২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যে কারণে ভারতে গুরু রামপালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

গুরু রামপাল। - সংগৃহীত

২০১৪ সালে চার নারী ও ১৮ মাস বয়সী শিশুর হত্যার দায়ে প্রখ্যাত ভারতীয় গুরু রামপালসহ ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে হরিয়ানার আদালত রামপালকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তাকে অন্য আরেকটি হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং বুধবার ওই মামলায় রায় ঘোষণা করা হবে।

রামপালের সমর্থকদের সাথে ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় একটি রুমে আটকে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীরা মারা যান বলে জানিয়েছে আদালত।

গুরু রামপাল দাবি করেছেন তার দশ হাজারের মত অনুসারী ও আশ্রম ভারত জুড়ে আছে দাবি।

উত্তর চণ্ডীগড়ের আদালতে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

রামপালের আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

২০০৬ সালে হত্যার মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল গুরু রামপালর বিরুদ্ধে। তার আশ্রমে এক সংঘর্ষে একজন মারার ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।কিন্তু তিনি অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং জামিনে মুক্তি পান।

 পরবর্তীতে রামপালকে তার আশ্রম থেকে গ্রেফতার করতে চাইলে তার ভক্তরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষ জড়ায়। তারা পুলিশকে আশ্রমে প্রবেশে বাধা দেয়। সপ্তাহব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে বহু লোক হতাহত হয়েছে। পুলিশ রামপালের ভক্তদের বিরুদ্ধে মানুষকে জিম্মি করা, নারী ও শিশুদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযুক্ত করে।

কে এই রামপাল?

রামপাল ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হরিয়ানা রাজ্যে ১৯৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়া শেষ করে তিনি স্থানীয় সরকারে অধীনে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে একজনের শিষ্যত্ব গ্রহন করেন।

১৯৯৪ সালে তিনি বিভিন্ন মানুষের সাথে আলোচনা শুরু করেন। ভক্তদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে তিনি তিনি ১৯৯৯ সালে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এক বছর পরে রামপাল তার সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন।

ঐ অবস্থা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন তার দশ হাজারের অধিক ভক্ত ও বেশ কয়েকটি আশ্রম রয়েছে।

তবে রামপাল দাবি করেন যে তার সাথে যোগাযোগের পরে ‘হাজার হাজার লোকের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার নিরাময় হয়েছে’ এবং ‘ধ্বংস হয়ে যাওয়া পথে থাকা পরিবার আবার সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে’ ।

 

আরো দেখুন : এবার গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে মুখ খুললেন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা
বিবিসি; ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ২২:১৪


ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল অভিযোগ করেছেন, গুজরাট দাঙ্গার সময় প্রশাসন সেনা নামাতে চব্বিশ ঘন্টারও বেশি দেরি করেছিল - যেটা না-হলে হয়তো বহু প্রাণহানি ঠেকানো যেত। সেনাবাহিনীর সাবেক উপপ্রধান জমিরউদ্দিন শাহ গুজরাট দাঙ্গার মোকাবিলায় মোতায়েন করা সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন, তিনি তার সদ্যপ্রকাশিত বইতে দাঙ্গা ঠেকানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন।

'দ্য সরকারি মুসলমান' নামে তার ওই বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে ভারতের সাবেক উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিও দাঙ্গার সময় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওই ভয়াবহ দাঙ্গার সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের এখনকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।


২০০২ সালের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় গুজরাটে ২ হাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম।

স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে কলঙ্কজনক এই অধ্যায়টি নিয়ে এখন মুখ খুলেছেন সে সময় রাজ্যে মোতায়েন করা সেনাবাহিনীর ডিভিশন কমান্ডার জমিরউদ্দিন শাহ। পরে যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে অবসর নেন।

'দ্য সরকারি মুসলমান' নামে তার বইতে সাবেক লে: জেনারেল শাহ বর্ণনা করেছেন কীভাবে দাঙ্গাবিধ্বস্ত গুজরাটে পৌঁছানোর পরও তার বাহিনীকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, গুজরাটে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর পরই আমি যোধপুরে তখনকার সেনাপ্রধান পদ্মনাভনের ফোন পেলাম।

একটু অবাকই হয়েছিলাম, কারণ সেনাপ্রধান সরাসরি ডিভিশন কমান্ডারকে ফোন করে নির্দেশ দিতেন না। কিন্তু পাঞ্জাবে একসঙ্গে কাজ করার পুরনো পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি আমাকে ভাল করে চিনতেন, ডাকতেন 'জুম' বলে। আর্মি চিফ আমাকে বললেন, জুম- তোমার ট্রুপস নিয়ে এক্ষুনি গুজরাটে চলে যাও, দাঙ্গা ঠেকাও।

আকাশপথে একটার পর একটা সর্টি দিয়ে ২০০২-র ২৮ শে ফেব্রুয়ারি আর ১লা মার্চের মধ্যবর্তী রাতেই যোধপুর থেকে গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদে পৌঁছে গিয়েছিল বিশাল সংখ্যক সেনা।

কিন্তু সেই বাহিনীর নেতৃত্বে থাকা জমিরউদ্দিন শাহ জানাচ্ছেন পুরো রাজ্য জুড়ে তখন চলছে ভয়াবহ দাঙ্গা, কিন্তু তাদের পুরো একটা দিনেরও বেশি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছিল। মধ্যরাতের পর তিনি মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তখন ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজও। কিন্তু তার পরেও সেনারা দাঙ্গা ঠেকানোর জন্য রাস্তায় নামতে পারেনি চব্বিশ ঘন্টারও বেশি সময়।

সাবেক লে: জেনারেল জমিরউদ্দিন শাহ আরও জানাচ্ছেন, আমাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল গুজরাটে পৌঁছানোর পর বাহিনীকে গাড়ি, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ এসকর্ট, কমিউনিকেশন সিস্টেম আর শহরের নকশা দেওয়া হবে। কিন্তু পৌঁছে দেখলাম ওসব কিছুই নেই।

একজন ব্রিগেডিয়ার শুধু এসেছিলেন দেখা করতে, তারও কোনও ধারণা ছিল না কেন কিছুই নেই। শুনলাম রাজ্যের মুখ্য সচিব বিদেশে। যিনি দায়িত্বে ছিলেন তাকে যোগাযোগ করার বহু চেষ্টা করলাম। তিনি ফোনই ধরলেন না।

এভাবে মূল্যবান সময়ের অপচয়ে সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকতে বাধ্য হয়েছিল। আর তাতেই দাঙ্গায় প্রাণহানি অনেক বেড়ে যায় বলে বইতে লিখেছেন জমিরউদ্দিন শাহ।

পরে গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে বিশেষ তদন্তকারী দল রিপোর্ট দিয়েছিল, সেই রিপোর্টে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সব দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেই রিপোর্টকেও সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন শাহ, জানিয়েছেন তদন্তকারী দল তার সঙ্গে কোনও কথাই বলেনি।

শনিবার দিল্লিতে বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও আক্রমণাত্মক ছিলেন ভারতের সাবেক উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি।

আনসারি সেখানে বইটি থেকে একের পর এক দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, দাঙ্গার সময় কীভাবে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রশাসন।

তার কথায়, কারফিউ জারির নির্দেশ দিয়েও তা বলবৎ করা হয়নি, কোথাও শান্তি কমিটি গড়ার কোনও উদ্যোগ ছিল না। পুলিশ ছিল পক্ষপাতপূর্ণ, তাদের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক মতে বিশ্বাসী। বিএসএফ ও আধাসামরিক বাহিনীর বহু কোম্পানিকে সেভাবে কাজেই লাগানো হয়নি, এমন কী হিংসায় উসকানি দিতে মহিলাদেরও দাঙ্গায় সামিল করা হয়েছিল।

সাবেক উপরাষ্ট্রপতি আরও বলেছেন, ভারতের কোনও রাজ্যে এ ধরনের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা তৈরি হলে কেন্দ্রের উচিত সংবিধানের ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করা, কিন্তু গুজরাটে সেটাও করা হয়নি।

জমিরউদ্দিন শাহ ও হামিদ আনসারির একযোগে তোলা এই সব প্রশ্ন নি:সন্দেহে গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে নতুন করে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলেছে। তবে সে রাজ্যের বিজেপি সরকার বা নরেন্দ্র মোদীর কার্যালয় থেকে এখনও তার কোনও জবাব মেলেনি।

প্রসঙ্গত, সেনাবাহিনী থেকে আবসর নেওয়ার পর জমিরউদ্দিন শাহ গত তিন বছর ধরে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আরও একটি পরিচয়, তিনি সুপরিচিত বলিউড অভিনেতা নাসিরউদ্দিন শাহ-র ভাই।


আরো সংবাদ



premium cement