২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

অস্ত্র ছাড়াই কাবুলে ঢুকলো তালেবান যোদ্ধারা

অস্ত্র ছাড়াই কাবুলে ঢুকলো তালেবান যোদ্ধারা - সংগৃহীত

অভূতপূর্ব যুদ্ধবিরতির মধ্যে কয়েক ডজন তালেবান জঙ্গি অস্ত্র ছাড়াই আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করেছে। শুক্রবার ঈদ উপলক্ষে তিন দিনের এই অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে তালেবানরা।শনিবার নিরাপত্তা চেকপোস্টগুলিতে নিজেদের অস্ত্র জমা দিয়ে শহরে ঢোকেন তারা। 

কাবুলের পুলিশ বলছে, ঈদকে কেন্দ্র করে ঘোষণা করা এক অভূতপূর্ব যুদ্ধবিরতির মধ্যে কয়েক ডজন তালেবান জঙ্গি অস্ত্র ছাড়াই আফগানিস্তানের রাজধানীতে প্রবেশ করেছে।

একজন মুখপাত্র জানান, তালেবান গত শুক্রবার ঈদ উপলক্ষে তিন দিনের এই অস্ত্র-বিরতি ঘোষণা করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আফগান সেনারা তালেবানের যোদ্ধাদের সাথে কোলাকুলি করছে এই দৃশ্য দেখে তারা নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারেননি।

মাত্র কয়েকদিন আগেও দুপক্ষ পরস্পরের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল। কিন্তু শনিবার কাবুলের এই নতুন মেহমানরা নিরাপত্তা চেকপোস্টগুলিতে নিজেদের অস্ত্র জমা দেন এবং তারপর শহরে ঢোকেন।

একজন জঙ্গিকে শহরের একটি সেতুর ওপর থেকে তালেবানের পতাকা দোলাতেও দেখা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন। কিন্তু এই তালেবানের সঙ্গে এই আপোষের চিত্র শুধু রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

আফগানিস্তানের অন্যান্য শহর থেকেও সৈন্যরা তালেবানের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছে, এমন ছবি এবং ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে।

ঈদে তালেবান সদস্যদের সাথে প্রকাশ্যে সেনাসদস্যদের কোলাকুলি

এমনও ছবি দেখা যাবে নাকি? ছবিগুলো তোলার সময় এরকমই ভাবছিলেন মিরওয়াইজ আফগান৷ বড় রাস্তার ওপরে তখন সশস্ত্র তালিবান ও আফগান সেনাসদস্যা একে অপরকে আলিঙ্গনে মত্ত৷ ফলে ছবিগুলো হয়ে গেল অমূল্য৷ ঈদ উপলক্ষে এই মুহূর্ত দেখে চমকে যাচ্ছে দুনিয়া৷ ঘটনা কাবুলের দক্ষিণে থাকা লোগার প্রদেশ৷

আফগান সরকার ও তালিবানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি চলছে৷ ঈদ উপলক্ষে সংঘর্ষ থামানোর বার্তা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি৷ তার বার্তার পরে আফগান তালিবান পাল্টা বিবৃতি দিয়ে আপাতত অস্ত্র নামিয়ে রাখল৷ সেই রেশ ধরেই আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে তালেবান ও সেনা পরস্পর হাত মিলিয়ে, শুভেচ্ছা জানিয়ে ঈদ পালন করছে৷

সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা জানাচ্ছে, এটা নজির হয়েই থাকবে৷ গত ১৫ বছরের মধ্যে প্রকাশ্যে যেভাবে তালিবান ও আফগান সেনা একে অপরের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে সেটা দেখেই জনগণ চমকৃত৷ ফলে দেশজুড়ে ছড়িয়েছে শান্তি৷ আপাতত তিন দিনের জন্য হলেও শান্তিতে উৎসব পালন করছেন আফগানিরা৷ রাজধানী কাবুল প্রায়ই তালিবান হামলা ও বিস্ফোরণে রক্তাক্ত হয়৷ গত কয়েক দিনে সেরকম ঘটনা ঘটেনি৷ রয়টার্স জানাচ্ছে, দূরবর্তী বিভিন্ন প্রদেশ যেখানে কখনো হত্যাকাণ্ড ঘটে। আবার তালেবানও কখনো নাশকতায় রক্তাক্ত হয় সেনা ছাউনি সেই সব এলাকাতেও চলছে উৎসব৷

কুন্দুজের বাসিন্দা মহম্মদ আমির নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না৷ রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, আমি দেখলাম এক তালিবান ও এক পুলিশ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সেলফি নিচ্ছে৷ এটা তো অবিশ্বাস্য ব্যাপার৷

আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো জানাচ্ছে, কাবুলের সর্বত্রই চলছে উৎসব৷ নিরাপত্তারক্ষীরা আছেন৷ কিন্তু কোথায় যেন একটা হালকা আমেজ দেখা গেছে৷ সবারই ধারণা, শনিবার ঈদের দিন আর কোনো রক্তাক্ত মুহূর্ত দেখা যাবে না৷ শিশু সহ অনেকেই ভিড় করছেন বিভিন্ন পার্ক ও দোকানে৷ চলছে আনন্দের মাঝে খাওয়া দাওয়ার পর্ব৷

আফগান সরকারের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন সবাই৷ তালিবান জঙ্গি বনাম আফগান সরকারের সংঘর্ষ বারে বারে রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে৷ এ কারণে আফগানিস্তান মৃত্যুপুরী৷ আফগান-পাকিস্তান সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে উত্তেজনা৷ সন্ত্রাস দমন অভিযানে মৃত্যু হয়েছে তেহরিক তালিবান পাকিস্তানের নেতা মোল্লা ফজলুল্লার৷ যদিও পাকিস্তানের মাটিতেই এই ঘটনা ঘটে৷ তার জেরে নতুন করে সহিংসতা ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দেয়৷ পরিস্থিতি নিয়ে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি কথা বলেছেন, পাকিস্তানের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নাসির উল মুলক ও সেনা প্রধান জেনারেল জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে৷


আরো সংবাদ



premium cement