১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজনীতির সামাজিক দায়

-

শুধু রাজনীতি নয় বরং সমাজের সভ্য হিসেবে আমরা কেউই সামাজিক দায় থেকে মুক্ত নই। তবে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকেন তাদের দায়টা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, ক্ষমতাসীনদের হাতেই থাকে সমাজ-রাষ্ট্রের সব কিছুরই নিয়ন্ত্রণ। যেহেতু রাজনীতি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তাই রাজনীতির পাত্রমিত্ররাও সামাজিক দায় থেকে মুক্ত থাকতে পারেন না। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে প্রত্যেকের যেমন কিছু দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি সে দায়িত্ব পালনের জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশও জরুরি। আর সে পরিবেশ সৃষ্টি এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনকে নির্বিঘœ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের বা সরকারের। মূলত কোন সমাজরাষ্ট্রে সুন্দর ও সুকুমার বৃত্তির চর্চা অবারিত করতে হলে সে সমাজে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইন ও সাংবিধানিক শাসন নিশ্চিত হওয়া জরুরি। কারণ, গণতন্ত্র ও সুশাসনহীন সমাজে সুকৃতির চর্চা কখনোই সফল ও সার্থক হয়ে ওঠে না।

রাজনীতির সামাজিক দায় আছে কি না, আর থাকলেই বা কতটুকু আর ক্ষমতাহীনদের জন্য সে দায়িত্ব পালন কতখানি সম্ভবÑ এই আলোচনা সম্প্রতি কিছুটা বাজার পেয়েছে। বিভিন্ন ‘টকশো’তে তা রীতিমতো স্থান করে নিয়েছে। মূলত ‘রাজনীতি’ এমন এক প্রক্রিয়ার নাম, যার মাধ্যমে কিছু মানুষের সমন্বয়ে গঠিত কোনো গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার অর্জন করে। আর রাজনীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জন ও ক্ষমতাচর্চার মাধ্যমে গণমানুষের কল্যাণ সাধন। রাজনীতি কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। যার কাক্সিক্ষত লক্ষ্য হচ্ছে আর্তমানবতার কল্যাণ।

মূলত সামাজিক এককগুলোর সেতুবন্ধনের বৃহত্তর ও পরিশীলিত রূপই হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে শিক্ষার এমন একটি শাখা যা রাজনৈতিক আচরণ শেখায় এবং ক্ষমতা গ্রহণ ও ব্যবহারের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করে একটি গতিশীল ও যুতসই নির্দেশনা দেয়। রাজনৈতিক চিন্তার ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় প্লেটোর ‘রিপাবলিক’, এরিস্টটলের ‘রাজনীতি’ এবং কনফুসিয়াসের কিছু লেখনীতে। যা আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পথ নির্দেশক হিসেবে মনে করা হয়।

রাজনীতির উদ্ভব মানবসভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে রাজার রাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার মধ্যে দিয়ে ঘটেছে এবং পরিপূর্ণতাও লাভ করেছে। রাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা এবং রাজনৈতিক কলা-কৌশল ও পরবর্তীকালের আধুনিক রাজনীতির শ্রেণিবিন্যাস রাষ্ট্রবিজ্ঞানমূলক চিন্তাধারার উত্থান ঘটিয়েছে। যার পরিশীলিত রূপই হচ্ছে আজকের আধুনিক গণতন্ত্র। মেকিয়াভেলি রচিত ‘The Prince’ গ্রন্থটি রাজতন্ত্রের চরিত্র ও স্থায়িত্ব নিয়ে একটি প্রাণবন্ত বিশ্লেষণ করেছে। এককথায় রাজনীতি হলো বিশেষ রাজত্বকেন্দ্রিক নীতি বা রাজার নীতি। কেউ কেউ রাজনীতিকে ‘নীতির রাজা’ বলেও উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ সব নীতির সেরা নীতিই হচ্ছে ‘রাজনীতি’। তাই রাজনীতি ও সভ্যতা শুধু পরস্পর সম্পর্কযুক্তই নয় বরং একে অপরের পরিপূরকও বটে। তাই রাজনীতি মানবকল্যাণের কোনো অনুষঙ্গকেই উপেক্ষা করতে পারে না।

রাজনীতির প্রধান অনুসঙ্গ হলো রাজনৈতিক দল বা শক্তি। আর রাজনৈতিক দল হচ্ছে নাগরিকদের এমন একটি সঙ্ঘবদ্ধ জনগোষ্ঠী যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে বিজয় অর্জন ও সরকার গঠন করার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। রাজনৈতিক দল সমষ্টিগত কল্যাণ কিংবা সমর্থকদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু প্রস্তাবিত নীতি ও কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐকমত্য পোষণ করে এবং সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালায়।

আন্তর্জাতিকভাবে রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও পরিচালনা পদ্ধতিতে কিছু মিল থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে ভিন্নতাও দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ভিন্নতাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। অনেক রাজনৈতিক দলের একটি মূল আদর্শ থাকে। কিন্তু কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের তা থাকে না। আবার কিছু রাজনৈতিক দলের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শ থেকে অনেকটাই ভিন্নতর রূপ নেয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচকমণ্ডলী সরকার পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ক্ষমতায় পাঠায়। অনেক দেশেই বহুসংখ্যক শক্তিশালী রাজনৈতিক দল থাকে। যেমন জার্মানি ও ভারত। আবার কিছু দেশে একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রচলিত আছে, যেমন চীন ও কিউবা। যুক্তরাষ্ট্রে অনেকগুলো ছোট রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের সাথে দুই দলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রচলিত আছে। সে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দু’টি দল হচ্ছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি। আর প্রত্যেকটি দেশের সরকার গঠন ও শাসনপ্রক্রিয়া শাসনতন্ত্র বা সংবিধানকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়।

রাজনীতি একটি সেবামূলক কাজ। রাজনীতির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট আদর্শের ভিত্তিতে কিছু সংখ্যক লোককে সংগঠিত করে রাষ্ট্রক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন। রাজনৈতিক মঞ্চের বক্তারা সব সময় এ কথাই বলে থাকেন যে, তারা ক্ষমতায় গেলেই শুধু জনগণের কাছে প্রতিশ্রুত কল্যাণ সাধনে আত্মনিয়োগ করবেন। আর তারা জনগণের কাছে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন, সেসবের বেশির ভাগই রাষ্ট্রক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই জনগণের কাছে কৃতপ্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলোর জন্য ক্ষমতা যাওয়া অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আর জনগণ যাদের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় পাঠায় তাদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার সাথে সাথে সামাজিক দায়বদ্ধতাও এসে যায়। যদিও কোনো রাজনৈতিক শক্তিই সামাজিক এই দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত নয়। কিন্তু ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাহীন রাজনৈতিক শক্তিকে একই তুলনাদণ্ডে তুলনা করা যৌক্তিক বলে মনে হয় না।

সম্প্রতি ‘রাজনীতির সামাজিক দায়’ বিষয়ক আলোচনাটা নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের উপর্যুপরি ব্যর্থতা, দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা, ধর্ষণ, গণপিটুনিতে, বিভিন্ন বিষয়ে গুজব সৃষ্টি, দেশ ও জাতিসত্তাবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ নানাবিধ অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশের সার্বিক অবস্থার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। সম্প্রতি হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেত্রী প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নালিশ করেছেন। যা রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলেই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এমন কিছু করছে, যা প্রিয়া সাহাদের পালে হাওয়া দিচ্ছে। মূলত রাষ্ট্র অপরাধের প্রতিবিধান করতে না পারায় দেশে অপরাধপ্রবণতা এখন প্রায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ফলে বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ।

আমাদের দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি রাজনৈতিক দল দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা এবং অন্য রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভবনা খুব ক্ষীণ হয়ে আসার প্রেক্ষাপটেই ‘রাজনীতির সামাজিক দায়’ বিষয়ক কথাটা ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে। বলা হচ্ছে- ক্ষমতার বাইরে থেকেও সামাজিক কাজের মাধ্যমে দেশ ও জাতির জন্য প্রভূত কল্যাণ করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশের সংসদের বাইরের দলগুলোর এ ধরনের কোনো কর্মসূচি লক্ষ করা যায় না বলে অভিযোগ। এতে প্রতীয়মান হয়- পক্ষ বিশেষ চাচ্ছে একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা চিরস্থায়ী হোক, আর অন্য রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে সমাজ সেবামূলক কাজে মনোযোগী হয়ে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা নির্বিঘœ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করুক। মূলত একটি মহল দেশকে একদলীয় শাসনের নিগঢ়েই আবদ্ধ করতে বেশ তৎপর বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু তা বাস্তবসম্মত কি না তা-ই এখন ভেবে দেখার বিষয়।

একথা অস্বীকার করা যাবে না- ব্যক্তি বা রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে সামাজিক কাজ করতে হলে সবার আগে যা প্রয়োজন তা হলো কাজ করার পরিবেশ। মূলত কোনো সমাজ-রাষ্ট্রে গণতন্ত্র বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না থাকে তাহলে সে সমাজ সুকৃতির চর্চার জন্য মোটেই সহায়ক হয় না। বস্তুত কোনো সমাজের সুকৃতির চারা রোপণ থেকে বেড়ে ওঠার যা প্রয়োজন, তা হলো- গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সুশাসন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই।

রাজনীতি আর সমাজনীতি একে অপরের পরিপূরক হলেও উভয় ক্ষেত্রের দায়বদ্ধতার পরিসর এক ও অভিন্ন নয়। এমনকি সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি কোনো ক্ষেত্রেই শর্তহীনও বলা যাবে না। তাই রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতির সাথে সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বরূপ কী সেই বিষয়েই প্রথমে আলোচনা হওয়া দরকার। একথা বললে অত্যুক্তি হওয়ার কথা নয় যে, সামাজিক দায়বদ্ধতা হলো এক ধরনের ব্যবসায়িক শিষ্টাচার বা নীতি- যা সমাজের প্রতি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনকে ব্যবসায়ের নিয়েমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে। যে পরিবেশে বা যে সমাজে একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন গড়ে ওঠে, সেই সমাজের প্রতি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের কিছু দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানই সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিচ্ছে এবং তাদের শেয়ার মালিকদের লভ্যাংশের কিছু অংশ এই খাতে বরাদ্দ রাখছে। কিন্তু রাজনীতি কোনো ব্যবসায় নয়, বরং একটি সেবামূলক কাজ।

তাই বৃহৎ আকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে সামাজিক দায় থেকে যেভাবে সম্পৃক্ত হওয়া সম্ভব, রাজনীতির ক্ষেত্র ততটা মসৃণ নয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা আরো কণ্টকময় ও সমস্যাসঙ্কুল। সঙ্গত কারণেই রাজনীতির পাত্রমিত্রদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকলেও তাদের পরিসরটা অন্যদের তুলনায় বেশ সীমিত। বিশেষত আমাদের দেশের নেতিবাচক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। তবে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করলে সে ক্ষেত্রটা পুরোপুরি আলাদা। কারণ, কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন পক্ষেই রাষ্ট্রক্ষমতার সমান্তরাল হওয়ার সুযোগ নেই। মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতা শব্দটি পশ্চিমা বিশ্বে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সালের দিক থেকে প্রচলিত হওয়া শুরু করে। বড় বড় ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এই ধরনের দায়বদ্ধতা সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দেয়ার জন্য স্টেকহোল্ডার কথাটির প্রচলন করে। এই শব্দটির অর্থ হলো সমাজের সে সব মানুষ যারা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে প্রভাবিত হন।

এর প্রবক্তাদের মতে বড় কোম্পানিগুলো এই ধরনের দর্শন নিয়ে পরিচালিত হলে দীর্ঘ মেয়াদে তাদের প্রতিষ্ঠানে মুনাফায় পরিচালিত হয়। অপরদিকে, সমালোচকদের মতে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় তাদের প্রধান কার্যকলাপ থেকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলে এবং এতে করে ব্যবসায়ের যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়। ২০০০ সালে প্রকাশিত ম্যাকউইলিয়াম এবং সেইগেলের গবেষণাপত্রে তারা প্রায় এক হাজার শিক্ষাবিদের উদ্ধৃতি তুলে ধরে দেখান যে, সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে কিছুটা হলেও প্রভাবিত করেছে। তার মতে প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করতে গিয়ে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে তা যদি গবেষণা ও উন্নয়নে খরচ করা হতো তাহলেই বরং সমাজ এর থেকে বেশি উপকৃত হতো। তবে রাজনীতির ক্ষেত্রটা এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা।

এ কথাও ঠিক যে, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রাজনীতির এখন বাইিজ্যিকায়ন হয়েছে। আমাদের সংসদে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্বের হার বেড়ে যাওয়ার সাথে তাদের কারো কারো অন্যায় প্রভাব বিস্তারের বিষয়টিও উপেক্ষা করার মতো নয়। প্রবৃদ্ধির রাজনীতিতে রাজনীতিকদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য এখন অনেক বেশি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে আমাদের দশম জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ৫৯ শতাংশ। সুজনের হিসাবে একাদশ সংসদে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। সংসদে এবং সংসদের বাইরে বিরোধী দলে ব্যবসায়ী রাজনীতিকদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনরাই অনেকটাই এগিয়ে।

গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। আর কার্যকর গণতন্ত্র ছাড়া কোথাও এসবের অনুশীলন আশা করা যায় না। মূলত আমাদের গণতন্ত্র কার্যকারিতা হারিয়েছে বেশ আগেই। দেশে সাংবিধানিকভাবে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু থাকলেও তা এখন অনেকটাই অলঙ্কারিক হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা ধরে রাখা আর বিরোধী দলগুলোর ক্ষমতা লাভের প্রতিযোগিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে নিজস্ব শক্তি দিয়ে। আর ক্ষমতাসীনরা দেশে বিরাজনীতিকরণের জন্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করছে বলে রয়েছে জোরালো অভিযোগ।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দেশে তো এখন রাজনীতি বলেই কিছু নেই। সংসদের বাইরের রাজনৈতিক শক্তিগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিই নির্বিঘেœ পালন করতে পারছে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দেয়ার অভিযোগও আছে। মূলত বিরোধী শক্তিগুলো এখন অস্তিত্বসঙ্কটে ভুগছে। তাদের হাত-পা বেঁধে দিয়ে এখন সাঁতরাতে বলা হচ্ছে। যেহেতু এখন রাজনীতি তার কক্ষপথে নেই। তাই বিরোধী রাজনীতির কাছে ‘সামাজিক দায়’ আশা করাটা ‘অরণ্যে রোদন’ নয় কি? এরপরও কি থেমে আছে বিরোধী রাজনীতির সামাজিক তৎপরতা?

smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement