শবরীমালা মন্দিরে ঢুকে ইতিহাস গড়া নারী এবার বাড়ি থেকে বিতাড়িত
- বিবিসি
- ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:৪৬
দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করে ইতিহাস গড়েছিলেন যে দুই নারী, তাদেরই একজনকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না পরিবার।
কনকদুর্গা নামের বছর চল্লিশের ওই নারী এ মাসের গোঁড়ায় শবরীমালা মন্দির থেকে বাড়ি ফেরার পরে তার শাশুড়ি কাঠ দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন।
১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ না করতে দেওয়ার যে শতাব্দীপ্রাচীন প্রথা রয়েছে, সেই প্রথা বাড়ির বউ হয়ে কেন তিনি ভেঙেছেন - এটাই ছিল কনকদুর্গার শাশুড়ির রাগের কারণ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে মিজ কনকদুর্গা বাড়ি ফিরে দেখেন স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির কেউ সেখানে নেই। বাড়ি তালাবন্ধ।
সমাজকর্মী থাঙ্কাচান ভিথায়াতিল বিবিসিকে বলছিলেন, ‘তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন যে সেখানে কেউ নেই। স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কেউ তার সাথে কথা পর্যন্ত বলতে চায়নি।’
‘কনকদুর্গার সাথে পুলিশও গিয়েছিল। বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না দেখে পুলিশই নারীদের জন্য তৈরি আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যায়।’
থানায় গিয়ে কনকদুর্গা জানতে পারেন যে, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা চান না যে তিনি বাড়িতে ফিরুন।
মালাপ্পুরাম জেলার পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট প্রতীশ কুমার জানিয়েছেন, ‘তার স্বামী থানায় এসেছিলেন, কিন্তু কনকদুর্গাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে তিনি রাজি হননি।’
‘তবে ওই নারী বারবার বলতে থাকেন যে তার স্বামী যেখানে থাকবেন, সেখানেই তিনি যেতে চান। তখন স্বামী বলেন যে, তিনি থানাতেই থেকে যাবেন। আমরা দুজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম।’
পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, এখন বিষয়টি পারিবারিক সহিংসতার পর্যায় চলে গিয়েছে। কারণ কনকদুর্গা থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। এখন বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াবে।
গত ২ জানুয়ারি ৩৯ বছর বয়সী কনকদুর্গা এবং ৪০ বছরের বিন্দু আম্মিনী পাহাড়ি পথ বেয়ে শবরীমালা মন্দিরে পৌঁছান।
সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়ে সব বয়সের নারীদের ভগবান আয়াপ্পার মন্দিরে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল - সেই রায় কার্যকর করাটাই ওই দুই নারীর উদ্দেশ্য ছিল বলে জানা গিয়েছে।
তাদের আগে বেশ কয়েকজন নারী ওই রায়কে হাতিয়ার করে মন্দিরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রাচীন প্রথা ভাঙ্গার বিরোধী হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভে আগের সেই সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু মিজ কনকদুর্গা আর মিজ আম্মিনী বিপুল সংখ্যক সাদা পোশাকের পুলিশ পাহারায় মন্দিরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন।
সেখানে হাজির তথাকথিত ভক্তরা বুঝতেই পারেননি যে দুজন নারী মন্দিরে ঢুকেছেন, তাই বাধাও দিতে পারেনি কেউ।
তবে ঋতুমতী বয়সের দুই নারী মন্দিরে প্রবেশ করেছেন এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরেই কেরালা জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এবং প্রাচীন প্রথা টিকিয়ে রাখার পক্ষে হাজার হাজার মানুষ হরতাল পালন করেন।
কিন্তু এখন সেই ইতিহাস গড়া নারী নিজের বাড়িতেই এখন ঢুকতে পারছেন না, আর তাকে পর করে দিতে চাইছেন স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির মানুষ।
থাঙ্কাচান জানান, ‘বাড়িতে প্রবেশের অধিকার চেয়ে কনকদুর্গা বুধবারই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাছে আপিল জানাবেন।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা