২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সমাজ সুস্থ রাখার জন্য করণীয়

-

বিশ্বব্যাপী সমাজ সুস্থ নেই। সর্বত্র অসুস্থতা বিরাজ করছে। এটা সবাই স্বীকার করবেন যে, অনৈতিকতা সমাজকে গ্রাস করছে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন। তবু আমাদেরকে চেষ্টা করে যেতে হবে। এ জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে আমাদের করণীয় কী, তা তুলে ধরছি- ১. আত্মীয়দের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। আমরা সবাই কারো-না-কারো আত্মীয়। আত্মীয়দের প্রতি দায়িত্ব পালন করা হলে প্রকৃতপক্ষে সবারই দায়িত্ব পালন করা হয়ে যায়। আমাদের উচিত, সব ন্যায়সঙ্গত কাজে আত্মীয়স্বজনকে যথাসাধ্য সাহায্য- সহযোগিতা করা। ২. প্রতিবেশীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা। আমরা সবাই কারো-না-কারো প্রতিবেশী। প্রয়োজনে প্রতিবেশীকে সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করা উচিত। প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব পালন করলে গোটা সমাজের দায়িত্ব পালন করা হয়ে যায়।

৩. ভাইবোনদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা। এটা খুবই জরুরি। বিশেষ করে বোনেরা যাতে ন্যায্য উত্তরাধিকার পায়, সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার। আল্লাহ তায়ালাই মহিলাদেরকে উত্তরাধিকার দিয়েছেন। এটা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় না হলে আল্লাহ তায়ালা তা করতেন না। মহিলাদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা গুরুতর অন্যায়। ৪. পাড়া বা মহল্লার স্থানীয় অভাবগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। নিজের গ্রামে বা মহল্লায় যেসব অভাবী মানুষ রয়েছেন, তাদেরকে সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করা আবশ্যক। সম্ভব হলে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা উচিত। আমাদের মধ্যে যারা ধনবান রয়েছেন, তারা যদি সমাজের অভাবী মানুষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তাহলে এ সমাজ থেকে অভাবী মানুষের সংখ্যা কমে যাবে। ৫. যথাসাধ্য দান করা। তাহলে দারিদ্র্যবিমোচনে সাহায্য করা হবে।

৬. পাড়া বা মহল্লার প্রবীণদের দিকে নজর রাখা। তাদের যদি ছেলেমেয়ে থাকে, তাহলে এক অবস্থা; আর যদি যোগ্য ছেলেমেয়ে না থাকে তাহলে অন্য অবস্থা। যা হোক, সর্বাবস্থায় প্রবীণদের দিকে বিশেষ নজর রাখা দরকার। ৭. শিশুদের যতœ করার পাশাপাশি ভালোবাসা। তাদেরকে আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়া। শিশুরাই জাতির আগামী দিনের কর্ণধার ও ভবিষ্যৎ। তাদের যথাযথভাবে গড়ে তোলার দিকে সর্বাধিক নজর দিতে হবে। শিশুদের নৈতিক চরিত্র গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। তাদেরকে সর্বপ্রকার অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখতে হবে। ৮. অশ্লীলতা পরিহার করা। এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা উচিত। অশ্লীলতা মানবজাতির ভয়াবহ শত্রু। তবে এটি আমাদের অনেকেই বুঝছেন না। এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করার কাজে সবার অংশগ্রহণ করা দরকার।

৯. মামলা সাধ্যমতো পরিহার করা। সহজে মামলায় না যাওয়া। আমাদের সমাজে সাধারণত অহেতুক মামলা করা হয়। এর ফলে শেষ পর্যন্ত অনেকেই দরিদ্র হয়ে যায়। সবাইকে বলতে হবে যে, মামলা সাধ্যমতো পরিহার করার চেষ্টা করা প্রয়োজন। ১০. রাগারাগি না করা। আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনের সূরা আলে ইমরানের (৩ : ১৩৪) নম্বর আয়াতে বলেছেন, তোমরা রাগ হজম করো। আল্লাহ তায়ালা জেনেশুনেই এ কথা বলেছেন। রাগ যদি প্রয়োজনীয় হতো, তাহলে আল্লাহ তায়ালা এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেন না। ১১. অন্যদেরকে যতটা সম্ভব ক্ষমা করা। আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানের ১৩৪ আয়াতে আরো বলেছেন, ‘আমরা যারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তাদের উচিত অন্যদেরকে ক্ষমা করা।’

১২. সত্য কথা বলা এবং মিথ্যা পরিহার করা। এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করার বেশি প্রয়োজন নেই। আল্লাহ তায়ালা সূরা আহজাবে বলেছেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। সঠিক কথা বলা ফরজ (৩৩ : ৭০)। ‘সঠিক কথা’ বলতে আমরা কী বুঝি, এ প্রসঙ্গে সূরা নিসার ১৩৫ আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা ইনসাফের (সুবিচার) জন্য দাঁড়িয়ে যাও। সেই সুবিচার যদি নিজের বিরুদ্ধে যায়, পিতা-মাতার বিরুদ্ধে যায়, আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে যায়, ধনীদের বিরুদ্ধে যায় (৪ : ১৩৫)।
আমরা আশা করব, আপনারা যারা এই লেখা পড়বেন, তারা সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য যা কিছু করা সম্ভব, তা সবই করার চেষ্টা করবেন।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement