২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতীয় অর্থনীতির মন্দা ও কাশ্মির

-

ভারতীয় অর্থনীতি শঙ্কাময় এক মন্দাচক্রে প্রবেশ করেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থনীতির বিকাশহার পাঁচ অঙ্কের কোটায় নেমে এসেছে। ভারতীয় অর্থনীতির পর্যবেক্ষকদের হিসাব অনুসারে, গত পাঁচ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এটি কম প্রবৃদ্ধির একটি রেকর্ড। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কার্যত স্বীকারই করে নিয়েছেন যে, আর্থিক বৃদ্ধির হার নি¤œমুখীই শুধু নয়, গত কয়েক বছরে কমেছে রেকর্ড হারে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির হার ছিল ৬.৮ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চে সেই হার ৫.৮ শতাংশ এবং চলতি ত্রৈমাসিকে তা নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫ শতাংশে। এতে অশনি দেখছেন অনেক অর্থনীতিবিদ।

মন্দা সর্বব্যাপী!
অর্থনীতি নিয়ে ভালোমন্দ মেশানো একটি মিশ্র চিত্র দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন মোদির দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। কিন্তু বাস্তব চিত্র যে অন্য রকম, তা খানিক আঁচ করা যায়- গত সপ্তাহের গোড়ার দিকে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক এক লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রকে অনুদান দেয়ায়। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারতের রাজকোষের প্রকৃত অবস্থা ভালো নয়। এর পাশাপাশি আরো দেখা যায়, গাড়িশিল্পের করুণ দশা। গাড়ি বিক্রিও কমে গেছে।

নয়দার মারুতি গাড়ির কারখানা থেকে শুরু করে জামসেদপুরের বিখ্যাত টাটা মোটরের উৎপাদন পর্যন্ত সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। একই অবস্থা বহুল পরিচিত বাজাজ এবং হিরো কোম্পানিরও। কয়েক শ’ গাড়ির শোরুম ঝাঁপ ফেলে ব্যাংককে জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর ঋণ শোধ করতে পারবেন না। কাপড় কলের মালিকরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছেন, বস্ত্র শিল্পের অবস্থা খুব খারাপ। কাপড় কলের তিন ভাগের এক ভাগ এ বছরই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। লোকসান করায় মিল মালিকরা ব্যাংকের টাকা শোধ করতে পারছেন না। বেশ কিছু সিমেন্ট কারখানাও বন্ধ। ঝাড়খণ্ডের জয় বালাজি স্টিল কোম্পানি দুই দিন হলো, উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ ইস্পাতের বাজার নেই।

বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই থেকেই একটু একটু করে স্পষ্ট হচ্ছিল, ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। তার ওপর, চলতি মাসের শুরুতেই রিজার্ভ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে রেপো রেট কমে যায়। তার সাথে সঙ্গতি রেখে জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়। মন্দাচক্র দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে অনেক অর্থনীতিবিদের মন্তব্য, বিভিন্ন খাতে বিক্রি হ্রাস, জনবলের ব্যাপক ছাঁটাই, বেকারত্বের রেকর্ড উচ্চহার এবং ব্যাংকগুলোতে তীব্র তারল্য ঘাটতি, ভারতে এশীয় অর্থনৈতিক সঙ্কটের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা ১৫ মাসের মধ্যে এই মন্দা কাটতে শুরু করবে বলে আশাবাদ উচ্চারণ করলেও তার বক্তব্যের সাথে একমত হতে পারছেন না অনেকেই।

ভারতের অন্যতম থিঙ্ক ট্যাংক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়ার (এনআইটিআই) উপপ্রধান রাজীব কুমার বলেছেন, ‘ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা নজিরবিহীন। গত ৭০ বছরে আর্থিক খাতের তারল্য সঙ্কট এমন অবস্থায় যায়নি। পুরো আর্থিক খাতেই একটা ঝাঁকুনি লেগেছে। কেউ অন্য কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা কেবল সরকার ও বেসরকারি খাতের ব্যাপার নয়; বেসরকারি খাতের মধ্যেও কেউ অন্য কাউকে অর্থ ধার দিতে চাইছেন না।’

‘আচ্ছে দিন’ কোথায়?
নরেন্দ্র মোদির সরকার প্রথম দফা ক্ষমতায় আসার আগে, সবার জন্য কাজ আর জনগণের জন্য সুদিন ফেরানোর স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ অর্থনীতির স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন। কিন্তু উচ্চ মূল্যের নোট বাতিলসহ অর্থনৈতিক সংস্কারের যেসব পদক্ষেপ মোদি নিয়েছেন, তার প্রায় সবটাই সাধারণ মানুষের অবস্থার পরিবর্তনে উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। নোট বাতিলের পদক্ষেপে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধ হয়ে যায় এবং আকস্মিক বেকারত্ব ও উৎপাদন ক্ষতির সৃষ্টি করে। এর প্রভাবে পরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিচে নেমে আসে। প্রথম মেয়াদে মোদির বিজেপি সরকার উচ্চহারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জায়ান্ট করপোরেট হাউজগুলোকে বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে। আর প্রতিরক্ষা শিল্পের স্থানিক বিকাশের নীতি-কৌশল তিনি গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা শিল্পে নিজস্ব সমরাস্ত্র¿ উৎপাদনের কৌশল পরিত্যাগ করে, বেসরকারি খাতের সাথে বাইরের রাষ্ট্রায়ত্ত অথবা বেসরকারি সমরাস্ত্র উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ অংশীদারিত্বভিত্তিক উৎপাদন শুরু করা হয়।

নতুন এ উদ্যোগে সমর্থন দেয়ার জন্য প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো হতে থাকে। প্রতিরক্ষা কাঠামো ও সমরাস্ত্র আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। একই সাথে প্রতিরক্ষা খাতে উচ্চ বাজেট প্রবৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীগুলোর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে সেনা, বিমান ও নৌ খাতের জন্য অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা সামগ্রী কেনার জন্য জাতির সামনে যুক্তি হাজির করার প্রয়োজন হয়। এ জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং উগ্র জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তোলার দরকার পড়ে। এই প্রয়োজনের সাথে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের এবং রিলায়েন্স-টাটা-বিড়লার মতো বৃহৎ করপোরেট কোম্পানির স্বার্থ যেমন জড়িত হয়, তেমনি ভারতের অস্ত্র সরবরাহের অংশীদার বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল ফ্রান্স এমনকি রাশিয়ার স্বার্থও সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে।

সেসব দেশের বৃহৎ অস্ত্র বিক্রেতা ও উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোও সক্রিয় থাকে ভারতে নীতিগত প্রভাবের ক্ষেত্রে। তারা নিজস্ব স্বার্থে নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপি সরকারকে ভারতে শক্তিমত্তার সাথে বহাল রাখার জন্য প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য চীন ও পাকিস্তানের সাথে দুটি ফ্রন্টে বিজেপি সরকার বিরোধ চাঙ্গা করে তোলে। এর মধ্যে, ভুটানের ডোকলামে চীনের সাথে আর কাশ্মিরে পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিজেপি সরকারের আন্তর্জাতিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, এমনকি রাশিয়াও একদিকে উত্তেজনা কমানোর জন্য বাইরে আলাপ আলোচনা অব্যাহত রাখার কথা বলে, অন্যদিকে ভেতরে ভেতরে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের নীতি ও পদক্ষেপের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে থাকে।

উন্নয়ন ও সামাজিক খাতকে উপেক্ষা
মোদি সরকারের উল্লিখিত নীতির কারণে ভারতের অর্থনীতি ও সামাজিক খাতের মৌলিক প্রয়োজন ও ইস্যুগুলো গুরুত্ব হারাতে থাকে। ২০১৪ সালে যখন ভারতে নরেন্দ্র মোদি প্রথম ক্ষমতায় বসেন তখন দেশটির মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল ১৫৬০ মার্কিন ডলার। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের জিএনআই ছিল এর ১৫ গুণ এবং চীনের মাথাপিছু জাতীয় আয় ছিল ভারতের জাতীয় আয়ের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। স্বল্প মাথাপিছু জাতীয় আয় ছাড়াও বণ্টন বৈষম্য ছিল ভারতের অর্থনীতির জন্য একটি বড় সঙ্কট। পরবর্তী ৫ বছরেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের অনুপাতে খুব একটা হেরফের হয়নি ভারতের। অথচ বণ্টন বৈষম্য এর মধ্যে আরো বেড়েছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে- ২০১৪ সালে ভারতের ৪৭ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, অথচ তাদের জাতীয় আয়ের অংশ ছিল মাত্র ১৭ শতাংশ। মাথাপিছু স্বল্প উৎপাদনশীলতার কারণে এটি ঘটলেও মোদি সরকার কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেননি। বরং ক্রমেই কৃষি অলাভজনক হয়ে পড়ার ফলে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে কৃষকরা নজিরবিহীন বিক্ষোভ করেছেন। ভারতে কৃষকদের আত্মহত্যার রেকর্ড অতীতের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে অনেক উপরে উঠে গেছে।

ভারতীয় অর্থনীতির আরেকটি মৌলিক ইস্যু হলোÑ জন্মহার বৃদ্ধি ও মৃত্যুহার কমার কারণে কর্মশক্তির যে বৃদ্ধি ঘটছে তাদের কাজের সংস্থান করতে না পারা। বাইরে কর্মসংস্থানের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় অর্ধেক কর্মশক্তি কৃষিতে নিজেদের নিযুক্ত করেছে। কিন্তু অধিক উপার্জনের বিকল্প কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করার কার্যকর কোনো উদ্যোগ সরকার নেয়নি। মাধ্যমিক ও তৃতীয় স্তরের খাতের বিকাশে যে ধরনের তহবিল প্রয়োজন সেটির অপর্যাপ্ততাও ভারতে বেকারত্ব ও আধা বেকারত্বকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। পুঁজি গঠনের অপর্যাপ্ততাও একটি বড় সমস্যা ভারতীয় অর্থনীতির। ২০০০-২০০৫ সময়ের ১.৬ শতাংশ জনসংখ্যা প্রবৃদ্ধির কর্মসংস্থানে ৬.৪ শতাংশ অতিরিক্ত বিনিয়োগের প্রয়োজন বলে হিসাব করা হয়েছিল। জীবনমানকে একই পর্যায়ে রাখতে ১৪ শতাংশ মোট পুঁজি গঠন হারের প্রয়োজন। কিন্তু এর কোনোটাই আসেনি। এর ফলে জনগণের জীবনমানে দুরবস্থা আর বৈষম্য, দুটোই বেড়েছে।

‘৯৯ শতাংশের জন্য একটি অর্থনীতি’ শিরোনামে, অক্সফামের এক প্রতিবেদন অনুসারে ভারতে ধনী ও দরিদ্রের বৈষম্য এখন অনেক ব্যাপক। ভারতে মাত্র ১ শতাংশ জনগোষ্ঠীর হাতে মোট সম্পদের ৫৮ শতাংশ কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। ৫৭ জন বিলিনিয়রের হাতে যে সম্পদ রয়েছে, তা ৭০ শতাংশ ভারতীয়ের মোট সম্পদের সমান। এই বৈষম্য ধনীমুখী বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির কারণে আরো বেড়েছে।

ইউএনডিপি মানবসম্পদ উন্নয়নের সূচকগুলো বিবেচনায় ২০১৪ সালে একটি সূচকক্রম (এইচডিআই) তৈরি করেছিল। এর ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান হলো ১৩০ নাম্বারে। মোদির পাঁচ বছর শাসনের শেষে ১৮৯ দেশের মধ্যে ভারতের ক্রম সেই ১৩০তে রয়ে গেছে। ২০১১ সালের ভারতের আদমশুমারি অনুসারে, ৭ শতাংশ মানুষ গ্রাম ও বস্তি এলাকায় বাস করেন। ৪৬.৬ শতাংশ ভারতীয়ের নিজস্ব আঙিনায় বিশুদ্ধ পানি এবং ৪৬.৯ শতাংশ পরিবারের স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই আজো। সে অবস্থারও খুব একটা উন্নতি নেই।

মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে দুরবস্থা ছাড়াও আরো কিছু মৌলিক দুর্বলতা রয়েছে ভারতীয় অর্থনীতির। এর মধ্যে একটি হলো জনসংখ্যা বিন্যাস। দেশটিতে ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সের জনসংখ্যা ৬২.৫ শতাংশ। বাকি ৩৮ শতাংশ জনসংখ্যা তাদের ওপর নির্ভরশীল এবং তারা শিশু অথবা প্রৌঢ়। এছাড়া ভারতীয় বিশাল ভূখণ্ডে অনুদঘাটিত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে অনেক। কিন্তু তা উত্তোলনের জন্য উদ্যোগ বা বিনিয়োগ তেমন নেই। এসব মৌলিক দিক সুরাহা করা মোদির অর্থনৈতিক নীতিতে অগ্রাধিকার পায়নি। বরং তিনি নজর দিয়েছেন করপোরেট স্বার্থের প্রতি। তারাই মোদিকে প্রচারমাধ্যমে ‘মহীয়ান’ করে দেখাচ্ছেন।

নরেন্দ্র মোদির সরকার শুরু থেকেই আকার বড় করে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে ভারতকে পরিণত করার লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেছে। আর বিজেপি প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য অনুসারে, ভারতীয় অর্থনীতিকে তিন ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্থানে পৌঁছাতে হলে সীমান্তের ভেতরে-বাইরে নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে হবে। মোদি-অমিত এ কৌশল বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাশ্মিরে ছয় লাখ সেনা মোতায়েন এবং অত্যাধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করেছেন। এর বাইরে, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদার বিলোপ ঘটিয়ে কাশ্মিরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর সেখানে আরো ৫০ হাজার সেনা বাড়তি মোতায়েন করা হয়েছে।

বাজেটের ২০ টাকার ১ টাকা কাশ্মিরিদের দমনে ব্যয়
তিন বাহিনী মিলিয়ে ভারতের সশস্ত্রবাহিনীর মোট সদস্যসংখ্যা ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৯২১। প্রতিরক্ষাবাহিনীর জন্য ছয় হাজার ৬৫০ কোটি ডলারের বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে কাশ্মিরে মোতায়েন করা হয়েছে ছয় লাখ সৈন্য। এতে রাষ্ট্রের সশস্ত্রবাহিনীর মাথাপিছু গড় ব্যয় ৪৬ হাজার ৫৫ ডলার হিসাবে কাশ্মিরে নিরাপত্তাবাহিনী সদস্যদের জন্য ভারতের মোট ব্যয় হচ্ছে দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ডলার। জম্মু ও কাশ্মিরের মাথাপিছু জাতীয় আয় হলো এক হাজার ১৯৮ ডলার। এক কোটি ২২ লাখ জনসংখ্যার কাশ্মির উপত্যকা থেকে ভারত রাষ্ট্রের জিডিপিতে যুক্ত হয় এক হাজার ৩৮১ কোটি ডলার। এর বিপরীতে প্রতি বছর রাজ্যের বাজেট ব্যয় এক হাজার ১৪৭ কোটি ডলার।

আর এখানকার নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতের খরচ হচ্ছে দুই হাজার ৭৬৩ কোটি ডলার। কাশ্মিরে যে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভারত তৈরি করে রেখেছে তাতে এই রাজ্যটিতে ভারত সরকারকে রাজ্যের আয়ের অতিরিক্ত যে দুই হাজার ৫২৯ কোটি ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে, তা ভারতের মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের ৩৮ শতাংশের সমান, অথচ সেখানকার জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ। শুধু নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারের পাঁচ বছরেই জম্মু-কাশ্মিরের জন্য ভারতবাসীকে সাড়ে ১২ হাজার কোটি ডলার নিট ভর্তুকি দিতে হয়েছে। তা ভারতের এক বছরের জাতীয় বাজেটের এক-চতুর্থাংশের সমান। জম্মু ও কাশ্মিরকে আলাদা থাকতে দিলে ভারতকে এ দায় বহন করতে হতো না।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর কাশ্মিরের নিরাপত্তার জন্য ব্যয় আরো অনেক বেড়ে যাবে। ভারতীয়দের ভাবতে হবে, তারা প্রতি বছরের বাজেটের প্রতি ২০ টাকার মধ্যে এক টাকা ভর্তুকি কাশ্মিরিদের দমনের জন্য ব্যয় করবেন, নাকি ভারতের জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য এ অর্থকে উৎপাদনশীল খাতে কাজে লাগাবেন।

উপত্যকার জনগণের চাহিদা অনুসারে কাশ্মির, এটিকে স্বাধীন করে দিলে ভারতের প্রতি বছর যে অর্থনৈতিক সাশ্রয় হতো সেই অর্থ রাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যয় করা হলে পুরো ভারতেরই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হতো সম্ভব। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার ভারতীয় জনগণকে এ প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জানতে না দিয়ে তাদের এক ধরনের মোহাচ্ছন্নতার মধ্যে রেখে দিয়েছে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার। প্রকৃতপক্ষে এই স্বপ্ন দেখিয়ে ভারতের ও বিশ্বের মাফিয়া অস্ত্র ব্যবসায়ীরা দেশটির সোয়া শত কোটি মানুষের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যকে কেড়ে নিয়ে বিশ্বের সর্বাধিক আত্মহনন ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এক দেশে পরিণত করেছে ভারতকে।

শক্তিমত্তার দেশ হওয়ার উন্মাদনা থেকে ভারতে এখন যে অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রতিদিনই ঘনীভূত হচ্ছে। দেশটির ২৭টি ব্যাংককে ১৩টিতে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংকের অর্থ সরকারকে সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যয় করতে হচ্ছে। বেকারত্ব হু হু করে বাড়ছে। ডলারের বিনিময় হার কমতে কমতে বাংলাদেশী টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। এক সময় জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে এর স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতকে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে মোদির সরকার। সে স্বপ্ন হতাশায় পরিণত হওয়ার পর এখন ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখানো শুরু হয়েছে। এটি করতে গিয়ে দক্ষিণ এশিয়াকে পারমাণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে মোদি-অমিত শাহের সরকার। এ অবস্থায় বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারের কাশ্মিরনীতি ভারতের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হয়েছেন যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজ দেশে ৫ বছর পর ফিরল দিপক চট্টগ্রামে ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ সদস্য আটক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : শামসুল ইসলাম ইউরো ২০২৪’কে সামনে রেখে দল নির্বাচনে বিপাকে সাউথগেট ভারতীয় পণ্য বর্জনকে যে কারণে ন্যায়সঙ্গত বললেন রিজভী মাকে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত ঢাবির সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিরাপত্তা-বিষয়ক আলোচনা করতে উত্তর কোরিয়ায় রুশ গোয়েন্দা প্রধান

সকল