২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যে কারণে পাকিস্তানের এবারের নির্বাচন এতো গুরুত্বপূর্ণ

পাকিস্তান
পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বি নওয়াজ শরীফ, ইমরান খান ও বিলাওয়াল ভুট্টো - সংগৃহীত

নির্বাচনী প্রচারণায় সহিংসতার ঘটনা আর নানা ধরণের রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হলেও বুধবারের সাধারণ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন কোটি কোটি পাকিস্তানি।

প্রায় ২০ কোটি মানুষের এই দক্ষিণ এশিয়ার দেশে কী হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের এই প্রতিদ্বন্দ্বি দেশ পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন, এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান উন্নয়নশীল অর্থনীতির একটি আর বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম প্রধান দেশগুলোর একটি।

পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনকে বলা হচ্ছে সেদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দূষিত নির্বাচন।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন?

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে সামরিক ও বেসামরিক শাসনের মধ্যে দোদুল্যমান ছিল পাকিস্তান। কোনো একটি বেসামরিক সরকার আরেকটি বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার ঘটনা এবার দ্বিতীয়বারের মত ঘটবে পাকিস্তানে।

তবে পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক সরকারের এই ধারাবাহিকতা উদযাপন করার সুযোগ পাচ্ছেন না খুব বেশি মানুষ। এবারের নির্বাচনের আগে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে চলা অস্থিরতাই ছিল দেশটিতে প্রধান আলোচনার বিষয়।

পিএমএল-এন'এর অভিযোগ, আদালতের সহায়তা নিয়ে দেশটির শক্তিশালী নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে। অনির্দিষ্ট নির্বাচনী আইন ভঙ্গের দায়ে সারাদেশে দলটির প্রায় ১৭ হাজার সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর মধ্যে দেশটির গণমাধ্যমকেও ব্যাপক ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে এবং তাদের স্বাধীনতায় বাধা দেয়া হয়েছে।

নির্বাচনে বিতর্কিত সংস্থার সদস্যদের অংশগ্রহণও পাকিস্তানিদের একটি বড় চিন্তার বিষয়।

অনেকেই মনে করেন দেশের পুরোনো ধারামাফিক নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর সুবিধার্থে নির্বাচনী কৌশল সাজানোর চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী।

পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন বলেছে, নির্বাচনের ফল প্রভাবিত করার জন্য "আক্রমণাত্মক ও নির্লজ্জ" প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে যা পাকিস্তানের একটি "কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে" পরিণত হওয়ার জন্য আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

নির্বাচনী প্রচারণায় এরমধ্যে সহিংস আক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে। ১৩ জুলাই বেলুচিস্তানে এক হামলায় প্রায় ১৫০ জন মানুষ মারা যান, যার দায় স্বীকার করেছে আইএস।

নির্বাচনে কারা প্রধান প্রার্থী?

নওয়াজ শরীফ (পিএমএল-এন), ৬৮
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে পানামা পেপার্স তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে পাকিস্তানের আদালত তাকে সরকারি দায়িত্বে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করে। এরপর তিনি লন্ডনে চিকিৎসারত স্ত্রীর সাথে দেখা করতে যান। তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলেও জুলাইয়ের শুরুতে কন্যা মরিয়মকে নিয়ে তিনি দেশে ফেরত আসেন এবং গ্রেফতার হন।

খোলামেলাভাবে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করায় ও ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টার কারণে সেনাবাহিনী তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে কোনো ধরণের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সেনাবাহিনী।

নওয়াজ শরীফের ছোট ভাই শেহবাজ শরীফ পিএমএল-এন'এর প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ইমরান খান (পিটিআই), ৬৫
সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার দুই দশক আগে পাকিস্তানের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছেন কিন্তু কখনো সরকার পরিচালনা করেননি। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, এবার সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী তিনি আর তার প্রতিদ্বন্দ্বিদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করছে তারা। সেনাবাহিনী ও ইমরান খান এধরণের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তবে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেন, পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়া "সম্ভবত সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক মনোভাবসম্পন্ন সেনাপ্রধান।"

পিটিআই বিতর্কিত কয়েকটি দলের সমর্থনপুষ্ট, যাদের একটি দলে আল-কায়েদার সাথে বন্ধুভাবাপন্ন।

বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি (পিপিপি), ২৯
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নেয়া বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসসম্পন্ন পরিবারের সন্তান। তার মা বেনজির ভুট্টো ও পিতামহ জুলফিকার আলী ভুট্টো দু'জনই পাকিস্তানরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের দু'জনকেই হত্যা করা হয়েছে। বেনজির ভুট্টো আততায়ীর হাতে নিহত হন আর তার বাবাকে মুত্যুদণ্ড দেয়া হয়।

প্রথমবারের মত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া ২৯ বছর বয়সী বিলাওয়াল ভুট্টো বলেছেন, তিনি তার মা'য়ের স্বপ্নের "শান্তিপূর্ণ, প্রগতিশীল, উন্নয়নশীল ও গণতান্ত্রিক পাকিস্তান" প্রতিষ্ঠা করতে চান।

নির্বাচন পূর্ববর্তী জরিপ অনুযায়ী তার দল তৃতীয় স্থান পাবে নির্বাচনে।

কোথায় হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা?
নওয়াজ শরীফের জন্মস্থান ও পাকিস্তানের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ পাঞ্জাব প্রদেশ পিএমএল-এন'এর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। জাতীয় সংসদে সরাসরি নির্বাচন হওয়া ২৭২টি আসনের অর্ধেকের বেশি আসনই এই প্রদেশে অবস্থিত। পাঞ্জাবেই প্রধান নির্বাচনী লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই প্রদেশে জিততে হলে ইমরান খানের পিটিআই'কে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে খাইবার পাখতুনওয়ালায় সফলতা পেয়েছিল পিটিআই।

বিশ্লেষকদের মতে, বিলাওয়াল ভুট্টো'র পিপিপি "গ্রাম্য জনগোষ্ঠীর" মধ্যে জনপ্রিয় আর দক্ষিণের সিন্ধ প্রদেশে মূলত তাদের সমর্থকদের অবস্থান।

কী হতে পারে ফলাফল?
প্রধান তিন দলের দুই দলই নির্বাচনের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন আর ইমরান খানের পিটিআই'য়ের মধ্যে জোর লড়াই হবে।

কোনো দলই যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় তাহলে বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি ও অন্যান্য দলের সমর্থন জোট সরকার গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

সেনাবাহিনীর সাথে ইমরান খানের ঘনিষ্ঠতা ও উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে অপেক্ষাকৃত নরম অনুভূতিসম্পন্ন হওয়ার ধারণার কারণে, পিএমএল-এন নির্বাচনে জিতলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।

পিটিআই জিতলে পিএমএল-এন শক্ত আন্দোলনে নামতে পারে, বিশেষত যদি নওয়াজ শরীফের কারাদণ্ড অব্যাহত থাকে।

তবে নির্বাচনে যারাই জয় পাক, পাকিস্তানের রাজনৈতিক পটভূমিতে নিজেদের দাপট ধরে রাখার চেষ্টা করবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।


আরো সংবাদ



premium cement
পিরোজপুরে বাসের ধাক্কায় নদীতে ৪ মোটরসাইকেল ফরিদপুরে নিহতদের বাড়ি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী টিকটকে ভিডিও দেখে পুরস্কার, প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: পাটমন্ত্রী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : সালাম নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ সচিব সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি’ মোদি কি হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেনা রাজনীতিতে ফিরছেন? টাঙ্গাইলে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল