২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাকিস্তানের নারী পুলিশের যে ছবিতে তোলপাড়

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছে ছবিগুলো -

দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। কুণ্ডলী পাকিয়ে বেরচ্ছে কালো ধোঁয়া। আগুন থেকে সামান্য দূরে সেলফি-স্টিক হাতে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন এক দল মহিলা। এটা কি হলিউড ছবির কোনও দৃশ্য? সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল এই সব ছবি। কোনও ছবিতে আবার দেখা যাচ্ছে, রাইফেল হাতে আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক মহিলা ইউনিফর্মধারী। কোনওটায় ঝাঁ চকচকে রোদচশমা পরে একাই সেলফি তুলছেন এক মহিলা।

এদের প্রত্যেকের মাথায় হিজাব, গায়ে খাঁকি ইউনিফর্ম, অনেকের হাতে ভারী অস্ত্র। পাকিস্তান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট টুইটারে শেয়ার করা এমন বেশ কয়েকটি ছবি নিয়েই এখন মাতামাতি নেট দুনিয়ায়।

আসলে এরা প্রত্যেকেই পাকিস্তানের ‘অ্যান্টি নারকোটিকস ফোর্স’ (এএনএফ)-এর মহিলা অফিসার। কমান্ডার রাফিয়া বেগের নেতৃত্বেই চলে এই অভিযান। এএনএফের ডিজি মুসারত নওয়াজ মালিক জানিয়েছেন, পাক যুব সমাজকে নেশামুক্ত করার উদ্দেশ্যেই কয়েক সপ্তাহ ধরে মাদক বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে তাঁর বাহিনী। উদ্ধার হওয়া মাদক পরে নিয়ম মতো পুড়িয়ে ফেলা হয়।

সম্প্রতি পেশোয়ারে বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রায় ৪০০ কেজি অবৈধ মাদক পুড়িয়ে ফেলে এএনএফ। সেই মাদক পোড়ানোর সময়ই ছবিগুলি তুলেছেন এএনএফ বাহিনীর মহিলা সদস্যেরা। পরে সেগুলিই ভাইরাল হয়ে যায়।

এর পর সোশ্যাল মিডিয়ায় অজস্র প্রশংসাসূচক ও ইতিবাচক মন্তব্য আসে।

আরো পড়ুন: যেভাবে ধনকুবের হলেন পাকিস্তানের গরিব অটোচালক

পাকিস্তানের বাসিন্দা মোহম্মদ রশিদ। পেশায় অটোচালক। টানাটানির সংসার। নিজের অটো নেই, তাই ভাড়ায় একটা অটো চালান। মেয়েকে একটা সাইকেল কিনে দিতে চেয়েছিলেন রশিদ। সামান্য উপার্জন করা অটোচালকের ৩০০ টাকা সঞ্চয় করে যেখানে একবছর সময় লেগেছে একটি সাইকেল কিনে দিতে, সেই লোকটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হঠাৎ দেখা যায় ৩০০ কোটি রুপি।

ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট দেখ চমকে ওঠেন রশিদ। ঠিক দেখছেন তো? নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি আবার ভাল করে পরীক্ষা করে দেখলেন। ভুল দেখছেন কিনা! কিন্তু নাহ! তিনি ঠিকই দেখেছেন। কিন্তু এটা সম্ভব হল কীভাবে? ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছিলেন না তিনি।


এটা দেখে আমি ঘামতে শুরু করি আর প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই, বলছিলেন রশিদ।

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কালো টাকা খোঁজ নিতে শুরু করলে দেশটির অনেক বাসিন্দাদেরই এরকম সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়।

এমন ঘটনায় ভয় পেয়ে যাওয়া রশিদের কাছে ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি ফোন আসে। ফোন পাওয়া মাত্রই রশিদ গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের লোকেরা তাকে তদন্তকারীদের সহযোগিতা করার জন্য বুঝিয়ে বললে রশিদ রাজি হয়ে যান।

রশিদ এক সাক্ষাত্কারে বলেন, কোনও তদন্তকারী সংস্থা যদি আমাকে তুলে নিয়ে যায় সেই ভয়ে অটো চালানো বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আতঙ্কে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানে এমনই ছবি উঠে আসছে। রশিদের মতো বহু গরিব পরিবারের অ্যাকাউন্টে ‘ভুতুড়ে’ টাকা এসে পড়ছে। তার পর সে টাকা গায়েবও হয়ে যাচ্ছে! রশিদের মতো একই অবস্থা হয়েছিল শারওয়াত জেহরা নামে এক ব্যক্তির। তাঁর অ্যাকাউন্টেও কয়েকশো কোটি টাকা জমা পড়েছিল।

পাকিস্তানে কালোটাকার কারবারিদের ধরতে নানা রকম পদক্ষেপ করছেন ইমরান খান। গত বুধবারেই তিনি বলেছিলেন, কালোটাকার কারবারিদের কোনোভাবেই রেয়াত করা হবে না।

রশিদদের মতো গরিব মানুষদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান থেকে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার পিছনে এটাও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সে দেশের আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। ক্ষমতায় এসে তাই ইমরান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। সম্প্রতি এক সভায় তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে এমন ‘ভুতুড়ে’ টাকার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, এটা আপনাদের চুরি যাওয়া টাকা। এই টাকা চুরি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো কাজে লাগিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর সেই কথা শুনেছিলেন রশিদ। তাই ৩০০ কোটি টাকা তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢোকার পর থেকেই আতঙ্ক ঘিরে ধরে। টাকাটা অবশ্য রশিদের ভাগ্যে জোটেনি। মুকুট থেকে তিনি যেন ‘মুকুটহীন রাজা’।

তাই প্রতিবেশীরা রসিকতা করে তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, রশিদ তো কপর্দকশূন্য ধনকুবের!

ধনকুবের খাতায় নাম লেখানো রশিদরা কখনোই এসব টাকার হদিস সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়।


আরো সংবাদ



premium cement