২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আন্দামানে আদিবাসীদের হাতে মার্কিন যাজক নিহত

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ - ছবি : সংগ্রহ

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে নিহত হয়েছেন এক মার্কিন পর্যটক। অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীদের হাতে খুন হয়েছেন তিনি। বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন আন্দামানের নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপের আদিবাসীদের আক্রমণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার ওই তরুণ পর্যটককে সংরক্ষিত নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ৭ জেলেকে।

নিহত ওই মার্কিন নাগরিকের নাম জন অ্যালেন চাও। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, গির্জার যাজক ছিলেন তিনি। ঘন ঘন আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে যাতায়াত ছিল। সেন্টিনেল প্রজাতির মানুষের সঙ্গে যেচে আলাপ করতেন। চেষ্টা করতেন তাঁদের খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করতে।

‘আন্দামান শিখা’ সংবাদপত্রের দাবি, অতীতে মোট পাঁচবার আন্দামান ঘুরে গিয়েছিলেন জন। দেখা করতে চেয়েছিলেন আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে। যাতে তাঁদের কাছেও খ্রিষ্টান ধর্মের বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন। মৃত্যুর আগে গত পাঁচদিনে একাধিকবার নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ডে গিয়েছিলেন। গত বুধবারও নাকি নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টা করেন অ্যালেন। কিন্তু বিফল হন। দু’দিন পর ফের সেখানে হাজির হন তিনি। তা-ও আবার স্থানীয় জেলেদের সাহায্যে। তাদের জেরা করে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে।

জানা গিয়েছে, গত শুক্রবার নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ডের কাছাকাছি পৌঁছে তাদের নৌকো থেকে নেমে যান অ্যালেন। ছোট ডিঙি নিয়ে একাই দ্বীপটির দিকে এগিয়ে যান। সেখানে পৌঁছনো মাত্রই ঝাঁকে ঝঁকে তির উড়ে আসে তাঁর দিকে। তা সত্ত্বেও হাঁটা থামাননি তিনি। যার পর তাঁকে বালির উপর ফেলে, গলায় দড়ি পেঁচিয়ে টানতে টানতে সমুদ্র সৈকতের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে একদল আদিবাসী মানুষ।

এরপর আর তাকে দেখেনি জেলেরা। অ্যালেনকে নামিয়ে দিয়েই নৌকোয় উঠে পড়েছিল তারা। অনেকটা দূর চলেও এসেছিল। তাই তার পর কী ঘটেছিল তা দেখতে পারেনি। তবে আন্দমানের রাজধানী পোর্ট ব্লেয়ার পৌঁছে অ্যালেক্স নামের স্থানীয় এক পাদরিকে গোটা ঘটনা জানিয়েছিল জেলেরা। তিনিই অ্যালেনের বাড়ির লোকজনকে খবর দেন। তাঁরাই পরে দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। পর দিন সকালে নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ডের কাছে গিয়েছিলো ওই জেলেরা। কিন্তু অ্যালেনের লাশ চোখে পড়েনি তাদের।

অ্যালেনের লাশের খোঁজে ইতিমধ্যেই তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। ব্যবহার করা হচ্ছে হেলিকপ্টারও। তবে নর্থ সেন্টিনেল দ্বীপে হেলিকপ্টার নামানোর সাহস পাচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন। কারণ তাতে আদিবাসী উপজাতিরা রণমূর্তি ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা।

ভারত মহাসাগরের বুকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বাস সেন্টিনেলিজদের। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী তাদের জনসংখ্যা ৫০-এর মধ্যে। তবে বহির্বিশ্ব থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠি। ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের সরিয়ে রেখেছে তারা। নিজেদের এলাকায় বাইরের কারও প্রবেশ একেবারেই পছন্দ নয় তাদের। বহিরাগত রুখতে নৃশংস পদক্ষেপ করতেও পিছপা হয় না তারা। কোনও মুদ্রা ব্যবহার করে না সেন্টিনেলিজরা। এ সংরক্ষিত উপজাতির বিরুদ্ধে মামলাও করা যায় না। কিছুদিন আগে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন বা তাদের এলাকায় প্রবেশকে বেআইনি বলে গণ্য করা হতো। ভিডিও ক্যামেরায় তাদের গতিবিধি রেকর্ড করাও নিষিদ্ধ। ২০১৭ সালে ভারত সরকার জানায় যে, সেন্টিনেলিজরা আদিম অধিবাসী। তাঁদের নিয়ে কোনওরকম ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা যাবে না।

চলতি বছরের শুরুতে নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়। নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ডসহ কেন্দ্রশাসিত আন্দামান-নিকোবরের মোট ২৯টি জায়গার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। বলা হয়, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখান অবাধে প্রবেশ করতে পারবেন বিদেশিরা। তার জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে আলাদা করে অনুমতি নিতে হবে না তাঁদের। তারপরই এই পর্যটক খুনের ঘটনা ঘটলো।

পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারতের কেন্দ্র শাসিত একটি অঞ্চল। সেই দ্বীপপুঞ্জের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টিনেল। ঔপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটিশরা এই দ্বীপপুঞ্জকে কারাগার হিসেবে ব্যবহার করতো।


আরো সংবাদ



premium cement