২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইসলামী অর্থনীতি দর্শন ও কর্মকৌশল

-

ইসলামী অর্থনীতি একটি বিজ্ঞানে পরিণত হয়েছে। এ কথাও বলা যায় যে, অর্থনীতি সাবজেক্টের বয়সও খুব বেশি নয়; মাত্র আশি বা নব্বই বছর। এর আগে এটা পলিটিক্যাল সায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তখন এটাকে ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি’ বলা হতো।

পঞ্চাশ-ষাট বছর ধরে ইসলামী অর্থনীতির ওপর ব্যাপক কাজ হচ্ছে। বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সিনিয়র অর্থনীতিবিদ এ বিষয়ে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- প্রফেসর খুরশীদ আহমদ, ড. নাজাতুল্লাহ সিদ্দিকী, প্রফেসর ড. ওমর চাপরা, ড. মনজের কাহাফ, ড. তরিকুল্লাহ, ড. মুনাওয়ার ইকবাল প্রমুখ। এ ছাড়াও অন্য স্কলাররা এ বিষয়ে অনেক কাজ করেছেন। ধীরে ধীরে ইসলামী অর্থনীতি একটি পরিপূর্ণ বিজ্ঞানে পরিণত হয়েছে।

ইসলামী অর্থনীতির ওপর আলোচনা করতে গেলে ইসলামী অর্থনীতির যে দর্শন বা স্ট্র্যাটেজি, সে বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। ইসলামী অর্থনীতির দর্শন হলো- এ অর্থনীতির ভিত্তি অথবা তার স্ট্র্যাটেজি বা কর্মকৌশলের ভিত্তি। একটি বিল্ডিং যেমন নির্ভর করে তার ফাউন্ডেশনের ওপর, ফাউন্ডেশনটাই বলে দেয় বিল্ডিংটি কি রকম হবে, তেমনিভাবে ইসলামী অর্থনীতির দর্শন বলে দেয়, তার স্ট্র্যাটেজিটা কি হবে বা কি হওয়া উচিত।

এখন ইসলামের অর্থনীতির যে মূল ভিত্তি বা তার যে স্ট্র্যাটেজি, সে সম্পর্কে আলোচনা করছি। বর্তমানে বিশ্বের রুলিং আইডিওলজি, ক্যাপিটালিজমের দুর্বলতা বোঝার কারণে ইসলামী অর্থনীতির কর্মকৌশল ভালো করে বোঝা সম্ভব। ইসলামী অর্থনীতিবিদরা তিনটি বিষয় বা কনসেপ্টকে মূল ভিত্তি বলেছেন। প্রথম ভিত্তিটি হলো, তৌহিদ। এই তৌহিদের তাৎপর্য হচ্ছে- পৃথিবী আল্লাহর সৃষ্টি করেছেন। এটা তাৎপর্যহীন সৃষ্টি নয়। সব মানুষ আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি। সব মানুষের গুরুত্ব রয়েছে এবং সব মানুষকেই গুরুত্ব দিতে হবে।

ইসলামী অর্থনীতির দ্বিতীয় ভিত্তি হচ্ছে, খিলাফত। খিলাফতের সার কথা হলো- মানুষ আল্লাহর খলিফা। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষই খলিফা। আল কুরআনের সূরা বাকারা, সূরাতুল ফাতিরে এবং অন্যান্য সূরাতে এ কথা বলা হয়েছে। খিলাফত মানুষকে অত্যন্ত সম্মানিত করেছে। খিলাফতের তাৎপর্য হলো বিশ্বভ্রাতৃত্ব। অর্থাৎ সব মানুষ ভাই বা ভাইবোন এবং এ হিসেবে তারা মর্যাদার অধিকারী, সমতার অধিকারী। সমভাবে তাদের দিকে খেয়াল করতে হবে এবং খেয়াল করার প্রয়োজন রয়েছে। এর আরেকটা তাৎপর্য হলো, মানুষ মূল মালিক নয়। মূল মালিক আল্লাহ পাক এবং সম্পদ একটা আমানত মাত্র। যে কোনোভাবে সে সম্পদকে ব্যবহার করা যায় না। সম্পদকে ব্যবহার করতে হবে আল্লাহ তায়ালা যেভাবে চেয়েছেন ঠিক সেভাবে। এগুলো হলো খিলাফতের ধারণার গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য।

তৃতীয় ভিত্তি হলো জাস্টিস, মানে ইনসাফ বা ন্যায়বিচার। ‘আদল’ হলো এ ব্যাপারে কুরআনের পরিভাষা। কুরআনে প্রায় ১০০ আয়াত আছে, যেখানে জাস্টিসের কথা বলা হয়েছে। আরো ১০০ আয়াতে আছে যেখানে জুলুমের নিন্দা করা হয়েছে। তার মানে হলো, অর্থনীতিতে জুলুম থাকলে চলবে না এবং জাস্টিস আনতে হবে। এটাই হলো জাস্টিসের মূল তাৎপর্য।

আরো স্পষ্টভাবে বলা যায়, ইনসাফের দাবি হলো সব মানুষের প্রয়োজনকে পূরণ করতে হবে। সবার জন্য করতে হবে সম্মানজনক আয়ের ব্যবস্থা। এমনভাবে অর্থনীতিটাকে সাজাতে হবে, এমনভাবে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে, যাতে সবার আয়ের ব্যবস্থা হয়। যদি কারো আয়ের ব্যবস্থা না হয়, তাহলে তাদের জন্য ব্যবস্থা প্রথমে করতে হবে তার পরিবারের বা আত্মীয়স্বজনদের। আর তারা যদি না পারেন তাহলে রাষ্ট্রকে তা করতে হবে। এটাই হলো জাস্টিসের দাবি।

এরপর ইসলামী অর্থনীতির কর্মকৌশল সম্পর্কে বলতে হয়। এ বিষয়ে চারটি স্ট্র্যাটেজির কথা আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলেছেন। অনেক কথা বললেও এ চারটি স্ট্র্যাটেজিই প্রধান। এর মধ্যে প্রথমটি হলো- নৈতিক ছাঁকনি। অর্থাৎ রিসোর্সের একটি পয়েন্ট অব টাইম বা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের একটি সীমা আছে এবং এর ডিমান্ড বা চাহিদা প্রায় সীমাহীন। ফলে এ দু’টির মধ্যে মেলাতে গেলে ডিমান্ডের ওপর এমন এক ছাঁকনি দরকার যাতে ডিমান্ডগুলো যেন একটু কমে আসে; সংযত থাকে। একটি ‘ছাঁকনি’ হলো প্রাইস বা মূল্য যেটা আধুনিক ক্যাপিটালিজমে আছে। প্রাইসের মাধ্যমে ডিমান্ডকে সংযত করা হয়। আমার টাকা কম সুতরাং আমি কিনতে পারব না- এটা হচ্ছে এক ধরনের ছাঁকনি বা ফিল্টার, যার মাধ্যমে এটা হয়ে থাকে। ইসলাম এ প্রাইস ফিল্টারকে মেনে নিয়েছে। আবার মেনে নেয়ার সাথে সাথে আরেকটা দিক সে নিয়ে আসে। সেটাকে বলা হয় নৈতিক ফিল্টার। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে ইসলাম এমন নৈতিকতা সৃষ্টি করেছে, মানুষ যেন অপব্যয় না করে; অতিরিক্ত ভোগ যেন না করে।

ইসলামী অর্থনীতিবিদরা দ্বিতীয় যে স্ট্র্যাটেজির কথা বলেছেন, সেটা হলো প্রপার মোটিভেশন। আমাদের প্রপার মোটিভেশন থাকতে হবে। এটা এডুকেশনের মাধ্যমে, মিডিয়ার মাধ্যমে, প্রচারের মাধ্যমে, ওয়াজের মাধ্যমে, দাওয়াতের মাধ্যমে। সর্ব উপায়ে জনগণের মধ্যে উপযুক্ত মোটিভেশন সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনৈতিক কাজকর্মে কেবল দুনিয়ার স্বার্থ দেখলে চলবে না। দুনিয়া এবং আখেরাতের স্বার্থ উভয়ই দেখতে হবে। সুতরাং ইসলাম মোটিভেশনের স্বার্থপরতাকে বিস্তৃত করে দিয়েছে। মৌলিক কর্মকৌশলের মধ্যে এটা রয়েছে। উল্লিখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে সময় লাগবে।

এ জন্য ইসলামী অর্থনীতিবিদরা তৃতীয় কর্মকৌশলও নির্ধারণ করেছেন সামাজিক ও আর্থিক পুনর্গঠন নামে। এ বিষয়টিকেই তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। এর মাধ্যমে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং আর্থিক বা ফাইন্যান্সিয়াল ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করতে হবে। এর সাহায্যে ব্যাংকিং সিস্টেমের মনিটরিং পলিসির, ফিসক্যাল সিস্টেমে পরিবর্তন করতে হবে; ব্যাংকের টাকা সৃষ্টির ক্ষমতাকে সংযত করতে হবে।

কর্মকৌশলের চতুর্থ দিক হলো- সামাজিক পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক পুর্নগঠন এবং আর্থিক পুর্নগঠনের কাজটি করতে হবে। ইসলামের অবস্থা সমাজতন্ত্রের মতো নয় যে, সরকার সব করবে। আবার পুঁজিবাদের মতো নয় যে, মার্কেটই সব করে দেবে। ইসলাম বলে, মার্কেটকে ৮০ শতাংশ আর সরকারকে ২০ শতাংশ করতে হবে। এ হার পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তন হতে পারে। এটাই হচ্ছে সরকারের ভূমিকা। আর এ চারটিই হলো ইসলামী অর্থনীতির মূল কর্মকৌশল।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
এবারের আইপিএলে কমলা ও বেগুনি টুপির লড়াইয়ে কারা সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর হয়ে গেছে : রিজভী রাশিয়ার ৯৯টি ক্ষেপণাস্ত্রের ৮৪টি ভূপাতিত করেছে ইউক্রেন আওয়ামী লীগকে ‘ভারতীয় পণ্য’ বললেন গয়েশ্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে দাগনভুঞার যুবক নিহত কাশ্মিরে ট্যাক্সি খাদে পড়ে নিহত ১০ অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য

সকল