২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইমরানের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেবেন মোদি!

ইমরানের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দেবেন মোদি! - ছবি : সংগৃহীত

চলতি বছরের শেষে সার্ক সম্মেলনের আয়োজন করার জন্য কোমর বাঁধছে পাকিস্তান। কূটনৈতিক শিবির সূত্রের মতে, বিষয়টি ইমরান খানের ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে একাধারে মর্যাদা রক্ষা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর কাছে পৌঁছনোর প্রশ্ন। ২০১৬-য় ভারতের
সার্বিক প্রয়াসে ভণ্ডুল হয়ে গিয়েছিল সার্ক। উরি হামলার কথা বলে বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সার্ক বয়কট করেছিল ভারত।

প্রশ্ন হলো, এ বারের সার্কে যোগ দিতে পাকিস্তানের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইসলামাবাদে যাবেন কি না। এখন পর্যন্ত যা খবর, ইমরান খানের পক্ষ থেকে শীর্ষ পর্যায়ের কোনো রাজনৈতিক নেতাকে দূত হিসেবে ভারতে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের দিক থেকে ভারতকে সার্কের মঞ্চে হাজির করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। কারণ এটি হবে সাম্প্রতিক অতীতে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি-প্রয়াসের সবচেয়ে বড় এবং প্রথম বিজ্ঞাপন। যা ইমরান ছাড়তে নারাজ। কিন্তু সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, এখন পর্যন্ত সার্কে যোগ দেয়ার ব্যাপারে অনীহা রয়েছে মোদির।

নভেম্বরে গোটা ভারতে ভোটের মরসুম শুরু হয়ে যাবে। তিনটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন এবং তার পরেই লোকসভা। সূত্রের মতে, এমন স্পর্শকাতর সময়ে ইসলামাবাদে গিয়ে কোনো রকম ঝুঁকি নিতে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী। আমেরিকা তথা পশ্চিমী দুনিয়াকে কিছুটা খুশি করতে পাকিস্তানের সঙ্গে আস্থাবর্ধক পদক্ষেপগুলি নিঃশব্দে বজায় রেখে যাওয়া (যেমন, সে দেশের নাগরিকদের মুক্তি দেয়া) এক বিষয়।
কিন্তু ইসলামাবাদের মাটিতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ফেরা সম্পূর্ণ অন্য কথা। এখন পর্যন্ত দিল্লির ঘোষিত অবস্থান— সন্ত্রাস
ও আলোচনা একসঙ্গে চলতে পারে না।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হয়তো পাকিস্তানে সার্ক সম্মেলন করে ফিরলেন। তার পরেই দেশের কোথাও অথবা কাশ্মীরেই সন্ত্রাসবাদী হামলা হলো। তাতে সরকারের চরম মুখ পুড়বে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল পাঠানকোটের সেনা
ছাউনিতে হামলার সময়ে।’’ পঠানকোট হামলার এক সপ্তাহ আগে বিনা আমন্ত্রণেই মোদি গিয়েছিলেন লাহোরে তৎকালীন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পারিবারিক অনুষ্ঠানে।

ভোটের আগে এমন কোনো ‘ভুল’ সরকার আর করতে চাইবে না বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

আরো পড়ুন :

যে গুণে ক্ষমতার মসনদে ইমরান খান

পাকিস্তানকে যিনি ক্রিকেটে একদিন বিশ্বসেরা করেছিলেন, সেই ইমরান খানই এবার হতে যাচ্ছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী। বাইশ গজ থেকে রাজনীতির সর্বোচ্চ মসনদে। উপমহাদেশের প্রথম কোনো ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার নজির সৃষ্টি করতে চলেছেন ‘কিং খান’। ফের একবার প্রমাণিত হয়ে গেল, তিনি শুধু মাঠের মধ্যে নয়, মাঠের বাইরেও দারুণ সপ্রতিভ এক অধিনায়ক। নতুন ইনিংস শুরু করার আগে ৬৫ বছর বয়সী ইমরানকে ঘিরে তাই আবেগে উদ্বেল পাকিস্তানের ক্রীড়া মহল।

দুর্দান্ত ক্রিকেটার হিসেবেই বিশ্বের সামনে প্রথম পরিচিত হয়েছিলেন ইমরান খান। কিন্তু তারপর থেকে কখনো তিনি প্লেবয়, কখনো সমাজসেবী, কখনো রাজনীতিবিদ, আবার কখনো বা চরমপন্থী নাগরিক। ইমরান খানকে একটি পরিচয়ে বেঁধে রাখা কঠিন।


১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন ইমরান খান। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। সাতের দশকের শেষ দিকের বেশিরভাগটাই তার কেটেছে লন্ডন শহরে। পড়াশুনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট ছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে লাহোরের হয়ে সারগোরার বিরুদ্ধে প্রথম ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন ইমরান। ক্রিকেটের প্রতি ইমরান খানের আগ্রহ এবং লড়াকু মনোভাবই তাকে দ্রুত স্থান করে দেয় পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলে। ১৯৭০ সালে যখন তিনি পাকিস্তান দলে ডাক পান, তখনো তার পড়াশোনাই শেষ হয়নি। অসামান্য প্রতিভার দৌলতে সাফল্যের শিখর স্পর্শ করতে খুব বেশি সময় লাগেনি ইমরানের। সাতের দশকে কপিল দেব, ইমরান খান, রিচার্ড হ্যাডলি ও ইয়ান বোথাম ছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা চার অলরাউন্ডার। ৮৮ টেস্টে ৩ হাজার ৮০৭ রান ও ৩৬২টি উইকেট পান ইমরান। আর ১৭৫টি ওয়ান ডে ম্যাচে তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৩ হাজার ৭০৯ রান ও ১৮২ উইকেট। তবে সেরা সাফল্য অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ইমরানের অধিনায়কত্বে পাকিস্তানের একমাত্র বিশ্বকাপ জয়। ১৯৯২ সালের সেই পাকিস্তান দলে প্রতিভা থাকলেও টিম হিসেবে তারা ছিল ছন্নছাড়া। সেই দলকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে প্রথমবার বিশ্বকাপ এনে দেয়ার পর জাতীয় নায়ক হয়ে ওঠেন ইমরান।

ক্রিকেট থেকে অবসরের পর অন্য ক্রিকেটাররা যেখানে কমেন্ট্রি বক্স বা কোচিংয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ খুঁজে নেন, সেখানে ১৯৯৬ সালে ইমরান পা বাড়ান ঘোর অনিশ্চয়তায় ঢাকা পাকিস্তান রাজনীতির কানা গলিতে। ১৯৯৬ সালের ২৫ এপ্রিল নিজের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) গঠন করেন ইমরান। কিন্তু ক্রিকেটের মতো রাজনীতিতে চটজলদি সাফল্য পাননি ইমরান। প্রায় দেড় দশক ধরে পার্লামেন্টে তার দল পিটিআইকে হাতে গোনা আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তবু হাল ছাড়েননি লড়াকু ‘ক্যাপ্টেন’।

খেলা যে ঘুরছে, তার প্রথম ইঙ্গিতটা পাওয়া গিয়েছিল ২০১১ সালে। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর তারিখে ইমরান একটি মিছিল আয়োজন করেছিলেন। সেই মিছিলে প্রায় ২ লাখ মানুষের ভিড় হয়েছিল বলে দাবি। পাকিস্তান রাজনীতির ইতিহাসে সেই মিছিল ছিল অন্যতম বড় মিছিল। আর এবারের নির্বাচনে তার দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সবচেয়ে বেশি আসন দখলের সুবাদে ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া কার্যত নিশ্চিত।

১৯৯২ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা পাকিস্তানের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলেই মনে করা হয়। সন্ত্রাসবাদ আর সহিংসতার আগুনে জ্বলতে থাকা পাকিস্তানকে ইমরান ও তার ছেলেরা বিশ্বের সামনে নতুন এক ভাবমূর্তিতে তুলে ধরেছিলেন। ফের একবার তার হাত ধরেই মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তানি জনতা।


আরো সংবাদ



premium cement