১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আসিয়া বিবিকে বাঁচাতে স্বামীর আকুতি

আসিয়া বিবি - ফাইল ছবি

পাকিস্তানে ব্লাসফেমি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি পাওয়া খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবির স্বামী রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় আবেদন করেছেন।

আসিয়া বিবির স্বামী আশিক মাসিহ বলেছেন তারা পাকিস্তানে চরম বিপদের মধ্যে বসবাস করছেন।

ব্লাসফেমির অভিযোগে আসিয়া বিবিকে যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল সেখানে থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

আদালত আসিয়া বিবিকে মুক্তি দেয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে।

ফলে আসিয়া বিবির দেশত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।

শনিবার আসিয়া বিবির আইনজীবী সাইফ মুলুক প্রাণের ভয়ে পাকিস্তান ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

আসিয়া বিবির প্রকৃত নাম আসিয়া নরিন। কিন্তু তিনি আসিয়া বিবি হিসেবে পরিচিত।

২০১০ সালে প্রতিবেশীর সাথে বাক-বিতণ্ডার সময় আসিয়া বিবি ইসলামের নবী মোহাম্মদকে অপমান করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। এরপর আদালত তাকে সাজা দেয়।

আসিয়া বিবিকে আশ্রয় দেবার জন্য কয়েকটি দেশ প্রস্তাব দিয়েছে।

আসিয়া বিবির স্বামী কী বলছেন?

এক ভিডিও বার্তায় আসিয়া বিবির স্বামী বলেছেন, পাকিস্তানে তিনি প্রাণভয়ে আছেন।

"আমি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি যে তিনি যেন আমাদের সহায়তা করেন," বলেছেন আসিয়া বিবির স্বামী।

তিনি একই সাথে কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন।

এর আগে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিয়া বিবির স্বামী তাঁর পরিবারের সদস্যদের জীবন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

কারণ বিক্ষোভ বন্ধ করার জন্য উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠন তাহরিক-ই-লাবাইক-এর সাথে পাকিস্তানের সরকার একটি চুক্তি করেছে। সে চুক্তিতে বলা হয়েছে, আসিয়া বিবি যাতে দেশ ছেড়ে যেতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরিস্থিতিকে ভয়াবহ হিসেবে উল্লেখ করে আসিয়া বিবির স্বামী বলেছেন, প্রাণের ভয়ে তারা এদিক-সেদিক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

তিনি বলেন, " আমার স্ত্রী আসিয়া বিবি এরই মধ্যে অনেক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। তিনি ১০ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। আমার মেয়ে তার মাকে দেখার জন্য মারা যাচ্ছে।"

এদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, আসিয়া বিবিকে রক্ষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, "একটা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে এবং আমরা সেটি মোকাবেলা করছি। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই যে তাঁর জীবন ঝুঁকিতে নেই।"

উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠনের সাথে চুক্তি করার বিষয়টিকে তিনি 'আগুন নিভানোর' সাথে তুলনা করছেন। এর ফলে সহিংসতা এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

আসিয়া বিবি কেন অভিযুক্ত হয়েছিলেন?

২০০৯ সালে একদল মহিলার সাথে ঝগড়ার সূত্র ধরে আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)কে অবমাননার অভিযোগ আনা হয়।

ঘটনার সময় আসিয়া বিবি এবং তার প্রতিবেশীরা গাছ থেকে ফল পাড়ছিলেন। তখন এক বালতি পানি নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়।

আসিয়া একটি কাপে করে ঐ বালতির পানি খেয়েছিলেন।

তখন অন্য মহিলারা বলেন, যেহেতু আসিয়া অমুসলিম, তার স্পর্শ করা ঐ পানি তারা খেতে পারবেন না, কারণ ঐ পানি এখন নোংরা হয়ে গেছে।

মামলায় বাদীপক্ষ অভিযোগ করেছিল, এ নিয়ে ঝগড়া শুরু হওয়ার পর গ্রামের মহিলারা আসিয়াকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হতে বলেন।

কিন্তু তখন আসিয়া নবী মোহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন।

পরে আসিয়া বিবিকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে মারধর করা হয়। অভিযোগকারীরা দাবি করেন, সে সময় আসিয়া বিবি নবী মোহাম্মদ (সঃ)কে অবমাননা করার কথা স্বীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের তদন্তের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে মামলাটিতে বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ হাজির করা হয়নি।

জনসম্মুখে আসিয়া বিবিকে হত্যার হুমকি দেবার পর তিনি দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন বলে আদালত উল্লেখ করেছে।

এ মামলা নিয়ে বিভক্তি কেন?

পাকিস্তানের জাতীয় ধর্ম হলো ইসলাম। ইসলাম ধর্ম অবমাননার জন্য কঠোর আইনের পক্ষে পাকিস্তানে জোরালো জনমত রয়েছে।

কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদরা প্রায়ই এ আইনের আওতায় কঠোর শাস্তি সমর্থন করেন।

কিন্তু সমালোচকরা বলেন, অনেক সময় ব্যক্তিগত বিরোধের বিষয়ে প্রতিশোধ নেবার জন্য ব্লাসফেমি আইন ব্যবহার করা হয়।

এসব অভিযোগের খুবই ঠুনকো বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হয়।

ব্লাসফেমি আইনে যারা দোষী সাব্যস্ত হয় তাদের বেশিরভাগ আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের।

কিন্তু ১৯৯০'র দশক থেকে বেশ কিছু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ব্লাসফেমি আইনে সাজা পেয়েছেন।

পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১.৬ শতাংশ খ্রিস্টান।

১৯৯০ সাল থেকে ব্লাসফেমির অভিযোগ তুলে পাকিস্তানে অন্তত ৬৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement