২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসলামাবাদের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে ওয়াশিংটনের : ইমরান খান

ইসলামাবাদের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে ওয়াশিংটনের : ইমরান খান - সংগৃহীত

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তার দেশ মার্কিন নীতি মেনে চলতে বাধ্য নয় এবং ইসলামাবাদকে ভৃত্য মনে করা ওয়াশিংটনের উচিত হবে না। সম্প্রতি ইসলামাবাদে আমেরিকার ব্যাপারে তার সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একথা বলেন তিনি।

ইমরান খান বলেন, এখন সময় এসেছে ওয়াশিংটনের উচিত ইসলামাবাদকে বন্ধু মনে করা ভৃত্য নয়। কারণ আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সেদেশে মোতায়েন মার্কিন সেনাদেরকে বের করে আনার জন্য ইসলামাবাদের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে ওয়াশিংটনের।

সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে আমেরিকার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কথা উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তান যুদ্ধে পাকিস্তানের প্রায় আট হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হলেও আমেরিকা ইসলামাবাদকে মাত্র দুই হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এমন সময় আমেরিকা সম্পর্কে এসব বক্তব্য দিলেন যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইমরান খানের সাথে টেলিফোন সংলাপে ইমরানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

মার্কিন সরকার সম্প্রতি পাকিস্তানের সেনা সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে। একইসাথে ইসলামাবাদের প্রতি আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের পক্ষ থেকে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যেও কাজ করছে ওয়াশিংটন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বহু বছর ধরে হোয়াইট হাউজের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন তার দেশ আর মার্কিন নীতি মেনে চলতে বাধ্য নয়। কারণ ২০০১ সালে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকা তার অশুভ লক্ষ্য ও বিভিন্ন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য অনবরত পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে। পাকিস্তানের আগের সরকারগুলো এ অঞ্চলের ঘটনাবলীতে মার্কিন নীতি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করলেও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার বিষয়ে ওয়াশিংটন সবসময়ই দ্বিমুখী নীতি গ্রহণের জন্য ইসলামাবাদকে অভিযুক্ত করে আসছে।

আফগানিস্তানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তান সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ তুলে আমেরিকা ওই দেশটির ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি  অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা হয় কমিয়ে এনেছে অথবা বন্ধ করে দিয়েছে।

এ অবস্থায় ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ পার্টি সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিজয় লাভের পর সাবেক সরকারগুলোর বিপরীত অবস্থানে গিয়ে এই দলের নেতা প্রথম সংবাদ সম্মেলনে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ওয়াশিংটনের ব্যাপারে তাদের নীতিতে বিরাট পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিষয়ক বিশ্লেষক রাশেদ আব্বাস নাকাভি বলেছেন, ইমরান খানের ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে চলেছে এবং তিনি আমেরিকার পরিবর্তে আফগানিস্তানের সাথে সহযোগিতা আরো জোরদার করবেন।

হোয়াইট হাউজ পাকিস্তানের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করলেও আমেরিকার কোনো কোনো কর্মকর্তা মনে করেন, আফগানিস্তানে ওয়াশিংটনের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা নির্ভর করছে পাকিস্তানের সহযোগিতার ওপর। এ অবস্থায় পাকিস্তানের সোথে সহযোগিতা জোরদার করার পাশাপাশি আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

তিন বেডরুমের বাসায় ইমরান খান, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হবে বিশ্ববিদ্যালয়!
ডন ও এনডিটিভি, ২০ আগস্ট ২০১৮

তিন বেডরুমের একটি বাসায় থাকবেন ইমরান খান। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকবেন না তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার পরিকল্পনা আছে তার!

রবিবার পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেওয়া প্রথম বক্তব্যে এসব কথা বলেন ইমরান খান। ওই বক্তব্যের মাধ্যমে ‘নয়া পাকিস্তানের’ রোডম্যাপ সম্পর্কে ধারণা দেন তিনি।


বক্তব্যের শুরুতেই দেশটির দুর্নীতি, দরিদ্রতা, অপচয় নিয়ে কথা বলেন ইমরান। জোর দেন অপচয়রোধ করে শিশুস্বাস্থ্য, শিক্ষায় খরচ বাড়ানোর। নিজেও সব ধরনের কম খরচ করার ঘোষণা দিলেন তিনি।

ইমরান খান জানান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কাজ করেন ৫২৪ জন কর্মী। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আগেই বলেছি, আমি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকব না। মিলিটারি সেক্রেটারির একটি বাসায় থাকব। বাসাটি তিন বেডরুমের। দুজন কর্মী রাখব। দুটি গাড়ি রাখব। দুই গাড়ি কেন রাখব, কারণ বলা হয়েছে নিরাপত্তার বিষয়টি আছে।’

ইমরান খান বলেন, ‘আসলে আমি আমার নিজের বাড়িতেই থাকতে চেয়েছিলাম। আমি পয়সা খরচ করতে চাইছিলাম না। কিন্তু এজেন্সি বলছে, আমার প্রাণের আশঙ্কা আছে, নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা আছে। এ কারণে আমি সেখানে থাকছি। নয়তো আমি আরামেই বানিগালায় থাকতে পারতাম। কোনো খরচই হতো না।’

কেবল দুটি গাড়ি রাখার পাশাপাশি বিলাসবহুল অন্য গাড়ির ব্যাপারেও নিজের পরিকল্পনার কথা জানান ইমরান খান। বুলেটপ্রুফ এসব গাড়ি তিনি বিক্রি করে দিতে চান। নিলামে এসব গাড়ি বিক্রি করা হবে জানিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ীদের ডাকব এবং তাদের কাছে এগুলো বিক্রি করব।’

প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান বাসভবনকে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চান ইমরান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার ইচ্ছা আছে।’ দেশটির গভর্নর হাউসগুলোর খরচ কমানোর ব্যাপারেও উদ্যোগ নেবেন ইমরান। সরকারি খরচ-সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি একটি কমিটিও করেছেন।

দেশের উদ্দেশে ইমরান খান বলেন, ‘নয়া পাকিস্তানের নয়া চিন্তাও প্রয়োজন। আমাদের চিন্তা করতে হবে, আমরা কী রেখে যাচ্ছি।’ বিদেশে পাচার হওয়া অর্থও দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইমরান খান।


আরো সংবাদ



premium cement