২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতের সব গোপন প্রতিরক্ষা তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান!

ভারতের সব গোপন প্রতিরক্ষা তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান! - ছবি : সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে সুরক্ষিত এবং গোপন প্রতিরক্ষা গবেষণা কেন্দ্রের অভ্যন্তরেই এবার পাকিস্তানি গুপ্তচরের হানা।! ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানইজেশনে (ডিআরডিও) কর্মরত এক উচ্চপদস্থ বিজ্ঞানীকে গ্রেফতারর করা হয়েছে গুপ্ত তথ্য পাকিস্তানকে পাচার করার অভিযোগে। শুধু পাকিস্তান নয়, নিশান্ত আগরওয়াল নামের ওই ব্যক্তি আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সিকেও (সিআইএ) ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্রহ্মস সংক্রান্ত গোপন প্রযুক্তি ও অপারেশন প্রক্রিয়ার সুরক্ষিত তথ্য পাচার করেছেন বলে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে পাকিস্তানের আইএসআই এবং আমেরিকার সিআইএ-র হয়ে কাজ করার মতো স্পাই এজেন্ট সাম্প্রতিককালে কেউ ধরা পড়েনি। তাই উত্তরপ্রদেশের অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড এবং মিলিটারি ইনটেলিজেন্সের (এম আই) যৌথ অপারেশনে নাগপুরের ডিআরডিও বিভাগ থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পর নতুন আশঙ্কা ছড়িয়েছে ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির মধ্যে। সেই আশঙ্কা হলো তাহলে কি আবার সিআইএ এবং আইএসআই হাত মিলিয়ে কাজ করছে ভারতের গোপন নথিপত্র হাত করার লক্ষ্যে?

ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? কারণ ব্রহ্মস পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এমন একটি মিডিয়াম রেঞ্জ র‌্যামজেট সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল যা সাগর, স্থল, আকাশপথ থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব। রাশিয়ার এনপিও এবং ভারতের ডিআরডিও’র যৌথ উদ্যোগে এই ক্ষেপণাস্ত্র নির্মিত হয়েছিল। গুপ্তচর নিশান্ত আগরওয়াল সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চার বছর নাগপুরে ব্রহ্মস মিসাইল রিসার্চ সেন্টারের টেকনিক্যাল রিসার্চ বিভাগে তিনি কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তার বিভাগ পরিবর্তন হয়। মাত্র গত সপ্তাহে তিনি বিয়ে করেন।

উত্তরপ্রদেশ পুলিশের অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড খবর পায় নিশান্ত আগরওয়াল পাকিস্তান ও আমেরিকাকে গোপনে ব্রহ্মস টেকনোলজি সংক্রান্ত নথি হস্তান্তর করেছে। তার কম্পিউটারে দেখা গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ও ই-মেইলে পাকিস্তান আইডি সংবলিত দুটি অ্যাকাউন্টে কথা বলতে। তবে নিশান্ত আগরওয়াল একা নয়। ডিআরডিও দপ্তরের কানপুর শাখায় আরো দু’জন বিজ্ঞানীর উপরও নজর রাখা হচ্ছে। কখনো আর্মি, কখনো এয়ার ফোর্স, কখনো আধা সামরিক বাহিনী বিএসএফ। গুপ্তচর সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া জওয়ান ও অফিসারের সংখ্যা অনেক। কিন্তু ডিআরডিও’র মতো সংস্থার মধ্যে চর ঢুকে পড়ার ঘটনা এই প্রথম।

নব্বইয়ের দশকে একবার ইণ্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনকে ঘিরে গুপ্তচর বিতর্ক দেখা দেয়। বিখ্যাত এক বিজ্ঞানী ও তার সহকারীকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার রায়ে জানায় ওই বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণই পাওয়া যায়নি। ওই ইসরো স্পাই কেস আজও রহস্যে ঢাকা। শোনা যায় আইবি, র ও ইসরোর মধ্যে এক গোপন শত্রুতার লড়াইয়ের বলি হন ওই দুই বিজ্ঞানী। তবে ডিআরডিও নিয়ে এরকম অভিযোগ আগে কখনো শোনা যায়নি। রাশিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি এস ৪০০ মিসাইল ব্যবস্থা সাপ্লাইয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরই এভাবে ডিআরডিওর অন্দরে স্পা‌ই঩য়ের উপস্থিতি গোটা দেশকেই চমকে দিয়েছে।

ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে নয়ডায় এক বি এস এফ জওয়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অচ্যুতানন্দ মিশ্র নামের সেই জওয়ানের থেকে এক সাংবাদিক ইউনিট অপারেশন ও ট্রেনিং সেন্টার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন। সেই সাংবাদিক ছিলেন এক মহিলা। ই-মেইল আর সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তিনি আলাপ করেন মিশ্রের সঙ্গে। তারপরই লাগাতার তথ্য সংগ্রহ করেন। আদতে তিনি ছিলেন পাকিস্তানের স্পাই। হানি ট্র্যাপের ফাঁসে পড়েছিলেন ওই জওয়ান। আর সেই জওয়ানকে জেরা করে একঝাঁক নয়া তথ্য পেয়েছে উত্তরপ্রদেশ অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড। মে মাসে উত্তরাখণ্ডের এক ব্যক্তি রমেশ সিংকে গ্রেফতার করা হয়। রমেশ ইসলামাবাদে ভারতীয় দূতাবাস কর্মীর বাড়িতে রান্না করতেন। সেই কাজের সুবাদেই তিনি সমস্ত গোপন মিটিংগুলোকে চোখের সামনে দেখতে পেতেন। আর তাকেই কব্জা করেছিল আইএসআই। তিনি লাগাতার আইএসআই গুপ্তচরদের সাহায্য করতেন।

এদিকে ভারতীয় দূতাবাসের অফিসারের ঘরে পাচক ছিলেন। এভাবে বিগত মাসগুলোতে দেখা যাচ্ছে লাগাতার আইএসআই বিভিন্ন স্তরে স্পাই ঢুকিয়ে দিয়েছে। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণের আঁতুরঘর ডিআরডিও যে আইএসআই এর আওতা থেকে বাদ যাবে না এতটা কল্পনা করা যায়নি। পাকিস্তান বহু বছর ধরেই ভারতের পরমাণু অস্ত্র প্রযুক্তির গোপন নথি ও তথ্য হাতানোর জন্য মরিয়া।


আরো সংবাদ



premium cement