১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্ত্রীর পরকীয়ার কথা জানতে পেরে যা করল স্বামী

স্ত্রীর পরকীয়ার কথা জানতে পেরে যা করল স্বামী - ছবি : সংগৃহীত

রুপোলি পর্দায় বলরাজ পারেননি। স্ত্রীর মনে পরপুরুষের ছায়া দেখে হিন্দি চলচ্চিত্র ‘হাম দিল দে চুকে সনম’য়ের নন্দিনীর প্রেমিককে খুঁজে দিয়েছিলেন বলরাজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার কাছে ‘হেরে’ স্বামীর কাছেই ফিরে এসেছিলেন নন্দিনী। রিল লাইফের সেই বলরাজকে গুনে গুনে দশ গোল দিলেন রিয়েল লাইফের সবলু শর্মা। প্রেমিককে শুধু খুঁজে দেয়াই নয়, তার সঙ্গে স্ত্রীর বিয়েও দিয়ে দিলেন তিনি! ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে।

বেশ কিছু দিন ধরে কানাঘুষোয় শুনেছিলেন স্ত্রী নীতুর পরকীয়ার কথা। স্থানীয় যুবক সুনীল চৌধুরির সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই প্রেমে মজেছিলেন তিনি। বাড়িতে বুঝিয়ে, অশান্তি করেও লাভ হয়নি। সারাদিনই ফোনে কথা, এমনকী লোকচক্ষুর আড়ালে দেখাও করতেন সুনীল ও নীতু। তাই আর তাদে্র মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চাননি আসানসোলের সবলু শর্মা। সোমবার স্থানীয় চন্দ্রচূড় মন্দিরে নীতু এবং তার প্রেমিক সুনীল চৌধুরির চার হাত এক করে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, একেবারে ‘অভিভাবক’র মতোই ‘বিদায়ী’ দেন চার বছর আগে বিয়ে করা স্ত্রীকে। নীতু ও সবলুর এক মেয়ে। মাথা পেতে তার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন আসানসোলের গোপালপুরের বাসিন্দা ওই যুবক।

গোটা ঘটনাটি গোপনে ঘটে। আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশী কেউই জানতে পারেনি বিয়ের কথা। আইন ও সমাজ এই ঘটনা মেনে নেবে না জেনেও বিয়েতে রাজি হয়ে যান নীতু। কিন্তু এমন ঘটনা কী আর চাপা থাকে! নীতু ও সুনীলের বিয়ের ছবি ও ভিডিও রেকর্ড হয়ে যায়। দ্রুত ছবি ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার পর স্বামী সবলু শর্মা মুখে কুলুপ আঁটে। বাইরের কাউকে বা ক্যামেরার সামনে কিছু বলতে চাননি তিনি।

নীতু অবশ্য জানিয়েছেন, স্বেচ্ছায় স্বামীর অনুমতি নিয়ে প্রেমিককে বিয়ে করেছেন তিনি। এই বিয়ের আগে স্বামী তাকে ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। ঘটনার হতবাক সকলে।

আরো পড়ুন :

পরকীয়া নিয়ে যে প্রশ্ন তুলেছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট

পরকীয়া প্রেম কি আদৌ অপরাধ, নাকি একটি সামাজিক সমস্যা?- এ প্রশ্ন তুলেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী একটি অপরাধ এবং যে পুরুষ এ ধরণের সম্পর্কে যুক্ত থাকবেন বলে আদালতে প্রমাণিত হবে, তার সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে দণ্ডবিধিতে।


কিন্তু প্রায় দেড় শ’ বছর আগে দণ্ডবিধিতে যুক্ত হওয়া ওই ধারার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে সর্বোচ্চ আদালত।

‘দেড়শ বছর আগে যেভাবে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে দেখা হতো, সেটা তো এখন হয় না। নারী-পুরুষ উভয়েই এক সঙ্গে কাজ করেন, হয়তো অফিসের প্রয়োজনে বাইরেও যান একসাথে। তাই মেলামেশার ধরণ যেমন পাল্টেছে, তেমনই বদল এসেছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও। পরকীয়া শব্দটাকে আগে যেভাবে দেখা হতো, এখন আমরা নিশ্চয়ই সেভাবে দেখি না। অন্যদিকে পরিবার, সমাজ - এগুলোকেও রক্ষা করার প্রয়োজন। তাই দেড়শ বছরের পুরনো আইনের এই ধারাটার বদল ঘটানো প্রয়োজন - সব দিকে সামঞ্জস্য রেখে’, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জী।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের এক বেঞ্চ বুধবার পরকীয়া প্রেম নিয়ে কোনো চূড়ান্ত নির্দেশ না দিলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

কেরালার এক বাসিন্দা কোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন যে, ৪৯৭ নম্বর ধারাটি দণ্ডবিধি থেকে বাতিল করা হোক।

সেই মামলার শুনানিতেই আদালত প্রশ্ন তোলে যে একটি সম্পর্কে দুজন জড়িত হলেও তাদের মধ্যে পুরুষ মানুষটির সাজা হবে, আর নারীর সাজা হবে না, এটা অনুচিত।

কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী ভারতী মুৎসুদ্দি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘প্রশ্নটা অনেকদিন থেকেই উঠেছে যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত পুরুষটির সাজা হবে অথচ নারীটির কোনো সাজা হবে না কেন? যে নারী তার স্বেচ্ছাচারের ফলে অন্য এক নারীর সংসার ভাঙ্গছেন, সেটা তো অমার্জনীয় অপরাধ। পুরুষটির যেমন সাজা দেয়ার বিধান রয়েছে, এরকম সম্পর্কে জড়িত নারীটিরও শাস্তি হওয়া উচিত বলেই আমি মনে করি।’

নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী, অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ-এর মতে, ‘এটা ঠিকই, যদি কোনও বিবাহিতা নারী নতুন করে কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তার দায়-দায়িত্ব পুরুষ মানুষটির যেমন, তেমনই ওই নারীরও। সেই দায়িত্ব তো নারীটিকে নিতেই হবে। সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম, তার ফল ভোগ করলাম, কিন্তু দোষী হল শুধু পুরুষটি, সেটা তো ঠিক নয়।’

যদি সে নারীর স্বামীর সম্মতি থাকে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কটিতে, তাহলে কি তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না? প্রশ্ন বিচারপতিদের।

তারা এটাও মন্তব্য করেছেন, এই ধারাটিতে শুধু বিবাহিত নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গ থাকবে কেন? কোনো পুরুষ তো অবিবাহিত নারী বা বিধবা নারীর সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আইনে কেন কিছু বলা থাকবে না?

এই প্রসঙ্গে মিজ মুৎসুদ্দির কথায়, ‘যদি কোনও নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হন, সে স্বামীর অনুমতি নিয়েই হোক বা বিনা অনুমতিতে, সাজা তাঁরও হওয়া দরকার। আইনটা থাকাই উচিত, না হলে পারিবারিক-সামাজিক যে মূল্যবোধগুলো রয়েছে, সেগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে এটাও ঠিক যে আইন করলেই যে সবসময়ে তা কার্যকর হয় তা না, কিন্তু আইনের বিধান থাকলে মানুষ অন্তত ভয় পাবে যে এধরণের সম্পর্কের ফলে তাঁদের জেল হতে পারে।’

এই মামলাটির শুনানি চলাকালীন ভারত সরকার জানিয়েছিল, ৪৯৭ ধারাটি তুলে দেয়া হলে বিবাহ এবং পরিবার নামের যে ব্যবস্থা সমাজকে ধরে রেখেছে, তা ধ্বংস হয়ে যাবে।

শাশ্বতী ঘোষের মন্তব্য, ‘নৈতিকতা থাকা দরকার। কিন্তু সবসময়ে কি তাকে আইন দিয়ে বেঁধে রাখা যায়? পরকীয়া প্রেম কি আদৌ অপরাধ হতে পারে? আমার তো মনে হয় না। মন দেয়া নেয়া যে কোনো নারী-পুরুষের মধ্যেই হতে পারে - তিনি বিবাহিত অথবা অবিবাহিত যাই হোন না কেন। সেটাকে ক্রিমিনালাইজ করা কখনই উচিত নয়।’

তবে আইনজীবী মি. চ্যাটার্জী মনে করেন, এই বিধানটি একেবারে তুলে দিলে তা ব্যভিচারের আগলটা খুলে দেবে গোটা সমাজে। সেটাও অনুচিত হবে।

তাই তিনি মনে করেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরকীয়া বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে নতুন আইনি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement