২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সময়-অসময়

বিচিত্র পৃথিবীতে বৈচিত্র্যময় সৃষ্টি

-

(গত সংখ্যার পর)

একই ফল যেমন আম জায়গাভেদে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ রয়েছে। বাংলাদেশে যে মাটিতে আমের ফলন ভালো হয় সেখানে লিচু জন্মায় না। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম রাষ্ট্র থাইল্যান্ড ফল-ফলাদির জন্য শ্রেষ্ঠ, কিন্তু থাইল্যান্ড থেকে আমগাছ আমদানি করে বাংলাদেশে রোপণ করলে একই স্বাদ বহন করে না। সৃষ্টির ক্ষেত্রে একই প্রকারভেদ প্রাণিজগৎ, উদ্ভিদ জগৎ, জলজ প্রাণী প্রতিটি ক্ষেত্রেই যেন সৃষ্টি রহস্য লুকায়িত। বায়ুমণ্ডলের প্রকারভেদ ও কার্যক্রম আরো রহস্যজনক। সৃষ্টিকর্তার সে কথারই বাস্তবায়ন প্রতিটি ক্ষেত্রে। তিনি বলেছেন, আমি যা চিন্তা করি তাই সৃষ্টি করি। নোনাপানি ও মিষ্টিপানি একই স্বাথে প্রবাহিত হলেও কেউ কাউকে অতিক্রম করে না। পদ্মা ও মেঘনার মিলনস্থলে দেখা যায়, একটি নদীর পানির রঙ ও স্বাদের সাথে অন্য নদীর পানির রঙ ও স্বাদের তারতম্য রয়েছে। এ মর্মে সৃষ্টিকর্তা স্পষ্ট ভাষায় বলেন- তিনিই দু’টি সাগরকে প্রবাহিত করেছেন, একটির পানি মিষ্ট, সুপেয়, অপরটির পানি লোনা, বক্ষজ্বলনকারী উভয়ের মধ্যে তিনি রেখে দিয়েছেন এক সীমারেখা, এ অতিক্রম ব্যবধান।

পৃথিবীর অনেক সৃষ্টি রহস্য এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে, যা আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীরা ছুটে চলছেন। গ্রহ থেকে গ্রহ চষে বেড়াচ্ছে সব বায়ুমণ্ডল। পৃথিবী সূর্যের চার দিকে ঘোরে, না সূর্য পৃথিবীর চার দিকে ঘোরে- এ নিয়েও বিজ্ঞান যখন তল্লাশি চালাচ্ছিল তখন ১৫০০ বছর আগেই আল কুরআান বলেছে, পৃথিবী সূর্যের চার দিকে ঘোরে এবং সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ কক্ষপথে চলে, কেউ কাউকে অতিক্রম করে না। পৃথিবীর অনেক অজানা রহস্য আবিষ্কার করতে বিজ্ঞান এখনো অভীষ্ট লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে পারেনি। যেমন ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে অনেক গবেষণা হয়েছে, অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে, অনেক জীবন গেছে; কিন্তু এখনো তার রহস্য আবিষ্কার হয়নি। পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় বলা আছে- ‘কত মহান তিনি যিনি নভোমণ্ডল রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং ওতে স্থাপন করেছেন সূর্য, জ্যোতিময় চন্দ্র। যারা অনুসন্ধিৎসু ও কৃতজ্ঞচিত্র তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরে অনুগামী রূপ।’ ‘সূর্য চন্দ্রের নাগাল পায় না, রজনী দিবসকে অতিক্রম করে না এবং মহাশূন্যে প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে।’ ফেরাউনের দেহ মাটি ও পানিতে নষ্ট বা পচন ধরেনি, কেন এ ব্যতিক্রম সে সম্পর্কে বিজ্ঞান এখনো বৈজ্ঞানিক সূত্র দেয়নি। তবে এটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছারই একটি প্রতিফলন মাত্র।

মানুষ কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, পারে শুধু রূপান্তর বা পরিবর্তন করতে। যেমন- মানুষ গাছ সৃষ্টি করতে পারে না, গাছ থেকে কাঠ, কাঠ থেকে আসবাবপত্র বা জ্বালানি বা অন্য কোনো প্রসেসের মাধ্যমে এর অত্যাধুনিক ব্যবহারে মানুষের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে; কিছু সৃষ্টিতে মানুষের হাত নেই। প্রায় ২০০ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন, গাছের প্রাণ আছে। কিন্তু প্রায় ১৫০০ বছর আগে আল কুরআন ফয়সালা দিয়েছে, তরুলতা অর্থাৎ গাছ সৃষ্টিকর্তাকে সিজদা করে।

পৃথিবীতে নানাবিধ প্রজাতির পাখি রয়েছে। অন্য দিকে একই প্রজাতির পাখির রঙ, আকার, গঠনপ্রকৃতি ও সুর একই ধরনের নয়। আল কুরআনের মতে, পাখিরাও ভিন্ন ভিন্ন সুরের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে, যেদিন স্মরণ করবে না, সেদিন তার কণ্ঠ রোধ হয়ে যাবে। সৃষ্টিকর্তা অনেকটা অহঙ্কারের সাথেই বলেছেন, মানুষের দেহ পচে-গলে শেষ হয়ে গেলেও তাকে আমি পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম। এ মর্মে তিনি হজরত মুসা আ:কে পরীক্ষা করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, একটি পাখিকে জবাইপূর্বক চারটি টুকরা করে চারটি পাহাড়ে রেখে এসে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে ডাকো এবং পাখিটি জীবন্ত হয়ে উঠে আসার কথা আল কুরআন সাক্ষ্য দেয়।

পৃথিবীতে ভাষা, ধর্মের কোনো অভাব নেই। ভাষাবিদদের গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশেই ৪৫টি নৃগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের নিজস্ব মাতৃভাষা আছে এবং ধর্মীয় ও সংস্কৃতি আলাদা। পৃথিবীতে ধার্মিক ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাসীদের সংখ্যাই বেশি। নাস্তিক যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে না, তাদের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম, তবে নিজস্ব মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য গলাবাজিতে তারা একটু বেশি, প্রচারমাধ্যমে তাদের পৃষ্ঠপোষক অনেক রয়েছে। বাংলাদেশের অতি সংস্কৃতিমনা নাস্তিক রয়েছে, যাদের শেষকৃত্য কিন্তু ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী হয়ে আসছে, যা কাক্সিক্ষত নয়। অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলতে হয়, এ দেশের অনেক মৌলবি-মাওলানা তাদের নামাজে জানাজার ইমামতির জন্য অধিক আগ্রহ প্রকাশ করেন, যা নাস্তিকের সারা জীবনের বক্তব্যের সাথে শেষ বিদায় পরস্পরবিরোধী। এতে ধর্মপ্রাণদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হয় বটে, তারপরও জানাজা পড়াতে মৌলবি-মাওলানার কমতি দেখা যায় না।

আচরণগতভাবেও একই পরিবারে গড়ে ওঠা, একই সমাজে লালিত-পালিত হলেও বিপরীতমুখী চরিত্র দেখা যায়। বাংলাদেশে শহর বা গ্রামে একটি বহুল প্রচারিত প্রবাদ চালু রয়েছে- ‘কেহ মদ বিক্রি করে দুধ পান করে, আবার কেহ দুধ বিক্রি করে মদ পান করে।’ অনুরূপ কেউ কৃচ্ছ্রের সাথে জীবন যাপন করে, কেউ বা দেশে-বিদেশে ক্যাসিনোয় জুয়া খেলে কোটি কোটি টাকা উড়িয়ে দেয়। কেউ ডাস্টবিন পরিষ্কার করেও অর্থ উপার্জনে কুণ্ঠিত হয় না। অন্য দিকে পিতার উপার্জনে রেখে যাওয়া অর্থ ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। অর্থাৎ অপচয় করাতেই তারা আনন্দ ভোগ করে। এ মর্মেও সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাই প্রাধান্য। আল কুরআনের সাক্ষ্য মতে, তিনি (সৃষ্টিকর্তা) যাকে ইচ্ছা তাকেই সৎ পথে পরিচালিত করেন। কোনো নারী দেহ প্রদর্শন করে পৃথিবীতে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। অন্য দিকে কোনো নারী তার দেহকে ঢেকে রাখাই সম্মানজনক মনে করেন। কেউ পিতামাতাকে পা ধরে সালাম করে। অন্য দিকে সম্পত্তির জন্য পিতামাতাকে পিটিয়ে জখম করা সন্তানের অভাব নেই।

আল কুরআনের সাক্ষ্য মতে, ভাষাজ্ঞান ও কলম সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। এ কলম ও ভাষাই পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার অনেকের কণ্ঠ কেড়ে নেয়া হয়েছে, যারা কথা বলতে পারে না; এটাও সৃষ্টিরই একটি রহস্য। প্রসঙ্গক্রমে বলছি, দেশের একজন অত্যন্ত প্রথম শ্রেণীর গায়িকার (মহিলা সংরক্ষিত আসন থেকে জাতীয় সংসদে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন) একমাত্র পুত্র কথা বলতে পারে না (ঢাকা বধির হাইস্কুলের ছাত্র)। গর্ভধারিণী মায়ের কণ্ঠে কত শুমধুর সুর, গর্ভজাত সন্তানের কণ্ঠে তার এক ফোঁটাও নেই। সৃষ্টির এ তারতম্যের সন্ধান এখনো মিলছে না। মরণব্যাধি ক্যান্সার অত্যন্ত জটিল। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের দেহে ৩০০ প্রকারের ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু কোন কারণে ক্যান্সার হয় তা সুনির্দিষ্টভাবে এখনো আবিষ্কার হয়নি। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, চিকিৎসকেরা বলেন যে তামাক, সিগারেট বা নেশাজাতীয় অভ্যাস থেকে ক্যান্সারের সৃষ্টি। সব নেশাখোরের কিন্তু ক্যান্সার হয়নি বা অনেকের ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে, যারা কোনো দিন নেশাদ্রব্য স্পর্শ করেননি। ফলে এটাই প্রতীয়মান হয়, বিজ্ঞানের এ যুগেও অনেক আবিষ্কারই রহস্যের মধ্যে ঘনীভূত হয়ে রইল, যার কূলকিনারা এখনো বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারছেন না।

স্থান-কাল-পাত্রভেদে একই বিষয় কোথাও বৈধ, কোথাও অবৈধ, কোনো ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য, অন্য ক্ষেত্রে নিন্দনীয়। সময় ও সমাজ এ মর্মে একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। খরস্রোতা নদীও মরে যায়। একূল ভেঙে ওকূল গড়ে। রাজা প্রজায় পরিণত হয় আবার প্রজাও রাজা হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। আজকের ধনী কালকে ফকির, কালকের ফকির আজকের ধনী। নিয়তির এ খেলা চিরন্তন। নিয়তির নিয়ন্ত্রক ছাড়া কেউ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শুধু ব্যর্থ নয়, বরং অপারগও বটে। (সমাপ্ত)

লেখক : কলামিস্ট ও আইনজীবী
taimuralamkhandaker@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায় বরিশালে সালাতুল ইসতিসকার আদায় অর্ধ শতাব্দীতে ভ্যাকসিন সাড়ে ১৫ কোটি লোকের জীবন বাঁচিয়েছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আল্লাহর রহমত কামনায় সকলকে সিজদাহ অবনত হতে হবে-মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন কাউখালীতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা ভাঙ্গায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

সকল