২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাস্তার ছিন্নমূল মানুষ ও মানসিক রোগগ্রস্তদের পুনর্বাসন

রাস্তার ছিন্নমূল মানুষ - ছবি : সংগ্রহ

আমি প্রথমে সাধারণভাবে যারা রাস্তায় আছে তাদের কথা বলব। তারা কয়েক শ্রেণীতে বিভক্ত: ১. ছিন্নমূল শিশু, যাদের দেখার কেউ নেই। ২. কোনো পুরুষ ছাড়া রাস্তার নারী, যারা যুবতী ও কিশোরী, ৩. ছিন্নমূল পরিবার; স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান। এরা ভাড়া দিয়ে বস্তিতেও থাকতে পারে না। ৪. মানসিক রোগগ্রস্ত নারী ও পুরুষ, যারা নিজেদের পরিচয় ভালো করে দিতে পারে না। তবে তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ঢাকা শহরে সর্বোচ্চ এক হাজার হতে পারে। কিন্তু এর পরিসংখ্যান নেই।

এসব মানুষ কিভাবে রাস্তায় এসেছে? তার কারণগুলো এ ভাবে উল্লেখ করা যায়। ১. নদী ভাঙনের শিকার যারা, তাদের একটি অংশ যারা অতি দরিদ্র, যারা নিজেরা পুনর্বাসিত হতে পারেনি বা সরকারও তাদের যথাযথভাবে পুনর্বাসিত করতে পারেনি। এরা শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে শহরে চলে আসে। গ্রামে তারা আশ্রয়ও কাজ পায় না। এদের মধ্যে রয়েছে পরিবার (স্বামী-স্ত্রী, শিশু) কেবল নারী বা পুরুষ। ২. বিভিন্ন সময় মঙ্গা, দুর্ভিক্ষের কারণে কিছু লোক শহরে চলে আসতে বাধ্য হয়। ওরা রাস্তায় থাকে। ৪. কিছু দালাল ধরনের লোক দ্বারা অপহৃত কিশোরীরা; তাদের অনেকেই আর বাড়িতে ফিরতে পারে না, রাস্তায় থাকে। তাদের দুঃখ বোঝার কেউ নেই। এরা সবাই বিপদগ্রস্ত। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত হচ্ছে যুবতী-কিশোরী এবং মানসিক রোগগ্রস্ত নারী, যারা রাস্তায় থাকে। এরা অন্যান্য অসুবিধার অতিরিক্ত নিত্যদিন লম্পট পুরুষের যৌন নির্যাতনের শিকার। অসংখ্য লোক চরিত্র হারিয়ে ফেলেছে এবং তারা রাতে এসব নারীর ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়।

এদের সবারই পুনর্বাসন প্রয়োজন। সরকার, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, এনজিও মিলে এ কাজ করতে হবে। প্রতি বছরের নদীভাঙনগ্রস্ত লোকদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের একটি স্থায়ী কর্মসূচি থাকতে হবে।

রাস্তার মানসিক রোগগ্রস্তদের ব্যাপারে আমার যে হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা হয়েছে, সে সম্পর্কে লিখতে চাই। বেশ কিছু দিন আগে আমি সংসদ ভবনের দক্ষিণ দিকের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম, এক যুবতী মহিলা (বয়স ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে হবে) কিছু খাচ্ছে এবং রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। তার কাপড়চোপড় খুবই পুরনো এবং সামান্য। তাকে একশত টাকা দিতে চাইলাম। কিন্তু সে নিল না, দৌড়ে রাস্তার অন্য পারে চলে গেল। লোকেরা আমাকে বলল, সে পাগল।

এর কিছু দিন পর আর একটি ঘটনা আমাকে দারুণভাবে মর্মামত করেছে। আমি ঢাকা কোর্টে যাচ্ছিলাম। আমার গাড়ি গুলিস্তানের কাছে জিরো পয়েন্টে ট্রাফিক জ্যামের কারণে অনেকক্ষণ আটকে ছিল। পাশে দেখলাম একমহিলা তার বয়স (৩০-৩৫ হবে) কিছু একটা বলছে। তাকেও আমি একশত টাকা দিতে চাইলাম। কিন্তু সে নিল না। সে খুব ক্ষীণ হয়ে গেছে। তার গায়ে কাপড়চোপড় অতি সামান্য। বুঝতে পারলাম, তার মাথা ঠিক নেই। মহিলাটির এ অবস্থা দেখে আমার কান্না এলো। হয়তো বা তার গার্জিয়ানও নেই। রাতে থাকার জায়গা নেই। এরপর আমি একটি চিঠি লিখে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি।

সিটি করপোরেশনের একজন মেয়রকে বিষয়টি জানাই। বিষয়টি গুরুতর। এরকম পুরুষও আছে, ছেলে-মেয়েও থাকতে পারে। সরকারকে, সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অনুরোধ করি যেন তারা এদের উদ্ধার করে তাদের খরচে হাসপাতাল অথবা মানসিক কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন; সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দেখভাল করেন এবং পরে তাদের পুনর্বাসন করেন।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement