে। সোমবার পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে রোববার থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। পেশায় শিক্ষিকা ওই নারীর নাম পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ভারতের আসাম রাজ্যের গৌহাটির আইকন অ্যাকাডেমি কমার্স কলেজের অধ্যাপক। পুলওয়ামায় হামলার পরদিন ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন ওই অধ্যাপিকা। তিনি পুলওয়ামায় হামলার নিন্দা করলেও কাশ্মিরের নাগরিকদের ওপর ভারতীয় সেনার ‘অত্যাচার’ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। আর তাতেই বাধে বিপত্তি।

এ পোস্টের জেরে শনিবার কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সাসপেন্ড করে। সোসাল মিডিয়াতেও ধর্ষণ-খুনের হুমকি পেতে থাকেন তিনি। পাপড়ি নিজে সোসাল মিডিয়ায় এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘ইনবক্সে ক্রমাগত, ধর্ষণ, গণপিটুনি ও খুনের হুমকি পাচ্ছি’। কাল যদি আমার কোনো ক্ষতি হয়, তা হলে আসাম পুলিশ যেন আমার আগে দায়ের করা এফআইআরে উল্লিখিত নামগুলো দেখে। তারাই আমার ক্ষতির জন্য দায়ী থাকবে। ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আসামের গান্ধীবস্তিতে বাবা ও ভাইয়ের সাথে থাকেন পাপড়ি। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫ ধারা এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। সোমবার চাঁদমারি থানায় পাপড়িকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার তিনি আসেননি।

চাঁদমারি থানার পুলিশ ইনচার্জ বীরেন চন্দ্র ডেকা বলেন, ‘শনিবার তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। সোমবার তিনি হাজিরা দিতে না আসায় বাড়িতে পুলিশ টিম পাঠাই। ভদ্র মহিলার বাবা জানিয়েছেন, রোববার থেকে ওই শিক্ষিকা নিখোঁজ। তবে এখনো পর্যন্ত নিখোঁজের কোনো অভিযোগ তারা দায়ের করেননি।

সূত্র : এনডিটিভি

কাশ্মিরে টানা ৫ দিন কারফিউ বাড়ছে উত্তেজনা

গতকাল মঙ্গলবারও ভারত অধিকৃত কাশ্মির জুড়ে পঞ্চম দিনের মতো কারফিউ বলবৎ ছিল। পুলওয়ামার হামলার পরে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। গত সোমবার ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের একটি গ্রামে অভিযান চালাতে গিয়ে পাল্টা হামলার মুখে পড়ে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। পিংলেন এলাকায় পরিচালিত অভিযানে ভারতের সেনাদের হাতে শহীদ হয়েছেন চার কাশ্মিরি। স্বাধীনতকামী যোদ্ধাদের সাথে সেখানে সংঘর্ষে একজন মেজরসহ পাঁচজন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়।

নিরাপত্তা প্রত্যাহারের পর হুরিয়াত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুককে রক্ষা করার জন্য প্রায় ২০০ যুবক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। পুলাওয়ামায় হামলার পরে রোববার মিরওয়াইজসহ ছয় স্বাধীনতাকামী নেতার নিরাপত্তা প্রত্যাহার করেছে ভারত সরকার। আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি (এসিসি) টুইটারে জানান, নিজদেরকে মিরওয়াইজের নিরাপত্তা প্রহরী করার জন্য কয়েকশত যুবক নাম লিখিয়েছেন। হুরিয়াত নেতা বলেন, ‘এসব যুবকের ভালোবাসা ও প্রীতির দ্বারা আমি অনুপ্রাণিত, তাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।’
এদিকে উগ্র হিন্দুদের হামলার আশঙ্কায় ভারত অধিকৃত কাশ্মির উপত্যকার কমপক্ষে ছয় হাজার মুসলমান মসজিদগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। কাশ্মির মিডিয়া সার্ভিস জানিয়েছে, মক্কা মসজিদ কমিটির বাথিন্ডির সদস্য আব্দুল মজিদ বলেছেন, আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার মানুষ তার মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে। চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক চণ্ডীগড় গমনকারী বারামুল্লার বাসিন্দা আইজাজ আহমেদ মীর বলেন, ‘আমরা রোববার সন্ধ্যায় জম্মুতে পৌঁছলাম। অন্যান্য এলাকায় আক্রমণের ভয়ে আমরা বাথিন্দীতে মক্কা মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিলাম।’

পুলওয়ামার হামলার পরে কাশ্মিরি পুরুষ ও নারীদের ভারতের পুলিশের আক্রমণ, হয়রানি এবং নির্বিচারে গ্রেফতারের মুখোমুখি না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার প্রধান আকার প্যাটেল এক বিবৃতিতে বলেন, কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কাশ্মিরি ব্যবসায়ীরা উত্তরাখান, হরিয়ানা ও বিহারে হিন্দু উগ্রবাদীদের মারধর, হুমকি ও ভয়ভীতির শিকার হয়েছেন। 

গত সপ্তাহে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলায় পুলওয়ামাতে ৪৪ ভারতীয় সেনা সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফ-এর প্রায় আড়াই হাজার সদস্য বহনকারী ৭৮টি ট্রাক আর বাসের সারির ভেতরে আইইডি বিস্ফোরক ভর্তি একটি সেডন গাড়ি ঢুকিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়।

সূত্র : ডন


আরো সংবাদ



premium cement