২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সে আত্মসম্মান কোথায়?

-

আত্মসম্মান ও বিবেক একটি অপরটির পরিপূরক। আত্মসম্মান বলতে সাধারণ অর্থে আমরা বুঝি নিজের মর্যাদা বা সম্মান বিষয়ে সচেতন। একজন আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে কখনো এমন কোনো কাজ করা সম্ভব নয়, যেটি তার সম্মান বা মর্যাদার জন্য হানিকর। আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন যেকোনো ব্যক্তি বিবেকবান হয়ে থাকে এবং বিবেকবান ব্যক্তির পক্ষে কখনো অন্যায় ও অসত্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ সম্ভব নয়। একজন আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন ব্যক্তি স্বীয় বিবেকে তাড়িত হয়ে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে থাকেন।

আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন ব্যক্তি আদর্শিকভাবে নীতিবান হয়ে থাকেন। নীতির বিপরীত শব্দ দুর্নীতি। দুর্নীতি শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং নীতি ও নৈতিকতাবিরোধী যেকোনো কাজই দুর্নীতি। সাধারণ্যে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন দুর্নীতি এবং এ ধারণাটি যারা পোষণ করেন তাদের অভিমত নগদ অর্থ ছাড়া কোনো দ্রব্যসামগ্রীর মাধ্যমে যদি কোনো কার্যসিদ্ধির উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তিকে কিছু দেয়া হয় সেটি দুর্নীতি নয়। কিন্তু এটি একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। একজন ব্যক্তির পক্ষে বৈধ আয়বহির্ভূত নগদ বা দ্রব্যসামগ্রীর মাধ্যমে যেকোনো ধরনের সম্পদের আহরণ দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত এবং এরূপ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি দেশের প্রচলিত আইনের বিধিবিধান অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধের দায়ে বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকেন।

দুর্নীতি শব্দটি ঘুষের সমরূপ। ঘুষের মাধ্যমে যে নগদ অর্থ বা দ্রব্যসামগ্রীর আদান-প্রদান ঘটে তাতে ঘুষগ্রহীতা ও দাতা উভয়ে লাভবান হয়। ঘুষগ্রহীতার ক্ষেত্রে এটি অন্যায় বা অবৈধ প্রাপ্তি আর অপর দিকে ঘুষ দাতা অবৈধ পন্থায় স্বীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য কার্য সম্পাদনকারী ব্যক্তিকে নগদ অর্থ বা সামগ্রী দিয়ে অপরের বঞ্চনায় বশীভূত করে থাকে। এখানে অপর বলতে একজন ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি বা দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীকে বোঝায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন ব্যক্তি নির্ধারিত হারের চেয়ে কম শুল্ক দিয়ে কোনো দ্রব্য ছাড় করালে তাতে রাষ্ট্র বৈধ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। আর এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয় তা দেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর ক্ষতি হিসেবে বিবেচিত। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এ ধরনের চাকরিতে যদি অবৈধ অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে চাকরি দেয়া হয় সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। অনুরূপ যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে যদি স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয় সে ক্ষেত্রে মেধাবী ও যোগ্যদের জন্য উচ্চতর শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়। আর ভর্তি পরীক্ষায় যেকোনো ধরনের অসাধুতা মেধাবী ও যোগ্যদের জন্য গভীর মর্মবেদনা ও পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আমাদের উপমহাদেশের শাসনক্ষমতা ব্রিটিশদের হস্তগত হওয়ার আগে সম্পূর্ণ উপমহাদেশ ৬০০ বছরের অধিক সময় মুসলমানদের শাসনাধীন ছিল। এ উপমহাদেশটি মুসলিম শাসনাধীন থাকাবস্থায় আদালতের কার্যসহ রাজদরবার এবং সরকারি কাজকর্ম ফারসি ও উর্দু ভাষায় সম্পন্ন করা হতো। ব্রিটিশদের শাসনক্ষমতা গ্রহণ পরবর্তী ধীরে ধীরে সরকারি কাজসহ লেখাপড়া সব বিষয়ে ইংরেজির প্রচলন শুরু হয়, যা বর্তমানেও অব্যাহত আছে।

ব্রিটিশ শাসনামলে সরকারের উচ্চপদে সুদূর ব্রিটেন থেকে আগত শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশরাই নিয়োগ লাভ করতেন। এ দেশীয়দের মধ্যম ও নিম্ন পদে নিয়োগ দেয়া হতো। ব্রিটিশ শাসনামলে একজন স্বদেশীর জন্য মধ্যম বা নিম্ন পদে নিয়োগ লাভ দুর্লভ সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হতো। ব্রিটিশ আমলে এ দেশীয় যারা মধ্যম ও নি¤œ পদে নিয়োগ লাভ করেছিলেন তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই আত্মসম্মান ও বিবেকের জন্য হানিকর এমন কাজে লিপ্ত হয়েছিলেন। পরে ভারতবর্ষ বিভাজিত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দু’টি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হলে উভয় রাষ্ট্র স্বদেশীয়দের দ্বারা শাসিত হতে থাকে।

পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল পূর্ব-বাংলা সমন্বয়ে গঠিত পূর্ব-পাকিস্তান নামে অভিহিত হয়। পাকিস্তানের সূচনালগ্নে পূর্ব-পাকিস্তানের উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন পদে যারা আসীন হয়েছিলেন তাদেরও স্বল্পসংখ্যক নিজ নিজ আত্মসম্মান ও বিবেকের পরিপন্থী এমন কার্যে লিপ্ত হয়েছিলেন। তবে ৫০ এর দশকের শেষভাগে পাকিস্তান সামরিক শাসনের আবর্তে নিপতিত হলে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আত্মসম্মান ও বিবেকের সাথে সাংঘর্ষিক এমন ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

পাকিস্তান বিভাজিত হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটলে এ দেশের সাধারণ জনমানুষের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছিল যে শোষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনার অবসানে রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে সত্য ও ন্যায়ের আলোকবর্তিকায় সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু আজ আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে তখন এ দেশের জনমানুষের মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে আমাদের দেশে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার যে মানুষ রয়েছে তারা কতটুকু আত্মসম্মান ও বিবেকবোধসম্পন্ন।

যেকোনো জাতির মেরুদণ্ড হলো শিক্ষা। একজন ব্যক্তি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলে তার পক্ষে নীতিবিরোধী বা অনৈতিক কাজ করা দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। তবে পৃথিবীর সব দেশ ও সমাজে কমবেশি এর ব্যতিক্রম রয়েছে। একজন ছাত্রছাত্রীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের আদর্শ নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে মূল দায়িত্বটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ে যারা শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন, তারা পালন করে থাকেন। বর্তমানে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয়, তাতে মেধা ও যোগ্যতার চেয়ে প্রার্থীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা অধিক বিবেচ্য হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকৃত মেধাবী ও যোগ্যরা শিক্ষকতার চাকরি লাভে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যাদের প্রবেশ ঘটছে তারা কতটুকু আত্মসম্মান ও বিবেকবোধসম্পন্ন তা অতি সহজেই অনুমেয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে অভিয্ক্তু কয়েকজন ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজ হেফাজতে নেয়ার পর যখন জানতে পারে তাদের মধ্যে একজন উচ্চ আদালতের বিচারকের কন্যা তখন তাকে ছেড়ে দিয়ে অবশিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েকপূর্বক পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সংবাদমাধ্যম থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ওই বিচারকের কন্যা একটি কোচিং সেন্টারের জনৈক শিক্ষকের সাথে তাকে এসএমএসের মাধ্যমে সঠিক উত্তর সরবরাহ করে দেবেন এ শর্তে তিন লাখ টাকার চুক্তিতে আবদ্ধ হন। বিচারকের কন্যাকে এ তিন লাখ টাকার সংস্থান কে করত সে প্রশ্নটি সমগ্র দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। অতীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানক্রম পৃথিবীর সেরা ৫০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ মানক্রমের নিম্নমুখিতার জন্য অনেকাংশে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই দায়ী। আলোচ্য একটি ঘটনা থেকে অনুধাবন করা যায় একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের আত্মসম্মান ও বিবেক কিভাবে নীতি ও নৈতিকতার কাছে পরাভূত।

ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের চাকরিকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ গণ্য করা হতো। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মেধাবী শিক্ষক ক্ষমতার প্রতি প্রলুব্ধ হয়ে শিক্ষকতার চাকরি ত্যাগ করে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসন ক্যাডারের চাকরি গ্রহণ করতে একটুও কুণ্ঠা বোধ করেননি। এদের অনেককে পরে দেখা গেছে নীতি ও নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে আত্মসম্মান ও বিবেকের সাথে সাংঘর্ষিক এমন পথে পা বাড়াতে মোটেও বিচলিত হননি।

বাংলাদেশের জন্মের পর প্রশাসন ক্যাডারের গৌরব ও সম্মানের দ্রুত হ্রাস ঘটতে থাকে এবং নীতি ও নৈতিকতার বিচারে এ ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তা যে আত্মমর্যাদা ও বিবেকশূন্য এ কথাটি বললে অত্যুক্তি হবে না। সম্প্রতি প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি দমনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয় যে, সরকারের শীর্ষ সচিব পদে আসীন এমন কিছু কর্মকর্তা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদের মাধ্যমে তাদের চাকরিকে দীর্ঘায়িত করতে সমর্থ হন। সরকারের শীর্ষ পদে আসীন একজন কর্মকর্তার পক্ষে এহেন কাজ নীতি ও নৈতিকতার নিরিখে অসম্ভব বিবেচিত হলেও বাস্তবতা হলো সরকারের উচ্চ পদে আসীন কিছু কর্মকর্তা এহেন কাজে লিপ্ত হয়ে শুধু নিজেদের আত্মসম্মান ও বিবেককে মলিন করেননি বরং প্রশাসনের ভাবমর্যাদার ওপর অমোচনীয় কালিমা লেপন করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ বলে কথা, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি এবং তাদের একজন সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফরের দুর্লভ সুযোগ লাভ করেছেন। আর অদূর ভবিষ্যতে যে মামলা হবে সে ব্যাপারে দেশবাসী আশাহত। আর মামলা হলেও বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় এবং আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে তাদের জন্য বের হয়ে আসার পথ যে উন্মুক্ত হবে না এমন ধারণা পোষণ অমূলক নয়।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পুলিশকে বলা হয় জনগণের বন্ধু। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ সৃষ্টি-পরবর্তী পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেদের সেভাবে সম্মান ও মর্যাদার আসীনে সমাসীন করতে পারেননি। বর্তমানে এক দিকে বিপুল ক্ষমতা অন্য দিকে জবাবদিহির অনুপস্থিতিতে দুর্বল আত্মসম্মান ও বিবেকসম্পন্ন অনেকেই পুলিশ বিভাগের চাকরির প্রতি প্রলুব্ধ হয়ে পড়ছেন। কিন্তু আজ থেকে ৫ বা ৬ দশক আগে এ চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। একদা পাকিস্তান শাসনামলের মধ্যভাগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষকের জ্যেষ্ঠপুত্র পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশ ক্যাডারপ্রাপ্ত হলে প্রবল আত্মসম্মান ও বিবেকবোধসম্পন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পুত্রের সাফল্যে আনন্দিত না হয়ে ব্যথিত হন এবং ‘আমি তোমাকে পুলিশ হওয়ার জন্য লেখাপড়া করাইনি’ কথাটি বলে পুলিশ বিভাগের চাকরি গ্রহণ থেকে নিবৃত্ত করেন। আদর্শ পিতার আশীর্বাদে পরবর্তী বছর দেখা গেল ঠিকই তার জ্যেষ্ঠ পুত্র কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডার লাভ করেছেন। সত্যিই সে সময় একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের যে আত্মসম্মান ও বিবেক ছিল তা বর্তমান সমাজের ক’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সচিব পদধারীদের মধ্যে রয়েছে? নিকট অতীতে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, জনৈক পিতা তার পুত্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে পুলিশ ক্যাডার পাওয়ায় একাধিক গরু জবাই করে পুরো গ্রামবাসীর জন্য ভূরিভোজের ব্যবস্থা করেছিলেন। এটি নিম্ন আত্মসম্মান ও বিবেকের পরিচায়ক হলেও যে পিতা ভূরিভোজের আয়োজন করেছিলেন, তা তার কাছে গর্বের বিষয় ছিল।

আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিবেদিত করার মহান ব্রত নিয়ে একজন ব্যক্তি চিকিৎসকের পেশায় নিয়োজিত হন। কিন্তু বর্তমানে কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক চিকিৎসকই লোভের বশবর্তী হয়ে নীতি, নৈতিকতা ও বিবেকের কাছে হার মেনেছেন। আমাদের দেশে বিপুল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং বিশেষায়িত হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও এখনো কেন বিপুল লোক চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন? দেশের চিকিৎসকসহ নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই এর উত্তর খুঁজে বের করে সমাধানের পথ দেখাতে হবে।

আমাদের দেশ ও সমাজ বিভিন্ন শ্রেণীপেশা সমন্বয়ে গঠিত। আমাদের দেশ ও সমাজের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে তাদের অনেকে অন্যায়ের দিকে ধাবিত হলেও আত্মসম্মান ও বিবেক বাধা হিসেবে দাঁড়ায় না। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনুসৃত হয় এমন সব দেশে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র পথ হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আমরা পাকিস্তানের শাসনাধীন থাকাবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিঘ্ন ঘটার কারণেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম লাভ। যেকোনো দেশে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আত্মসম্মান ও বিবেকবোধ যত বেশি প্রবল হবে সে দেশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশায় তত বেশি সৎ, যোগ্য ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির প্রবেশ ঘটবে। একটি দেশের রাজনৈতিক নেতারা যে আত্মসম্মান ও বিবেকবোধসম্পন্ন দেশের জনগণের মধ্যে সে উপলব্ধি জাগ্রত করতে হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ওপর রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে- এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আমাদের নিকট অতীতের দিকে তাকালে আত্মসম্মান ও বিবেকবোধের ক্রম হ্রাসের যে চিত্রটি দেখতে পাই তাতে সুদূর অতীতের আত্মসম্মান ও বিবেকবোধের পুনর্ভব ঘটবে এমন আশাবাদী হওয়া সুদূর পরাহত।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
নাটোরে স্কুলছাত্রকে ডেকে নিয়ে হত্যা, আটক ৪ মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই দুর্ঘটনায় তরুণ নিহত ছুটির দিনেও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর কালিয়াকৈরে ছিনতাইকারীর অস্ত্রের আঘাতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবা-ছেলে আহত কাপাসিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত ২ রাশিয়ার ২৬টি ড্রোন ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের উত্তর কোরিয়ার সাথে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র মাগুরায় বজ্রপাতে ২ যুবকের মৃত্যু মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ‘অস্থায়ীভাবে’ ক্ষমতায় রয়েছে : জান্তা প্রধান গাজীপুরে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেলচালক নিহত উত্তরপ্রদেশে কারাগারে মুসলিম রাজনীতিবিদের মৃত্যু : ছেলের অভিযোগ বিষপ্রয়োগের

সকল