২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেনা প্রত্যাহারে আফগানিস্তান কেমন হবে?

আফগানিস্তানে মার্কিন সেনারা - ফাইল ছবি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘পাকিস্তান এক পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। তার ওপর নজর রাখার জন্য কাছাকাছি বেজ বা ঘাঁটি দরকার।’ এ কারণে আফগানিস্তানে সামরিক ঘাঁটি রাখতে যুক্তরাষ্ট্র যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ ঘোষণার সময় তিনি আরেক পরমাণু শক্তিধর দেশ ও পাকিস্তানের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কথা কিন্তু বলেননি। যুদ্ধের সব কলাকৌশল প্রয়োগ করে দীর্ঘ ১৮ বছরেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় এখন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে তালেবানদের সাথে চুক্তি করছেন। তালেবানদের দাবি মতে, সে দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হলে কাবুলের পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকেরা উদ্বিগ্ন।

সেনাপ্রত্যাহারে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। ইতঃপূর্বে আমরা দেখেছি, ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামার সময় ইরাক থেকে বেশির ভাগ মার্কিন সৈন্য সরিয়ে নিয়ে মাত্র কিছু সৈন্য রেখে দেয়া হয়। তবে তখন ইরাকে যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা আজো শেষ হয়নি। এমনকি ইরাকের বসরায় স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা আন্দোলনের ডাকও এসেছে। শিয়া-সুন্নি সঙ্ঘাত সেই যে দেড় হাজার বছর আগে শুরু হয়েছে, সে আগুন এখনো প্রজ্ব¡লিত।

আফগানিস্তান থেকে সেনাপ্রত্যাহার মূলত আমেরিকার শোচনীয় পরাজয়ের এক সম্মানজনক নিষ্পত্তিও বটে। ২০০১ সালের পর থেকে সে দেশে কোয়ালিশন ফোর্স এক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে, তখন আফগানিস্তানে সৈন্য ছিল এক লাখ ৪০ হাজার। ধারণা ছিল, তালেবানদের যুদ্ধে চূড়ান্ত পরাজিত করা যাবে। ওই যুদ্ধে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ হাজার সৈন্য ও ঠিকাদার কর্মকর্তা নিহত হয়েছে। তালেবানরা বিশ্বের সেরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজেদের একটি রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। আফগানিস্তানে তালেবানরা যেমন রয়েছে, তেমনি অনেক দল-উপদলে বিভক্ত সশস্ত্রবাহিনী রয়েছে। কোথাও কোথাও তালেবান ও আলকায়েদা মিলে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। কোথাও তালেবান-আইএস মিলে যুদ্ধ করছে। পাকিস্তানি তালেবানরাও কোথায় কাকে সমর্থন দিচ্ছে, তাও এক বড় বিবেচ্য বিষয়। লস্কর-ই জঙ্গভি, আহরার উল হিন্দ, আইআরপি বা ইসলামিক রেনেসাঁ পার্টি- এরাও আছে যুদ্ধের ময়দানে। আইআরপির কেন্দ্র হলো পড়শি দেশ তাজিকিস্তান। আরো আছে উজবেকিস্তানের ইসলামিক মুভমেন্ট।

সবারই মুখ্য আকাক্সক্ষা, মার্কিনিরা চলে যাক। তাই সুদীর্ঘ ১৮ বছরের যুদ্ধে সেখানে আমেরিকা সুবিধা করতে পারেনি। আফগানিস্তানে ট্রাম্পের যুদ্ধকৌশল ও ওবামার যুদ্ধকৌশলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। প্রচণ্ড বোমা বর্ষণ এবং মাউন্টেন ওয়ারফেয়ারের কলাকৌশল প্রয়োগ করে নির্দয়ভাবে সব কিছু তছনছ করাই মার্কিন জোটের সৈন্যদের ইচ্ছা। ওবামাও ২০১৬ সালে এমনটি করেছিলেন। তখন ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করবেন। বাস্তবে বিষয়টি ভিন্নপথে প্রবাহিত হয়েছে এবং যুদ্ধের মাধ্যমেই নিজের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা চালিয়েছে ওয়াশিংটন। ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট তালেবান নেতাদের ধরপাকড়, হত্যা ও কাছে টেনে আনার কৌশল প্রয়োগ করেছে। কিন্তু তালেবানরা টাকার বিনিময়ে দল ত্যাগ করছে না। তাই শান্তি সংলাপ সহজে পরিসমাপ্ত হচ্ছে না।

নির্বাচনে জেতার জন্য ট্রাম্প আফগান যুদ্ধে বিজয় চেয়েছেন, তা হয়ে ওঠেনি। তার ‘আমেরিকা ফাস্ট’ কর্মসূচিও নিজে নির্বাচনে বিজয়ের জন্য। কিন্তু ১৮ বছরেও যে যুদ্ধে আমেরিকা বিজয় লাভ করেনি, সে যুদ্ধে রাতারাতি জয় পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি সব প্রচেষ্ট সাঙ্গ করেছেন। ইরান, আফগান ও ইয়েমেন যুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্র জড়িত। এগুলোতে তিনি কোনো-না-কোনো ‘বিজয়’ আমেরিকাবাসীকে দেখাতে চান। জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করা এবং গোলান মালভূমি দখল করে ইহুদি রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য সবই করেছেন। এসব কাজে তার ভোটের পারদ অনেক উপরে উঠছে বলেই মনে করছেন।

যুদ্ধের শুরুতে আমেরিকা তালেবানদের পরাজিত করেছে এবং তালেবানবিরোধী শক্তিকে নিজস্বার্থে কাজে লাগিয়েছে। মাত্র চার বছরের মধ্যেই তালেবানেরা নিজেদের সংগঠিত করতে পেরেছে এবং ২০০৪ সালের পর দিন দিন ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে।

আমেরিকা যুদ্ধে প্রচুর অর্থ ঢাললেও আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি। কিন্তু প্রচার করা হয়েছে উন্নয়নের। তালেবানরা এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আশরাফ গনি সরকারের কাছে শ্বেতপত্রের জন্য অপেক্ষা করে আছে।

আজ তাই যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান সরাসরি আলোচনা হচ্ছে। সেখানে কাবুল সরকার বা তার লোকজন নেই। আমেরিকা বুঝতে পেরেছে, সরকার ও সরকারি সেনাবাহিনীর চেয়ে তালেবানরা বেশি শক্তি রাখে। সে বিশাল বাহিনীর মধ্যে এখন মাত্র ১৪ হাজার সেনা বাকি রয়েছে। তালেবানরা যদি চুক্তিতে স্বাক্ষর নাও করে, আমেরিকাকে চূড়ান্ত পরাজয়ের জন্য কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে মাত্র। যারা কাবুলি শির খোরমা, হাফত মেওয়া খেয়ে দিন কাটাত, তারা এখন আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করছে।

তালেবানরা বলছে, চুক্তি হলে তারা আলকায়েদার সাথে থাকবে না। কিন্তু এটা কে পাহারা দেবে? শুরু থেকেই বিভিন্ন স্থানে ওরা একই সাথে যুদ্ধ করেছে। ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানেই আশ্রয় পেয়েছেন। আলকায়েদা যেকোনো সময় তালেবানে ঢুকে গেলে তার হিসাব রাখবে কে? উল্লিখিত চুক্তি আমেরিকার ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবেও বিবেচিত হবে। আমেরিকার কত শক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে এবং মুসলিম বিশ্বে কিভাবে সামরিক ক্ষমতার প্রয়োগ হবে তার হিসাব-নিকাশ এখান থেকেই উঠে আসবে।

ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের পর ‘আইএস’ নামে বড় ধরনের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শান্তির পরিবর্তে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়। একই অবস্থা আফগানিস্তানে সৃষ্টি হবে। কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভয়ঙ্কর গৃহযুদ্ধ কাবুল সরকার ও তার সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে দেবে। তখন বৃহৎ অন্য কোনো শক্তি বা আরেকটি কোয়ালিশন আফগানিস্তানে আসার পথ সৃষ্টি হবে। আবার উদ্বাস্তু সমস্যায় জর্জরিত হবে পাকিস্তানসহ প্রতিবেশীরা।

আফগানিস্তানের যুদ্ধবাজ নেতারা সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী লালন করে। ক্যাডাররা আবার বিভিন্ন দল-উপদলের সাথে সম্পৃক্ত। এরা পাকিস্তানের তালেবানের সাথেও সংশ্লিষ্ট। সম্ভাব্য উদ্বাস্তুর ঢল এবং যুদ্ধবাজদের ক্রস বর্ডার অপারেশন বাধাগ্রস্ত করার জন্য পাকিস্তান জরুরিভিত্তিতে ৯০০ কিলোমিটারজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। বাকি দুই হাজার ৬০০ কিলোমিটার বেড়ার কাজ এ বছরই সমাপ্ত হওয়ার কথা। এখানে সিকিউরিটি ক্যামেরা, ডিটেক্টর, সেন্সর ইত্যাদিও সংযুক্ত করা হয়েছে। তারপরও আলকায়েদা এবং আইএসভীতি থেকে আফগানিস্তান বা পাকিস্তান মোটেই মুক্ত নয়। আফগানিস্তানে যদি কখনো ইসলামী শাসনব্যবস্থা বা তালেবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসে, তার ঢেউ পাকিস্তানেও লাগবে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিষয়টি ভালোভাবেই হৃদয়ঙ্গম করেছেন।

তাই তিনি পাকিস্তানে ২৬ হাজার মাদরাসার উন্নয়ন, শিক্ষাকে আধুনিকীকরণ, ইমাম, কারি ও মাওলানা শ্রেণীকে সরকারি চাকরিতে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান ইত্যাদি কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছেন। এ মুহূর্তে ইসলামী দলগুলো ইমরান সরকারকে সাপোর্ট দিচ্ছে, এমনকি তালেবান নেতারাও তার সাথে বৈঠকে বসছেন।

আফগান ফ্রন্ট থেকে সেনা প্রত্যাহারকে পাকিস্তান, ইরান, চীন ও রাশিয়া স্বাগত জানিয়েছে। তবে ভারতের কোনো সাড়া নেই। একই উদ্দেশ্যে এই চার দেশ তালেবানদের আলোচনার টেবিলে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আবার পাকিস্তানকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তার দ্বার খুলে তালেবান আলোচনায় পাকিস্তানকে পুশ করছে। তালেবান শান্তি আলোচনায় পাকিস্তান রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থানে। আফগান সরকারের ভারতমুখিতা দূর করার জন্যও পাকিস্তান এ আলোচনায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে চায়। সৌদি আরবের ২০ বিলিয়ন ইনভেস্টমেন্ট যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব-পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমনের উদ্যোগ বলে অনেকে মনে করছেন। ওয়াশিংটনের বিশ্লেষক থিওডর কারাডিক এটাকে নাম দিয়েছেন ইসলামিক কাউন্টার টেররিজম কোয়ালিশন। অবস্থানগত কারণে পাকিস্তান একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সাথে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা নিয়ে অগ্রসরমান।

আফগানিস্তানের মাটিতে আমেরিকার বিরুদ্ধে চীন, রাশিয়া, ইরান, কাজাখস্তান ও তুরস্ক জড়িত। আফগানিস্তানের নির্জন পাহাড়ি এলাকা, ওয়াখান করিডোরে সামরিক ঘাঁটি বানানো শুরু করেছে চীন। এখানে চীনেরও স্বার্থ জড়িত। ইস্ট টার্কিশ ইসলামিক মুভমেন্টের (ইটিআইএম) উগ্র সদস্যরা ওয়াখান পার হয়ে নিকটবর্তী, চীনের জিনজিয়াং এলাকায় প্রবেশ করতে পারে বলে মনে করছেন চীনা কর্মকর্তারা। ইরাক এবং সিরিয়া থেকে আইএস সদস্যরাও মধ্য এশিয়া পার হয়ে একই পথে জিনজিয়াংয়ে পৌঁছতে পারে। চীনের ঘাঁটি বানানোর প্রচেষ্টায় আমেরিকা ও ভারত উভয়ে চিন্তিত ও শঙ্কিত। হিসাব-নিকাশে ভুল হলে যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু যে, আফগানিস্তান থেকে করুণ বিদায় নিতে হবে তা নয়, ইরাক থেকেও চলে যেতে হবে।

শুধু বর্তমান প্রেসিডেন্ট গণি নয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও ২০১০ ও ২০১১ সালে ‘গ্রান্ড জিরগার’ মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। তিনিও সাধারণ ক্ষমা, নাগরিকত্ব প্রদান, ক্ষমতার ভাগাভাগি, পুনর্বাসন ইত্যাদি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। তবে সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। সে ধারায় প্রেসিডেন্ট গণির পদক্ষেপও ব্যর্থ হচ্ছে। তালেবানরা বলে আসছে, ‘আমেরিকানদের দেশ ত্যাগ করতে হবে এবং আফগান সরকারে তালেবানদের অংশ দিতে হবে।’ দ্বিতীয় বিষয়টি মেনে নেয়া গেলেও আমেরিকানরা দেশ ছাড়তে চায় না।

ওয়াশিংটনের ওয়্যারটেবিল মনে করে, আমেরিকার রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় পদক্ষেপ মার খেয়েছে। আফগানিস্তানকে ধরে রাখতে হলে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। তবে নিয়মিত সেনাবাহিনীর পরিবর্তে বেসরকারি ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া উচিত। এমন এক প্রতিষ্ঠানের মালিক হলেন এরিক ডি প্রিন্স। প্রতিষ্ঠান হলো ব্ল্যাকওয়াটার ওয়ার্ল্ডওয়াইড প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি, সংক্ষেপে ‘ব্ল্যাকওয়াটার’। ওসামা বিন লাদেনকে খোঁজার ঠিকাদারিও ‘ব্ল্যাকওয়াটার’ পেয়েছিল। ইরাক যুদ্ধে অনেক স্থান ও স্থাপনা পাহারার ঠিকাদারিও ওই সংস্থা সফলতার সাথে পরিচালনা করেছে। এরপর তাদের আফগানিস্তানে একই কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। এখন ব্ল্যাকওয়াটার পুরো যুদ্ধ চালাতে চায়। ডি প্রিন্স যুক্তি দিয়েছেন, আফগান যুদ্ধ নিয়মিত সেনাবাহিনীর জন্য নয়।

তিনি ফর্মুলা দিয়েছেন, বেসরকারি সেনাবাহিনী গঠন করে তালেবানদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিতে হবে। ঘরে ঘরে ভাইয়ে-ভাইয়ে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে হবে। আফগান যুদ্ধ প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দিলে অনেক কম টাকায় তালেবানদের শেষ করা যাবে। সাথে আলকায়েদা আর আইএসও। একজন ভাইসরয় যুদ্ধ পরিচালনা করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তাকে নিয়োগ করবেন। তিনি ভাইসরয়কে নির্দেশনা দেবেন। বিশেষ এয়ারফোর্স যাকে বলা হচ্ছে ‘৯০ প্লেন প্রাইভেট এয়ারফোর্স’- তার অধীনে থাকবে। এই যুদ্ধ যদি ‘অনন্ত’ কালও চলে, সমস্যা নেই। প্রিন্স দাবি করেছেন, বিজয় নিয়ে তিনি ফাইনাল বিল পেশ করবেন। এখন ওয়াশিংটন বছরে যে অর্থ খরচ করে, তার ৩০ শতাংশ দিলেই তিনি কাজে নেমে পড়বেন। শান্তিচুক্তির পাশাপাশি ঠিকাদার যদি কাজ শুরু করে, তবে আফগান যুদ্ধের অবস্থা হবে ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’।

যে সেনাবাহিনী এখন রয়েছে, কাগজে-কলমে ও প্রচারিত ‘১৪ হাজার’; তারা আছে গণি সরকার, সরকারি সেনা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে পাহারা দেয়ার জন্য। কিন্তু তালেবানরা সেখানেও আক্রমণ চালাচ্ছে; প্রতি মাসে কয়েক শ’ করে সেনাবাহিনীর লোক হত্যা করছে। কাবুল সরকারের পতন ঠেকাতে হাজারা, তাজিক ও উজবেক সংখ্যালঘু থেকে মিলিশিয়া বানিয়ে তাদের অস্ত্রধারী করা হয়েছে সেনাবাহিনীর মতো। কিন্তু গৃহযুদ্ধ শুরু হলে পশতুন তালেবানরা তাদের শেষ করে দিতে পারে। যদি তা হয়েই যায়, আমেরিকার অবশিষ্ট সৈন্য তা ঠেকাতে সক্ষম হবে না।

যে বিষয়টি পশ্চিমারা বুঝতে চায় না তা হলো, আফগানিস্তানে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিপালিত ও অনুসৃত হয়। মানুষের মনে ও মগজে ইসলামী ভাবধারাই লালিত ও পালিত। পশ্চিমা সভ্যতা ও এর ফসল, নানা নীতি ও মতবাদকে আফগানরা পছন্দ করে না। অনেকে এসব মতবাদকে ‘কুফরি’ বলেন। তাই সাধারণ আফগান ও তালেবানরা বিদেশী সৈন্য ও তাদের দোসরদের মোটেই সহ্য করতে পারছে না। শান্তির জন্য যা কিছু করা হোক, তার আগে আফগানরা চায়, বিদেশীরা চলে যাক ও তাদের ‘দালাল’রা ক্ষমতা ছেড়ে দিক। মোট কথা আফগানদের মগজ ধোলাই করা এখন কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement