২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুসলিম মেয়েকে দত্তক নেয়ায় ‘অপরাধে’ ১৬ বার ছুরিকাঘাত

ভারত
রবিকে ১৬ বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে - ছবি : ডেকান ক্রনিকেল

অপরাধ তিনি এক মুসলিম মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন। সেই অপরাধে তাকে ১৬ বার ছুরি মারা হলো। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের হায়দরাবাদে।

২০০৭ সালে হায়দরাবাদ বিস্ফোরণে মুসলিম মেয়েটি তার বাবা-মাকে হারায়। সেই মেয়েকেই নিজের মেয়ে হিসেবে দত্তক নেন হায়দরাবাদের পাপালাল রবিকান্ত।

আপাতত ওসমানিয়া হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছুরির ঘায়ে আহত ওই ব্যক্তি। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে গত ১ জুন।

২০০৭ সালের অগাস্ট মাসে হায়দরাবাদের গকুল চাট সেন্টারের কাছ থেকে সদ্য বাবা-মা হারা শিশুকন্যাকে উদ্ধার করেন রবিকান্ত। বাচ্চাটিকে ফিরিয়ে নিতে কেউ না আসায় রবিকান্ত এবং তার স্ত্রী জয়শ্রী তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। তারপর থেকেই রবিকান্ত ও তার পরিবারকে নানা হেনস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এমনকি হুমকির মুখেও পড়তে হয় বহুবার।

সানিয়া ফাতিমা নামে ওই মেয়েটি বর্তমানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু এতদিন পরও রবিকান্ত ও তার পরিবারকে সানিয়াকে দত্তক নেয়ার জন্যে অপমান করা থামেনি।

একটি মন্দিরে মূর্তি তৈরির কাজ করেন রবিকান্ত। তার কথায়, তিনি কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না। এক মাতৃহারা শিশুকে সেইসময় নিরাপদ আশ্রয় দেয়া, বাবা-মায়ের স্নেহ দেয়াই ছিল তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই যত কঠিন পরিস্থিতিই আসুক সানিয়া ফাতিমাকে নিজের থেকে কোনোভাবেই কোনোদিন আলাদা হতে দেবেন না, জানিয়েছেন রবিকান্ত।

পরিবারটির অভিযোগ, পুলিশ বা সরকার কেউ তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না।

‘কয়েক বছর ধরেই এ রকম চলে আসছে। আমরা তাকে তিলক পরতে বলি না। অনেকে ওর নাম পরিবর্তন করে অঞ্জলি বা সোনিয়া রাখতে বলে। কিন্তু ও ইসলাম ধর্ম পালন করলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা একতা এবং মিলেমিশে থাকায় বিশ্বাস করি এবং সবার প্রতিই আহ্বান জানাই শান্তিতে বসবাসের’, বলছিলেন রবিকান্ত।

ওই দম্পতি এখন সোনিয়াকে ভালো শিক্ষা দিচ্ছে যেন সে তার নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারে।

সানিয়ার বর্তমান মা জয়শ্রীর সাথে কথা নিউজ১৮ এর। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো আমাদের ধর্মের জন্য হেনস্থার শিকার হচ্ছি। মেয়েটিকেও অনেক বিপদে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু আমরা সুখি, সমস্যা সমাজের। আমরা সবাই মানুষ, আমাদের সবারই একই রক্ত প্রবহমান। আমরা তার একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে চাই। সে পর্যন্ত আমরা তার সব ধরনের যত্ন নেব।’

সানিয়াও তার বাবার স্বপ্ন পূরণে একজন পুলিশ অফিসার হতে চায়।

‘আমি একজন পুলিশ অফিসার হতে চাই। আমি মানুষের ভালো করতে চাই। আমাদের সবাইকে একসাথে বসবাস করতে শেখা উচিত’, বলছিল সানিয়া।

সূত্র: নিউজ১৮.কম

আরো পড়ুন :

উগ্রবাদী হিন্দুদের থেকে মুসলিম তরুণকে বাঁচিয়ে বিপদে শিখ পুলিশ
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ৩১ মে ২০১৮
ভারতে জনতার হাতে পিটুনি থেকে এক মুসলিম যুবককে রক্ষা করেছিলেন এক ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তা। কিন্তু এজন্যে এখন তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখন্ডের পুলিশ কর্মকর্তা গগনদীপ সিং যখন এক মুসলিমকে উন্মত্ত হিন্দু জনতার কবল থেকে উদ্ধার করেন, তখন সেই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটি তাকে রাতারাতি খ্যাতিও এনে দিয়েছিল।

সেই মুসলিম যুবক তার হিন্দু বান্ধবীকে নিয়ে যখন একটি মন্দিরে যান, তখন তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। মন্দিরের হিন্দু জনতা তাকে ঘিরে ফেলে এবং মারধোর করার চেষ্টা চালায় এই বলে যে, সে 'লাভ জিহাদ' এর চেষ্টা করছে।

ভারতে যখন কোন মুসলিম কোন হিন্দু নারীর সঙ্গে প্রেম করে বা বিয়ে করার চেষ্টা করে, তখন কট্টরপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলো তাকে 'লাভ জিহাদ' বলে বর্ণনা করছে ইদানিং। হিন্দু গোষ্ঠীগুলো দাবি করছে মুসলিম পুরুষরা ষড়যন্ত্র করে হিন্দু নারীদের বিয়ে করে বা প্রেম করে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করছে।

সেদিনের ঐ ঘটনায় মুসলিম পুরুষটিকে রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা গগনদীপ সিং। সোশ্যাল মিডিয়ায় তখন তার সাহসী ভূমিকার জন্য ব্যাপক প্রশংসা করেছিলেন অনেকে। অনেক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল তার সাহসী ভূমিকার কথা এবং সেই ঘটনার ছবি।

গগনদীপ সিং তখন বলেছিলেন, তিনি কেবল তার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, যদি সেসময় তিনি ইউনিফর্ম পরা অবস্থাতেও না থাকতেন, তারপরও তিনি সেই কাজটাই করতেন।

কিন্তু গগনদীপ সিং এখন উল্টোদিক থেকে সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ কারণে আপাতত গগনদীপ সিংকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। অনেক রাজনীতিক এমনকী সেদিন উন্মত্ত জনতা যে আচরণ করেছে, তারও সাফাই গাইতে শুরু করেছে।

বিজেপির একজন এমএলএ রাকেশ নৈনওয়াল এমনকী এমন মন্তব্যও করেছেন যে ‘এই মুসলিম পুরুষরা তাদের হিন্দু বান্ধবীদেরকে আমাদের মন্দিরে নিয়ে আসে, সেটা ঠিক নয়। তারা তো জানে যে এটা মন্দির এবং পবিত্র জায়গা।’

আরেক বিজেপি এমএলএ রাজকুমার ঠাকরাল বলেছেন, ‘এই মুসলিম পুরুষটি আসলে হিন্দু সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা তো মসজিদে যাই না, কারণ সেখানে আমাদের যাওয়ার অধিকার নেই। এরা কেন আমাদের হিন্দুদের সংস্কৃতি ধ্বংস করার জন্য আমাদের মন্দিরে যায়?’

তবে যে রামনগর জেলায় এই ঘটনা ঘটেছিল সেখানকার মানুষ এ ঘটনায় বিরক্ত। যখন একটা ছেলে আর একটা মেয়ে একসঙ্গে কোথাও যায়, সেটা তাদের ব্যাপার। কীভাবে এসব লোকজন এটাকে 'লাভ জিহাদ' বলে তাদের ওপর হামলা চালায়! প্রশ্ন তুলেছেন রামনগরের একজন বাসিন্দা অজিত সাহনি।


আরো সংবাদ



premium cement