১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন দৃশ্যপটের সম্ভাবনা

-

ঘটনাবহুল মধ্যপ্রাচ্যে নতুন এক দৃশ্যপট সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নতুন এই দৃশ্যপটের প্রেক্ষিত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সঙ্ঘাত-উত্তর পরিস্থিতি, ইসরাইলের সাথে চুক্তি-সমঝোতা ফিলিস্তিন নেতৃত্বের স্থগিত করা, সৌদি নেতৃত্বের পরিবর্তন এবং মিসর-লিবিয়া-সুদান এই তিন প্রতিবেশী দেশের পরিস্থিতি। ইরানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন যে সঙ্ঘাত ও মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে, তার মূল জায়গাটিতে রয়েছে ইসরাইল ও সৌদি আরব। ছয় শক্তির সাথে ইরানের যে পরমাণু চুক্তি, সেটি থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের বেরিয়ে আসার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে ইসরাইল ও সৌদি আরবের স্বার্থ।

ইসরাইল মনে করেছে, তার চার পাশের আরব প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বীকৃতি ও কূটনৈতিক সম্পর্ক এই অঞ্চলে ইসরাইলি প্রভাব ও কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করবে। এই বিবেচনা থেকে ইরানকে প্রতিপক্ষ করে ইসরাইলের সাথে সৌদি আরব ও মিসরের নেতৃত্বে বেশির ভাগ আরব দেশের একটি বিশেষ অক্ষ তৈরি হয়। এই অক্ষ আনুষ্ঠানিক রূপ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রথম পদক্ষেপ হয়ে দাঁড়ায় ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কটের সমাধান।

এই সঙ্কট সমাধানে সৌদি আরবের অপেক্ষমাণ যুবরাজ থাকাকালে আব্দুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের একটি ফর্মুলা দিয়েছিলেন। এই ফর্মুলার সাথে অসলো চুক্তির ছিল বিশেষ যোগসূত্র। ফর্মুলা অনুসারে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিন দু’টি স্বাধীন দেশ পাশাপাশি থাকার কথা পারস্পরিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ১৯৬৭ সালে যুদ্ধপূর্ব সীমানা হবে দুই রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমারেখা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত এই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ফর্মুলায় এই সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করেছেন।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আরব ইসরাইল এই শান্তি প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে শান্তি আলোচনাকে নানা অজুহাতে প্রলম্বিত করা এবং ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পুরো প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা নেন কট্টর ধারার এই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পরিবর্তে ইসরাইলের নিরাপত্তা আশ্রয়ে থাকা সেনাবাহিনীবিহীন পশ্চিম তীরের খণ্ডিত অংশে ফিলিস্তিন নামে আধা স্বাধীন একটি দেশের প্রস্তাব করেন। যার রাজধানী জেরুসালেমে থাকলেও নগরীর নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরাইলের হাতে।

ইসরাইলি নেতারা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক উপদেষ্টা জারেড কুশনার মনে করেছিলেন, ইরানের হুমকির (আধা বাস্তব; আধা কল্পিত) মুখে উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা দানের বিনিময়ে ইসরাইলি পরিকল্পনায় তাদের সমর্থন লাভ করবেন। কাতার ছাড়া উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ নীতিগতভাবে এ ব্যাপারে সম্মত হলেও দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বৈরী জনমত আর সেই সাথে তুরস্ক কাতার জর্দান কুয়েতের কিছুটা ভিন্ন অবস্থানের কারণে এসব দেশ প্রকাশ্যে মার্কিন-ইসরাইলের কথিত শতাব্দীর সেরা চুক্তিতে সমর্থন দিতে পারেনি। ওআইসির বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে মুসলিম দেশগুলো সর্বসম্মতিক্রমে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদ করে। আরব নেতৃবৃন্দের আশঙ্কা হলো, ইসরাইল-আরব সম্পর্ক নিয়ে জনমতের অবস্থা এমন যে, সরকার ফিলিস্তিনের স্বার্থ ও অবস্থানকে অস্বীকার করে ইসরাইলের সাথে কোনো সমঝোতা করতে গেলে তাতে গণবিদ্রোহের শঙ্কা থেকে যাবে।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে ইরানের বিপরীতে ইসরাইল-আরব-মার্কিন ত্রিপক্ষীয় যে সামরিক জোট হওয়ার কথা, সেটি এখন পর্যন্ত কার্যকর হতে পারেনি। ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসে এবং তেহরানের ওপর অবরোধ চূড়ান্তভাবে বৃদ্ধি করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে আরব অর্থ ও বিনিয়োগের প্রবাহ সৃষ্টি করে মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্য অর্জিত হলেও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য এখনো অনর্জিতই রয়ে গেছে।

এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে আমেরিকান নতুন ভাবনা ও কৌশলের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী নীতিনির্র্ধারকদের একটি অংশ মনে করছে, সুন্নি আরব বিশ্বে কারো একক নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব না থাকায় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন-ইসরাইলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকর সহায়তা অর্জন করা যাবে না, বরং এর পরিবর্তে ইসরাইলের সাথে ইরানের মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতায় গিয়ে বড় সুন্নি দেশগুলোর বিভাজনের পুরনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে।

এই পরিকল্পনা অনুসারে সৌদি আরবকে তিনভাবে বিভক্ত করে মক্কা মদিনা-জেদ্দা অঞ্চলকে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে তৈরি করার কথা বলা হয়েছিল সেই ২০০৬ সালে। ইয়েমেন সীমান্তের কিছু অংশকে দেশটির সাথে যুক্ত করে বৃহত্তর ইয়েমেন বানানো এবং রিয়াদ ও বাকি অংশকে মূল সৌদি আরব হিসেবে রাখার কথা বলা হয়। বাদশাহ সালমানের পরবর্তী উত্তরাধিকারের সময় এই রূপান্তর ঘটানোর ভাবনা রয়েছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে এখন। এর বাইরে চার দেশ ইরান, ইরাক, সিরিয়া, তুরস্কের কুর্দ অঞ্চল নিয়ে স্বাধীন কুর্দিস্তান গঠনের একটি পরিকল্পনাও রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে এরদোগান ও একে পার্টিকে প্রধান বাধা মনে করা হয়। পরের মেয়াদে এরদোগানের ক্ষমতায় আসা রোধ করা গেলে এ ক্ষেত্রেও সাফল্য আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরদোগানের শেকড় অবশ্য তুরস্কের অনেক গভীরে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের ওপর এবারের সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি আলোচনার ব্যাপারেও বিশেষ আগ্রহ প্রদর্শন করেন। শেষ পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও আলোচনার জন্য হাসিমুখে ইরান যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। উপসাগরীয় অঞ্চলে নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়া একটি দেশ ওমান এক ধরনের সমন্বয়ের ভূমিকা পালন করছে ইরান মার্কিন ইসরাইল গোপন সমঝোতায়। তিন দেশেরই সাথে ওমানের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কিছু দিন আগে উপসাগরীয় অঞ্চলের একমাত্র দেশ হিসেবে ওমান সফর করেন। অতি সম্প্রতি ওমানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী তেহরানে বিশেষভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। ওমান সৌদি আরবের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রাখে, যদিও কাতার অবরোধের অংশ হয়নি ওমান ও কুয়েত কোনো দেশই।

ইরান-কেন্দ্রিক মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান সঙ্কটের ব্যাপারে একটি যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠছে বলে যে ধারণা এত দিন তৈরি হয়েছিল, সেটি উপযুক্ত সমঝোতা হলে ভিন্নমুখী রূপ নিতে পারে। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য এলাকায় সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের এখন যে প্রবল দাপট লক্ষ করা যাচ্ছে, তারও অবসান ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে লিবিয়ার ত্রিপলি দখল করে পুরো দেশে জেনারেল খলিফা হাফতার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখছেন তা সফল হবে না। এখানে সৌদি আমিরাত মিসরের প্রভাবে বিপরীতে তুরস্ক কাতার আলজেরিয়া তিউনিসিয়ার প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য আসতে পারে। একই ধরনের ভারসাম্য সুদানেও প্রত্যক্ষ করা যেতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলটি এখন যে ধারায় অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তাতে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে শিগগিরই। বিশেষভাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তেহরান সফরের পর মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমঝোতা ইরানের সাথে হলে দেশটির প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যে আবারো বাড়বে। অন্য দিকে, সৌদি আরব একই সাথে মুসলিম ব্রাদারহুড ও ইরানি প্রক্সিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার যে আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছে তাতে ভাটা পড়তে পারে। সৌদি আরবে অত্যন্ত প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ও দেশটির অঘোষিত ব্রাদারহুড প্রধান সালমান আল আওদার মৃত্যুদণ্ড প্রদানের একটি আয়োজনের কথা জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এটি করা হলে তা জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের মতোই সৌদি আরবের জন্য একটি বিপর্যয়মূলক পদক্ষেপ হতে পারে।

মধ্য মেয়াদ অর্থাৎ ৫ থেকে ১০ বছর সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে যে দৃশ্যপট দেখা যেতে পারে তার কিছুটা আভাস পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের (এনআইসি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। এনআইসি প্রতি পাঁচ বছর পরপর পরবর্তী ৩০ বছরের বৈশ্বিক গতিধারা বা প্রবণতা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সম্প্রতি প্রকাশিত এনআইসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের সব প্রবণতা কার্যত ভুলপথে চলেছে। ক্রমাগত সঙ্ঘাত এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের অনুপস্থিতি এই অঞ্চলের সাম্প্রতিক একটি উজ্জ্বল দিক দারিদ্র্য হ্রাসকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এটি প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বৈদেশিক সহায়তা-নির্ভর অভিজাতদের অবস্থা উন্নীত করতে কাজে লাগছে। এমনকি তা বাজার, কর্মসংস্থান এবং মানুষের মূলধনকে বাধাগ্রস্ত করে রাষ্ট্রের সহায়তার ওপর জননির্ভরতা বাড়িয়ে তুলছে। তেলের দাম সর্বোচ্চ ধাপে ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকায় এই অঞ্চলের বেশির ভাগ সরকারকে দেশের লোকজনকে নগদ অর্থ এবং ভর্তুকি প্রদান সীমাবদ্ধ করতে হবে। আর এতে যে সামাজিক হতাশা দেখা দেবে তা প্রকাশে সোশ্যাল মিডিয়া জনসাধারণকে নতুন উপকরণ সরবরাহ করেছে, যার ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সামান্যই।’

এনআইসির এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগী সংগঠন ও শিয়া আন্দোলনসহ রক্ষণশীল ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং কুর্দিদের মতো জাতিগত ভিত্তিক সংগঠনগুলো এ অঞ্চলের অকার্যকর সরকারগুলোর প্রাথমিক বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এ ধরনের গ্রুপগুলো সাধারণভাবে রাষ্ট্রের চেয়ে ভালো সামাজিক সেবা প্রদান করে এবং তাদের রাজনীতি এমন যে তাতে জন-আকাক্সক্ষা অনুরণিত হয়। তারা সাধারণভাবে এ অঞ্চলের সুবিধাভোগী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতদের চেয়ে বেশি রক্ষণশীল এবং ধার্মিক।’

এনআইসির প্রতিবেদন অনুসারে, ‘পাল্টা কোনো পদক্ষেপ না থাকলে বর্তমান প্রবণতা এ অঞ্চলটিকে আরো বিভক্ত করবে। ইসলামী কট্টরপন্থী গোষ্ঠীর প্রভাব আরো বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অসহিষ্ণুতা এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি হুমকির কারণে অভিবাসন প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। মিসরের মতো আরব দেশগুলোতে অস্থিরতা বাড়তে পারে আর সৌদি আরবের মতো দেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে বল প্রয়োগের ওপর বেশি নির্ভরশীল হতে পারে। প্রযুক্তির উন্নয়ন, ব্যক্তির ক্ষমতায়ন, অবাধ তথ্যপ্রবাহ এবং দারিদ্র্য কমানো এর বিকল্প মডেল হতে পারে, যা একই সাথে স্থিতিশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু কিছু দেশে দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়ন ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় কর্মবাজারে আসা তরুণদের উদ্দীপ্ত করতে পারে।’

এনআইসির পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ‘ভূরাজনৈতিকভাবে, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান মানবিক সঙ্কট এবং আঞ্চলিক সঙ্ঘাত আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তি ও মানবাধিকার নীতিগুলোর অনুসরণকে আরো দুর্বল করবে। এই অঞ্চলের কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যমান ধারণা এ রকম যে, ওয়াশিংটনকে বিশ্বাস করা যায় না। ফলে তারা রাশিয়া এবং একই সাথে চীনের সাথে সম্পর্ক নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে এই ধারণা তৈরি হয়েছে, সিরিয়ায় অবাস্তবায়িত রেডলাইনগুলো থেকে, ২০১১ সালে মোবারক এবং অন্যান্য আরব নেতাদের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার থেকে, ঐতিহ্যবাহী মিত্র সুন্নি আরব ও ইসরাইলের সাথে দূরত্ব তৈরি করে ইরানের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার ধারণা থেকে আর এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুনঃভারসাম্যতায় অবহেলার অনুভূতি থেকে।’

এনআইসির পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ‘ইরান, ইসরাইল এবং সম্ভবত তুরস্কের এ অঞ্চলের অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় ক্ষমতা ও প্রভাব বেশি বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে একের সাথে অপরের মতবিরোধ থাকবে। ইরানের ক্রমবর্ধমান শক্তি, পারমাণবিক ক্ষমতা এবং আক্রমণাত্মক আচরণ ইসরাইল এবং উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে থাকবে। ইরান ও সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার সাম্প্রদায়গত প্রকৃতি অঞ্চলজুড়ে উদ্বেগগুলোকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর থিংকট্যাংক হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের এই পর্যবেক্ষণের তাৎপর্য অনেক। এর মাধ্যমে আমেরিকান ডিপ স্টেটের ভাবনাচিন্তার প্রতিফলনও ঘটে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র একটি নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এই নির্বাচনে ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করবেন। ট্রাম্প বা রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় থেকে গেলে আমেরিকান মধ্যপ্রাচ্য নীতি বর্তমান ধারায় চলমান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প জয়ী হতে না পারলে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন আসুন অথবা স্যান্ডার্স আসুন মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে আসতে পারে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন।

সেটি ঘটলে সৌদি রাজতন্ত্র অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানা ফ্যাক্টরের কারণে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। বিশেষত ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি সরকারের জন্য বৈরী পরিস্থিতির সূচনা হতে পারে। ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সমঝোতা হলে মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির প্রক্সি শক্তি অনেক বেড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইরাক-সিরিয়া ছাড়িয়ে লেবানন ইয়েমেন পর্যন্ত প্রভাব তৈরি হতে পারে ইরানের। তুরস্ক ও কাতারের সৌদি প্রতিপক্ষ বলয়ে অবস্থান এবং তুরস্ক মালয়েশিয়া পাকিস্তান ইন্দোনেশিয়া সমন্বয়ে মধ্যপন্থী সুন্নি দেশগুলোর পৃথক বলয় তৈরি হলে সুন্নি বিশ্বের নেতৃত্ব সৌদি আরব থেকে এই বলয়ের দিকে চলে যেতে পারে। এই মেরুকরণে মুসলিম ব্রাদারহুড আবারো গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা দিতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে। এর প্রভাব পড়তে পারে ফিলিস্তিন
ইস্যুতেও।

mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন সিরিয়ায় আইএস-এর হামলায় সরকার সমর্থক ২০ সেনা সদস্য নিহত ফরিদপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু জনসমর্থনহীন সরকার জনগণের আওয়াজ নির্মমভাবে দমন করে : রিজভী সরিষাবাড়ীতে স্কুলছাত্র হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি উজিরপুরে অটোরিকশায় বাসের ধাক্কা, নিহত ১

সকল