২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতে ‘পবিত্র’ গঙ্গা নদীর পাশেই নারী ধর্ষিত!

আইন কঠোর করেও ধর্ষণ ঠেকানো যাচ্ছে না ভারতে। - ছবি: বিবিসি

ভারতের পাটনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত গঙ্গা নদীর পাশে একজন নারীকে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, ওই দুই ব্যক্তি পালাক্রমে ওই নারীকে নির্যাতন করেছে এবং তা ভিডিও করেছে।

জানা যাচ্ছে, রোববার ভোরে গঙ্গা নদীতে গোছল করার সময় ওই দুই ব্যক্তি তাকে ধরে নিয়ে যায়।

ভিডিওতে শোনা যায়, গঙ্গা নদীর পবিত্রতার কথা বলে তাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করছেন নির্যাতনের শিকার নারী, যাকে তিনি 'মা' বলেও উল্লেখ করেন।

পুলিশ বলছে, যে মোবাইল ফোনে ওই ঘটনা ভিডিও করা হয়, সেটি জব্দ করে ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ কিভাবে এই ঘটনার কথা জানতে পেরেছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ দাবি করেছে, অনলাইনে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরেই তারা এই ঘটনা কথা জানতে পারে।

তবে স্থানীয় খবরে বলা হচ্ছে যে, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর থানায় গিয়েছিলেন ওই নারী, কিন্তু মামলা নিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তা আনন্দ কুমার বুধবার বলছেন, ‘ওই ভয়াবহ ঘটনার পর থেকে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং সেটা কাউকেই জানাননি।’

ওই নারী এবং তার ওপর হামলাকারীরা একই গ্রামের বাসিন্দা বলে তিনি বলছেন। এখন ওই নারী এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে রাজি হয়েছেন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে প্রতি ১৩ মিনিটে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়, কিন্তু এ নিয়ে সামাজিক ট্যাবুর কারণে অনেক ঘটনাই চাপা পড়ে থাকে।

২০১২ সালে দিল্লিতে একজন ছাত্রীকে বাসে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা এবং তারপর ব্যাপক বিক্ষোভের পর থেকে দেশটিতে যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে কড়াকড়ি পদক্ষেপ বেড়েছে।

এরপর মৃত্যুদণ্ডের বিধান থেকে ধর্ষণ বিরোধী শক্ত আইন জারি করে দেশটির সরকার।

 

আরা পড়ুন: ভারতে ধর্ষণের শিকার মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থী

এনডিটিভি, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮


ভারতে মাধ্যমিক পরীায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে পুরস্কৃত হওয়া এক শিার্থী অপহরণের পর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত বুধবার হরিয়ানা রাজ্যের ওই শিার্থীকে কোচিংয়ে যাওয়ার পথ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ধর্ষণের শিকার হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে একটি বাসস্ট্যান্ডে ফেলে রেখে যায় ধর্ষকেরা। 

পুলিশ জানায়, উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ওই শিার্থী বুধবার তার গ্রামের কাছে একটি কোচিং সেন্টারে যাচ্ছিলেন। পথে একটি গাড়িতে করে আসা তিন ব্যক্তি ওই তরুণীকে জোর করে তুলে নেয় এবং রাস্তার পাশে একটি জমির ভেতর টেনে নিয়ে ধর্ষণ করে। সেখানে আরো কয়েকজন অপো করছিল, তারাও ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তরুণী অজ্ঞান হয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে কাছের একটি বাসস্ট্যান্ডে ফেলে রেখে যায়। অভিযুক্ত সবাই তরুণীর গ্রামের বাসিন্দা বলে জানায় পুলিশ।

এ দিকে তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, তারা থানায় ধর্ষণ মামলা করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। পরে তারা এফআইআর করেছে। অভিযুক্তরা হুমকি দেয়ার পর মামলা করার জন্য আমরা এক থানা থেকে অন্য থানায় ছুটে বেড়িয়েছি; কিন্তু কেউ আমাদের মামলা নেয়নি। এ বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা এনডিটিভিকে বলেন, ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে তারা একটি জিরো এফআইআর করেছেন এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। জিরো এফআইআরের অর্থ যে থানায় মামলা হয়েছে, অপরাধ স্থান সেটির আওতায় না হওয়ায় মামলাটি যথাযথ থানায় স্থানান্তর করা হবে।

শিার্থীর মা বলেন, সিবিএসই পরীায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় মোদিজি আমার মেয়েকে পুরস্কৃত করেছেন। আমি আমার মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার চাচ্ছি। পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো পদপে নেয়নি।

 

আরো পড়ুন: পুরুষরা যখন রাস্তাঘাটে যৌন উৎপীড়নের শিকার
বিবিসি 

‘আমি কলেজে ভর্তির ফর্ম জমা দিতে গিয়েছিলাম। লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম, হঠাৎই পেছন দিক থেকে কেউ আমার গোপনাঙ্গ যেন ছুঁয়ে দিল।’

বিক্রম শুধু এইটুকু বলেছে, আর সেটা শুনেই ওর পাশে বসা তিন বন্ধু হো হো করে হাসতে শুরু করল। তারপরে তারা বিক্রমকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আচ্ছা তারপরে কী হল!

একটু দম নিয়ে বিক্রম বলতে শুরু করেছিল, যতক্ষণ ওই ফর্ম জমা দেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম বারে বারে ওই ভদ্রলোক একই জিনিষ করছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল তাঁর বয়স ৫০ এর বেশিই হবে।

আর আমি তখন সবে কলেজে ভর্তি হচ্ছি। আমি ওঁকে যখন বললাম, যে আঙ্কল, ঠিক করে দাঁড়ান, তিনি অল্প হেসে বলেছিলেন, ‘কী এমন হল তোমার!’

দিল্লিতে চাকরিরত বিক্রমের সঙ্গে এই ঘটনা প্রায় আট বছর আগেকার। কিন্তু এখনও ঘটনাটা সম্পূর্ণ মনে আছে ওর।

‘ভদ্রলোকের বয়স বিবেচনা করে অনেকক্ষণ ধরে সহ্য করছিলাম। কিন্তু শেষে রেগে গিয়ে উল্টোপাল্টা বলেছিলাম,’ জানাচ্ছিলেন বিক্রম।

বিবিসিকে বিক্রম বলছিলেন যে, এতগুলো বছরে তিনি ওই ঘটনার কথা প্রথমবার খোলাখুলি কাউকে বলছেন যে, সংবেদনশীল হয়ে গোটা বিষয়টা শুনবে।

বিক্রম যখন সংবেদনশীলতার কথা বলছিলেন, তখন তার পাশে বসা তিন বন্ধু কোনো মতে হাসি চাপছিল।

উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা কপিল শর্মা এখন দিল্লিতে চাকরি করেন।

তিনি বিবিসিকে জানিয়েছেন, তার বয়স যখন আরও কিছুটা কম ছিল, সেই সময়ে বাসে বসার জায়গা দেয়ার নাম করে এক ব্যক্তি বারে বারে তাঁর গোপণাঙ্গে হাত দিচ্ছিল।

এই দুটি ঘটনাই বলে দিচ্ছে যে শুধু নারী বা কন্যাশিশুরা নয়, পুরুষরাও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

পুত্রশিশুদের ওপরে যৌন হয়রানির ঘটনা নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ প্রায় দায়ের হয় না বললেই চলে, তাই এর কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায় না।

তবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বলছে, যত সংখ্যক কন্যাশিশুর ওপরে ভারতে নির্যাতন হয়, প্রায় সমসংখ্যক পুত্রশিশুও যৌন হয়রানির শিকার হয়।

সেই সঙ্গে প্রকাশ্যে পুরুষদের দ্বারা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের যৌন হয়রানির ঘটনারও কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।

জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী প্রকাশ্যে গোপনাঙ্গে হাত দেয়ার মতো হয়রানি সবথেকে বেশি হয় দিল্লি, মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র, ভোপাল, মহারাষ্ট্রের নাগপুর এবং ছত্তিশগড়ের শিল্পশহর দুর্গ-ভিলাইনগরে ঘটে।

কিন্তু এই পরিসংখ্যানে কেবল পুরুষদের দ্বারা নারীদের গোপণাঙ্গে হাত দেওয়ার ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যের অসম্মতিতে গোপণাঙ্গে হাত দেয়া একটি মানসিক বিকৃতি, যাকে ফ্রোটেরিজম বলা হয় মনোবিজ্ঞানে। সেই কাজটি কেন করে একজন পুরুষ?

দিল্লির মনোবিজ্ঞানী প্রবীণ ত্রিপাঠি বলছেন, ‘এই মানসিক রোগের শিকার ব্যক্তিরা অন্যের সম্মতি না নিয়ে তার গোপণাঙ্গ ছুঁয়ে যৌন তৃপ্তি লাভ করেন।

যৌন নিপীড়নের বেশীরভাগ ঘটনাই নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য করা হয়। আর যেখানে কোনো পুরুষ অন্য পুরুষের ওপরে এই নিপীড়ন চালাচ্ছে, সেখানে নিজের শক্তি আরও বেশি করে প্রদর্শন করার একটা বিকৃত আনন্দ তো আছেই।’

হয়রানির শিকার হওয়া যে দুজনের সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে, তারা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বলছে পুত্রশিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ওপরে যে যৌন নির্যাতন হতে পারে, সেটা তাদের আত্মীয়, বন্ধুরা বিশ্বাসই করবেন না।

হেসে উড়িয়ে দেবেন, এই আশঙ্কায় পুরুষেরা কাউকে জানায়ই না ঘটনাগুলো।

আর পুরুষদের যেহেতু স্বাভাবিকভাবে শক্তিমান বলে মনে করা হয়, তাই তাদের ওপরে কেউ প্রকাশ্যে যৌন হেনস্থা করবে, এটা কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না। উল্টে হয়রানির শিকার হওয়া পুরুষদেরই কমজোরি মনে করবে।

বিক্রম সিং এবং কপিল শর্মাও ঠিক এই কথাই জানিয়েছেন বিবিসিকে।

ভারতে পুরুষদের ওপরে যৌন নির্যাতনের বিচার করার জন্য আলাদা কোনো আইন নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যা আর পুত্রশিশুদের ওপরে নির্যাতন অবশ্য ‘পকসো আইনে’ বিচার হয়।

আইনজীবীদের একাংশ মনে করেন যে ভারতীয় দণ্ডবিধির যে সব ধারায় যৌন হয়রানির বিচার হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে নারীদের ওপরে নির্যাতনের কথা রয়েছে। পুরুষরা যৌন হয়রানির শিকার হলে সেই ধারায় বিচার পেতে পারেন না।

কিন্তু আইনজীবীদেরই আরেকটি অংশ মনে করে ওই একই ধারায় পুরুষরাও যৌন হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ জানাতে পারেন। তদন্তও একই আইনেই সম্ভব।

মূল প্রতিবেদন বিবিসি হিন্দির নাভীন নেগি, পরিমার্জন করেছেন অমিতাভ ভট্টশালী


আরো সংবাদ



premium cement