২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতে চার কারণে লাফিয়ে বাড়ছে হৃদরোগে মৃতের সংখ্যা

ভারত
ভারতে হৃদরোগে মৃতদের অর্ধেকই ৭০ বছরের কম বয়সী। - ছবি: সংগৃহীত

ভারতে দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা। সারা দেশে মোট মৃত্যুর ১৫ শতাংশ আগে ছিল হৃদরোগের কারণে। সেটা ১৯৯০ সাল। তবে ২০১৬ সালে তা একলাফে বেড়ে ২৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। যার অর্থ এখন একশ’ জনে অন্তত ২৮ জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এর কারণ হিসাবে উঠে আসছে মোট চারটি বিষয়। লবণ, চিনি ও ফ্যাট জাতীয় খাবার অতি বেশি পরিমাণে খাওয়া ও চতুর্থ কারণ বায়ু দূষণ। ‘দ্য ল্যান্সেট গ্লোবাল হেলথ জার্নাল’-এ এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতে হৃদরোগে মৃতদের অর্ধেকই ৭০ বছরের কম বয়সী। যার অর্থ হৃদরোগের সাথে বয়সের সম্পর্ক যেন রীতিমতো তলানিতে এসে ঠেকছে। কমবয়সীদের মধ্যে এই রোগ থাবা বসাচ্ছে।

সমীক্ষা বলছে, ১৯৯০ সালে ভারতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ। ২০১৬ সালে প্রতিবছরে তা বেড়ে হয়েছে ২৮ লাখ।

ভারতে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে আক্রান্তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে কেরল, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্য। তারপরই রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য।

এদিকে স্ট্রোকে আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি হয় পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, গোয়া, কেরল, পাঞ্জাব, হিমাচলপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর মতো রাজ্য।

শুধু এই চারটি ফ্যাক্টরের পাশাপাশি অলস জীবনযাপন, নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসা, মোবাইল ফোনের বেশি ব্যবহারকেও গবেষকরা মুখ্য কারণ হিসাবে জানিয়েছেন। এছাড়া ধূমপান, তামাকজাত পণ্য সেবন করা, মদ্যপানের মতো অভ্যাস তো রয়েইছে। সূত্র : ওয়ান ইন্ডিয়া

আরো পড়ুন :
হৃদরোগ ও কিছু পরামর্শ
আমাদের দেশে হৃদরোগ বিশেষ করে ‘করোনারি হৃদরোগ’ দ্রুত বেড়েই যাচ্ছে। সারা বিশ্বে হৃদরোগ কিভাবে, কেন হচ্ছে, কিভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়, নানা গবেষণায় নতুন অনেক তথ্য বেরিয়ে আসছে। ছোট্ট একটা হৃদপিণ্ড রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ও খাবারের সারবস্তু পাম্প করে রক্তনালীর মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়। তেমনি হৃদপিণ্ড বাঁচার জন্য, অর্থাৎ তার মাংসপেশির শক্তি অর্জনের জন্য তিনটি প্রধান রক্তনালী আছে। এগুলোর নামই হচ্ছে ‘করোনারি আর্টারি বা ধমনী। এগুলো ভেতরেই চর্বি জমে জমে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে ‘অ্যানজাইনা পেকটরিস’ বা ঘাতক রোগ ‘হার্ট অ্যাটাক’ হয়।

হার্ট অ্যাটাকে শুধু ৪০-৬০ বছর বয়সী লোকেরাই আক্রান্ত হচ্ছে না। ইদানীং ১৮ বছর বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছে, যাকে আমরা ‘ইয়ং এম আই’ বলছি।

মানুষের খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন হচ্ছে। আজকাল ফাস্টফুড যেমন বার্গার, চিকেন প্যাটিস ইত্যাদি বেশি খাচ্ছে। ফলে খাদ্য হজমের মধ্যে ঘটছে বিভ্রান্তি। অ্যানজাইম সঠিকভাবে নিঃসরণ হচ্ছে না। খাদ্যাভ্যাস হচ্ছে অনিয়মিত, হচ্ছে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি।
কারো মতে-আবেগ, অবসাদ বা রাগের মনোভাব হৃদরোগের জন্য ঝুঁকি। কিন্তু কখনো কখনো ইতিবাচক আবেগ হৃদপিণ্ডকে নাকি সুস্থও রাখে। যাদের দেহে খুবই নিম্ন রক্তচাপ তাদের আবার হৃদরোগের ঝুঁকিও কম। আবার যারা সুস্থ সবল মানুষ হৃদরোগে ভোগার কোনো ইতিহাস নেই তারা যদি খুবই দুঃশ্চিন্তায় বা স্ট্রেসে থাকেন তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

অনেকে বলেন, পানি পান কম করলে হৃদরোগ হয়। সত্যি নয়। কিন্তু সবার প্রচুর পানি পান করা উচিত সুস্বাস্থ্যের জন্য।

অনেকের ধারণা, দেহে রক্তের পরিমাণ কম থাকলে হৃদরোগের সমস্যা সৃষ্টি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে- শ্বেতকণিকা বা লোহিত কণিকায় হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতায় হৃদরোগের সমস্যা হয় না। কিছু দেহে অবশ্যই স্বাভাবিক মাত্রার হিমোগ্লোবিন প্রয়োজন।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের বেশি। কারণ, মহিলারা ৪৫ বছর পর্যন্ত তাদের দেহের হরমোনেই সুরক্ষিত। কিন্তু ৪৫ বছর পর মাসিক বন্ধ হওয়ার পরপরই পুরুষদের সমান ঝুঁকিতে থাকেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলারা ডায়াবেটিসমুক্ত মহিলাদের চেয়ে প্রায় পাঁচ-আট গুণ বেশি ঝুঁকিপ্রবণ হৃদরোগের ক্ষেত্রে।

এ ছাড়া, তরুণ বয়সীদের মধ্যে ইদানীং বেশি হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। এর নানা কারণ আছে। বিশেষ করে ধূমপান, জ্যাংক ফুড বা জঞ্জল খাবার, অলস জীবনযাত্রা, ব্যায়াম না করা, দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত ইত্যাদি কারণে বেশি হারে হৃদরোগ হচ্ছে। আবার কারো মতে চা, কফি বেশি পানে ‘হার্ট অ্যাটাক’ হয়। কিন্তু এ নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। এখন পার্থক্য চা বা কফি হার্ট অ্যাটাকের কারণ নয়।
যারা খুব মোটাসোটা, ভুঁড়িওলা তারা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির মধ্যেই বাস করেন। কিন্তু ক্ষীণ বা চিকন ব্যক্তিরাও হৃদরোগে আক্রান্ত হন যদি তাদের পারিবারিক ইতিহাস বা জিনগত প্রাক-রোগপ্রবণতা থাকে।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যারা হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগে ভুগে তারা হৃদরোগে বেশি ঝুঁকিপ্রবণ নয়। কিন্তু ডায়াবেটিসযুক্ত যেকোনো ব্যক্তি একজন ডায়াবেটিসমুক্ত ব্যক্তির চেয়ে অধিকতর ঝুঁকিপ্রবণ। নিয়ন্ত্রণ না থাকলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেক।

যারা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত তাদের বুকের ব্যথা অসহনীয়। বুকের মাঝখানে প্রচণ্ড ব্যথা। বা দিকে বা সারা বুকে ছড়িয়ে যায়। গলা এবং বাম হাতেও ছড়ায়। রোগী প্রচণ্ড ঘামে। বুকে ভারী চাপ অনুভূত হয়। কখনো পেটে গ্যাস বা পেটে ব্যথা নিয়ে আসে। গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা বলে মনে হয়। অবহেলা না করে একটি ইসিজি করিয়ে নিলেই হার্ট অ্যাটাক বা গ্যাস্টিকের ব্যথা কি না ধরা যায়।

কারো যদি ব্যায়াম করতে গিয়ে বুকে ব্যথা করে বা দু’তিনতলা উঠতে গিয়ে বুকব্যথা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন কিংবা ব্যায়াম করলেই তীব্র বুকে ব্যথা যা বিশ্রামে বা ওষুধ খেলেই কমে যায়- তবে বুঝতে হবে হৃদরোগের লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। অনেকেই মনে করেন, বাম হাতে ব্যথা হলেই হৃদসমস্যা আসলেই সঠিক নয়। বাম হাতের ব্যথা ঘাড়ের হাতের সমস্যায়ও হতে পারে।
আপনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছেন কি না তা অনেক সময় আগে থেকে আভাস পেতে পারেন। মাস বা বছর আগেও আপনি বুকে সামান্য ব্যথা বা শ্বাসকষ্ট পেতে পারেন। সন্দেহ হলেই বিলম্ব করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

যেসব ব্যক্তি মোটেই ব্যায়াম করেন না, তারা সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার পর বা ব্যায়াম করার পর দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলেই যে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত তা কিন্তু ভাবা যাবে না। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

হৃদরোগের জন্য নানা পরীক্ষা আছে। যেমন ইসিজি, কার্ডিয়াক অ্যানজাইম, এক্স-রে, ইকো, ডপলার ইকো, ইটিটি, থেলিয়াম আপটেক টেস্ট, করোনারি এনজিওগ্রাম ইত্যাদি।

বিশেষ করে রুটিন চেকআপে ব্লাড সুগার ও ব্লাড কোলেস্টেরল জানতে হবে। আজকাল গবেষণায় দেখা গেছে, অল্প বয়সেই রক্তে কোলেস্টেরল জমা হয়। রক্তচাপ সঠিক নিয়মে মাপতে হবে। ত্রিশোত্তীর্ণের পরপরই কিংবা উপসর্গ দেখা দিলে রক্তচাপ মাপবেন। একজন উচ্চ রক্তচাপ নিয়েও সাধারণভাবে স্বাস্থ্যবান থাকতে পারেন।

আজকাল হৃৎপিণ্ডের ধমনী বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে আগে ভাগেই নিয়মিত কার্ডিয়াক ইভালুয়েশন বা হৃদমূল্যায়ন, ইসিজি, টি-এমটি, স্ট্রেড থেলিয়াম স্ক্যান ও কার্ডিয়াক সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম স্কোর দেখে জেনে নেয়া যায়।

করোনারি হৃদরোগ মারাত্মক হৃদরোগ। এ হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে ধূমপান ত্যাগ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যাভাস পরিবর্তন, চর্বিমুক্ত খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেলে তার ওষুধ চিকিৎসা, ইন্টারভেনশন চিকিৎসা বা অপারেশন প্রয়োজন হতে পড়ে।

হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন ফল খাওয়া উচিত। তেল হচ্ছে হার্টের বাজে খাবার। কোলেস্টরল কমানোর জন্য খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হাঁটতে হবে। কারো কারো মতে কাজু বাদাম ভালো। বর্তমানে যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন হৃদরোগ প্রতিহত করে। বলা যায়, সব তেলই মন্দ। কারো মতে জলপাই তেল হৃদরোগের সমস্যা অনেক কম করে। এ ছাড়া, বয়স বাড়বে-আপনিও দেহঘড়ির (বায়োলজিক্যাল ক্লক) নিয়ম মেনে চলতে থাকুন। উচ্চরক্তচাপে নিজের পছন্দমত কোনো ওষুধ না খাওয়াই উচিত। বেশির ভাগ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ভাজা খাবার, মসলা জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড পরিহার করুন। কারণ, আমাদের দেশের মানুষ হৃদরোগ ছাড়া অন্য জটিল রোগেও বেশি আক্রান্ত হন।

একজন লোক হার্ট অ্যাটাকে সাথে সাথেই আপনি তার জিহ্বার নিচে ‘জিটিএন’ বডি এবং এসপিরিন খাইয়ে দ্রুত হাসপাতালে পাঠিয়ে সাহায্য করতে পারেন। কারণ, হার্ট অ্যাটাকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সর্বোচ্চ হার্টের ক্ষতি হয়।

সুতরাং, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। ব্যায়াম করুন, ধূমপান ত্যাগ করতেই হবে। চল্লিশ হওয়ার সাথে সাথে বছর বছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে হাঁটুন, ওজন ঠিক রাখুন। হার্ট ভালো থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল