২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইফতার মাহফিলে গেলেন মোদিপত্নী যশোদাবেন, অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির

রোজাদারকে ইফতার করাচ্ছেন যশোদাবেন - ছবি : সংগৃহীত

নুড়ি, পাথর, কেয়ারি করা ঘাসে সাজানো দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। সেখানে হেঁটে, দৌড়ে শরীরচর্চা করেন নরেন্দ্র মোদি। ওই বাসভবনে ঠাঁই নেই পরিবারের কারো। রমজান মাসে কোনও ইফতারেও যান না মোদি।

ওই বাসভবন থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে গুজরাতের অতি সাদামাটা একটা বাড়ির বাসিন্দা আবার অন্য রকম। তিনি কিন্তু ইফতারে যান। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্ত্রী, যশোদাবেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে রাজস্থান থেকে গুজরাতে ফেরার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আহত হন যশোদাবেন। তার পর থেকে তাকে সে ভাবে দেখা যায়নি। দেখা গেল বুধবার আহমদবাদের এক ইফতার মাহফিলে। আহমদাবাদের রিলিফ রোডে আয়োজিত এক ইফতারে গুজরাতি শৈলীতে পরা সবুজ রংয়ের শাড়িতে দেখা মিলেছে যশোদাবেনের। সেখানে অনেককে রোজা ভাঙতেও সাহায্য করছেন প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী।

বিষয়টি সামনে আসতেই শুরু গুঞ্জন। অস্বস্তির মুখে গেরুয়া শিবিরের মুখে কুলুপ। ঘটনাচক্রে বুধবারই দিল্লিতে মোদি সরকারের মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি তালাকের শিকার নারীদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করেছিলেন। নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে মোদির আন্তরিকতা বোঝাতেই ওই আয়োজন। প্রধানমন্ত্রী নিজে না গেলেও রাজনাথ সিংহ, স্মৃতি ইরানি, প্রকাশ জাভড়েকররা গিয়েছিলেন সেখানে। তথা ইফতারে।

কংগ্রেসের বক্তব্য, রাহুল গান্ধীর ইফতার থেকে নজর ঘোরাতেই নকভির ইফতার। রাহুল ইফতারকে সামনে রেখে বিরোধীদের একজোট করেছেন। রাহুলের ইফতারে থাকা জেএমএম নেতা হেমন্ত সোরেন বৃহস্পতিবার অমিত শাহকে প্রকাশ্যেই খোঁচা দিয়ে বলেন, জনসম্পর্ক অভিযানে গিয়ে অমিত যেন লালকৃষ্ণ আদভানিকেও একটু দেখে আসেন! বিজেপি বলছে, রাহুলের ইফতারে সাফল্য কোথায়? মায়াবতী, অখিলেশ, মমতা, শরদ পওয়ার— প্রথম সারির কেউই তো এলেন না। কংগ্রেসের রাজীব শুক্ল বলেন, ‘‘অধিকাংশ বিরোধী দল এসেছে। আসল বিষয় প্রতিনিধিত্ব। বিরোধী জোট ক্রমশ শক্ত হচ্ছে।’’

আরো পড়ুন :
ইফতারে রাহুল-প্রণব এক টেবিলে

কথা ভুলে যাবে, ছবি মনে থাকবে। নাগপুরে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জির যোগদানের আগে এভাবেই সতর্ক করেছিলেন তার কন্যা শমিষ্ঠা মুখার্জি। প্রণব কন্যার সতর্কতার লাইনকেই কার্যত নিজেদের সুর বানিয়েছিল কংগ্রেস। দিল্লির নেতারা তো বটেই বাংলার কংগ্রেস নেতারাও প্রণব মুখার্জির আরএসএসের মঞ্চে ওঠা নিয়ে কম সমালোচনা করেননি৷ কিন্তু বুধবার কংগ্রেসের ইফতার পার্টিতে রাহুল গান্ধী-প্রণব মুখার্জিকে এক ফ্রেমে দেখার পর কয়েক কদম পিছিয়ে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাষ্ট্রপতির সমালোচকরা৷

প্রদেশ কংগ্রসের যে নেতারা প্রণব মুখার্জির আরএসএস সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বা বাঁকা মন্তব্য করেছিলেন তারাই এখন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাকে ইফতার পার্টিতে দেখে অস্বস্তিতে পড়েছেন৷ দুটি ঘটনাকে পাশাপাশি রেখে ব্যাখ্যা খুঁজছেন প্রদেশ নেতারা৷ আগের কড়া মন্তব্য থেকে অনেকেরই সুর এখন নরম৷ সমালোচনা ছেড়ে শুধু উত্তর খুঁজছেন প্রদেশ নেতারা৷

যেমন প্রদেশ কংগ্রেসের সিনিয়ার নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র প্রণব কন্যার বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেছিলেন, ‘‘শর্মিষ্ঠা যা বলেছেন একদম ঠিক কথাই বলেছেন৷ কংগ্রেসের আদর্শের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা আরএসএসের গুনকীর্তণ করতে পারে না৷ প্রণববাবু করবেন সেটা বলছি না৷ কিন্তু সেখানে যাওয়া মানে আরএসএসের মতাদর্শকে গুরুত্ব দেয়া৷” কিন্তু ইফতার পার্টির পর প্রণববাবুর সম্পর্কে কড়া মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি৷ বরং দলের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজওয়ালার বক্তব্যকে উল্লেখ করে তিনি প্রণববাবুকে সমর্থন করেছেন৷

ওমপ্রকাশ মিশ্রের কথায়, “কংগ্রেসের বক্তব্য মানে রণদীপ সিং সুরজওয়ালার বক্তব্য৷ প্রণব মুখার্জির ভাষণের পর উনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সংঙ্ঘ পরিবারকে সত্যের আয়না দেখালেন সাবেক রাষ্ট্রপতি৷ ওটাই দলের আসল বক্তব্য৷ আর কংগ্রেসের ইফতার পার্টিতে ওকে ডাকা হয়েছিল তাই উনি গিয়েছিলেন৷ সেখানে হামিদ আনসারি, মনমোহন সিং, সাবেক রাষ্ট্রপতিও গিয়েছিলেন৷ সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে কথা হয়েছে৷ রাহুল গান্ধী তো ওকে রেসপেক্ট করেন সেটা বোঝাই যাচ্ছে৷ এক টেবিলে ওরা বসেছেন৷ এটা আলাদা করে দেখার কী আছে৷

ওমপ্রকাশ মিশ্রের বক্তব্য, আমার দুটি প্রশ্ন আছে৷ এক, উনি কেন গিয়েছেন সেটা এখনও উনি বলেননি৷ আর দুই আরএসএসের প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ারকে ভারতমাতার মহান সন্তান বলেছিলেন তিনি৷ সেটা কেন বলেছিলেন? এই দুটো প্রশ্নের উত্তর জানার সবাই উৎসুক হয়ে রয়েছে৷ কিন্তু সেটা তো ওনার কাছে সরাসরি জানতে চাওয়া যায় না৷ তবে উনি জানালে সবার ভালো লাগবে৷

শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, একমাত্র কংগ্রেস দলেই আভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র রয়েছে৷ এখানে একে অন্যের সমালোচনা করতে পারে কিন্তু অন্য দলে এটা করতে কেউ সাহস পাবে না৷ দেশের স্বার্থে কংগ্রেস বহুবার তাদের নীতি-আদর্শ বদলেছে৷ যে আরএসএস কংগ্রেসবিরোধী দেশের কথা বলেছিল তাদেরই আজকে কংগ্রেসের লোকেদের শরনাপন্ন হতে হল৷ প্রণব মুখার্জি কংগ্রেসের ভাবধারার সঙ্গে যুক্ত৷ আমি মঞ্চে যাচ্ছি মানে আরএসএসের মতকে সমর্থন করছি তা নয়৷ উনি তো জাতীয়তাবাদ, সহিষ্ণুতার কথা বলে এসেছেন৷ এখন দেখার উনি যে আয়না দেখিয়ে এসেছেন সে পথে না চললে আরএসএসের লাভ হয়নি বুঝব৷ লোক দেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছে বলে মনে হবে৷

প্রণব মুখার্জির আরএসএস মঞ্চে যাওয়া নিয়ে আগেই অধীররঞ্জন চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া ছিল, “আমি খবরটা শুনে খুবই অবাক হয়েছি৷ আমার প্রশ্ন, আগে আরএসএসকে নিয়ে উনি যা মন্তব্য করেছেন সেসব কী ভুল ছিল?” ইফতার পার্টির পরে অবশ্য অধীর প্রণব মুখার্জিকে নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি৷ তবে আরএসএস সফরের সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে প্রদেশ নেতারা ফ্রন্টফুটে খেললেও দলের হাইকমান্ডের কূটনীতিতে তারা খানিকটা বেসামাল হয়ে পড়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷

আরো পড়ুন :
ট্রাম্পকে কেক হিন্দু সেনার, মোদির জন্য বিরক্তি

দিল্লিতে ধুলোর আস্তরণ ভেদ করে দেখা যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাসিমুখ। দোতলার ঘর থেকে ভেসে আসছে গিটারের আওয়াজ। আর ‘হ্যাপি বার্থডে’ গান।

সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই দেখা গেল নীল-সাদা বেলুন। আর ট্রাম্পের জন্মদিন নিয়ে হুল্লোড়। বিশাল এক কেক কাটা হচ্ছে। কেকের উপরে ট্রাম্পের বয়স লেখা ৭২। কে বলবে ভারতের রাজধানী দিল্লির নর্থ অ্যাভিনিউ-এ এমপি পাড়ায় আজ দুপুরে এ ভাবে জন্মদিন পালন হচ্ছে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের? ওয়াশিংটনে এখন কানা রাত। ট্রাম্প কি আদৌ জানতে পারলেন, ভারতের রাজধানীতে তার জন্মদিন নিয়ে মেতে উঠেছে একটি হিন্দু সংগঠন?

নাম ‘হিন্দু সেনা’। জন্ম ২০১১ সালে। তার পর থেকে হিন্দুদের স্বার্থ নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করে এসেছে সংগঠনটি। ২০১৪-য় মোদির হয়ে প্রচারও করেছে। ২০১৫ সালে ‘গোমাংস’ বিতর্কের সময়ে দিল্লির কেরল ভবনে হুজ্জুতি করেও গ্রেফতার হয়েছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বিষ্ণু গুপ্ত। গত সপ্তাহে অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার প্রতি ক্ষোভ দেখিয়ে তার ছবি পুড়িয়েছিলেন বিষ্ণুরা। আজ ইতিনিই ট্রাম্পের কাট-আউটে কেক খাওয়াচ্ছেন। বলছেন, ‘‘ট্রাম্প আমাদের ‘হিরো’। তার থেকে বড় নেতা গোটা দুনিয়ায় নেই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই বলেছিলেন, ‘ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ’কে খতম করবেন। তখন থেকে তিনিই আমাদের আদর্শ। তার জন্যই পাকিস্তান এখন চাপে। সদ্য উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে রফা করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকানো— তিনিই পেরেছেন।’’

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, যে যুক্তিতে এ সংগঠন ট্রাম্পে মেতেছে, সেই কারণেই মোদিরও ভক্ত হবেন— বিশেষ করে গত লোকসভায় তার হয়ে প্রচার করার পর?

এ বারে চোয়াল শক্ত সংগঠনের নেতার। সপাট বললেন, ‘‘না। গত লোকসভা ভোটের আগে হিন্দুদের জন্য ভুরি ভুরি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদি। না হলো রামমন্দির, না হল গো-হত্যা বন্ধে আইন। উল্টো গোরক্ষকদেরই ‘গুন্ডা’ বানিয়ে দিলেন। কোনো প্রচার করব না মোদির জন্য।’’ ট্রাম্পের মতো মোদির জন্মদিন পালন? ‘‘তা-ও না।’’

দিল্লির মন্দির মার্গে হিন্দু মহাসভা ভবনের একটি ঘরে সংগঠনের দফতর। কিন্তু ট্রাম্পের জন্মদিন পালন হলো নর্থ অ্যাভিনিউয়ে এমপি ক্লাবে। যে ক্লাবে অনুষ্ঠান করতে হলে কোনো না কোনো এমপির সুপারিশ লাগে। তা হলে ‘হিন্দু সেনা’র হয়ে সুপারিশ কে করলেন? বিষ্ণু গুপ্ত বলেন, ‘‘বিজেপিরই এক এমপি। মোদির আমলে তো অনেক এমপিই দমে রয়েছেন। তাদেরই কেউ একজন!’’


আরো সংবাদ



premium cement