২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

১৩ জন মানুষ-মারা বাঘিনীকে বাঁচানোর আবেদন খারিজ

১৩ জন মানুষ-মারা বাঘিনীকে বাঁচানোর আবেদন খারিজ - সংগৃহীত

ভারতে মানুষ-মারা একটি বাঘিনীকে যেন গুলি করে হত্যা না করা হয়, এ মর্মে করা এক আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

কর্মকর্তারা বলছেন, মহারাষ্ট্র রাজ্যে বনভূমির কাছে গরুছাগল চরানোর সময় পাঁচজন গ্রামবাসী নিহত হয়েছে ওই বাঘিনীটির হাতে।

আদালত বলেছে, বনরক্ষীরা যদি বাঘটিকে ধরতে ব্যর্থ হয় এবং গুলি করে হত্যা করতে বাধ্য হয় তাহলে আদালত এতে হস্তক্ষেপ করবে না।

বনরক্ষীরা বাঘটিকে ধরার পরিকল্পনা করার পর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মীরা আদালতে আপীল করেন যে, বাঘিনীটির প্রতি দয়া দেখানো হোক। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে একে প্রাণভিক্ষার আবেদন বলে অভিহিত করা হয়।

সংরক্ষণকর্মীরা বলেন, বন বিভাগ এটা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে গ্রামবাসীদের মৃত্যুর জন্য বাঘিনীটিই দায়ী।

ভারতে কিছু সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, বাঘিনীটির হাতে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি মাত্র বাঘের হাতে এত লোক আক্রান্ত হওয়া খুবই অস্বাভাবিক।

ভারতে প্রাণী সংরক্ষণ নীতির ফলে বাঘের সংখ্যা এখন বাড়ছে কিন্তু বনভূমির পরিমাণ কমে আসায় তাদের সাথে মানুষের সংঘাতও বাড়ছে।

 

বাঘের থাবায় ৩৩০ জন, মানুষের হাতে ৩১ বাঘ নিহত
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ, ২৮ জুলাই ২০১৮

সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে গত ১৮ বছরে ৩৩০ জন মানুষ মারা গেছেন। নিহতদের বেশির ভাগ বাওয়ালি, জেলে, মৌয়ালি ও জ্বালানি কাঠ আহরণকারী। অন্য দিকে ১৮ বছরে মানুষের হাতে ৩১টি বাঘ প্রাণ হারায়। আর বার্ধ্যকজনিত কারণে মারা গেছে ১৩টি বাঘ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনের প্রতিবেশ চক্রের পরিবর্তন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, হরিণ পাচার ও শিকার এবং খাদ্য সঙ্কটসহ নানা কারণে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

বাংলাদেশে বাঘ সংরক্ষণ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বন অধিদফতরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক (অব:) ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তপন কুমার দে এ তথ্য জানান।  তিনি জানান, তথ্য ও উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত এক দশক আগে প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ৩০-৫০ জন মানুষ বাঘের আক্রমণে মারা যায়। তবে সম্প্রতি বন বিভাগ ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সম্মিলিত কর্মতৎপরতা বৃদ্ধিতে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্বে জীবনহানির ঘটনা কমছে। 

ড. তপন কুমার দের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০০ সালে বাঘের আক্রমণে মারা গেছেন ৩০ জন, ২০০১ সালে ১৯ জন, ২০০২ সালে ২৮ জন, ২০০৩ সালে ২১ জন, ২০০৪ সালে ১৫ জন, ২০০৫ সালে ১৩ জন, ২০০৬ সালে ছয়জন, ২০০৭ সালে ১০ জন, ২০০৮ সালে ২১ জন, ২০০৯ সালে ৩২, ২০১০ সালে ৫০ জন, ২০১১ সালে ৪২ জন, ২০১২ সালে ২৯ জন, ২০১৩ সালে আটজন, ২০১৪ সালে চারজন মারা গেছেন। অন্য দিকে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কেউ মারা যাননি। তবে এ দুই বছরে ১৩টি বাঘের আক্রমণের ঘটনায় দু’জন আহত হয়েছেন। ১২টি গবাদিপশু বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারায়। ২০১৭ সালে বাঘের আক্রমণে দু’জন মারা গেছেন। 

এ দিকে ২০১৮ সালে মানুষের আক্রমণের শিকার হয়ে একটি বাঘ মারা গেছে। চলতি বছরে ২৪ জানুয়ারি বাঘটি লোকালয়ে ঢুকলে স্থানীয়রা বাঘটি মেরে ফেলেন। এভাবে মানুষের হাতে ২০০০ সালে পাঁচটি, ২০০১ সালে একটি, ২০০২ সালে তিনটি, ২০০৩ সালে চারটি, ২০০৪ সালে তিনটি, ২০০৭ সালে তিনটি, ২০০৮ সালে একটি, ২০০৯ সালে তিনটি, ২০১০ সালে দু’টি, ২০১১ সালে একটি, ২০১৪ সালে দু’টি, ২০১৫ সালে দু’টি বাঘ মারা গেছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে লোকালয়ে চলে আসা কোনো বাঘ মারা যায়নি। এ ছাড়া বাঘের আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে চোরা শিকারীর উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় র্যাব ও পুলিশের হাতে বাঘের চামড়া ধরা পড়েছে। 

সারা বিশ্বে বন উজাড় ও শিকারি কর্তৃক বাঘ হত্যার ফলে বর্তমানে প্রাণীটি মহাবিপন্ন প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাঘ পৃথিবীর ১৩টি দেশে এখনো অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, বার্মা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, ভুটান, নেপাল ও রাশিয়া অন্যতম। বাঘের আটটি উপপ্রজাতির মধ্যে ইতোমধ্যে বালিনিজ টাইগার, জাভানিজ টাইগার ও কাম্পিয়ান টাইগার বিশ্ব হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে বাঘের পাঁচটি উপপ্রজাতি কোনো রকমে টিকে আছে।

এগুলো হলো- বেঙ্গল টাইগার, সাইবেরিয়ান টাইগার, সুমাত্রান টাইগার, সাউথ চায়না টাইগার এবং ইন্দো-চায়না টাইগার। ১৯০০ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখ। বর্তমানে বাঘের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ৯০০টি। এর প্রায় অর্ধেকেরও বেশি বাঘ রয়েছে ভারতে। বাঘ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঘের সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ার এই প্রবণতা চলমান থাকলে কয়েক দশকে পৃথিবী থেকে এ প্রাণীটি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement