১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নরেন্দ্র মোদি নোবেল পুরস্কারের জন্য ‘মনোনীত’!

ভারত
মোদির চালু করা স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে ভারতের ১০ কোটি পরিবার উপকৃত হবে - ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ‘মনোনীত’ করে দিলেন তামিলনাড়ু বিজেপির সভাপতি তামিলিসাই সৌন্দর্যান। তার স্বামীও মোদিকে একই কারণে নোবেল পুরস্কার দিতে চান।

রাজ্য বিজেপির অফিস থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড়’ স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করেছেন। এ জন্য তামিলিসাই ও তার স্বামী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কিডনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. পি সৌন্দর্যান তাকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি চালু করায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ২০১৯ সালের নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন তামিলিসাই সৌন্দর্যান।

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, রোববার চালু করা ‘স্বপ্নদর্শী’ প্রধানমন্ত্রীর এ ‘বিরাট উদ্যোগ’ কোটি কোটি মানুষের জীবন বাঁচাবে, বিশেষত সুস্থ ও অসহায় মানুষ এর দ্বারা বেশ উপকৃত হবেন।

‘২০১৯ সালের নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের জন্য শেষ দিন সে বছরের ৩১ জানুয়ারি। প্রতিবছরের সেপ্টেম্বরে মনোনয়ন কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং সংসদ সদস্যরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নোবেলের জন্য মনোনীত করতে পারেন’, বলছে বিজ্ঞপ্তি।

ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচি থেকে রোববার দেশব্যাপী এই কমসূচি উদ্বোধনকালে মোদি বলেন, এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর সম্মিলিত জনসংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষ এর সুবিধা পাবে। এই কর্মসূচির জন্য আলাদা কোনো নিবন্ধনের দরকার নেই। জনগণ অনলাইনেই জানতে পারবেন তারা এই কর্মসূচির যোগ্য কিনা।

প্রাথমিকভাবে ভারতের ২৭টি রাজ্যে চালু করা হবে ‘মোদিকেয়ার’ নামের এই স্বাস্থ্য কর্মসূচি। এই খরচের ৬০ শতাংশ বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার আর ৪০ শতাংশ বহন করবে রাজ্য সরকার।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার বরাতে জানা গেছে, ভারতের ১০ কোটি পরিবার অর্থাৎ প্রায় ৫০ কোটি দরিদ্র মানুষকে ‘মোদিকেয়ার’ নামের এই কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়া হবে। কর্মসূচিটির আওতায় এসব মানুষের মারাত্মক রোগের চিকিৎসার লক্ষ্যে বাৎসরিক বরাদ্দ দেয়া হবে মাথাপিছু ৫ লাখ রুপি।

তবে সমালোচকরা জানিয়েছেন, ‘রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল ছাড়া তাড়াহুড়ো করে এই কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে।’

এদিকে হাসপাতাল ও চিকিৎসক সংকটে থাকা ভারতের স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার প্রচেষ্টার মধ্যে সর্বশেষ এই উদ্যোগ নিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজেপি সরকার জরুরি ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্য বেঁধে দেয়াসহ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, নিজেদের জিডিপির মাত্র এক শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে ভারত যা বৈশ্বিক হিসেবে সবচেয়ে কম।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ওষুধ কোম্পানিগুলোও সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। এ পদক্ষেপ তাদের ব্যবসাকে আরও বাড়াবে বলে আশা করছেন তারা।

আরো পড়ুন :
সরকারি কর্মচারীরা পতিতার চেয়েও খারাপ : বিজেপি এমপি
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ০৭ জুন ২০১৮
ভারতের উত্তর প্রদেশে ক্ষমতাসীন বিজেপির এক আইনপ্রণেতা সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, সরকারি কর্মচারীরা পতিতার চাইতেও খারাপ। ঘুষ চাইলে তাদের মুখে ঘুষি মারুন।

অশালীন মন্তব্যের জন্য বেশ কয়েকবারই আইনপ্রণেতা সুরেন্দ্র সিংয়ের নাম ভারতীয় গণমাধ্যমে এসেছে। মঙ্গলবার এক সমাবেশে তিনি বলেছেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের চেয়ে পতিতাদের চরিত্র অনেক ভালো। তারাতো অন্তত পয়সা নিয়ে আপনার কাজটি করে দেবে এবং মঞ্চে নাচবে। কিন্তু এই কর্মচারীরা আপনার কাছ থেকে পয়সা নিয়ে কাজ করে দেবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’

এর আগে গত মাসে ধর্ষণের জন্য মোবাইল ফোন ও অভিভাবকেরা দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন সুরেন্দ্র। তিনি বলেছিলেন, ‘তিন সন্তানের মাকে কেউ ধর্ষণ করবে না।’ এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তিনি রাবনের বোন সুপর্নখা বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

মুখ থুবড়ে পড়ছে মোদির হিন্দুত্ববাদ
আলজাজিরা, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিশাল জয় অর্জনে দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৯৮৪ সালের পর ভারতের পার্লামেন্টে সেবারই প্রথম নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল দলটি। তখন মনে হয়েছিল যে, ভারতে জাত-পাত এবং আঞ্চলিক বিবেচনার ভিত্তিতে মানুষ ও গোষ্ঠীগুলোকে বিচার করার বহুদিনের প্রচলিত ধারার পরিবর্তন হয়েছে এবং ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।

২০১৪ সালের সেই নির্বাচনের আগে মোটামুটিভাবে ভারতের প্রায় অর্ধেক আসনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিজেপি জনগণের কাছে বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে ভোট প্রার্থনা করে। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় দলটি নিজেদের এজেন্ডা বাদ দিয়ে মোদির ব্যক্তিগত দক্ষতা ও নম্র স্বভাবের ব্যাপারটি প্রচারে বেশি মনোযোগী হয়। তা ছাড়া বিজেপির একটি বড় অংশ খুবই সতর্কভাবে ‘নিম্ন জাত-বর্ণের দলের’ সাথে আঞ্চলিক জোট গঠন করার বিষয়টি গোপন রাখে। নিম্ন এবং অতীতে ‘অস্পৃশ্য’ হিসেবে পরিচিত দলিত বলে পরিচিত নিম্নবর্ণের মানুষ ও উপজাতি জনগোষ্ঠীর সাথে কৌশলগত জোট গঠনের ফলে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে বিজেপির সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও সমর্থন ধারণার চেয়েও বেড়ে যায়। এর ফলে ২০১৪ সালে যা হয়েছিল তা হলো, নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি বিশাল বিজয়।

আর অন্য দিকে দ্রুত ও ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অর্জনের অঙ্গীকারের মধ্যেই আটকে যায় মোদির ভবিষ্যৎ। ২০১৪ সালে নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় মোদির ‘মেক ইন্ডিয়া গ্রেট অ্যাগেইন’ স্লোগানের সাথে হিন্দু জাতীয়তাবাদ বা হিন্দুত্ববাদ যুক্ত হয়ে যায়। নির্বাচনের পর মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের সমালোচনা করা হয় এবং মৌখিক ও শারীরিকভাবে আক্রমণও করা হয়। কিন্তু হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা সব সময়ই একটি মৌলিক বাধার সম্মুখীন হয়েছে, আর তা হচ্ছে জাত বা বর্ণ।

হিন্দু জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য উচ্চ বর্ণের হিন্দুরা নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের সাথে ক্ষমতা তো দূরের কথা নিজেদের খাবারও ভাগ করতে চায় না। প্রকৃতপক্ষে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের বসতবাড়ির ভেতরে বর্ণ নিয়ে কথা বলাই নিষিদ্ধ। নিজেকে একজন চা বিক্রেতার সন্তান হিসেবে দাবি করা ও তেল উৎপাদনকারী সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে দাবি করা নরেন্দ্র মোদি অবশ্য হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের মধ্যে এই ধরনের প্রথার প্রচলনকে অস্বীকার করেছেন। সহাবস্থান নিশ্চিত করতে উচ্চ বর্ণের হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের মোদি গণতন্ত্রমনা হওয়ার আহ্বান জানালেও ভারতজুড়ে বিভিন্ন বর্ণের হিন্দুদের মাঝে ভারসাম্য সৃষ্টি মোটেও সহজ কাজ নয়।

ঐতিহাসিকভাবে নিচু অবস্থানে থাকা হিন্দুদের উন্নতির ব্যাপারে ২০১৪ সাল থেকে আনা মোদির বিভিন্ন প্রস্তাব বিজেপির উচ্চবর্ণের হিন্দু ভোটব্যাংককে কেবল রাগান্বিতই করতে পেরেছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে বর্ণভিত্তিক বিভিন্ন সহিংস ঘটনার কারণে দলিত জনগোষ্ঠীও বিজেপির থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তা ছাড়া মোদির ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ব্যর্থ করে দেয়ার পেছনে দেশটির ভৌগোলিক অবস্থারও দায় রয়েছে। এতদিন কেবল উত্তর ও পশ্চিম ভারতে কেন্দ্র করেই বিজেপির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর দলটি জম্মু ও কাশ্মিরসহ ভারতের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে প্রভাব বিস্তারে মনোযোগ দেয়। দেশের যেখানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সম্ভব হয়নি সেখানেই বিজেপি আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে জোট বেঁধেছে।

কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক সাফল্যের দেখা মিললেও একক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে নয় বরং বিভক্ত ভারতের দৃশ্য ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। ভারতের রাজ্যগুলো ভাষাগতভাবে এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক আঞ্চলিক সীমানার ভিত্তিতে পুরোপুরি বিভক্ত, যা কি না হিন্দু জাতীয়তাবাদ অথবা আধুনিক ভারতের ধারণার সম্পূর্ণ উল্টো।

অন্য দিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারে দেয়া প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করতে পারছে না মোদি সরকার। ভারতের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের প্রবৃদ্ধিকে অতিক্রম করতে পারেনি এবং ২০১৪ সাল থেকে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়টি কম বেশি অপরিবর্তনশীল রয়েছে।

এ দিকে বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস পার্টিকে জোট মিত্রদের জন্য অবিশ্বস্ত দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মোদি। এর অর্থ এই যে, ২০১৯ সালের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন হওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন তিনি। যদিও বিজেপির কৌশল নির্ধারক ও পণ্ডিতরা ২০১৯ সালের নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণে কাজ করছেন, তারপরও তাদের এটা চিন্তা করা উচিত যে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরও কেন এবং কিভাবে গত চার বছর ধরে ধীরে ধীরে হিন্দু জাতীয়তাবাদ ব্যর্থ হয়ে গেল। ভারতের মতো দরিদ্র ও বহুধাবিভক্ত একটি দেশের রাজনীতিকে ধর্মীয়করণের একটি সীমা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement