২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমাদের উচ্চশিক্ষা ও বিশ্বায়ন

-

বিশ্বায়নের বহুল পরিচিত স্লোগান ‘ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী’। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আশির দশক থেকে বিশ্বায়নের প্রভাব প্রতিক্রিয়ায় পৃথিবী এখন আমাদের ‘হাতের মুঠোয়’। ’৮০ দশকের তিনটি ঘটনা গোটা পৃথিবীকে আন্দোলিত করে। প্রথমত, তথ্যবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসম্ভব রকমের বৈপ্লবিক উন্নয়ন। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে সমাজতন্ত্রের পতন। তৃতীয়ত, এই দুটোর ফলাফলে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি, বিপণন ও বিনিয়োহক্ষেত্রে অবাধ ও মুক্ত পৃথিবীর সূচনা।

এ অবস্থার সুযোগে একক বিশ্বব্যবস্থার প্রভু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ বা নতুন বিশ্বব্যবস্থা চাপিয়ে দেয় পৃথিবীর ওপর। তাদেরই গরজে পুরাতন জেনারেল অ্যাগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড-গ্যাটের পরিবর্তে পুঁজিতন্ত্রের আরো নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে গঠিত হয় ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন-ডব্লিউটিও। অনেক ‘রাউন্ড অব টকস’-এর পর পণ্যের প্যাটেন্ট থেকে এমন কিছু বাদ যায়নি যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লাভ-ক্ষতির জন্য অপ্রয়োজনীয়। একই সময়ে বিস্ময়ের সাথে লক্ষণীয় যে, বিশ্ববাণিজ্য বা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশ্বায়ন অনুপস্থিত থেকে গেছে। যে অর্থে যে প্রক্রিয়ায় যে প্রয়োজনে উৎপাদন ও বিনিয়োগকে বিশ্বময় সহজ করা হয়েছে, কর রেয়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ‘ট্যাক্স ফ্রি’ ঘোষণা এসেছে তা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশ্বময় আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ঘটেনি। প্রাচীনকাল থেকে স্বাভাবিকভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে বিনিময় দেশে দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে হয়ে আসছে তা অব্যাহত রয়েছে।

প্রাচ্যে এবং পাশ্চাত্যে পণ্ডিতরা গভীর হতাশার সাথে লক্ষ করছেন, যে কায়দায় একটি ব্র্যান্ড বা উৎপাদিত পণ্য তৃতীয় বিশ্বকে গ্রাস করছে ঠিক একই কায়দায় একই গতিতে একই নিয়মে শিল্পোন্নত বিশ্বে আবিষ্কার বা জ্ঞানের উৎকর্ষ তৃতীয় বিশ্বে আসছে না। অথচ জ্ঞানের যেসব শাখা-প্রশাখা ওই উন্নত বিশ্বের শিল্প উন্নয়নের স্বার্থে, সমৃদ্ধ জীবনযাত্রার স্বার্থে ও প্রযুক্তির স্বার্থে প্রয়োজন সেখানে যথার্থ গুরুত্ব আরওপ করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এ দেশে একসময় কমার্স কেউ পড়তে চাইত না। গ্রামে প্রচলিত গল্পটি এ রকম যে, ছেলেকে সমান টাকা দিই; কিন্তু সে বিএসসি বা বিএ না পড়ে বিএর চেয়ে ‘কম’ পড়বে কেন? সেই হাসির খোরাকটি এখন গৌরবের বাহন। সবাই বিবিএ পড়তে চায়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাঙের ছাতার মতো বৃদ্ধি ঘটল, তার প্রধান কারণ বিশ্বায়ন। প্রথমত, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচার, প্রসার, সমৃদ্ধি এতটাই ঘটল যে, ওই শাখায় রীতিমতো বিপ্লব ঘটল। আমাদের বিবিএ পড়ুয়া ছেলেদের ইউরোপ আমেরিকায় পাড়ি জমানো সহজ হলো। অপর দিকে, তথ্য বিপ্লবের সমৃদ্ধির সাথে সাথে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বড় একটি ‘লং জাম্প’ দিতে পারল। লক্ষ করুন, এ দু’টির কারণ কিন্তু বিদ্যার অগ্রগতি নয় বরং অর্থের শ্রী বৃদ্ধি। আজকাল গোটা শিক্ষাব্যবস্থার ক্রমাগত বাণিজ্যিকীকরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। এর ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন কোনো বিষয় নেই যাতে এখন সান্ধ্যকালীন কোর্স বা উইকঅ্যান্ড কোর্স নেয়া হচ্ছে না। তাহলে এটা স্বতঃসিদ্ধভাবে বলা যায় যে, অন্যান্য গতানুগতিক বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা ও মানবিক বিষয় অবহেলিতই রয়ে গেছে।

গ্লোবালাইজেশনের মৌলিক ধারাটি এমন ছিল না। এই ধারার পথিকৃৎরা বলেছিলেন যে, বিশ্বায়নের মানে হচ্ছে তথ্য, ধারণা, উৎপাদন কারিগরি বিদ্যা, পুঁজি, বিনিয়োগ ও অর্থায়ন এবং সেবা খাতগুলোসহ সবই হবে জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এক সীমান্ত থেকে আরেক সীমান্ত অথবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে বহুমুখী উন্নয়নের এবং সমন্বয়ের প্রভাব পড়বে। এগুলো ছিল সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক। তারা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, গোটা পৃথিবীর শিক্ষাব্যবস্থা হবে একই ছাদের নিচে। একই সমতলে সব শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হলে একই রকম শিক্ষা, পাঠ্যসূচি, শিক্ষা উপকরণ ও প্রক্রিয়া প্রয়োজন। অন্যান্য দেশ বা বিদেশের সাথে দক্ষতা ও কার্যকারিতার দিক থেকে যদি সমান্তরাল হতে হয় তাহলে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন সমান তালেই হতে হবে এবং এর উদ্দেশ্য হবে মানবজাতির জন্য একক শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন এবং জনগণের সমৃদ্ধ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা। আর বিশ্বব্যাপী এ ধারণা তো বর্তমান যে, কালো-ধলো, শ্বেত-বাদামি সব মানুষের মেধা মনন একই। আশির ও নব্বইয়ের দশকে দু’টি প্রবণতা শিক্ষাব্যবস্থাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। ভবিষ্যৎ প্রত্যাশিত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের উপায় উপকরণের সমন্বিত চেষ্টা; অপরটি হচ্ছে অর্থনৈতিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি। অনেক দেশ এই নতুন উদার শিক্ষাব্যবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। একই সাথে তারা শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাসের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় এমনসব বিষয় ব্যয়বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পরিবর্তে অর্থনৈতিক উন্নয়নই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। উন্নত বিশ্বের ধ্যান-ধারণার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী ব্যয়ে গুরুত্ব আরওপ করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে যেসব বৈশ্বিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তা হচ্ছে ক. শিক্ষার্থীর নিজের জ্ঞানবিষয়ক অধ্যয়ন ও অগ্রায়নভাবনা। খ. শিক্ষার্থীর উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের দক্ষতা সৃষ্টি। গ. শিক্ষার্র্র্র্থীর নিজের অগ্রগতি সম্পর্কে মূল্যায়ন। ঘ. গতানুগতিক শিক্ষার চেয়ে শিক্ষার্থীর স্বকীয় সদিচ্ছার প্রমাণ।

বিজ্ঞান ও কারিগরি যথার্থ জ্ঞান অর্জনের পরিবর্তে উন্নয়নশীল দেশের বিশ্বায়নের ধারণা জনপ্রিয়করণের ফলে সব দেশের শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক মনোভঙ্গি বিশ্বায়নমুখী হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে একটি সাংস্কৃতিক আবহ তারা তৈরি করতে চায়, যা বিশ্বায়নের সহায়ক হবে। যেহেতু আগত বিশ্বায়নের ধারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে তাই প্রথমত শিক্ষাকে ব্যবসায় এবং লাভ-অলাভের কার্যাবলি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দ্বিতীয়ত, কারিগরি বিপ্লবকে বিশ্ব শিক্ষায়নের প্রয়োজন অনুযায়ী গড়ে তোলা হবে। এখন গোটা বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষা ব্যবসা ও কারিগরি উন্নয়ননির্ভর হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে আজকাল ইউরোপ-আমেরিকা থেকে গবেষণার প্রচুর কাজ আসছে। এর সাথে এমফিল এবং পিএইচডির মতো মর্যাদাপূর্ণ ডিগ্রিকে একীভূত করা হচ্ছে। এর সপক্ষে যারা যুক্তি দেখান তারা বলছেন, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের সাথে সাথে তার মেধার উন্নয়ন ঘটছে। অপর পক্ষ বলছেন, এতে বেশি দামে মেধার কাজটি হচ্ছে; ব্যক্তি বা শিক্ষার্থীর কোনো স্বাধীনতা কোনো কাজে আসছে না। ব্রাসেলস থেকে পিএইচডি করছেন- এমন একজন শিক্ষার্থী লেখকের কাছে অভিযোগ করেছেন, কেবল গাধার মতো কোনো উদ্দেশ্যকে ও আবিষ্কারকে সামনে রেখে খাটিয়ে নেয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন আপেক্ষিক মাত্র। সম্প্রতি লক্ষ করার বিষয় হলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগের ছয়টি এবং বর্তমান পাঁচটি মুসলিম দেশসহ সবার জন্য ভিসা বন্ধ করে দিলেও জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখায় উৎকর্ষধারীদের বরং আমেরিকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। স্বভাবত এভাবেই ‘ব্রেইন ড্রেইন’ ঘটছে। এসব দেশে উচ্চশিক্ষা শুধু অর্থ উপার্জন ও বিজ্ঞানের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, বরং আমাদের উচ্চশিক্ষিতরা সমাজের উচ্চ আসনে আসীন হয়ে সমাজকে সুশীল ও সুষম করার চেষ্টা করেন। বৈশ্বিক বাণিজ্যিক শিক্ষা দিয়ে আমাদের মানবিক ও পারিপার্শ্বিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এখনকার বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞান কারিগরি ও চিকিৎসাক্ষেত্রে শিক্ষা গ্রহণকারীদের চেয়ে অবিশেষায়িত শিক্ষার ছাত্ররা ভালো মানবিক আচরণ করছে। এ ক্ষেত্রে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে কেতাদুরস্ত শিক্ষার পাশাপাশি কথিত বিজ্ঞান ও বাণিজ্যনির্ভর অমানবিক নাগরিক তৈরি হচ্ছে। একই সাথে এ পেশাধারীদের মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানমনস্ক পেশাদারি শিক্ষা এদের (হবসের ভাষায়) ‘স্বার্থপর, সঙ্কীর্ণ, নিষ্ঠুর, নোংরা এবং পাশবিক করে তুলছে। বর্তমান সমাজব্যবস্থা এর প্রমাণ। এসব শিক্ষাব্যবস্থার লোকেরা তাদের ইংরেজি দক্ষতা এবং পাশ্চাত্য ধারার অনুসরণের কারণে অন্য সব শিক্ষাকে আড়চোখে দেখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহু মতের ও বহু পথের লোকদের সাথে এদের যথেষ্ট মেলামেশা না হওয়ার কারণে এরা নিজেদের একরকম ‘ব্রাহ্মণ’ ভাবছে।

বিশ্বায়নের প্রভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো অর্থনীতি, প্রশাসন ও বাণিজ্যনীতির বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাচ্ছে। সরকার ঘোষণা দিয়ে, বিজ্ঞাপন দিয়ে ও আলাপ-আলোচনা করে বলছে, কত সহজে তার দেশে কত শিল্পায়ন করা যায়, কত বিনিয়োগ করা যায়। সেই সাথে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বায়নের মডেলে বহু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসার ঘটছে। এগুলোর নামকরণ হচ্ছে বিশ্বায়নের অনুকূলে। যেমন- নর্থ সাউথ, ইস্ট ওয়েস্ট, নর্দার্ন, ইস্টার্ন, প্যাসিফিক, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি। ভাবখানা এই যে, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে এদের কোনো সম্পর্ক নেই। সবাই উড়ে যেতে চায় পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণে। তবে ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। যেমন- গণ বিশ্ববিদ্যালয়, অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস প্রভৃতি। সেই সাথে সরকারের তরফ থেকে ক্রমেই শিক্ষা-সঙ্কোচন নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এটাও সত্য কথা যে, হাজার হাজার এমএ পাস করা অশিক্ষিত, মূর্খ সৃষ্টি করার চেয়ে তা না করাই ভালো। শিক্ষা অবশ্যই হতে হবে গুণগত ও মানগত এবং পরিকল্পিত।

সবচেয়ে আশঙ্কার কথা, তৃতীয় বিশ্ব তথা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বমানে উন্নীতকরণের ব্যাপারে বিশ্বায়ন কর্তাদের কোনো উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। ছিটেফোঁটা দু-একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়াস এখানে রয়েছে। তার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠানটিও মহলবিশেষের উৎপাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি সার্ক মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রামে। এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এত বেশি যে, সাধারণ মানুষ জানতে পারে না কোথায় কী হচ্ছে। আবার ‘ইন্টারন্যাশনাল’ নামধারী অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার একটিও মূলত ইন্টারন্যাশনাল নয়। এক দিকে বিশ্বমোড়লরা আশা করছেন, পৃথিবীর নাগরিকরা বিশ্বায়নের পরিপূরক হয়ে উঠবেন। তারা সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণায় সীমাবদ্ধ থাকবেন না। অপর দিকে গোটা বিশ্বের মানবিক, সাহিত্যিক, ভাষাভিত্তিক ও শিল্পকলাভিত্তিক শিক্ষাকে যথার্থ পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে বিশ্বসমাজের উপযোগী করা হচ্ছে না। ফলে সমাগত বিশ্বের জন্য যথার্থ নাগরিক তৈরি হচ্ছে না। এর বিপরীতে গোষ্ঠীবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ, সম্প্রসারণবাদের খায়েশ গোটা পৃথিবীকে তছনছ করে দিচ্ছে। যত দিন পর্যন্ত বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থা এসব ভেদাভেদ দূরীকরণের জন্য যথার্থ না হবে তত দিন পর্যন্ত শান্তি সুদূরপরাহত।

শিক্ষা স্থায়ী উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। শিক্ষা দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য প্রধান প্রতিপাদ্য। শিক্ষার সুকুমারবৃত্তি বেকার সমস্যা সমাধানে পাথেয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবসমাজকে আহ্বান জানিয়েছেন, অন্যের চাকর না হয়ে নিজের সুকুমারবৃত্তি দিয়ে চাকরি সৃষ্টির জন্য। সত্যিই শিক্ষা পারে জীবনযাত্রাকে সহজ-সরল ও সততায় অলঙ্কৃত করতে। সন্দেহ নেই, এর বিপরীত গুণাবলি দিন দিন আমাদের জাতীয় মূল্যবোধকে বিলীন করে দিচ্ছে। বিশ্বায়নের সুবাদে অনেক জাতি স্বকীয় মর্যাদা ও মূল্যবোধ ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বায়নের কার্যবিধি ও পরিসর যদি মানবিক মূল্যবোধ, সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক পর্যায়ে পরিগণিত হয়, তাহলে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন অর্জিত হতে পারে। আজকের বিশ্বায়নের সুখ ও সমৃদ্ধির যুগে বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে কোটি কোটি মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে, তখন আমাদের শপথ হোক ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। তাহলেই জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশ্বায়ন সফল হবে।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement