২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পাকিস্তানের ডন পত্রিকার প্রধানের সাক্ষাৎকার নিয়ে বিতর্ক

পাকিস্তান
ডন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী হামিদ হারুন - ছবি : বিবিসি

পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে দেশটির অন্যতম প্রধান একটি গণমাধ্যমের প্রধানের সঙ্গে বিবিসির একটি সাক্ষাৎকার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ডন গ্রুপের প্রধান নির্বাহী হামিদ হারুন অভিযোগ করেছেন, দেশটির সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনী সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান এবং তার দল পিটিআইকে সাহায্য করছে।

বিবিসির ‘হার্ড-টক’ অনুষ্ঠানে দেয়া এই সাক্ষাতকারে অভিযোগ করা হচ্ছে, মি. হারুন এবং তার পত্রিকা দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সমর্থনে পক্ষপাতিত্ব করেছে, এবং ইমরান খানের বিপক্ষে অবস্থান করেছিল।

পাকিস্তানে ২৫ জুলাই ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের আগে যেসব পত্রিকা সেন্সরশিপের এবং হুমকির মধ্যে রয়েছে ডন পত্রিকার সেগুলোর মধ্যে একটি।

সোমবার প্রচারিত হওয়া ঐ সাক্ষাৎকারে মি. হারুন অভিযোগ করেন, দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনী সংবাদমাধ্যমের জন্য একটা ‘অভূতপূর্ব আক্রমণ’।

তিনি অল পাকিস্তান নিউজপেপারস সোসাইটির সভাপতি।

১৯৪৭ সালের পর থেকেই দেশটির রাজনীতিতে অহরহ হস্তক্ষেপ করেছে সেনাবাহিনী।

দেশটিতে সামরিক এবং বেসামরিক সরকারের কাছে বারবার ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে।

তবে সেনাবাহিনী আগামী নির্বাচনে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মি. হারুন বলেছেন, “আমি মনে করি এই পর্যায়ে মনে হচ্ছে দ্বিতীয় সারির নেতার সাথে যুক্ত হয়ে জোট সরকার গঠনের প্রচেষ্টা হচ্ছে যেটা ‘ডিপ স্টেট’-এর পরিচালনায় চলবে।”

এদিকে এই সাক্ষাৎকার নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে।

টুইটারে ইমরান খান বলেছেন, তার দলের বিরুদ্ধে ডন পত্রিকার ভয়ানক বিরুদ্ধাচরণ করেছে।

অন্যরা বলছেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার আগে মি. হারুনের কাছে শক্ত তথ্য-প্রমাণ থাকা উচিত ছিল।

তবে মি. হারুনের পক্ষে কিছু সাংবাদিক এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারীরা কথা বলছেন।

তারা বলেছেন, মি. হারুনকে একটা কঠিন অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল।

সূত্র : বিবিসি

আরো পড়ুন :
নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের বাজার থেকে কেন উধাও ডন পত্রিকা
বিবিসি, ৪ জুলাই ২০১৮
পাকিস্তানের লাহোর থেকে সাংবাদিক আহমেদ রশিদ বিবিসি ওয়েবসাইটে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখা যায় নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাটি নেই, সংবাদপত্র বিক্রির সব স্টল বন্ধ এবং হকাররা পত্রিকা বিলি করতে পারছে না, তাহলে কেমন হতে পারে সেটা একবার কল্পনা করে দেখুন।

পাকিস্তানের অবস্থা এখন অনেকটা সেরকমই। গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানি বহু নাগরিক এরকম বোধ করছেন, কারণ দেশটির সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক ডন তাদের বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেছে।

আর এই অবস্থা তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

আগামী ২৫ জুলাই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা । তার আগে টেলিভিশন চ্যানেল থেকে শুরু করে সংবাদপত্র, এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের উপরেও কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, দেশটির সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগ একজোট হয়ে সংবাদ মাধ্যম এবং কিছু কিছু রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই অভিযোগ সাংবাদিকদের দিক থেকে যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকেও।

পাকিস্তানের সাবেক সরকারি দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ এবং এই দলের নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ - দুর্নীতির মামলায় যাকে গত বছর ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে - তিনিও এই অভিযোগ করেছেন। মি. শরীফকে আজীবনের জন্যে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করেছে আদালত।

এসব অভিযোগ অবশ্য সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে।

তবে, ইংরেজি দৈনিক ডন এবং এস্টাবলিশমেন্টের (সরকারি কর্তৃপক্ষ) মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে যে লড়াই চলছে সেটাই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

এই পত্রিকাটি পাকিস্তানের ব্যবসায়ী, কূটনীতিক এমনকি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও মধ্যে জনপ্রিয়। এর সম্পাদকীয় প্রভাবও উল্লেখ করার মতো। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সমাজে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি তৈরিতে এই পত্রিকাটির রয়েছে বিশেষ ভূমিকা।

এছাড়াও পাকিস্তানে মানুষের মধ্যে এই পত্রিকাটির প্রতি একটা বিশেষ শ্রদ্ধা রয়েছে - কারণ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারত ও পাকিস্তানের আলাদা হয়ে যাওয়ার (দেশবিভাগ) আগে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই পত্রিকাটি প্রকাশের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ভারতের ঔপনিবেশিক শক্তির সাথে মুসলমানদের একটি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা।

তখন থেকেই এই পত্রিকাটিকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী মহল বা এস্টাবলিশমেন্টের কাগজ বলে বিবেচনা করা হতো।

কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে।

অভিযোগ উঠেছে যে ডন সংবাদ মাধ্যমটিকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে এর সংবাদ কর্মীদের, হকাররা যাতে এই পত্রিকাটি বিলি করতে না পারে সেজন্যে প্রত্যেক শহরের সেনানিবাসগুলোতে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ডন টিভি যাতে বাড়িতে বাড়িতে দেখা না যায় সেজন্যে কেবল অপারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও এই পত্রিকায় ও টেলিভিশনে যেসব প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দেয় তাদেরকে বলা হয়েছে সেখানে পণ্যের প্রচারণা না চালাতে।

এর ফলে ডনের আয়-উপার্জনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।

ডন ছাড়াও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমের লোকজনকে অপহরণ করারও অভিযোগ উঠেছে। রহস্যময় কিছু লোক নিজেদের নাম পরিচয় গোপন রেখে সাংবাদিকদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে শারীরিকভাবেও।

কারা এসব করছে সেগুলো প্রকাশ করতে কোন সংবাদ মাধ্যমও সাহস করছে না। কিন্তু সাংবাদিক আহমেদ রশিদ বলছেন, সংবাদ জগতের মোটামুটি সবাই জানে যে সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরাই এসবের সাথে জড়িত।

এবিষয়ে এতোদিন মুখ খোলেনি ডন। তারা নিরব থেকেছে। কিন্তু পত্রিকাটি খুব সম্প্রতি একটি খোলামেলা ও শক্তিশালী সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।

সম্পাদকীয়তে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে নওয়াজ শরীফ সরকারের শাসনামলে পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে বড় রকমের ফাটল তৈরি হয়েছিল। এসব বিষয়ে খবর প্রকাশ করা হয়েছিল পত্রিকাটিতে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় সামরিক বাহিনী। কিন্তু চাপের মুখেও ডন পত্রিকাটি তাদের খবরের উৎস বা সোর্সের নাম প্রকাশ করেনি।

ডন পত্রিকার সম্পাদকয়ীতে লেখা হয়েছে, ‘ডন পত্রিকা এবং তার সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা তথ্য, ঘৃণা, সম্মানহানির প্রচারণা এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানো হয়েছে, তাতে কিছু বিষয় বলা দরকার। রাষ্ট্রের ভেতরের একটি অংশ সংবিধানে দেওয়া স্বাধীনতাকে ধরে রাখছে না।’

ডন পত্রিকাটি বলছে, ২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। তবে এই আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে গত মে মাস থেকে।

সাংবাদিক আহমেদ রশীদ লিখছেন, গত বছর এই একই ধরনের ভয়ভীতি ও আর্থিক চাপের মুখে পড়েছিল জনপ্রিয় উর্দু পত্রিকা জং এবং তাদেরই সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল জিও। তাদের অবস্থা এমন হয়েছিল যে তিন মাস তারা তাদের সাংবাদিক এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন দিতে পারেনি।

কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে ডনের মতো অনড় থাকেনি। তাদের উর্ধতন সম্পাদকরা সামরিক বাহিনীর সাথে এক ধরনের আপোস সমঝোতা করে ফেলতে সক্ষম হন।

তিনি আরো লিখেছেন, সংবাদপত্র ও টেলিভিশন ছাড়াও আরো বেশি আক্রমণের শিকার হচ্ছেন ব্লগাররা যারা সোশাল মিডিয়ায় সোচ্চার। সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে এসব ব্লগাররা রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে।

কিন্তু সামরিক বাহিনী সংবাদ মাধ্যমের উপর তাদের হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা বলছে, পাকিস্তানে একটি মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে তারা বদ্ধপরিকর। তবে সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে যে তারা সোশাল মিডিয়ার উপর নজর রাখছে।

সাংবাদিক আহমেদ রশীদ লিখেছেন, পাকিস্তানে বিভিন্ন চরমপন্থী গ্রুপকে কেন এস্টাবলিশমেন্ট থেকে বিশেষ সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে এবং কেন তাদেরকে রাজনীতিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে সেসব বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো কিছু বলতে ভয় পায়।

‘কিন্তু একই সাথে সুপরিচিত নারী ব্লগার গুল বুখারিকে লাহোরের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যিনি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমালোচনায় সোচ্চার ছিলেন।’

তিনি বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বলা যায় ডন পত্রিকাটি কবে থেকে আবার মানুষের বাসাবাড়িতে প্রত্যেকদিন সকালে নাস্তার টেবিলে দেখা যাবে সেটা বলা খুব কঠিন।

‘তবে পাঠকের হাতে এই পত্রিকাটি পৌঁছাতে এবং সাংবাদিকদের আর ভয়ভীতি দেখানো হবে না, শারীরিকভাবে হয়রানি করা হবে না- দেশটিতে এরকম পরিস্থিতি ফিরে আসতে আরো বহু সময় লাগবে।’


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল