২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমিও ছাত্রলীগে ছিলাম

-

অতীতে ছিলাম সিরাজগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সে সময়ে, যত দূর মনে পড়ে, মরহুম আবদুল মমিন তালুকদার ছিলেন তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি ছিলেন পাবনার লোক। আর তখন পাবনা জেলার একটি মহকুমা ছিল সিরাজগঞ্জ। তখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন। তার জন্মও আমার মতো সিরাজগঞ্জ মহকুমায়। দু’জনই আমাকে ছোট ভাই হিসেবে জানতেন। দু’জনের সাথেই আমার ভাইসুলভ হৃদ্যতা ছিল। তালুকদারের ছোট ভাই ছিল আমার সহপাঠী। সেই সুবাদে দু’জনেই আমাকে খুব ¯েœহ করতেন। ছাত্র হিসেবে মোটামুটি ভালো ছিলাম, স্ট্যান্ড করা ছাত্র ছিলাম। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় ৬ নম্বরের জন্য গোটা পূর্ব পাকিস্তানে ফার্স্ট হতে পারিনি। তখন সিরাজগঞ্জ মহকুমায় একটি মাত্র কলেজ- সিরাজগঞ্জ কলেজ।

১৯৪০ সালে এ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ কে ফজলুল হক এসেছিলেন কলেজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে। তখন তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী। আমি যখন এর ছাত্র, তখন এ কলেজের বয়স মাত্র ১৫-১৬ বছর। এর আগে ওই অঞ্চলে শুধু পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ছিল। পাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও সিরাজগঞ্জ মহকুমা প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।

সিরাজগঞ্জ কলেজে তখন ছিল ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন। কলেজ ইউনিয়নও করতাম। সাহিত্য সম্পাদক ও পরে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। যখন ভিপি পদে নির্বাচন করি তখন আমি ছাড়া আমার প্যানেলে সবাই ফেল করেছিল। এর কারণ ছিল অদ্ভুত। কলেজ নির্বাচনে শহর ও গ্রামের ছাত্ররা দু’টি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। সে সময় কলেজে গ্রামের ছাত্রদের প্রাধান্য ছিল। আর বুঝে হোক বা না বুঝে হোক, আমাদের পরিষদের বেশির ভাগ প্রার্থী ছিল শহরের। গ্রামের ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা শহরের কাউকে ভোট দেবে না। শহরের ছাত্র ছিল কম। কিন্তু মজার বিষয় ছিল, পুরো পরিষদ ফেল করলেও আমি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। কেন ছাত্ররা আমাকে পছন্দ করত? এর কারণ ছিল। ছাত্রদের সমস্যাগুলো দেখার চেষ্টা করতাম, সমাধানের চেষ্টা চালাতাম।

বিশেষ করে যারা গ্রাম থেকে আসত, তাদের লজিং ঠিক করে দেয়ার মতো জরুরি কাজগুলো করতাম। তখন আজকের মতো মেসের ব্যবস্থা ছিল না। আমার সহপাঠীদের মধ্যে অনেকে বিড়িশ্রমিক ছিল। নিজে বিড়িশ্রমিক ইউনিয়নের সাথে কথা বলেছি। রিকশাচালকও ছিল। তাদের সমস্যা নিয়ে মালিকদের সাথে কথা বলেছি। বলতে গেলে, সারা দিনই এসব কাজ বা ছাত্ররাজনীতি করে বেড়াতাম। কিন্তু একটা ডিসিপ্লিন ছিল। মা-বাবার নির্দেশ ছিল, মাগরিবের আজানের পর কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে থাকা যাবে না। মা-বাবা অনেক আগেই ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু তাদের সেই বন্ধনটা আজো অনুভব করি।

যখন সৌদি আরবে আইডিবিতে ছিলাম, তখন আমাকে বিভিন্ন দেশে মিশনে যেতে হতো। আমার মা তখন দেশে ছিলেন অসুস্থ। কিন্তু মায়ের অনুমতি ছাড়া কখনো মিশনে যেতাম না। বলাটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। তিনি প্যারালাইজড হয়ে পড়েছিলেন। তার বেডের কাছে একটা টেলিফোন থাকত। আমি যখন কোনো মিশনে কোথাও যেতাম, তার আগে মাকে টেলিফোন বলতাম- আমি ওখানে যাচ্ছি। তিনি বলতেন, ‘ভালো থেকো, তাড়াতাড়ি চলে এসো।’ বাবা-মায়ের সাথে সন্তানের এই বন্ধন আজ হারিয়ে গেছে। সন্তানের ওপর বাবা-মায়ের নিয়ন্ত্রণ নেই। আজ যাদের ছাত্র হিসেবে দেখছি, এরা তো আমাদেরই সন্তান। আজ যাদের গর্হিত কাজকর্ম সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় এত লেখালেখি হচ্ছে, তারা আমাদেরই সন্তান। তারা কেন এমন হলো? আজ আমার প্রশ্ন এটাই। এর জন্য কে দায়ী?

এর জন্য মূলত দায়ী আমরা সবাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছেন। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু যখন গ্যাংরিন হয়, তখন অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়। সাময়িক কোনো ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাংরিন নিরাময় করা যায় না। এখন যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে সেগুলো নেহাত সাময়িক। এই অবস্থা দূর করতে হলে আমাদের একেবারে গোড়ায় যেতে হবে। এ ধরনের সমাজ যেন গড়ে না ওঠে, সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে হবে।

আসলে আমাদের সমাজে শিক্ষার বদলে কুশিক্ষা দেয়া হচ্ছে বেশি। আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। তখন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেটে পিএইচডি করছিলাম। স্বাধীনতা আন্দোলনকে আমরা বাংলাদেশী ছাত্ররা সাধ্যমতো সাহায্য করেছি। মিশিগানে আমরা ‘ডিফেন্স লিগ’ গঠন করেছিলাম। আমি এর একটি শাখার চেয়ারম্যান ছিলাম। ছাত্র হওয়ার পরও আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। তখন আমি রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ি। পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে পিএইচডি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর ‘পূর্ব-পাকিস্তানি’ হওয়ার কারণে আমাকে রাষ্ট্রহীন অবস্থায় পড়তে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সহায়তা করার জন্য মন থেকে যে টান অনুভব করেছি, তার পেছনে একটিই কারণ ছিল। আমি দেখেছি- পূর্ব পাকিস্তানের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে, অত্যাচার চালানো হচ্ছে।

এটা আমি সহ্য করতে পারিনি। অন্যায়ের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছি। অন্যায়কে সমর্থন না করা ছিল আমার জোরালো নৈতিক অবস্থান। বিগত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তখন ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে ছিলেন কাউন্সিলর। তাকে পক্ষত্যাগে রাজি করানো হলো। তার জন্য বাড়ি ভাড়া করতে আমি চাঁদাও দিয়েছি। সৌভাগ্যবশত ১৯৭৩ সালে তার স্বাক্ষরেই আমি পেয়েছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশের পাসপোর্ট।

বলছি আমরাও ছাত্র ছিলাম। ছাত্রলীগ করেছি আমিও। কিন্তু এখন ছাত্রসমাজের যে নৈতিক অধঃপতন দেখছি তাতে মনে হচ্ছে, একটি প্রজন্ম যেন ভূমিকম্পে ধসে পড়েছে। এই পতন রোধ করার জন্য গোড়ায় হাত দিতে হবে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। এর জন্য প্রথমেই কারিকুলাম পরিবর্তন করার কথা বলব। আমাদের দেশের জনগণের ৯০ শতাংশ মুসলমান। ইসলাম হচ্ছে রাষ্ট্রধর্ম। এর মানে হলো, ইসলাম সম্পর্কে জানা সব নাগরিকের জন্য একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। এটা শিক্ষা কারিকুলামে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাশাপাশি, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মশিক্ষাও সংশ্লিষ্ট ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোনো মুসলিম ছাত্র যদি আগ্রহ নিয়ে হিন্দু ধর্ম পড়ে, সেটি ভালো। বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে জানাশোনা থাকলে একটি সহনশীল সমাজ গড়ে উঠবে। সব ধর্মের যে একটি মানবিক দিক আছে, সেটি শিক্ষার্থীর মনে শুরুতেই ঢুকিয়ে দিতে হবে। আমাদের ছাত্রসমাজকে সহনশীল, শ্রদ্ধাশীল, দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা প্রয়োজন।

এই প্রসঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলছি। ১৯৮২ সালের কথা। আমি তখন আইডিবিতে। সে সময়ে আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ ছিলেন সৌদি আরবের শূরা কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট। আমি কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার সুবাদে তার সাথে ভালো পরিচয় ছিল। একদিন তিনি আমাকে তার অফিসে ডেকে পাঠালেন। সেখানে গেলে তিনি বললেন, মান্নান, তোমাকে ইন্দোনেশিয়া যেতে হবে। জানতে চাইলাম কেন। বললেন, ওখানে মুহাম্মাদিয়া নামে একটি অরগানাইজেশন আছে। ওদের অ্যাডভাসইস করো, কিভাবে ইসলামী ব্যাংক করতে পারে। ওনার হাতে বিমানের টিকিট করাই ছিল। আমার হাতে দিয়ে বললেন- যাও। ফলে সাত দিনের একটি ট্রিপ নিয়ে জাকার্তা গেলাম।

১৯১২ সালে হাজী আহমাদ দাহলান মুহাম্মাদিয়া সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দীর্ঘ দিন মক্কায় অবস্থান করেছিলেন। ইন্দোনেশিয়া তখন ছিল ডাচ কলোনি। ইন্দোনেশিয়া কখনো ব্রিটিশ কলোনি ছিল না। প্রায় তিন শ’ বছর ছিল ডাচদের শাসনে। ব্রিটিশ কলোনি ও ডাচ কলোনির প্যাটার্ন পুরোপুরি আলাদা। ফ্রান্স, পর্তুগালসহ ইউরোপে আরো কলোনিয়াল পাওয়ার ছিল। আমার বিবেচনায় কলোনিয়াল প্যাটার্নের মধ্যে ব্রিটিশরা ছিল সেরা। তারা লিগ্যাসি রেখেছে। তারা স্থানীয় জনগণকে শিক্ষিত করেছে; কিন্তু স্থানীয় সংস্কৃতিকে স্পর্শ করেনি। এ কারণে আজো কমনওয়েলথ টিকে আছে।

হাজী দাহলান ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে দেখেন, সেখানে খ্রিষ্টান মিশনারিরা বহু মুসলমানকে খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করছে। এটা দেখে তিনি ব্যথিত হন এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ সা:-এর নামে মুহাম্মাদিয়া সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বে দু’টি ধর্ম মিশনারি- একটি ইসলাম, অন্যটি খ্রিষ্ট ধর্ম। হিন্দু ধর্ম মিশনারি নয়। এটা হিন্দু ডকট্রিনের মধ্যেই রয়েছে। হিন্দু ধর্ম মিশনারি হলে এত দিনে গোটা বিশ্ব হয়তো হিন্দু ধর্মের অনুসারী হয়ে যেত। হিন্দু ধর্ম সবচেয়ে পুরনো। ইসলাম মিশানারি ধর্ম। ইসলামী জীবনব্যবস্থায় একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকি মৃত্যুর পরও তার কী হবে, সে কথা বলে দেয়া হয়েছে। ডাচরা ইন্দোনেশিয়ায় মিশনারির কাজটি প্রচণ্ডভাবে শুরু করেছিল। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় মুহাম্মাদিয়া সংগঠনটি। তাই বিশ্বে আর কোনো জাতি ইন্দোনেশিয়ানদের মতো পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনকে ভালো বোঝে বলে আমার মনে হয় না। মনে হয়, সত্যিকারের ইসলামী বিপ্লব হলে ইন্দোনেশিয়াতেই হতে পারে।

তখন হাজী দাহলান বললেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ইসলামকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। খ্রিষ্টানরা এর বিরোধিতা করেন। দাহলান বললেন, যে যে ধর্মের অনুসারী, তাকে সেই ধর্ম সম্পর্কে পড়তে হবে। বালি দ্বীপে হিন্দু সম্প্রদায় রয়েছে। হাজী দাহলান খুবই উদার একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন। এর ফল হলো সে দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কিত ধারণাগুলোর বিনিময় শুরু হলো। দেখা গেল, সব ধর্মের মানবিক দিকগুলো অভিন্ন। প্রত্যেকে একই নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কথা বলে থাকে। ফলে তখন থেকে ইন্দোনেশিয়া এ চেতনার বিকাশ ঘটাতে শুরু করে। সে দেশে যখন যাই তখন তারা এক হাজার ২০০ স্কুল ও কিন্ডারগার্টেন পরিচালনা করতেন। চার হাজার মসজিদ এবং ১২টি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। ১২০টি ক্লিনিক করেছেন, ১৭১টি মাদার অ্যান্ড চিলড্রেন কেয়ার করেছেন। তিনটি নার্সিং একাডেমি এবং ১৩টি নার্সিং স্কুল করেছেন। ১৪৪টি বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমূলক সংগঠন চালু হয়েছে। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। আমি আজো ইন্দোনেশিয়ার মুহাম্মাদিয়া সংগঠনের এক্সটার্নাল অ্যাডভাইজার।

বলতে চাচ্ছি- আমাদের দেশের শিক্ষা কারিকুলামকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যেন একজন শিক্ষার্থীর নৈতিক ভিত্তি একেবারে শুরু থেকেই গড়ে ওঠে। আমাদের ছাত্রজীবনে যে ডিসিপ্লিন ছিল, আজ তা থাকলে সমাজের এই দুঃখজনক চিত্র দেখতে হতো না। আমাদের শিক্ষার্থীদের জবাবদিহি শিথিল হয়ে গেছে। আমাদের এডুকেশন বোর্ডে সমন্বয় ঘটাতে হবে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান স্কলারদের। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। জাতীয় কারিকুলাম বোর্ডে পণ্ডিত ব্যক্তিদের সমবেত করতে হবে। শুধু আমলাদের দিয়ে হবে না। প্রথমত, আমলারা সুবিদিত নন। দ্বিতীয়ত, শুধু আমাদের দেশই নয়, পৃথিবীর কোনো দেশেই আমলারা পরিবর্তন চান না। তারা স্থিতাবস্থা রক্ষা করতে চান। কোনো প্রকল্প নিয়ে ফেল করলে তাদের চাকরি থাকবে না। তাই তারা কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। তাই পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।

তখন যারা ছাত্ররাজনীতি করেছি তারা জাতীয় সমস্যাগুলোর ব্যাপারেও সচেতন ছিলাম। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট সেন্টো (সেন্ট্রাল ট্রিটি অরগানাইজেশন)-এ যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বললাম, ‘কাশ্মির সমস্যার আর সমাধান হলো না। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নেহরু সেন্টোতে যোগ না দিয়ে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সাথে গেলেন।’ আমাদের এটা বুঝতে ৪০ বছর লেগেছে। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সাথে থাকলে অনেক আগেই কাশ্মির সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। ফলে শত্রুতা শুরু হয়ে গেল। জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো দেয়, আর সোভিয়েতরা চাইলে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয়। সেই অবস্থা আজো চলছে।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দিলাম। আমি পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মনোনীত হই। আমি মনে করি, রাজনীতি করতে হলে, দেশ চালাতে হলে সেটি হতে হবে জ্ঞানভিত্তিক। আমরা তখন যারা রাজনীতি করেছি, তারা প্রথমত সচেতন ছিলাম ছাত্রদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে। কখনো ছাত্রত্বের সাথে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলতে চাইনি। তাই ছাত্ররাজনীতি বাদ দিয়ে শিক্ষা গ্রহণের দিকে মনোনিবেশ করেছি।

জ্ঞানের বিকল্প নেই। অথচ আজ আমাদের কারিকুলামের সাথে বাস্তব অবস্থার কোনো মিল নেই। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো। অথচ আজ বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এর কোনো অবস্থানই নেই। এটা আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনাস্থার প্রমাণ। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাস করা ছাত্রদের দেশের বাইরে কেউ স্বীকৃতি দিতে চায় না। তাই আমি বলছি, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে আমাদের আজকের সামাজিক দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড; সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জেদ্দা
hmct2004@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement