২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা

- ফাইল ছবি

শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদণ্ড। একটি দেশ অথবা জাতির মধ্যে শিক্ষিতের হার যত বেশি, সে দেশ অথবা জাতি তত বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ। শিক্ষা মানুষের মনের গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও পঙ্কিলতা দূর করে মানুষকে সত্য, ন্যায় ও আলোর পথে পরিচালিত করে।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে আমরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অথবা সমমানসম্পন্ন অন্যান্য শিক্ষাকে বুঝি। বিশ্বের সব দেশে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষা বলা হয়। এ নির্দিষ্ট স্তরটি অতিক্রম-পরবর্তী যে শিক্ষা দেয়া হয়, সেটি বিশেষায়িত শিক্ষা। শিক্ষার সাথে দেশের উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে বর্তমানে বিশ্বের প্রতিটি দেশই শিক্ষার উন্নয়নকে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ভিত হিসেবে বিবেচনা করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়।

আর তাই আমাদের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির একটি অন্যতম নীতি হিসেবে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা স্থান পেয়েছে। এ সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ নম্বর ১৭ অবলোকন করলে দেখা যায়, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে রাষ্ট্রÑ (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যমূলক শিক্ষাদানের জন্য, (খ) সমাজের প্রয়োজনের স্বার্থে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য এবং সে প্রয়োজন সিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য, (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা বিষয়ে আমাদের সংবিধানে গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও এবং তা একটি নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সবার জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক উল্লিখিত হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

বর্তমানে আমাদের দেশে প্রতিটি শহরেই ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলসহ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বাংলা মাধ্যমে ইংরেজি মাধ্যমের মতো কিন্ডার গার্টেন নামধারী স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে তুলনামূলক সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা লেখাপড়া করে। এসব স্কুলে লেখাপড়ার ব্যয়ভার বাংলা মাধ্যমের সাধারণ স্কুলের লেখাপড়ার ব্যয়ভারের চেয়ে অনেক বেশি।

আমাদের দেশে বর্তমানে বাংলা মাধ্যমে প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ সবার জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক হলেও এটি সব স্কুলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। একমাত্র যারা সরকারি প্রাথমিক স্কুলে লেখাপড়া করে, সেখানে তাদের জন্য এ সুযোগটি অবারিত। সরকারি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার মান নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট নয়। বিগত দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মুখ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। এ ভূমিকা রাখতে গিয়ে তাদের কাছে মুখ্য হচ্ছে প্রার্থীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং তাদের আর্থিকভাবে সন্তুষ্টির ক্ষমতা। এ দু’টির সমন্বয়ে নিয়োগ কার্য সমাধা হওয়ায় শিক্ষক হিসেবে যারা নিয়োগ পেয়ে আসছেন, তাদের বেশির ভাগই যথাযথ মানসম্পন্ন নন। আর এরূপ মানহীন শিক্ষক কোমলমতি শিশুদের উপযুক্ত ও কার্যকর শিক্ষা প্রদানে কতটুকু সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারছেন, তা অতি সহজেই অনুমেয়।

প্রাথমিক-পরবর্তী মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সরকারি স্কুলের সংখ্যা বেসরকারি স্কুলের তুলনায় নগণ্য। সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও কমিশনের বাছাইপ্রক্রিয়া যে অস্বচ্ছতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে তা দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বেসরকারি স্কুলগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রাথমিকের মতো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের প্রভাবই নিয়োগকার্য সমাধার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত হিসেবে কাজ করছে।

মাধ্যমিক-পরবর্তী কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার ক্ষেত্রেও দেখা যায় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধিক্য। সরকারি ও বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা পূর্র্বোল্লিখিত পন্থায় নিয়োগ পেয়ে থাকেন বলে একই বিষয়ে পুনঃআলোচনা পরিহার করা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রতিটি বিষয়ে বিশেষায়িত শিক্ষা দেয়া হয়। বর্তমানে দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অধিক। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকার থেকে অনুদান পাওয়ার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক কম; তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে মেধা ও শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির প্রতি আনুগত্য মুখ্য বিবেচ্য হওয়ায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে প্রকৃত মেধাবীদের নিয়োগ পাওয়ার দ্বার বলতে গেলে একেবারে রুদ্ধ।

প্রতি বছর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যার তুলনায় ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০-১৫ গুণ বেশি হওয়ায় বেশ কিছু শিক্ষক প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ অবৈধ ভর্তিবাণিজ্যের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তা ছাড়া, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করার জন্য অনুমতি প্রাপ্ত হওয়ায় অনেক শিক্ষককে দেখা যায় নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পেছনে যতটুকু শ্রম দেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার চেয়ে অধিক শ্রম দিয়ে থাকেন। আবার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের চেয়ে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এনজিওর কার্যকলাপে, দেশী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পরামর্শক হিসেবে, রাজনীতিসংশ্লিষ্ট গোলটেবিল, সেমিনার, টকশো প্রভৃতিতে অংশগ্রহণে ও পত্রিকায় নিবন্ধ লেখায় অধিক শ্রম দিচ্ছেন।

আমাদের দেশে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের রাজনীতি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রায়ই অন্তরায় সৃষ্টি করছে। এ বিষয়টি সুরাহার ব্যাপারে সরকারি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সরকারপন্থী শিক্ষক নেতারা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আন্তরিক না হওয়ায় এর বৈরীভাব থেকে কিছুতেই মুক্ত হওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হওয়ার ক্ষেত্রে কারা দায়ী এবং কারা এর আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতা, এ বিষয়টি সবার জানা থাকলেও কোনো এক অজানা কারণে সংশ্লিষ্টরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহ। আর আজ সে কারণেই এরা অনেকটা অপ্রতিরোধ্য।

আমাদের এ দেশে ব্রিটিশ শাসনামলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি উপমহাদেশের উচ্চশিক্ষার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়। শুধু তাই নয়, বিগত শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে সত্তর দশক পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে অভিহিত হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সে ঐতিহ্য ও মান ক্রমনিম্নমুখী হয়ে বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বিশ্বের প্রথম সারির দুই হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এটির স্থান নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন এ অবস্থা তখন অপরাপর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যে এটির চেয়ে অনেক নিম্নে- সে প্রশ্নে আজ আর কোনো বিতর্ক নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন মানহীন অবস্থায় এ দেশের শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন উচ্চশিক্ষার অভাব পূরণে বিগত শতকের শেষ দশকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেয়া হয়। বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অগণিত; কিন্তু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মানের বিবেচনায় কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানই সন্তোষজনক নয়।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী বিপুল শিক্ষার্থীকে অনেকটা বাধ্য হয়েই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হয়; কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা ব্যয়ের যে তারতম্য তা যেকোনো বিবেচনায়ই যুক্তিগ্রাহ্য নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের আংশিক আবাসনের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হলেও এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সক্ষমতা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। গবেষণা থেকে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পেছনে অভিভাবকরা মাসিক যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন, এদের বেশির ভাগ কর্মজীবনে বেসরকারি সংস্থায় প্রারম্ভিক অবস্থায় যে বেতনে চাকরি করেন তা তাদের উচ্চ শিক্ষাকালীন মাসিক ব্যয়ের অর্ধেকেরও কম।

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যয় নিয়ে জনমানুষের মধ্যে এমন ধারণা বিরাজ করছে যে, শেষোক্তটির তুলনায় প্রথমটির শিক্ষা ব্যয় এতই অল্প, এটি অনেকটা অবৈতনিক শিক্ষার নামান্তর। তা ছাড়া, শিক্ষা দেশের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার হয়ে থাকলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি কলেজ ও স্কুলগুলোতে শিক্ষাব্যয় যে সরকারি সমপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে তুলনামূলক বিচারে অনেক অধিক, অন্তত সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সমস্যার সুরাহা সরকারের জন্য অত্যাবশ্যক।

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম পর্যালোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগ শিক্ষকের মান ও সার্বিকভাবে অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে এই তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ যে একেবারেই কার্যক্ষমহীন তা সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টির আড়ালে নয়। বিগত দুই দশক ধরে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির প্রতি আনুগত্য মুখ্য বিবেচ্য হওয়ায় এরা সবাই কর্মকালীন মানসম্মত ও উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের চেয়ে ক্ষমতাসীনদের আকাক্সক্ষা চরিতার্থেই অধিক মনোযোগী।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনভাতা জনগণ প্রদত্ত কর থেকে নির্বাহ করা হয়; কিন্তু সে কথা চিন্তা করে এদের ক’জন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সততা, একাগ্রতা, আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন তা দেশবাসীর জন্য গভীর মর্মবেদনা ও হতাশার কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক হতে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যপুস্তকগুলো বিগত কয়েক বছর ধরে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এতে দেখা যায় উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত সব পরিবারের শিক্ষার্থীরাই বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক পাচ্ছে। বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেয়ায় একজন শিক্ষার্থীর বার্ষিক শ্রেণীভেদে ৫০০-১৫০০ টাকা সাশ্রয় হলেও কোচিং বাবদ দেখা যায় মাসিক এর চেয়ে দু-তিন গুণ অধিক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সুতরাং ঢালাওভাবে সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পুস্তক দেয়ার যৌক্তিকতা কতটুকু এবং এটির উপযোগিতা কী- তা ভেবে দেখার বিষয়। তা ছাড়া, শিক্ষা নিয়ে গবেষণা করেন এমন ব্যক্তিদের অভিমত বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণে যে অর্থ ব্যয় হয় তা যদি শিক্ষকদের মানোন্নয়নে ব্যয় করা হয়, সেটির উপযোগিতা অধিক হবে।

প্রণিধানযোগ্য যে, সরকার শিক্ষার প্রসারে এবং শিক্ষা সহজলভ্য করার জন্য শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পুস্তক সরবরাহ করে আসছে। এ পুস্তক সরবরাহে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় অনুরূপ বা সামান্য কিছু বাড়তি অর্থের মাধ্যমে সরকারি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ প্রদানের ব্যবস্থা করলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা মূলনীতিতে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার কিছুটা হলেও পূরণ হবে।

আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে সমাজের প্রয়োজনের সাথে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করাসহ একটি নির্ধারিত সময়ে নিরক্ষরতা দূর করার কথা বলা হলেও শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার ছাড়া যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার কথা ভাবা হচ্ছে তা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের স্বাধীনতা-উত্তর যত দল ক্ষমতাসীন হয়েছে প্রতিটি দলেরই নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল গণমুখী, সার্বজনীন এবং দেশ ও সমাজের প্রয়োজনের নিরিখে শিক্ষানীতি প্রণয়ন; কিন্তু প্রতিটি সরকারই এটি নিয়ে কাজের কাজ কিছু না করে অযথা কালক্ষেপণ করেছে। আর তাই আমরা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার সুফল থেকে এখনো অনেক দূরে।

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’

সকল