২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বলিউড ছেড়ে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেছিলেন কাদের খান (ভিডিও)

- ছবি : সংগৃহীত

কাদের খান একজন বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, কমেডিয়ান, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখক এবং পরিচালক। তিনি ১৯৭০ সাল থেকে একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ৪৫০ টিরও বেশি হিন্দি এবং উর্দু সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং ২৫০টিরও বেশি ভারতীয় সিনেমার সংলাপ লিখেছেন।

চলুন যেনে নেয়া যাক এই অভিনেতার তিনি বলিউড ছেড়ে ইসলামের দিকে চলে আসার কাহিনী।

কাদের খান ১৯৩৫ সালের ২২ অক্টোবর আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কাবুল আফগানিস্তানের আফগান পশতুন বংশোদ্ভুদ। তার পিতা মৌলভী আব্দুর রহমান যিনি কান্দাহারের বাসিন্দা ছিলেন। তার মাতা ইকবাল বেগম ছিলেন বর্তমান পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের পিশিন জেলার অধিবাসী। তিনি পবিত্র কুরআনে হাফেজ ছিলেন।

তার পরিবার কানাডা এবং হল্যান্ডে বাস করে। তার তিন ছেলে কানাডায় বাস করে। কাদের খান ভারত ও কানাডার নাগরিক ছিলেন।

কাদের খানের বাবা মৌলভী আব্দুর রহমান শুধু ধর্মীয় পণ্ডিত ছিলেন না, তিনি আরবি ভাষা ও ইসলামিক সাহিত্যে স্নাতকোত্তরও ছিলেন। তিনি হল্যান্ডে চলে যান। সেখানে তিনি নিজে ইসলামিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

১৯৯০ সালের শুরুর দিকে কাদের খানের পিতা মৃত্যুর পূর্বে সেখানে ডেকে পাঠালেন এবং প্রতিষ্ঠানের উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলে প্রথমে কাদের খান রাজি হননি। তিনি যুক্তি হিসেবে বলেন, ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞান কম।

তখন কাদের খানের পিতা জানতে চাইলেন, বলিউডে যোগ দেয়ার আগে ‍তুমি কি সেই জগৎটাকে জানতে? তিনি আরো বলেন, সিনেমার গল্প লেখা বা কথোপকথন লেখার বিষয়ে তার প্রথমে কোন জ্ঞান ছিল না, তিনি শিখেছিলেন এবং বলিউডে বেশ নাম করেছেন। তাই, একইভাবে তিনি ইসলাম, আরবি ও উর্দু সম্পর্কেও শিখতে পারবেন।

কাদের খানের পিতার এই কথা তাকে ব্যাপক প্রভাবিত করে। এর ফলে তিনি ১৯৯৩ সালে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ এন্ড এরাবিক লিটারেচারে ভর্তি হন।

পিতার ইচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নার্সারি লেভেল থেকে স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য তিন স্তরে ইসলামী শিক্ষা, শরিয়াহ আইন এবং অনুরূপ বিষয়ের জন্য বিভিন্ন ইসলামিক কোর্স কারিকুলাম তৈরি করেন।

এই কোর্সের অন্যতম দিক ছিল অতি সহজেই একজন সাধারন মানুষ যাতে কুরআন বুঝতে পারেন। এমনকি অমুসলিমরাও যাতে সহজেই ইসলামিক শিক্ষা লাভ করতে পারেন।

এছাড়াও তিনি দুবাইয়ে কেকে ইন্সটিটিউট অব এরাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। পরবর্তীতে কানাডায় তিনি আরবি ভাষা ও পবিত্র কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ইসলামিক আইনের উপর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন।

২০০৫ সালের দিকে কাদের খানের ইসলামিক সেন্টারগুলো পূর্ণরুপে চলতে থাকে। পিতার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত ও পরিতৃপ্ত হন।

এছাড়াও সারা জীবন তিনি ভারতের সাধারণ মুসলামানদের মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি চাইতেন মুসলিম যুবকেরা শিক্ষায় ও কারিগরি দক্ষতা দিয়ে স্বাধীনভাবে নিজেদের স্থান তৈরি করে নিতে পারে।

তার অসুস্থতার পূর্বে কাদের খান তার শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর জন্য বিভিন্ন দেশে শাখা স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, লন্ডন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।

ভারতে মুসলিম সমাজে তার অবদানের জন্য আমেরিকান ফেডেরাশন অব মুসলিম ফ্রম ইন্ডিয়া (AFMI) স্বীকৃতপ্রাপ্ত হয়।

কাদের খান ২০১৪ সালে পবিত্র হজ পালন করেন। এভাবেই তিনি বলিউড থেকে দূরে চলে আসেন। আর ইসলাম প্রচারে নিজেকে নিয়োগ করেছিলেন।

সূত্র : খালিজ টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে।


আরো সংবাদ



premium cement