২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাগদাদি হত্যা : আইএস আছে, আইএস নাই

-

চলতি বছরের গোড়ার দিকে ‘আইএস পরাজিত হয়েছে। আমাদের মিশন সফল হয়েছে।’ এই দাবি করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ঘোষণা দেয়া হয়েছে ‘আইএস পরাজিত’। সিরিয়া থেকে আমেরিকার দুই হাজার সৈন্য ঘরে ফিরে যাবে শোনে ঘরে বাইরে সবাই চমকে উঠেছিলেন। মাত্র দুই হাজার মার্কিন সৈন্য ১৫,০০০ আইএসকে নির্মূল করার জন্য বিক্ষুব্ধ ও সঙ্ঘাতপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন করা নিয়েও অনেকে তখন প্রশ্ন রেখেছেন। সম্প্রতি আইএসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বাগদাদিকে হত্যা ও আইএস দমনের জন্য কুর্দিদের অস্ত্রের জোগান দেয়া প্রমাণ করে আইএস সিরিয়ায় নির্মূল হয়নি। এখন বাগদাদি হত্যার ব্যাপারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘কথিত খলিফার মৃত্যুতে বিশ্ব অনেক নিরাপদ হলো’। আইএসের মধ্যে ভয়ঙ্কর মানসিকতার কয়েকজন নেতা কাজ করেছেন। যেমন আবু মুসাব আল জারকাভি। নির্মমতা ও বর্বরতা কত চরম হতে পারে জারকাভি তা দেখিয়েছেন। জারকাভি শুধু আমেরিকান নন, ইরাকি খ্রিষ্টান, শিয়া, সুফি সম্প্রদায়ের লোকজন এবং সুন্নি যারা তার মতবাদ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন। তিনি সাবেইনদের (শিয়া) নির্মূল করার পক্ষপাতী। ২০০৬ সালে জারকাভিকে আমেরিকান গোয়েন্দারা হত্যা করে। বাগদাদি তারই শিষ্য।

পরাজিত আইএস নেতা ও স্বঘোষিত খলিফা আবুবকর আল বাগদাদি কিছু দিন আগে পাঁচ বছর ধরে পলাতক জীবন থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সম্মুখে এসেছিলেন। আফ্রিকায় মালি ও বুরকিনো ফাসোর ‘জিহাদি’রা বাগদাদিকে অভ্যর্থনা জানান। ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস নিধনযজ্ঞ চালালেও পরে সেখানে আইএস কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তখন অন্য কোনো এলাকায় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বাগদাদি সাথীদের নির্দেশ দেন। বাগদাদি তার শেষ বার্তায় ‘সাহেল’ এলাকায় জমায়েত হওয়ার জন্য তার লোকজনদের দিকনির্দেশ দিয়েছিলেন। বাগদাদির ভিডিওবার্তার পর ট্রাম্প প্রশাসন দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। যেকোনো উপায়ে বাগদাদিকে শেষ করতে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। ‘মৌমাছি না মেরে রানী মৌমাছি মারতে পারলে পুরো চাকের সবই দূর হয়ে যায়’। পেন্টাগন এই নীতি অবলম্বন করতে গিয়ে আলকায়েদার ওসামা বিন লাদেনকে মেরেছে। এবার আইএসের বাগদাদিকেও মারা হলো। বাগদাদিকে হত্যার জন্য ৬০০ জন কমান্ডো, উন্নত ইলেকট্রনিক ডিভাইস, অটোমেটেড ভেহিক্যাল, লেজার গান, প্রশিক্ষিত হাউন্ড, স্যাটেলাইটসহ সবই ব্যবহৃত হয়েছিল।

আলকায়েদার অঙ্গ সংগঠন হিসাবে আইএস ১৫ অক্টোবর, ২০০৬ সালে আত্মপ্রকাশ করে পরে নিজেরাই নাম নেয় ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএল)। ২০১১ সালে সিরিয়ার সরকারের বিরোধী ফ্রন্ট আল নুসরা নামে সামরিক সংগঠন তৈরি করে এবং নিজেদের আইএসের অঙ্গ সংগঠন হিসাবে প্রচার করতে থাকে। ২০১৩ সালে আল বাগদাদী আল নুসরা ও আইএসকে এক করে আইএসআইএস, ইসলামিক স্টেট অব ইরাক ও সিরিয়া গঠন করেন। অধিকৃত এলাকা নিয়ে আল নুসরা এবং আইএসের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। ২০১৩ সালে আইএস ইরাকের ফালুজ্জা দখল করে, পরে মসুল। কোনো কোনো স্থানে আইএস প্রবেশ করার আগেই অধিবাসীরা এলাকা ত্যাগ করে। আইএস ওই সব এলাকার সম্পদ লুণ্ঠন করে, ব্যাংক অব মসুলের সব টাকাকড়ি লুট করে নেয়, তেল এবং অ্যান্টিক বিক্রি করে দেয়। আইএসের পরাজয়পর্ব শুরু হয় ২০১৬ সালে ইরাকি সেনাদের সন্ত্রাস দমন কর্মসূচি চালানোর পর, যে কর্মসূচির পুরোটাই আঞ্জাম দিয়েছে আমেরিকার সেনাবাহিনী। ২০১৭ সালের শেষের দিকে ইরাক ভূখণ্ড থেকে আইএস বিতাড়িত হলো। এরপর আইএস সিরিয়ার দের আজ জোর প্রদেশে সমবেত হয়। জার্মানভিত্তিক থিংক ট্যাংক গ্লোবাল পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউট জানায়, আইএস ছয়টি রাসায়নিক হামলা চালিয়েছে। দামেশকের বাশার সরকারের গোপন আস্তানা থেকে আইএস রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে গিয়েছিল। ওয়াশিংটনের কর্তৃপক্ষ মনে করে, আইএস পরাজিত হয়নি। তবে এটাও সত্য যে, সিরিয়ায় আইএস দখলকৃত ও প্রভাবিত ৯৫% এলাকা হারিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন আক্রমণ সুদৃঢ করেছে।

আইএস না থাকলেও বিভিন্ন দেশের অনুরূপ সংগঠনের তৎপরতা অব্যাহত আছে। আলকায়েদা এবং আইএস ছাড়াও রয়েছে আফগানিস্তানের তালেবান, পাকিস্তানে লস্কর-ই-তৈয়বা, নাইজেরিয়ার বোকো হারাম ও সোমালিয়ার আল শাবাব। এসব দলের বিরুদ্ধে সরকার যুদ্ধ করে নিঃশেষ করে দেয়ার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেয়ায় অস্ত্র তুলে নিয়েছে তারা। কোথাও কোথাও ইসলামের বিরুদ্ধে সরকার অবস্থান নেয়ায় তারা দৃশ্যত ধর্মের জন্য অস্ত্র তুলে নিয়েছে। এর সাথে আরো আছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একাংশ, থাইল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চলের মুসলমানেরা, ফিলিপাইনের মিন্দানাওয়ের মরো মুসলমানরা, চীনের জিনজিয়াঙের উইঘুর এবং রাশিয়ার চেচেনরা।

ফিলিপাইনেও আইএসের ঘাঁটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এটা উপযুক্ত এলাকা বলে আইএস নেতারা মনে করেন। বছর কয়েক আগে আফ্রিকার মতো সেখানেও সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছিল। ম্যানিলা সরকার শুরু থেকেই প্রচণ্ডভাবে আইএসের বিরোধিতা করে এসেছে।

শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক বোমাহামলাকে অনেকে বলছেন, আইএসের হামলা; অনেকে বলছেন জঙ্গিবাদী বৌদ্ধদের কাজ, অনেকে বলছেন স্থানীয় উগ্রবাদীদের কাণ্ড। তবে আইএস এতে জড়িত ধরে নিয়েই সব তদন্ত ও অনুসন্ধান। ‘তৌহিদ জামায়াত’ নেতা মোহাম্মদ জাহরানের আত্মীয়স্বজনসহ নিকটবর্তী ১৬ জন ইতিমধ্যে পুলিশের চিরুনি অভিযানে নিহত হয়েছে। শ্রীলঙ্কাতে বোরকা পরিধান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যদিও বোরকা চেকিংয়ে মুসলমান মহিলার পরিবর্তে একজন বৌদ্ধ পুরুষ বেরিয়ে এসেছিল! শ্রীলঙ্কা থেকে অন্যান্য দেশে আইএস ভীতি পৌঁছে গেছে। এখন কোনো স্থানে ছিঁচকে চোরও কোনো ঘটনা ঘটালে সন্দেহ করা হয় আইএস এসেছে। বিস্ময়কর হলো ওয়েবসাইটে বলা হয়, এটা আইএসের কাজ।

সিরিয়ার ঘাঁটি থেকে তাদের দৃষ্টি এশিয়ায় নিপতিত হয়েছে। আইএস এতদিন আরব দেশগুলোতে কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। এদের উগ্রতার কারণে মুসলমানদের কৃষ্টি-সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে। যেখানে ‘ঘটনা’ ঘটেছে সেখানে ‘সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাকে সহায়তা করেছে ইসরাইল, সৌদি আরব, আমিরাত ও মিসর। ওসব দেশও বিভিন্ন যুদ্ধে জড়িয়ে, বিভিন্ন ঘটনা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন ‘ত্রাহি মধুসূদন’ ডাক ছাড়ছে। এশিয়াতেও আরো জোরালোভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হবে। শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী হামলায় আইএসের মূল গোষ্ঠী জড়িত থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে এশিয়াও যুক্ত হবে। পর্যটন থেকে শ্রীলঙ্কার অর্জিত আয়ে বড় ধরনের ধস নামছে। ফলে ঋণে জর্জরিত এই দেশটির পক্ষে বিদেশী দেনা ও সুদ পরিশোধ করা কঠিন হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার কৌশলগত বন্দর হাম্বানটোটা যেটি চীনকে প্রদান করা হয়েছে, সেখানকার ব্যবস্থাপনা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। অনেকেই মনে করছেন, শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসবাদের সূর্য পূর্বগগনে ভালোভাবেই উদিত হয়েছে। সিংহলী বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু তামিলদের সাথে ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, এরকম বড় আক্রমণ মুসলিম চরমপন্থীরা করেনি। বরং তামিল টাইগার ও সরকারি বাহিনী উভয়েই তাদের অপারেশন এলাকায় বিভিন্ন ঘটনায় মুসলমানদের দায়ী করে তাদের নিপীড়ন করেছিল। সিংহলী বৌদ্ধেরা সংখ্যালঘু মুসলমানদের ঘৃণাই করে এসেছে। মনে করা হচ্ছে, তামিল গেরিলাদের পর মুসলমানেরাই দেশটার বড় সমস্যা। এর মধ্যে বৌদ্ধদের উসকানি দিচ্ছে মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক ভিক্ষু মা বা থা। এসব কারণে অসহ্য হয়ে মুসলমান তরুণদের একাংশের আইএস প্রীতি বেড়ে যেতে পারে এবং বহু শ্রীলঙ্কান যুবক আইএসে যোগদানের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমিয়েছে বলে জানা যায়।

জার্মানির চ্যান্সেলর মার্কেল আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে, বিশেষ করে মালি ও বুরকিনো ফাসোর উন্নয়নের জন্য ৪০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ঘোষণা দিয়েছেন; জার্মানির ১০০০ সেনা সাহেল এলাকার মালিতে অবস্থান করছে। নভেম্বরের শুরুতে মালিতে আইএস হামলায় ৫৩ জন সেনা নিহত হয়েছে। বুরকিনো ফাসো পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। তবে পর্যটনকে ঘিরে অনৈতিক কাজেরও বিস্তার ঘটেছে সেখানে। আইএস অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে পর্যটন এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায়। ফলে পর্যটন বন্ধ রয়েছে এবং এতে দেশটি প্রচুর রাজস্ব হারাচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে ফ্রান্সের সেনাদলও মালিতে অবস্থান করছে। জার্মানির মন্ত্রী জিরাড মুলার বলেছেন, ‘আমরা যদি আফ্রিকার সমস্যার সমাধান না করি, তবে ওরা (আইএস) আমাদের কাছে আসবে।’ অর্থাৎ ওদের নির্মূল করার পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনায় সব পশ্চিমা দেশ একমত ও ঐক্যবদ্ধ।

সাহেল আফ্রিকার ১০টি দেশ নিয়ে বিশাল এক এলাকা। খাবার ও পানির অভাব, খরা-দুর্ভিক্ষ এসব লেগেই আছে। দারিদ্র্য, জাতিগত বিভেদ, নৃতাত্ত্বিক বিরোধ, দুর্নীতি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও নারী পাচার, সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা বিভেদে সাহেল পরিপূর্ণ। বিশাল এই এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে মূল্যবান খনিজ পদার্থ। মুসলমান ও খ্রিষ্টান সবাই নিজ নিজ ধর্ম প্রচারের কর্মসূচি নিয়েছে সেখানে। ‘জিহাদি’রা মনে করে এটা ঘাঁটি গড়ার মোক্ষম স্থান। ২০১১ সালে লিবিয়ার পতনের পর আইএস সেখানে প্রচুর সমর্থক জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছে। আফ্রিকার বিভিন্ন সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা শক্তি প্রদর্শনের জন্য আইএসসহ জেহাদিদের ব্যবহার করে থাকে। সিরিয়া ও ইরাকের পর আইএস এ অঞ্চলে বড় ঘাঁটি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।

বলা হচ্ছে, আইএস ও আলকায়েদা স্থানীয় সমস্যাগুলোকে আন্তর্জাতিকীকরণের চেষ্টা চালিয়েছে। এখন মালি, নাইজার ও শাদে কয়েক শ’ আইএস সদস্য কাজ করছে। ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা বলে বিপুলসংখ্যক মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। একই সাথে সরকারের অব্যবস্থাপনা, গুড গভর্ন্যান্সের অভাব, চরম দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নৃতাত্ত্বিক বিভক্তি ও সঙ্ঘাত, বেকারত্ব ও দারিদ্র্য সাহেল দেশগুলোর জনগণকে আইএসে যোগদানে উৎসাহ জুগিয়েছে। আইএসে যোগদান ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মগজ ধোলাইয়ের পর আফ্রিকার মানুষগুলোর মাঝে জিহাদি চেতনার বিস্তৃতি ঘটিয়েছে। আইএস শেষ হলো- এমন কথা বলা সম্ভব নয়। ইউরোপিয়রা উন্নয়ন ও সামাজিক সূচকগুলো বৃদ্ধির বার্তা দিয়েছে। আইএসও আফ্রিকার মানুষের কাছে একই বার্তা দিয়েছে।

আবুজা থেকে রয়টার পরিবেশিত সংবাদে জানা যায়, আইএস নাইজেরিয়া সরকারি বাহিনীর ২০ জন সেনাকে হত্যা করেছে। ৯ জনকে হত্যা করার ভিডিও সম্প্রচার করেছে। গুবিও শহরে গাড়িতে ভারী মেশিনগান চালিয়ে বেশির ভাগ সেনা হত্যা করা হয়। নাইজেরিয়ায় সেনাবাহিনী ও বোকো হারাম বিদ্রোহীদের মাঝে দীর্ঘ দিনের বিরোধ-লড়াই চলছে। অনেক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী বোকো হারামের সাথে পেরে ওঠে না। এবারের হামলায় আইএস যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর ট্যাংক পর্যন্ত ছিনিয়ে নেয়। বোকো হারামের সাথে আইএসের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই লড়াইতে ৩০,০০০ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কয়েক লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।

সিরিয়া ও ইরাকে পরাজয় সত্ত্বেও যুদ্ধ চালানোর জন্য আইএসের হাতে ৪১৪ মিলিয়ন ডলার রয়েছে। ওদের নেতারা বলছেন, ‘খেলাফত’ চালানোর জন্য অর্থের দরকার। জাতিসঙ্ঘের জেনারেল সেক্রেটারি অ্যান্তোনিও গুতেরেস এ তথ্য দিয়েছেন। ইরাক ও সিরিয়ার তেলক্ষেত্র থেকে আইএস প্রচুর রাজস্ব আয় করে, স্থানীয় বাসিন্দারাও তাদের টাকা-পয়সা দিতে বাধ্য হয়; এমনকি, কেউ কেউ ইচ্ছে করেই দেয়। ইরাক থেকে লুণ্ঠিত অ্যান্টিকগুলো পশ্চিমা দেশে বিক্রি করেও প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করেছে আইএস। আরো অ্যান্টিক কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে তা কেবল আইএস নেতারাই বলতে পারেন। আইএসে বিদেশী যোদ্ধার সংখ্যাও অনেক- ৪০,০০০ হাজারের কাছাকাছি। প্রায় ৫০টি দেশ থেকে এসব যোদ্ধা এতে যোগ দিয়েছে। তাদের পরিবারের অনেককেই সিরিয়া ও ইরাকে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। শুধু উত্তরপূর্ব সিরিয়ায়ই ১১,০০০ আত্মীয়স্বজনকে আলহোল ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছে এবং ওরা পুনর্বাসনের অপেক্ষায়। যেকোনো স্থানে আইএস আবার সদস্য রিক্রুট বা পুনঃরিক্রুট করার সামর্থ্য রাখে।

পশ্চিমা অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, যেসব দেশে গণতন্ত্র স্বচ্ছ নয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, সেখানে আইএসকে স্বাগত জানানো উচিত। সামগ্রিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, আইএস চরমপন্থী আদর্শিক দল হওয়ায় অচিরেই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে না। এদের বিনাশ করা জটিল বিষয় বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। বলে রাখা ভালো, মুসলিম বিশ্ব আইএসকে সমর্থন দেয়নি। তাদের ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ও কর্মকাণ্ড ইসলাম সমর্থিত নয় বলে প্রায় সবাই মত দিয়েছেন। তবে আইএস সদস্যরা দৃশ্যত কোণঠাসা হলেও যেকোনো সময় অন্য কোনো নতুন গোষ্ঠী অনুরূপ কর্মকাণ্ডের ডাক দিতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিরিয়ায় আইএসের পরাজয়ের ঘোষণা মূলত তার জনগণের সাথে এক ধরনের প্রতারণা বা সত্য থেকে বিচ্যুতি বলেও অনেকে মনে করেন। মূলত আইএসকে যুদ্ধ দিয়ে স্থায়ীভাবে পরাজয় করা এখন সম্ভব নয়।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement