২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা নেই বলে যত সমস্যা

-

দেশটি আমাদের সবার হলেও দেশের ভালো-মন্দের ব্যাপারে অন্য কারো মতামত বর্তমান সরকারের কাছে যে মূল্যহীন, এটা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ও পর্যবেক্ষকেরা ভালো করে জানেন ও বোঝেন। কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শোনার জন্যও সরকারে কেউ নেই। সরকার নিজেদের এবং দলীয় লোকদের স্বার্থরক্ষা নিয়েই ব্যস্ত।

কিন্তু এই অসহিষ্ণুতার অর্থ তো এমন হতে পারে না যে, আইনের চোখে যে পলাতক নয় বা যার বিরুদ্ধে দেশ থেকে যাওয়া-আসার ব্যাপারে কোনো আইনি বাধানিষেধ নেই- এমন লোককেও বিদেশে যাওয়া-আসা করতে হলে ইমিগ্রেশন বিভাগে বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদের পাসপোর্টের কোনো ব্যবহারিক মূল্য থাকবে না। আইনগত কোনো বাধার কথাও কর্মকর্তাদের উল্লেখ করতে হবে না।

সংবিধান বা শাসনতন্ত্রের ৩৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘...নিষ্ঠুর অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।’ ৩৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’

সরকারের ‘নেক নজরে’ নেই, এমন অনেককেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে আদেশ এনে এবং সেই আদেশ দেখিয়ে তাদের বিদেশে যাওয়া-আসা করতে হবে। ইমিগ্রেশন বিভাগের নিজস্ব কোনো আইনগত বক্তব্য না থাকলেও, বিষয়টি নাগরিকদের জন্য অবৈধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক হয়রানি ভিন্ন কিছু নয়। বহির্গমন বিভাগের কর্মকর্তারা অদৃশ্য ‘বিশেষ কর্তৃপক্ষের’ কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অপরাধী না হয়েও তাদের অপরাধীর মতো অপেক্ষা করতে হয়।

মোট কথা, আইনকানুন মেনে দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা নেই বলে ক্ষমতার বাড়াবাড়ি প্রতিটি ক্ষেত্রে হচ্ছে। সবাইকে ভয়ভীতির মাধ্যমে অনুগত রাখা হয়েছে। এখন অরাজক পরিস্থিতির বিপদ সরকারের জন্যও আসছে।

বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের কাছেও বোধগম্য নয়, কেন তাদের নির্দেশ লাগবে বিদেশে যাওয়া বা আসার জন্য। এ জন্যই বাংলাদেশকে ‘মগের মুল্লুক’ বলা হতো। কেউ রিট আবেদন করলে সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেবল সুপ্রিম কোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই মর্মে কারণ জানতে চাইতে পারে যে, কেন রিট আবেদনকারীকে দেশের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে? অর্থাৎ প্রথমবার তাকে যেতে দেয়া হবে না। এরূপ কারণ দেখিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন থেকে ওইরূপ নির্দেশ পাওয়া যেতে পারে। তবুও তার টিকিট কাজে লাগল না। বিদেশের অন্যান্য ব্যবস্থাও পণ্ড হলো।

কারণ দর্শানোর নোটিশের পরই কেবল সুপ্রিম কোর্ট আলোচ্য বিদেশে যাওয়া-আসাসংক্রান্ত অস্থায়ী নির্দেশ দিতে পারেন। অথচ এ রকম কারণ দর্শানোর একাধিক রুলের কোনো জবাব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুপ্রিম কোর্ট আজ পর্যন্ত পাননি। অর্থাৎ কারণ দেখানোর মতো কোনো কিছু নেই। নিশ্চয়ই ওপর থেকে রাজনৈতিক কোনো নির্দেশ আছে, যা প্রকাশ করার মতো নয়। এভাবে হয়রানি করে হয়তো দেখানো হচ্ছে যে, এ দেশে সরকারের বাইরে কারো মান-মর্যাদা তাদের কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। কিন্তু প্রতিটি নাগরিকের অধিকার শাসনতন্ত্র প্রদত্ত। শাসনতন্ত্র তো মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রাখে। আমরা ভোটাধিকার হারিয়েছি। জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি নেই। আইনের শাসনের নেই সুরক্ষা। ব্যক্তির শাসনতান্ত্রিক অধিকারগুলোও অস্বীকৃত হয়েই চলছে।

জীবনে বাঁচার অধিকারই বা কতটা আছে, জানি না। বন্যা ও ডেঙ্গু রোগে প্রতিদিন বহু লোককে অসহায়ভাবে জীবন হারাতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ডেঙ্গু রোগের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। যাদের সতর্ক থাকার কথা, তারা কেন ব্যর্থ হয়েছেন, সেটি ও তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জানার বিষয় ছিল। হাইকোর্ট ডিভিশনের এতদসংক্রান্ত মামলা থেকে জানা যাচ্ছে, ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের জন্য মশা নিধনের ওষুধও নেই। আসল কথা হলো, কারো কোনো জবাবদিহি নেই এবং দায়িত্ব পালন নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে না।

কোনো এক ভিআইপির জন্য মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে তিন ঘণ্টা দেরি করে ফেরি ছাড়তে হলো। মুমূর্ষু স্কুলছাত্রটিকে বাঁচানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কেউ দয়ামায়া দেখাননি। আত্মীয়স্বজনের বিশেষ অনুরোধ কিংবা কান্নাকাটিতেও কোনো কাজ হয়নি। ডিসি সাহেবকে অমান্য করা যাবে না। ছাত্রটির বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। এখন অনেক কমিটি গঠিত হবে। পুলিশি মামলাও হবে। নতুন করে হয়রানিও করা হবে অনেককে। কিন্তু ভিআইপিদের দাপট কমবে না। সরকার তো ভিআইপি আর ভিভিআইপিদেরই। ছেলেটির মুমূর্ষু অবস্থার কথা জানা না থাকলেও ৩ ঘণ্টা ফেরি ছাড়তে দেরি করা হলে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে কত দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তা নিয়েও কারো কোনো উদ্বেগ ছিল না। দেশ শাসন তো এভাবেই চলে আসছে।

কোনো একজন ভিআইপিকে দোষ দিয়ে লাভ হবে না। ‘ভিআইপি ব্যবস্থা’ হলো ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা দেখানোর ব্যবস্থা। অন্যান্য দেশে ভিআইপিদের যাওয়া-আসা টের পাওয়া যায় না। মানুষের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করা দূরে থাকুক, জাপানে কয়েক বছর আগে এক মন্ত্রীর জন্য ট্রেন ছাড়তে সামান্য বিলম্ব হয়েছিল। আমার যত দূর মনে পড়ে, সে জন্য ওই মন্ত্রীকে বিদায় নিতে হয়েছিল জনমতের চাপে। আমাদের দেশে ভিআইপি ক্ষমতা প্রদর্শনের এক চমৎকার ব্যবস্থা। মানুষের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করতে না পারলে তিনি কিসের ভিআইপি ও একজন যুগ্ম সচিবও ‘বিরাট ভিআইপি’। তার সুবিধার জন্য দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ফেরি ছাড়া সম্ভব হয়নি। অবসান ঘটাতে হবে ভিআইপিদের দাম্ভিকতার। তারা যে জনগণের সেবক, সে কথা তাদের স্মরণে রাখতে হচ্ছে না।

ফেরিঘাটের কর্মচারীদের কাছে কর্তাব্যক্তিদের নির্দেশই আইন। নিজেদের দায়িত্বে কাজ করার সাহস তাদের জন্য রাখা হয়নি। সমগ্র জাতিই যেন সাহস হারিয়ে ফেলেছে।

সম্প্রতি বরগুনার মিন্নির স্বামীর হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে প্রকাশ্য জনসমক্ষে। ভিডিওতে দেখা গেছে, মেয়েটি কত অসহায়ভাবে তার স্বামীকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। পরে খুনের সাথে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মিন্নিকেও মূল খুনিদের সাথে এক করে দেখা হচ্ছে। তার কাছ থেকে আদায় করা স্বীকারোক্তি সে অস্বীকার করেছে। পুলিশের রিমান্ডে তার ওপর নির্যাতনের কথাও সে বলেছে। আইনত, মেয়ে হিসেবে মিন্নির জামিন দেয়া যেত। আর যা-ই হোক, মিন্নি সরাসরি খুনের সাথে জড়িত নয়, তা তো পুলিশকেও মানতে হচ্ছে। তারপরও সে জামিন পাচ্ছে না।

এটা তো অস্বীকার করা যাবে না যে, সরকারবিরোধী কার্যক্রমে ভয় পাওয়ার মতো কোনো বিরোধী দলের অস্তিত্ব রাখা হয়নি। নিজেদের অযোগ্যতা, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা এবং ভুলভ্রান্তি ছাড়া ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে বর্তমান সরকারের কোনো প্রকার অস্বস্তিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। নিজেদের ছায়াকেই সরকার ভয় করে চলছে।

সাফল্যের ব্যাপারে এত গুণগান করা হলেও সরকারের রাজনৈতিক নেতারা চার দিকে ষড়যন্ত্র দেখছেন। এমনকি তারা ডেঙ্গু রোগের ব্যাপারে সরকারের প্রস্তুতির চরম ব্যর্থতার মধ্যেও বিরোধী রাজনীতির ষড়যন্ত্র খুঁজছেন। ভয়াবহ বন্যার ক্ষয়ক্ষতির মোকাবেলায় সবার সহযোগিতা চেয়ে আবেদন জানাতে সরকারের অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু জনগণের সরকার গঠনে যে জনগণের ভোটের প্রয়োজন, সে কথা মনে রাখা হয়নি।

সরকার শুধু পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া কোনো সাফল্য দেখাতে পারছে না। পুলিশের ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য পুলিশের কর্মকর্তারাই যথেষ্ট। মন্ত্রীরা কথা বলবেন নিজেদের যোগ্যতা ও সাফল্য নিয়ে। চার দিকের সঙ্কট থেকে উত্তরণে তাদের বিদ্যাবুদ্ধি কতটা কাজে লাগছে, তা দেখানোর দায়িত্ব সরকারের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর। সরকারের ব্যর্থতা সরকারেরই।

সরকার কিভাবে নিজেদের বুদ্ধি-বিবেচনা মতে, দেশব্যাপী নৈরাজ্যিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর আশা করছে, সে সম্পর্কে জনগণের আশ^স্ত হওয়ার মতো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সরকার কার কর্তৃত্বে চলছে কিংবা কারো অবর্তমানে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, তাও বোঝা যাচ্ছে না। সমস্যা তো বেড়েই চলছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব সারা দেশেই। প্রতিদিনই কিছু লোক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। দেশব্যাপী অরাজকতা বেড়েই চলছে।

আমরা এটাও বুঝতে পারছি না যে, বিমানবন্দরের বহির্গমন বিভাগে কিছু পরিচিত যাত্রীকে অযথা হয়রানি অথবা তাদের ব্যাপারে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকার কিভাবে লাভবান হচ্ছে এবং কিভাবে সঙ্কট মোকাবেলার কাজটি সহজ করছে। মনে হচ্ছে, কিছু লোক অন্যদের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করাতেই আনন্দ পায়।

ইমিগ্রেশন বিভাগের অযথা বাধা সৃষ্টির ব্যাপারটি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অন্যান্য জায়গার দায়িত্বশীল বহির্গমন কর্মকর্তাদের জন্যও কম বিব্রতকর নয়। তাদের দক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে আস্থার সাথে গ্রহণ করা হচ্ছে না। সব কিছু সঠিক থাকলেও অন্যত্র থেকে ‘কর্তৃপক্ষের’ অনুমোদন নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও যথেষ্ট নয়। এটাও চাওয়া হয় হয়রানির মাত্রা বৃদ্ধির জন্য। আবার শুধু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না থাকায় উড়োজাহাজ থেকে মালামাল নামিয়ে যাত্রীকে যেতে না দেয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের প্রয়োজনীয়তার কথা তো আইনে নেই। বিচারপতিদের বিশ্বাস করানো যায় না যে, শাসনতন্ত্রের সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এমন বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশ থাকলে শেষ পর্যন্ত বিমানযাত্রা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না ঠিকই; কিন্তু ভোগান্তির কারণ ‘বিশেষ কর্তৃপক্ষের’ সন্তুষ্টিজনিত বিড়ম্বনা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকলে শেষ পর্যন্ত ক্লিয়ারেন্স আসে। দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য কিংবা দেশে আসার জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা তো কোনো আইনে নেই।

সরকার যারা পরিচালনা করছেন, উচ্চপদে আসীন হওয়ার কারণে তারা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। কিন্তু এ দিয়ে নিশ্চয়ই এটা বোঝায় না যে, সরকারের বাইরে যারা আছেন, তারা কোনো সম্মানীয় ব্যক্তি নন। শুধু পদ-পদবির ভিত্তিতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সব কিছু সহজ হতে হবে। তারাই ভিআইপি। দেশ তাদের।

প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি সম্মানজনক ব্যবহার করার শাসনতান্ত্রিক নির্দেশ রয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর। প্রত্যেক নাগরিকের মর্যাদা বা ফরমহরঃু রক্ষা করা শাসনতান্ত্রিক মৌলিক অধিকারের অংশ। কিন্তু বাস্তবে মনে হচ্ছে, ভিআইপিদের জন্যই সব সুযোগ-সুবিধা। আমরা জনগণ কিছুই নই। সবাই অনুগ্রহের পাত্র। এ ধরনের চিন্তাভাবনা স্বাধীন দেশের প্রশাসনিক চিন্তাভাবনা হতে পারে না।

কারো বিরুদ্ধে মামলার গন্ধ থাকলে বিপদ থাকবেই। ব্যক্তিগত মানহানির মামলা হলেও বুঝতে হবে ইমিগ্রেশনে সমস্যা সৃষ্টি করবেই। মনে হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্তিসঙ্গত বিচার-বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। আমরা তো এ রকম ছিলাম না। আমাদের লোকেরা অনেক শিক্ষিত ও অনেক সচেতন ছিলেন। তারপরও সর্বত্র চলছে অশিক্ষা-কুশিক্ষা আর সঙ্কীর্ণ মনমানসিকতার বাড়াবাড়ি। সুন্দর, সভ্য সমাজ গড়ার পথ এটা নয়। এ পথ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সার্বিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন না এলে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব ঘুচবে না। আমাদের সৎ সাহসের মৃত্যু ঘটে চলেছে।

অপরাধীদের মতো ক্লিয়ারেন্স পেতে অপেক্ষায় থাকার জন্য বহির্গমন কর্মকর্তাদের দোষারোপ করা যাবে না। তারা সর্বোচ্চ সৌজন্যবোধের পরিচয় দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের তো ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কিছু করার নেই। তাদের ‘হাত-পা বাঁধা’। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকারি কর্মকর্তাদের হাত-পা বেঁধে রাখায় নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না। আইনকানুন না মেনে চলতে গিয়ে সরকার এখন অচল এবং ব্যর্থতায় হাবুডুবু খাচ্ছে।

দেশ ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের কিছু দেখার মতো থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু একজন নাগরিককে নিজ দেশে আসার ব্যাপারে সমস্যা সৃষ্টি করার কী কারণ থাকতে পারে, তা বোধগম্য নয়। তাহলে কি নাগরিক হিসেবে আমরা নিজ দেশেও আসতে পারব না? তাকে বিদেশে ফেরত পাঠানো হবে? কিন্তু তা তো সম্ভব হবে না। তবুও সমস্যা সৃষ্টি করা হবে। কিছু কর্মকর্তার উদ্ভট মনমানসিকতার মধ্যে আমাদের বাস করতে হচ্ছে।

দেশটি যে জনগণের তা অস্বীকার করতে চাইলেই অস্বীকার করা যাবে না। মান-মর্যাদা ও অধিকার নিয়েই স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ সবাই মিলেই সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের আইনের শাসনের শৃঙ্খলার মধ্যে আসতে হবে।

আইনকানুন এমনকি, শাসনতন্ত্র না মানার এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে দেশ শাসিত হচ্ছে বলেই সঠিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের প্রশ্নই উঠছে না। অন্যদের শত্রু হিসেবে দেখে দেশ শাসন করা যায় না। আইনের শাসন মেনে চললে সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের সচেতনতা বৃদ্ধি পেত। দেশে সুস্থ শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠত। সবাই আইনের সুরক্ষার নিশ্চয়তা পেত। জনগণও আইন মেনে চলার সুফল বুঝত। আইনকানুনের নিশ্চয়তা না থাকায় অপরাধীরা মনে করে, ‘শেষ পর্যন্ত তাদের রক্ষা পেতে অসুবিধা হবে না। শুধু কিছু সময়ের ব্যাপার।’


আরো সংবাদ



premium cement