১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতি নির্মাণের পথিকৃৎ রাষ্ট্রচিন্তক

ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান -

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের অগ্রচিন্তক। সমস্যা, সঙ্কট ও জাতি তথা রাষ্ট্র নির্মাণে সব দেশে সব কালে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীসহ বুদ্ধিজীবীদের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ উপনিবেশবাদ’ (Internal Colonialism)-বিরোধী সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। প্রফেসর মোজফফর আহমেদ চৌধুরী এ ক্ষেত্রে আরেকটি অগ্রসর নাম। বিভাগের সে সময়ে কর্মরত প্রবীণ শিক্ষকরা মেধা ও মনন দিয়ে এই জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তিভূমি নির্মাণে তাদের সাথী ছিলেন। বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র অর্জনের পরও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ এই জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য তাদের প্রয়াস অব্যাহত রাখে। প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ ও প্রফেসর তালুকদার মনিরুজ্জামান এ ক্ষেত্রে দু’টো উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাদের গবেষণা, প্রকাশনা, গ্রন্থনা ও বক্তৃতা-বিবৃতি তার প্রমাণ দেয়।

গভীর দুঃখ ও বেদনার কথা, ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান আর বেঁচে নেই। গত ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। প্রফেসর এমাজউদ্দিন বয়সে তার জ্যেষ্ঠ হলেও আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আমরা তার দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন কামনা করি। তাদের সহকর্মীরা অত্যন্ত সুনামের সাথে রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। নিজেকে ব্যক্তিগতভাবে ভাগ্যবান মনে করি এ কারণে যে, যাদের নাম উল্লেখ করলাম, স্বাধীনতা অর্জনের পরপর তাদের সরাসরি ছাত্র ছিলাম।

প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান ছিলেন বহুমাত্রিক জ্ঞান ও গবেষণার অধিকারী। তিনি ছিলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সামরিক রাজনীতির বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ রাজনীতির নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাকারী এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে তাকে জাতীয় অধ্যাপকের বিরল সম্মানে ভূষিত করেছে। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে দেশে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেন। পরবর্তীকালে তার গভীর পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণা ও গ্রন্থনার জন্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে সিনিয়র ফুল ব্রাইট স্কলার হিসেবে সেখানে তার গ্রন্থাবলি ও পাণ্ডিত্যের প্রশংসা শুনেছি। রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার ব্যাপারে, লিফসুজের (Lifsultz) আগেই তিনি বাংলাদেশকে অসমাপ্ত বিপ্লবের সাথে তুলনা করেছিলেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি স্পষ্ট মতামত প্রকাশ করে সবার শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। বাংলাদেশে অব্যাহত গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতি তিনি দৃঢ় সমর্থন জানান। তিনি বিশ্বাস করতেন, ‘এ সমাজ ভাঙতে হবে, নতুবা গড়তে হবে’। ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনের জন্য তিনি যুবসমাজকে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রাজনীতিতে ‘আদর্শিক অনুপস্থিতি’র কথা বলেন এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির সমালোচনা করেন। এই বরেণ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিগত প্রায় ৫০ বছরে জাতীয় সমস্যা মোকাবেলায় এবং জাতীয় সঙ্কট উত্তরণে যথার্থ পরামর্শ ও উপদেশ দিতেন। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের অনুশীলনের জন্য বারবার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। গণমাধ্যম তথা সংবাদপত্র সংক্রান্ত সম্মেলন উপলক্ষে তার এই মতামতগুলো গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিভিন্ন সমস্যা ও সঙ্কটে তার মতামত গ্রহণ করতেন বলে জানা যায়। সামরিক রাজনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে মনিরুজ্জামানের বক্তব্য জিয়াকে প্রভাবিত করেছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। তৃতীয় বিশ্বের ছোট দেশগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় তিনি ‘নাগরিক সেনাবাহিনী’ গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। The Security of Small States in the Third World গ্রন্থে তিনি এ মতামত দিয়েছেন। গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের মাধ্যমে এ ধারণার প্রকাশ ঘটে। ছোট দেশ হিসেবে পররাষ্ট্রনীতির ভারসাম্য বিধানে জিয়াউর রহমান যে পূর্বমুখী নীতির (Look East Policy) সূচনা করেছিলেন তারও উৎস ওই গ্রন্থ। রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ ও শাসনকে প্রফেসর তালুকদার বেসামরিক কর্তৃত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে ব্যাখ্যা করেন। তার দীর্ঘ পরিশ্রমলব্ধ Military Withdrawal from Politics : a Comparative Study গ্রন্থে এর বিশ্লেষণ রয়েছে। বাংলাদেশে ভাবাদর্শের অব্যাহত সঙ্ঘাতকে তিনি জাতীয় ঐক্যের প্রতি হুমকি মনে করতেন। তিনি জিয়ার অনুসৃত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মতো মধ্যপন্থী নীতিভঙ্গিকে ভাবাদর্শের সঙ্ঘাতের নিয়ামক মনে করতেন।

অসামান্য মেধার অধিকারী এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ১৯৩৮ সালের পয়লা জুলাই সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুল মজিদ তালুকদার স্কুলশিক্ষক ছিলেন। মনিরুজ্জামান ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছেন তারাকান্দি মাইনর স্কুলে। পরে ভর্তি হন সিরাজগঞ্জ হাইস্কুলে। সেখানে এসএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বোর্ডে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন। এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে অনার্স পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। সে সময়ের বিভাগীয় প্রধান ন্যুমেন একজন বাঙালি ছাত্রকে মাস্টর্সে প্রথম শ্রেণী দিতে চাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে ন্যুমেনের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর পরিণতিতে এই বিদেশীকে এ দেশ ছেড়ে যেতে হয় বলে শ্রুতি আছে। তালুকদার মনিরুজ্জামান ১৯৬৩ সালে মর্যাদাপূর্ণ কমনওয়েলথ বৃত্তি অর্জন করেন এবং কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৬৬ সালে পিএইচডি লাভ করেন। একই বছর তিনি সিনিয়র লেকচারার হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। একই সময়ে বিভাগের মেধাবী ছাত্রী ইউ এ বি রাজিয়া আখতার বানুর সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন।

লেখালেখি ও গবেষণায় তিনিও খ্যাতি অর্জন করেন এবং তার অপরিণত বয়সে জীবনাবসান ঘটে। প্রিয় স্ত্রীর মৃত্যুতে তিনি কিছু দিনের মধ্যে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
যখন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হই, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের পুরনো ধারা তখনো মিলিয়ে যায়নি। আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন, সে কারণে সব শিক্ষককে পিতৃজ্ঞান করেছি। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ার এক বছর পর ১৯৭৪ সালে তালুকদার মনিরুজ্জামান এ বিভাগে যোগদান করেন। আর একজন খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর রওনক জাহানের পর তিনি বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ততদিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত থাকলেও তালুকদার স্যারের জ্ঞান ও মনীষা সম্পর্কে আমরা অবহিত হয়েছিলাম। তার প্রথম উল্লেখযোগ্য বই Radical Politics and Emergence of Bangladesh প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। স্বল্প পরিসরের এই বইটি বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দীর্ঘ ইতিহাসের সারাংশ উপস্থাপন করেছে। এখানে স্বাধীনতার পটভূমিতে সমীক্ষা রয়েছে বাম রাজনীতির। তিনি যখন ১৯৭৪-৭৮ সাল পর্যন্ত আমাদের ক্লাস নিয়েছেন, তখন তার জ্ঞানের গভীরতায় মুগ্ধ হতাম। একটি বিষয় পড়াতে গিয়ে তিনি অনেক বিষয়ের অবতারণা করতেন। কখনোই তার ক্লাস নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হতো না। আমাদের টিউটোরিয়াল বা অনুশীলনী পরীক্ষা ছিল তার সাথে। অসম্ভব সরলতা এবং অনানুষ্ঠানিক ও অনাড়ম্বর আচার-আচরণে আমাদের অনেক প্রিয় ছিলেন তিনি। একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি- একদিন স্যারের বাসায় গিয়েছি একাডেমিক প্রয়োজনে। বাসায় কেউ ছিল না। শুধু স্যারই ছিলেন। তিনি আমাকে ‘বসো’ বলে বাইরে গেলেন। ফিরে এলেন আমার জন্য কলা আর রুটি নিয়ে। দেখে তো হতবাক। আমি পিএইচডিতে ভর্তি হওয়ার আগে আমার প্রিয়জন স্যারদের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন মনে করেছি। তালুকদার স্যারের কাছে গিয়েছি, তিনি আমাকে কিছু না বলে ভেতরে গেলেন। সাথে নিয়ে এলেন তার ‘ইমারজেন্স অব বাংলাদেশ’ বইটি। হাতে ধরে বইটিতে তিনি ‘জিয়া রিজিম’ অধ্যায়টি বের করলেন। বললেন, এটা ৩০ পাতা আছে। তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণাদি নিয়ে এটিকে ৩০০ পৃষ্ঠা করো। এভাবেই তিনি জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনকাল সম্পর্কে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। আর আমার থিসিসের শেষ কাজটি করেছেন আমার আরেকজন পিতৃস্থানীয় শিক্ষক এমাজউদ্দিন আহমেদ। ছাত্রজীবনে ক্লাসের পর বাকি সময় যে তিনি গবেষণায় কাটাতেন, তা বেশ টের পেতাম।

আমাদের বলতেন, ওই সময়ে ছাত্র সংগঠনের তরফ থেকে যা কিছু প্রকাশনা-লিফলেট ও পুস্তিকা বের হয়েছে, আমরা যেন তাকে দেই। কক্ষে না থাকলেও আমরা যেন সেগুলো দরজার নিচ দিয়ে রেখে আসি। আমাদের আরো কাজে লাগিয়েছিলেন দলগুলোর ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র ও ম্যানিফেস্টো সংগ্রহ করতে। একই কাজ করেছিলেন প্রফেসর ড. শামসুল হুদা হারুন চৌধুরী। তিনি ১৯৭৩ ও ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনী কার্যক্রমের ওপর একটি ভিন্নধর্মী বই রচনা করেছিলেন। এই বইটি শুধু নির্বাচন সংস্কৃতির ওপর সুনির্দিষ্ট ছিল। অপরদিকে বাংলাদেশের বিপ্লব তথা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও অভ্যুদয়- পরবর্তী ঘটনাবলি নিয়ে তালুকদার মনিরুজ্জামান রচিত গ্রন্থ- The Bangladesh Revolution and its Aftermat ছিল স্বাধীনতা পরবর্তীকালের রাজনীতির একটি প্রামাণ্য দলিল। ১৯৭৪ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং পরিবর্তিত রাজনৈতিক সমীকরণের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি একটি প্রবন্ধ রচনা করেন। Bangladesh in 1974: Economic Crisis and Political Polarization। প্রবন্ধটি রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রখ্যাত সাময়িকী ‘এশিয়ান সার্ভে’তে প্রকাশিত হয়। ১৯৮২ সালে তিনি গোষ্ঠীস্বার্থ ও রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্পর্কে একটি ব্যাপক গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। এখানে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের রাজনীতির তুলনামূলক আলোচনা করা হয়। প্রফেসর তালুকদার মনিরুজ্জামান সম্ভবত বাংলাদেশের প্রথম ও প্রধান গবেষক, যিনি পৃথিবীব্যাপী বিরাজিত সামাজিক বিজ্ঞানবিষয়ক প্রায় সব গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করেছেন। তিনি ওয়াশিংটনের উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সুইডেনের আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের আধাসামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান Bangladesh Institute of International Strategic Studies-BIISS-এর তিনি একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

উপরিউক্ত আলোচনা আমাদের এই প্রত্যয় দেয় যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রাথমিক দিনগুলোতে ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান যথেষ্ট কাজ করেছেন। এই জাতিকে একটি সুন্দর, সুষম ও সমৃদ্ধির পথ বাতলিয়ে দিয়েছেন। গণতন্ত্রই যে বাংলাদেশ জাতির প্রাণশক্তিÑ তিনি তার মৃত্যুর কিছু দিন আগে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে তা দৃঢ়তার সাথে মনে করিয়ে দিয়েছেন। বর্তমান সময়ের সঙ্কটের উৎস যে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। বরেণ্য এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীকে স্মরণ করার উত্তম উপায় হলোÑ তার প্রদর্শিত গণতান্ত্রিক আদর্শের জন্য সংগ্রাম করা। আর শিক্ষক হিসেবে সার্থক হতে চাইলে যেন গভীর জ্ঞানের সাধনায় নিজকে নিমজ্জিত করা হয়, যেমনটি করেছেন প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান। তিনি কোনো সময়ে কোনো পদ ও স্বার্থের জন্য কোনো সরকারের দারস্থ হননি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সম্পর্কে আজকাল সাধারণ মানুষের ধারণা আগের মতো সমুজ্জ্বল নয়। আমরা আজ লাল-নীল-সাদা ইত্যাদি রঙে রঙিন। আসুন, আমরা জ্ঞানের রঙে রঞ্জিত হই। তার কারণ, জ্ঞানই শক্তি; জ্ঞানই পুণ্য। এটাই মরহুম তালুকদার মনিরুজ্জামানের শিক্ষা।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল