১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোড সেফটি টাস্কফোর্স নিয়ে শঙ্কা

রোড সেফটি টাস্কফোর্স নিয়ে শঙ্কা - ছবি : সংগ্রহ

এ বিষয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই- বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা চরমভাবে অনিরাপদ এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ। এ দেশের সড়ক পরিবহনের মতো বিশৃঙ্খল ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থাও সম্ভবত বিশ্বের আর কোথাও নেই। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এই বিশৃঙ্খল সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সবচেয়ে নাজুক খোদ রাজধানী ঢাকায়। নামে নানা ক্ষমতা ও দায়দায়িত্ব নেয়া কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে বছরের পর বছর ধরে সড়কে চলছে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, চলছে সীমাহীন দুর্নীতি ও আইন না মানার প্রতিযোগিতা। এর ফলে দেশের সড়ক পরিবহনে বিরাজ করছে চরম নিরাপত্তাহীনতা। দেশের সড়কপথে বিশৃঙ্খল অবস্থার ক্ষতিকর প্রভাবও দুঃসহ মাত্রার। এই অব্যবস্থা দীর্ঘ দিনের। নিরাপদ সড়ক পাওয়ার দাবিও তেমনি পুরনো। কিন্তু সে দাবি পূরণে সরকারগুলোর ব্যর্থতা সীমাহীন ও ক্ষমাহীন। জনমনে একটা স্থায়ী ধারণা জন্মেছে যে, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত-পালিত হয়ে চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ফলে সরকারও তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ অনেকটা হারিয়েছে বলেই মনে হয়। এ কারণেই সরকার পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ঘোষিত নানা উদ্যোগ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। সড়কে প্রাণহানি ও দুর্ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।

এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৫ হাজার মানুষ। আহত ৬২ হাজার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, এসব দুর্ঘটনার ৫৩ শতাংশই ঘটেছে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। ৩৭ শতাংশ ঘটে চালকের বেপরোয়া মনোভাবে, আর বাকি ১০ শতাংশ গাড়ির ত্রুটি ও পরিবেশের কারণে। এই হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা কে কিভাবে আছেন, তা নিশ্চিত করে আমরা জানি না, এমনকি সরকারও জানে না। তবে আমরা বলতে পারি, স্বজন হারিয়ে তারা কেউ ভালো নেই, ভালো থাকতে পারেন না।

নিরাপদ সড়কের দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই সারা দেশের এখানে-সেখানে সড়ক দুর্ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করে সাধারণ মানুষ নিরাপদ সড়ক চেয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে থাকে। একটি অভাবনীয় ও বিস্ময়কর আন্দোলনের কথা হয়তো আমাদের অনেকের মনে আছে। সেই আন্দোলনটির সূচনা ঘটেছিল ঢাকায়। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই থেকে একই বছরের ৮ আগস্ট পর্যন্ত এই আন্দোলনের ঘটনা ঘটিয়েছিল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে এই আন্দোলন ব্যাপক জনসমর্থন পায়। এ সময় রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা কার্যত চলে যায় সেই শিক্ষার্থীদের হাতে। তারা কর্তৃপক্ষকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, এ দেশে সড়কে কী অভাবনীয় মাত্রায় দুর্নীতি চলে, যেখানে তাদের রয়েছে অব্যাহত ব্যর্থতা। এই আন্দোলনের কয়েক দিন রাজধানীর সড়কে যান চলাচলে ফিরে এসেছিল অভাবনীয় শৃঙ্খলা। সে বছর ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগামী দুই বাসের চাপায় পড়ে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয়। আহত হয়েছে ১০ শিক্ষার্থী। মূলত এ দু’জনের সহপাঠীরা যে বিক্ষোভ-আন্দোলনের সূচনা করে, সেটাই শেষ পর্যন্ত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরিবহন শ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিত তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবিসহ ৯ দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে।

এই দাবি ৯টি ছিল- ১. দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য দায়ী চালককে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে এবং এই শাস্তির বিধান সংবিধানে সংযোজন করতে হবে; ২. দুর্ঘটনার পর মন্ত্রী শাজাহান খানের প্রদত্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের কাছে তাকে নিঃশর্ত মাফ চাইতে হবে; ৩. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুট ওভারব্রিজ বা বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে; ৪. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার বসাতে হবে; ৫. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীর দায় সরকারকে নিতে হবে; ৬. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে, থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে; ৭. শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্যই পরিবহনে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে; ৮. ফিটনেসহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ করতে হবে এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকেরা গাড়ি চালাতে পারবেন না; ৯. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।

জনগণ এসব দাবিকে যৌক্তিক বলে অভিহিত করেছে, এমনকি তারা এগুলোকে প্রকৃতপক্ষে নাগরিক অধিকার বলেই মনে করে। কেউ কেউ ৬ নম্বর দাবির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, হাত তুললেই যেখানে-সেখানে বাস না থামিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে থামানোই সঙ্গত। এই দাবি নিয়ে চলা প্রবল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় একটি খসড়া ট্রাফিক আইন অনুমোদন করেছিলেন। এই আইনে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড এবং বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে কারো মৃত্যু ঘটালে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। এর ফলে মূলত ৮ আগস্ট শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু এর পরও ছাত্রদের অনেক যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে এখনো নিরাপদ সড়ক আমরা পাইনি। এ দিকে প্রতিদিন সড়কে ঝরছে মানুষের প্রাণ। আহত হয়ে, পঙ্গুত্ব বরণ করে দুঃসহ জীবন যাপন করছে অনেকে। এখনো ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়নি। লাইসেন্সহীন আনাড়ি সহকারীদের গাড়ি চালানো বন্ধ হয়নি। সড়কে চাঁদাবাজি আরো বেপরোয়াভাবে চলছে। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো ও বেপরোয়া প্রতিযোগিতার ফলে যানবাহনের দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। সড়কে নিরাপত্তা ও বিশৃঙ্খলা আরো নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে।

আমরা জানি, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বিশৃঙ্খলা দূর করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার বেশ কয়েকটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে। তা ছাড়া উচ্চ আদালত থেকেও এ ব্যাপারে সময়ে সময়ে বেশ কিছু নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরেও সরকার নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে পারেনি। এমনই প্রেক্ষাপটে সরকার গত ৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দিয়েছে নবগঠিত একটি টাস্কফোর্সের প্রধান হিসেবে। এই টাস্কফোর্স বাস্তবায়ন করবে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির ১১১টি সুপারিশ। সুপারিশগুলো প্রণীত হয়েছিল সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনতে।

কিন্তু এ খাতের বিশেষজ্ঞরা এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের ব্যাপারে সন্দেহ করছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, এই টাস্কফোর্স এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারবে না। কারণ, সড়ক পরিবহন খাতে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কেউ আইন মেনে চলছে না। সবাই যেন প্রতিযোগিতা করছে আইন না মেনে চলার জন্য। সড়ক পরিবহন খাতে বছরের পর বছর ধরে চলছে এ সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য অন্য খাত থেকে লোক ধার করে আনার কাজটি হচ্ছে কর্তৃপক্ষের একটি ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা। এ ছাড়া আছে ব্যাপক দুর্নীতি। এসব কারণে আগের কমিটিগুলো সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবার ‘জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল’-এর ২৭তম বৈঠকে স্বীকার করেছেন, ‘আমাদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া খুবই ধীর গতির।’ এ বৈঠকেই গঠিত হলো নবগঠিত টাস্কফোর্স। মন্ত্রী স্বীকার করেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সড়ক নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রণয়ন করেছেন অনেক উচ্চাকাক্সক্ষী প্রতিবেদন। কিন্তু বাস্তবে এগুলো বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, ২০১১ সালের সরকার গঠন করেছিল ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ উপকমিটি। এর প্রধান করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনকে। এই কমিটি ৫২টি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করেছিল।

আবার ২০১৮ সালের ২৫ জুন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি নির্দেশ দেন। যেমন, দীর্ঘ সড়কপথের যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রতি ৫ ঘণ্টা পর গাড়ি চালকদের বিশ্রামের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে এবং এ জন্য দীর্ঘ সড়কপথে বিকল্প চালকের ব্যবস্থা করতে হবে, চালক ও সহকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, সিটবেল্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং মেনে চলতে হবে ট্রাফিক সিগন্যাল। তবে, এসব নির্দেশনা নতুন কিছু নয়। কারণ, এগুলোর উল্লেখ রয়েছে ১৯৮৩ সালে মোটর ভেহিকল অর্ডিন্যান্স, ২০০৯ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইন এবং ট্রাফিক আইনেও। অপর দিকে, হাইকোর্ট, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এসব নির্দেশ এর আগে বারবার জোর দিয়ে উল্লেখ করেছে।

এ দিকে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয় জাতীয় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৬তম সভায়। এ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন শক্তিশালী শ্রমিক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। এই কমিটিই সড়ক নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে। এরই মধ্যে সর্বশেষ সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে সড়ক নিরাপত্তা টাস্কফোর্স নামে আরেকটি কমিটি গঠন করা হলো। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং রেলওয়ে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ পেশ করবেন।

অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের পর্যবেক্ষণ মতে, দেশের সড়কে বিরাজ করছে পুরোপুরি নৈরাজ্য। কেউ আইন মানছে না। বিশেষ করে, এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি চলছে রাজধানীতে। তিনি অভিযোগ করেন, অতীতের সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত হতে পারেনি দুর্নীতির কারণে। তার ভাষায়, ‘সবার সামনে পুলিশ টাকা নিচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, নবগঠিত এই টাস্কফোর্সকে একটি জাম্পস্টার্ট করতে হবে, যাতে সত্যিকারের ফলদায়ক কিছু করা যায়।

বুয়েটের ‘দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠান’ সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো: শামসুল হক বলেছেন, ‘সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার সমস্যাগুলোর সমাধান হবে না অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে লোক ধার করে এনে। একটি টাস্কফোর্স বা কমিটি হচ্ছে একটি টেম্পরারি বডি। এর সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালনে ততটা আগ্রহী হন না।’ আসলে সংশ্লিষ্ট অ্যাজেন্সিগুলোকে আত্মনিবেদিত হয় এবং জবাবদিহি করার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে, যাতে সড়ক খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়।

বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১৩ লাখ লোক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এবং দুই থেকে পাঁচ কোটি লোক সামান্য হলেও আহত হচ্ছে। সড়কপথে দুর্ঘটনায় পড়ে আহত-নিহত হওয়ার বিষয়টি টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, এসব দুর্ঘটনার বেশির ভাগই ঘটছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে এসব দেশ প্রতি বছর জিডিপির ৩ শতাংশ হারিয়ে ফেলে। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা জনস্বাস্থ্যসম্পর্কিত বড় ধরনের একটি সমস্যাও বটে। প্রতি বছর এ দেশে ২১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। অনেক পথচারী এবং হালকা যান চালকেরা প্রধানত এর শিকার । এর ফলে স্বাস্থ্য ও সামাজিক ব্যয় বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তা ছাড়া, আছে পঙ্গুত্ব বরণের মতো দুঃসহ দুর্ভোগ।

বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ন ঘটছে। তবে দ্রুত নগরায়ন ও মোটরাইজেশনের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা। এ জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চাই আইনের বাস্তবায়ন ও নীতিসহায়তা। জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ ২০১১-২০২০ দশককে ঘোষণা করেছে ‘ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি’। সড়কে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই দশকের বাস্তবায়নের জন্য জাতিসঙ্ঘ বেশ কয়েকটি স্তম্ভ নির্ধারণ করেছে। এগুলো হচ্ছে- সড়ক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা গড়ে তোলা, সড়ক নিরাপত্তার অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং রোড নেটওয়ার্কের আরো বিস্তৃতি ঘটানো, যানবাহনের নিরাপত্তা আরো বাড়ানো, সড়ক ব্যবহারকারীদের আচরণের উন্নয়ন জোরদার করা এবং দুর্ঘটনা পরবর্তী কর্মতৎপরতা জোরালো করে তোলা।

এগুলোর প্রতি নজর দেয়ার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা ঠেকাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন লক্ষ্য অর্জনে সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি। এর অভাবই আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা। সম্প্রতি গঠিত রোড সেফটি টাস্কফোর্সে ১১১টি সুপারিশ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েও আমরা আশাবাদী, সরকার এবার অন্তত উল্লিখিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগিয়ে আসবে। নইলে কমিটির পর কমিটি কিংবা টাস্কফোর্সের পর টাস্কফোর্স গঠিত হতে পারে, তবুও সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না; ফিরে আসবে না শৃঙ্খলা; দূর হবে না নৈরাজ্য আর দুর্নীতি। পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটবে না; বরং তা ধারণ করবে আরো জটিল আকার। সেই সতর্ক বার্তাই রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছে।


আরো সংবাদ



premium cement