২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইরান যুদ্ধ-হরমুজ ফ্রন্ট

-

যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলার ঘোষণা দিয়েও শেষমুহূর্তে হামলা করেনি। তবে এর মিত্রদেশ ব্রিটেন যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ব্রিটিশ এলিট কমান্ডোরা পারস্য উপসাগরে অপারেশন চালাচ্ছে মর্মে খোদ ব্রিটিশ পত্রপত্রিকাই সংবাদ পরিবেশন করছে। ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্যের সাথে রেজিস্টার্ড অয়েল ট্যাংকারগুলোকে ‘নিরাপত্তা সহায়তা’র জন্য এই কমান্ডো বাহিনীকে পাঠানো হয়েছে। দ্য সান পত্রিকা বলেছে, যেসব বাণিজ্যিক জাহাজ ইরান-সংলগ্ন হরমুজ প্রণালী দিয়ে পারস্য উপসাগরে ঢুকবে বা বের হবে, সেগুলোকে দু’টি স্পেশাল বোট সার্ভিস এই সহায়তা দেবে। স্পেশাল বোট সার্ভিস বা এসবিএস ব্রিটিশ এলিট প্যারাট্রুপার রেজিমেন্টের সমকক্ষ একটি দুর্দান্ত ও ভয়ঙ্কর হিসেবে পরিচিত কমান্ডো দল। ‘টপ সিক্রেট মিশন’গুলোতেও এসবিএস সমানে কাজ করে থাকে।

এই বাহিনী এমন এক সময়ে মাঠে নামল, যখন যুক্তরাষ্ট্র-ইরান যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বব্যাপী নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। কয়েক সপ্তাহ আগে চারটি তেল ট্যাংকারে অন্তর্ঘাতমূলক আক্রমণ হয়। ঘটনাটি ঘটে আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দরে। সৌদি তেল শোধনাগারে ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলার কথাও ওই সময় প্রচারিত হয়েছে। তখন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও আমিরাত এসব কাজে ইন্ধন জোগানো বা সরাসরি অংশ নেয়ার জন্য ইরানকে দায়ী করে। ইরান জোরালো ভাষায় এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইরানকে যুদ্ধে জড়ানোর জন্য কোনো ‘তৃতীয় পক্ষ’ এসব করছে। পরে আমিরাত স্বীকার করেছে, ‘ইরান এ হামলায় জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ তবে প্রমাণ না থাকলেও অসুবিধা নেই। ইরাকেও কোনো পরমাণু বোমা ছিল না সাদ্দাম আমলে। তারপরও ইরাককে এক প্রকার শেষ করে দেয়া হয়েছে। ইরানেও পরমাণু বোমা নেই, তারপরও এখন ইরানের ‘শাস্তি’ পাওয়ার পালা।

ইরানের সাথে যুদ্ধ করার জন্য ইসরাইল দীর্ঘ সময় চেষ্টা করছে। ইসরাইল চায় যুদ্ধে আমেরিকাকে জড়াতে বা নামাতে। এই কাজে ইসরাইল শতভাগ সার্থক। ইসরাইল ট্রাম্পের মতো একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে, যিনি ইরানবিরোধী যুদ্ধে একজন অধিনায়কের মতো কাজ করে চলছেন নিজেই। মার্কিন কংগ্রেস বিষয়টি বুঝতে পেরে তার যুদ্ধ ঘোষণার বা যুদ্ধে নামার ক্ষমতা ক্ষুণœ করেছে। সাথে সাথে এ কথাও বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়ভীতি দেখালে ইরানের এটাই হবে শেষযাত্রা। রিপাবলিকান সিনেটর টম কটন বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হলে দু’টি আঘাতে ইরানকে ধ্বংস করা হবে। ‘প্রথমটিই শেষটি’; অর্থাৎ, গণহত্যাযজ্ঞ ও মহাধ্বংস। উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে রেস্ক টিলারসন বলেছিলেন, ‘আমরা চাইলে মুহূর্তেই উত্তর কোরিয়াকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারি; কিন্তু তা আমরা করব না।’

এখন সে কাজটি করার জন্য বোল্টন ও রিপাবলিকান সিনেটররা আওয়াজ তুলছেন। ইরান কখনো ইউরোপীয় কলোনি ছিল না। একচেটিয়া তামাক ব্যবসার জন্য ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান কোম্পানি ইরানে কর্তৃত্ব নিয়েছিল। অপর দিকে বর্তমান আফগানিস্তানের হেরাতের দখল নেয়ার জন্য ব্রিটেন ও রাশিয়া যুদ্ধ করেছিল। যুদ্ধে ব্রিটিশরা জয়লাভ করে। ২০১২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্রিটেনও ইরানের তেল রফতানির ওপর অবরোধ দিয়েছে। ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউরোপ না থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ব্রিটেন ও ইসরাইলের লবিতে অনেক দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাণিজ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা পদক্ষেপে ইউরোপের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ১৯৯০-৯১ সালের প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র একটি বিরাট বহুজাতীয় জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিল। ২০০৩ সালের দ্বিতীয় যুদ্ধে সেই সংখ্যা কমে কেবল ব্রিটেন ও পোল্যান্ড যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। মার্কিনপন্থী ব্রিটেন বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে কাজ করছে, ওয়াশিংটনের সরাসরি বিরোধিতায় যেতে তারা অনিচ্ছুক। উল্লেখ্য, ব্রিটেনের কারখানায় ইসরাইলের অস্ত্র তৈরি হয়ে থাকে।

ইরান বলেছে, যদি যুদ্ধ বাধে, বিশ্বে তেল ব্যবস্থাপনা বাধাগ্রস্ত হবে। ইরান ‘হরমুজ যুদ্ধ কৌশল’ প্রয়োগ করবে এবং হরমুজ প্রণালীতে সব ধরনের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেবে। ব্রিটিশরা নিশ্চিত, ইরান হরমুজ নিয়ে খেলবে এবং হরমুজ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বৈশ্বিক নানা বিপর্যয় দেখা দেবে। তাই ইরান ঘুঁটি চালার আগে ব্রিটিশরা তাদের টপ সিক্রেট টিমকে হরমুজ প্রণালীতে পাঠিয়েছে। টপ সিক্রেট অ্যাজেন্টরা ওমান সাগর ও হরমুজ প্রণালীর কাছাকাছি ‘খেলা শুরু করেছে’। কোন সময় তাদের পাঠানো হয়েছে তার দিনক্ষণ পাওয়া যায়নি। সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমিরাতের বন্দরে যে জাহাজগুলো ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে ইরানকে ফাঁসানোর জন্য, সেগুলো ব্রিটিশ কমান্ডোদের কাজের শিকার। ইরানের মারাত্মক জাহাজবিধ্বংসী মিসাইল রয়েছে, যেগুলো সমুদ্রের তীর থেকে জাহাজে ছোড়া যায়।

ইরান মিসাইল ছুড়লে গোয়েন্দা নাবিক সৈন্যদের কিছু করার থাকবে না। অন্য দিকে ব্রিটিশ এসবিএস শান্তির সময় যেকোনো অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করতে সক্ষম। যুদ্ধকৌশলে যুদ্ধকালীন অপারেশন ভিন্ন বিষয়। জানা যায়, সিক্রেট অ্যাজেন্টদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন শেষ হলে হেলিকপ্টারের সাহায্যে ট্যাংকার থেকে তাদের উঠিয়ে নিয়ে ওমান বা আমিরাতের কোনো সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি জেমস বন্ডের কোনো ফিল্মের শট বলে মনে হলেও বাস্তবে তা কতটুকু সম্পন্ন করা যাবে, বলা মুশকিল। কেননা, টপ সিক্রেট টিম খোদ ইরানের জাহাজ ছিনিয়ে নিয়েছে। সুতরাং ইরানি কমান্ডো ও মিসাইলকে ফাঁকি দিয়ে কপ্টারে বা জাহাজে করে অন্য স্থানে যাওয়া সহজ নয়। ইরানের হাতে আরো আছে রাশিয়ার শক্তিশালী এস-৩০০ মিসাইল, যেগুলো কেনা হয়েছে তিন বছর আগে।

অনেকে প্রশ্ন করেছেন, কেন অল্পসংখ্যক এসবিএস পাঠানো হলো? সিক্রেট অ্যাজেন্টের সংখ্যা এমনই হয়ে থাকে। তা ছাড়া পারস্য উপসাগরে ব্রিটিশ পতাকাবাহী ও মিত্রদেশের অনেক যুদ্ধজাহাজ অপেক্ষমাণ। আমরা আগেও দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মক কোনো কিছু শুরু করতে চাইলে ব্রিটিশরা আগেভাগে ‘লাফানো শুরু করে’। ইরাক যুদ্ধেও তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বেশি লাফালাফি করেছিলেন। পরে দেশবাসীর কাছে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি। তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। তা ছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিনয়ের জন্য প্রকাশ্যেই ইসরাইল থেকে মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিয়েছিলেন। সেই ‘অভিনেতা’র নাকি রঙিন বোতলই এখন সকাল-বিকেলের সাথী। এখন জেরেমি হান্ট কমান্ডো লেলিয়ে দিয়ে হরমুজ প্রণালী অশান্ত করে ইরানকে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের চার দিকে ব্যূহ রচনা শেষ করে ফেলেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিরাপত্তা পরামর্শদাতা জন বোল্টন ইরানে বোমা নিক্ষেপের পক্ষপাতী। তাকে যখন নিয়োগ দেয়া হয়, তখন এই কলামে ‘বোল্টনের ইরান যুদ্ধ’ কলামে বোল্টনের চিন্তাভাবনা বিষয়ে লিখেছিলাম। তিনি ইরানকে শেষ করার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন। ৪০ বছর আগে ইরানের স্বৈরশাসক শাহকে বের করে দেয়া এবং মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বন্দী করে রাখার অবমাননাকর স্মৃতি বোল্টনকে তাড়িত করছে আজো। ইরান শক্তি অর্জন করলে বোল্টনের প্রিয় ইসরাইল বিপদগ্রস্ত হবে- এটা তিনি সইতে পারছেন না। ট্রাম্প এক পা পেছনে সরলে নেতানিয়াহু, বোল্টন ও পম্পেও তাকে টেনে সামনে নিয়ে আসছেন। ট্রাম্পের নিজের লোকজনই তাকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না।

হরমুজ প্রণালী থেকে ব্রিটিশ পতাকাবাহী তেলের ট্যাংকার ইরান আটক করার পর থেকে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। জিব্রাল্টারে ব্রিটিশ সৈন্যদের দ্বারা ইরানের সুপার ট্যাংকার জব্দ করার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইরান ব্রিটিশ পতাকাবাহী তেলের ট্যাংকার ‘স্টেনা ইমপেরো’কে আটক করে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে অথবা পুরোদমে যুদ্ধ শুরু হলে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়াসহ অনেক দেশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা হলে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তা ছাড়া, পৃথিবীর মোট তেলের মজুদের এক-পঞ্চমাংশ এবং মোট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের এক-চতুর্থাংশের সাথে বিশ্বের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে।

ইরানের আইআরজিসি অর্থাৎ ইসলামিক রেভ্যালিউশনারি গার্ড কোর জানিয়েছে, জব্দকৃত তেল ট্যাংকারটি তিনটি আইন লঙ্ঘন করেছে। এটি আন্তর্জাতিক পানিসীমা থেকে ইরানের পানিসীমায় ঢুকে পড়েছিল, নিজেকে শনাক্তকরণের যন্ত্রপাতি বন্ধ করে রেখেছিল এবং বারবার সতর্ক করা হলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি। এখন ব্রিটেনের পতাকাবাহী সব জাহাজকে ব্রিটেন নিরাপত্তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সব জাহাজকে নিরাপত্তা দেয়ার সামর্থ্য ব্রিটেনের নেই। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট তাই চোখে শর্ষেফুল দেখেছেন। লক্ষণীয়, ইরানি সুপার ট্যাংকার জব্দ করার মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ব্রিটেনের ট্যাংকার জব্দ করল ইরান।

জাহাজ হাতছাড়া হওয়ার পর ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকেছে। যে ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার জন্য ব্রেক্সিট ধাক্কায় দুই প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় নিতে হলো, তারাই এখন পানি ঘোলা করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তা চাইছে। জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইউরোপীয় সুরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য লবিং করছে ব্রিটেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট তেলবাহী ট্যাংকার আটকের ঘটনাকে ইরানের ‘রাষ্ট্রীয় দস্যুপনা’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন। উপসাগরীয় অঞ্চলে ব্রিটেনের আরেকটি যুদ্ধজাহাজ দু-এক দিনের মধ্যে পৌঁছবে। উল্লেখ্য, ভারতীয় দু’টি রণতরীও পারস্য উপসাগরে অপেক্ষা করছে। এখনো এগুলোর কোনো মোটিভ জানা যায়নি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালাক্কা প্রণালী থেকে শুরু করে পশ্চিমে আফ্রিকার জলরাশি পর্যন্ত ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলো বিচরণ করে থাকে। ব্রিটেনের দু’টি যুদ্ধজাহাজ পারস্য উপসাগরে রয়েছে, সেখানে ব্রিটিশ রয়েল নেভির আরো একটি যুদ্ধজাহাজ যুক্ত হচ্ছে।

এসব কিছুর মূল চালক ওয়াশিংটন অর্থনৈতিক যুদ্ধের পাশাপাশি রাজনৈতিক যুদ্ধেও ইরানকে পরাস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ২০১৭ সালের ‘জাতীয় নিরাপত্তা সনদ’ অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের বিরুদ্ধে জোট গঠন এবং এ অঞ্চলে ইরানের নীতিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কথিত হুমকি মোকাবেলার নামে এবং সন্ত্রাসবাদের প্রতি ইরানের সমর্থনের অভিযোগ তুলে সামরিক খাতের জন্য নজিরবিহীন বাজেট আদায়ের চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প প্রশাসন পেন্টাগনের জন্য ৭৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছে। আমেরিকার ইতিহাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় অঙ্কের বরাদ্দ।

ইরানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক সাইয়্যেদ আহমাদ হোসেইনি বলেছেন, পশ্চিম এশিয়াসহ সারা বিশ্বে আমেরিকার আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ফলে ইরান আজ ওয়াশিংটনের জন্য প্রধান হুমকি ও দুশ্চিন্তার কারণ। যুক্তরাষ্ট্র আরো সেনা সদস্য ও অস্ত্রসম্ভার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে যাতে ইরানিদের কার্যক্রম মনিটর করা সহজ হয়। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, পারস্য উপসাগরের অংশবিশেষ ও হরমুজ প্রণালী বন্ধ না করেও ইরান লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে।

ব্রিটিশ ও আমেরিকার কোম্পানিগুলো পারস্য সাগরে বিনা বাধায় তেলের খনি খুঁজে পেতে চায়। এ ক্ষেত্রে ইরানই একমাত্র বাধা। সিআইএ এবং এম১৬ ১৯৫৩ সালে ইরানে ক্যুর সহায়তা করেছিল, ১৯৭৯ সালে ইরানি জনগণ শাহেন শাহকে উৎখাত করেছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী প্রভাবের পতন ঘটে, ব্রিটিশের সূর্যও অস্ত যায়। এখন ব্রিটিশদের অর্থকড়ি নেই বিধায় দিশাহারা। তাই নিজের শক্তি না থাকলেও অপরের লেজুড়বৃত্তি করে টিকে থাকার কৌশল অবলম্বন করছে। কেউ আশ্চর্য হবে না যদি ব্রিটিশ সমরবিদেরা পারস্য ফ্রন্টের কোনো কৌশলগত এলাকায় সঙ্ঘাত বাধানোর উসকানি দেন। আরো সঙ্ঘাত এড়ানোর জন্য ইরানি ট্যাংকার ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে ব্রিটেনের ট্যাংকার মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তবে ‘ব্রিটিশ ট্রাম্প’ খ্যাত, ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কতটুকু সাড়া দেন, তা বলা যাচ্ছে না।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement