২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন, টার্গেট চীন

ভারতে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন, টার্গেট চীন - ছবি : সংগ্রহ

অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। পরমাণু ত্রিশক্তি ক্ষেপণাস্ত্র সম্পন্ন রাষ্ট্রে পরিণত হলো ভারত। এই শক্তির অর্থ হলো সাগর, স্থল এবং আকাশপথে একইসঙ্গে সমানভাবে পরমাণু শক্তিধর ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করতে পারা। ভারতের প্রথম পরমাণু শক্তিসম্পন্ন আইএনএস অরিহন্ত সাবমেরিন সফল ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মহড়ায় সাফল্য অর্জন করে ফিরেছে ভারতীয় পরমাণু শক্তির কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেমের আওতায়।

এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডেটারেন্স টহলদারি। অর্থাৎ ভারত এবং আন্তর্জাতিক পানিসীমার বিভিন্ন সমুদ্রপথে সফর সেরে গভীর সমুদ্র অভ্যন্তর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মহড়া দিয়েছে অরিহন্ত। সেই মহড়া সফর সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত করে সোমবার আবার অরিহন্ত ফিরেছে ভারতীয় নৌবাহিনীর সমুদ্র বন্দরে। ব্রহ্মস ক্রুজ মিসা‌ইল সিস্টেম থেকে আকাশপথে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের শক্তি অর্জন করার পর এই সমুদ্রগর্ভে আত্মগোপন করে থাকা সাবমেরিন প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রের যেকোনো ভূমি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দক্ষতা অর্জন করল। আর তাতে ভারত বিশ্বের সবথেকে শক্তিধর পাঁচ দেশের সমতুল্য হয়ে উঠল বলাই যেতে পারে। আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স চীনের কাছে রয়েছে এই ব্যবস্থা। এবার ভারতও প্রবেশ করল বিগ সিক্সের বৃত্তে। এবং আইএনএস অরিহন্তের নিশানায় এসে গেল চীন।

সোমবার এই সাফল্য ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, যেসব দেশ সারাক্ষণ পরমাণু হামলার ব্ল্যাকমেল করে থাকে, এটা হলো তাদের প্রতি আমাদের জবাব। পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ভারতের নৌবাহিনীকে তিনি অভিনন্দন বার্তায় বলেছেন, ভারতকে জগৎসভায় আরও উঁচু করে দেয়ায় আপনাদের এই কৃতিত্বে ভারতবাসী কৃতজ্ঞ।

উল্লেখ্য, ডেটারেন্স টহলদারি সফলভাবে সম্পন্ন করে অরিহন্ত ডুবোজাহাজ সমুদ্র বন্দরে ফিরে আসায় ভারতের শক্তি বহুগুণ বেড়ে গেল। এর কারণ স্থলপথে ভারতকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সম্মুখীন হতে হলেও কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম ধ্বংস হবে না। সমুদ্র অভ্যন্তর থেকে এই আইএনএস অরিহন্ত সম্পূর্ণ গোপনে শত্রুপক্ষের ভূমিতে নিক্ষেপ করতে পারবে ধ্বংসাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র। ২০১৫ সালে অরিহন্তকে নৌবাহিনীর হাতে সমর্পণ করার পর পাঠানো হয়েছিল ডেটারেন্স পেট্রলিংয়ে। তবে তার এক বছর আগেই হয়েছিল সি-ট্রায়াল। এই পরমাণু শক্তিধর সাবমেরিনের সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল প্রতিপক্ষ দীর্ঘ সময় সন্ধানই পাবে না কোথায় আত্মগোপন করে আছে এই সাবমেরিন। বস্তুত প্রতিপক্ষ শিবিরের স্থলভূমির কাছেই কোনো এক সমুদ্রঅভ্যন্তর থেকে এই সাবমেরিন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম।

আইএনএস অরিহন্ত থেকে নিক্ষেপ করা যাবে ‘কে ফিফটিন’ এবং ‘কে ফোর’ নামক দুটি ক্ষেপণাস্ত্র। প্রায় ৩৫০০ কিলোমিটার ও ৭৫০ কিলোমিটার যার রেঞ্জ। অর্থাৎ ভারতের বিরুদ্ধে যে দুই দেশ সর্বদাই একজোট সেই চীন ও পাকিস্তানের সিংহভাগ শহর ব্যালিস্টিক মিসাইলের আওতায়! পাকিস্তান গত বছরই পরীক্ষা করেছে বাবর ব্যালিস্টিক মিসাইল। এবং ত্রিশক্তি অর্জনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ত্রিশক্তি পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ার এই গোটা প্রক্রিয়াটির কারিগর ভারতীয় নৌবাহিনীর সিক্রেট অ্যাডভান্সড টেকনোলজি প্রজেক্ট। যা ভারতকে প্রদান করল এক বিরল শক্তি। যাকে সামরিক পরিভাষায় বলা হয়, সেকেন্ড অ্যাটাক কেপেবিলিটি!


আরো সংবাদ



premium cement