২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুধে ক্ষতিকর উপাদান জনমনে আতঙ্ক

দুধ - ছবি : সংগ্রহ

‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যে কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর সন্তানের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। আবহমান কাল ধরে বাঙালি জীবনপরিক্রমায় শিশু, যুবক, প্রৌঢ় ও বৃদ্ধ সবাই দুধের সাথে পরিচিত। স্বাস্থ্য রক্ষার মূল উপাদান দুধ। পুষ্টিমানের দিক দিয়ে দুধের শ্রেষ্ঠত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। গরুর দুধে রয়েছে প্রোটিন, ফ্যাট, শর্করা, ক্যালসিয়াম, অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, আয়রন ও খাদ্যশক্তি। দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ ও ল্যাকটিক এসিড, যা মানুষের দৈহিক গঠন, মেধার বিকাশ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
সে দুধে যদি সিসা, ক্রোমিয়াম, ব্যাকটেরিয়া, ডিটারজেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিকের মতো ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়, তা হলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতি সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশু, প্রসূতি ও বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

গত ৮ মে বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দাখিল করা এক প্রতিবেদনে দুধে ক্ষতিকর অণুজীব পাওয়ার ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ বাজারের তরল দুধের ৯৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯৩টিতেই সিসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে। এ ছাড়া প্যাকেটজাত ৩১টি দুধের মধ্যেও ১৮টিতে ক্ষতিকর উপাদান এবং কিছু কিছু দুধের নমুনায় টেট্রাসাইক্লিন ও সিপ্রোফ্লক্সাসিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।

ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার কল্যাণে আমরা জেনে গেছি, গত ২৫ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের গবেষকেরা বাজার থেকে দুধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে তারা ডিটার্জেন্ট ও তিন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন। তবে সেদিনই বিএসটিআই হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, তাদের পরীক্ষায় দুধে কোনো ক্ষতিকর উপাদান মেলেনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্যসাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকসহ একদল গবেষক আবার পাস্তুরিত ও অপাস্তুরিত দুধের ১০টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জুলাই জানান, সবগুলোতেই অর্থাৎ ১০টি নমুনায় মানুষের জন্য ব্যবহার হয় এমন চার ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও লেভোফ্লক্সাসিরেন উপস্থিতি রয়েছে। তাদের পরীক্ষা করা তিনটি নমুনায় চারটি অ্যান্টিবায়োটিক ও ছয়টি নমুনায় তিনটি অ্যান্টিবায়োটিক ও একটি নমুনায় দু’টি অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার মিল্কভিটা, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, প্রাণ, ঈগলু, ঈগলু চকলেট এবং ঈগলু ম্যাঙ্গো দুধের নমুনার ওপর গবেষণা চালায়। এ ছাড়া রাজধানীর পলাশী, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর বাজার থেকে সংগ্রহ করা খোলা দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে। আগের পরীক্ষায় অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন ছিল না। এবার ওই দুই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নতুন করে মিলেছে।

গত ২৫ জুন সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, দুধ ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য পরীক্ষার রিপোর্ট উপস্থাপনের সময় জানিয়েছিলাম, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার অনুভব থেকেই আমাদের সীমিত সামর্থ্যে আমরা এই পরীক্ষাটি মাঝে মধ্যে করার চেষ্টা করব। অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি মানবদেহে কী প্রভাব ফেলবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় আমরা বলে থাকি, অ্যান্টিবায়োটিক এখন আর কাজ করছে না বা অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। কারণ শরীরের মধ্যে অলরেডি অ্যান্টিবায়োটিক ঢুকে আছে। এ কারণে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ আমরা যখন খাই তখন আর কাজ করে না।’

জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অধ্যাপক ফারুক এই ফলাফল প্রকাশ করেন। জনগণকে সচেতন করা ও আসন্ন বিপদ থেকে জাতিকে রক্ষা করার নৈতিক ও মানবিক তাগিদ থেকে এই গবেষণা। এ জন্য সরকারের অনুদান রয়েছে। টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণা ল্যাব অত্যন্ত উন্নত এবং কোনো কোম্পানির সাথে যুক্ত নন, এমন প্রফেসর দিয়ে গবেষণা করা হয়, যাতে শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। সরকার যদি মনে করে, এই পরীক্ষা ও গবেষণা যথেষ্ট নয়, তাহলে বিভিন্ন দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উন্নত ল্যাব রয়েছে, সেখানে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠাতে পারে।

দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নির্ণয়ের মতো কোনো প্যারামিটার বা প্রযুক্তি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) নেই। ১৭ বছর আগের মানদণ্ড ধরে তারা কাজ করছেন। বিএসটিআইয়ের দায়িত্বশীলেরা বলছেন, সংস্থাটি কেবল পাস্তুরিত দুধের আমিষ, চর্বি, ল্যাকটিক এসিড, কলিফর্ম ও ঘনত্বের স্তর পরীক্ষা করে। দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও কীটনাশক আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয় না। বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক সংবাদকর্মীদের জানান, বিএসটিআই কোনো গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান নয়, এটা মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান। তরল দুধের মান পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের বিডিএসে যেহেতু অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই, তাই আমরা এই পরীক্ষা করি না, এই পর্যন্ত করিনি।

দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক ও ক্ষতিকর উপাদান নিয়ে গবেষণার ফলাফল মিডিয়ায় প্রকাশ করায় বিভিন্ন মহল থেকে অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্য, হুমকি ও অন্যায়ভাবে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। অধ্যাপক ফারুককে হুমকি দেয়ার প্রতিবাদে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ শিক্ষক। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অনুদানের সাহায্যে অধ্যাপক ফারুক বিভিন্ন কোম্পানির বাজারজাত করা দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার দাবি করেছেন। জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক এই ঘটনাটি প্রচারে আসা মাত্রই সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এবং সরকারি আমলাদের কেউ কেউ অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভাষায় অধ্যাপক ফারুককে আক্রমণ করছেন এবং চাপ প্রয়োগ করছেন বলে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। এরই মধ্যে ফার্মেসি অনুষদভুক্ত চারটি বিভাগের চেয়ারম্যান এই গবেষণার দায়ভার থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এ অবস্থায় অধ্যাপক ফারুকের মতো আমরাও বিপন্ন বোধ করছি।

বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো গবেষণার মান ও ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন থাকলে যথার্থ উপায় হচ্ছে- বৈজ্ঞানিকভাবেই সেই গবেষণার ফলকে ভুল প্রমাণ করতে আরেকটি গবেষণা ও উপযুক্ত পদ্ধতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা। অধ্যাপক ফারুকের গবেষণার ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থাকলে সরকারি কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আরো গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুধের মান নিয়ে জনমনে সন্দেহের অবসান ঘটাতে পারত। তা না করে অধ্যাপক ফারুককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে জনপ্রতিনিধি, সরকারি আমলা ও বিভিন্ন কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যে আচরণ করছেন, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার পরিবেশের জন্য এক বিরাট হুমকি।

বিএসটিআই দুধের মান নির্ণয়ে ১৭ বছর আগে যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছিল তা দুধের মান নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নির্ণয়ের মতো কোনো পদ্ধতি বা উন্নত প্যারামিটার বিএসটিআইয়ের নেই। এরকম একটি পরিস্থিতিতে ১৪ জুলাই হাইকোর্ট ১৪টি কোম্পানির প্রস্তুতকৃত দুধের নমুনা পৃথক চারটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মনে করেন, একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিতর্কের সমাধানসূত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমেই খুঁজতে হবে, এটাই সভ্য দেশের রীতি। তা না করে, গবেষণার ফল প্রকাশকে নিয়ে যে অনভিপ্রেত ঘটনাগুলো ঘটানো হলো, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো আত্মমর্যাদাবান শিক্ষক ও গবেষকদের সত্যিকার অর্থেই অসম্মানিত ও বিপন্ন করেছে।

দেশে দুধের যে চাহিদা রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল। দুধের চাহিদা রয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ টন। গত পাঁচ বছরে দুধ উৎপাদনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯৪ লাখ টন। বিএলআরআইয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয়, তার মাত্র সাত শতাংশ বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হয়ে বাজারে আসে। অবশিষ্ট ৯৩ শতাংশ উৎপাদিত দুধ মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বাজারে বিক্রি করা হয়। বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ ১৮টি পাস্তুরিত দুধের জন্য লাইসেন্স দিয়েছেন। অথচ ৩১টি কোম্পানি পাস্তুরিত দুধ বিপণন করে থাকে। দেশে ১৪টি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানি প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে থাকে। বাজার থেকে দুধ সংগ্রহে শীর্ষে রয়েছে সমবায় অধিদফতরের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড (মিল্ক ভিটা)। এর পরই রয়েছে ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজের আড়ং, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের প্রাণ ডেইরি। এ ছাড়া আকিজ গ্রুপ, রংপুর ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড, আফতাব ডেইরি, ইবনে সিনা, আমেরিকান ডেইরি ও আবুল মোনেম গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দুধ সংগ্রহ ও বাজারজাত করে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক রায়হান হাবিব বলেন, এখনো পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন দুধ পাচ্ছি না। দুধে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি। আন্তর্জাতিক নিয়ম হলো, প্রতি মিলি দুধে সর্বোচ্চ দুই লাখ ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারবে। বাংলাদেশে প্রতি মিলি দুধে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ২০ লাখের বেশি। এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

বাজার থেকে খামারির কাছ থেকে যে দুধ সংগ্রহ করা হয় তা মানসম্পন্ন নয়। অনেক সময় ভেজাল দুধও বাজারে চলে আসে। খামারিরা গরুকে রোগমুক্ত রাখার জন্য বিভিন্ন ওষুধ বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকে। অথচ অ্যান্টিবায়োটিক কোনো প্রতিষেধক নয়। পশু রোগাক্রান্ত হলে পশুচিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলো নিয়ম। কিন্তু খামারিরা এই নিয়ম মানেন না। ফলে পশুর দেহ থেকে পাস্তুরিত দুধের মাধ্যমে মানবদেহে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রমিত হচ্ছে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। পৃথিবীতে অ্যান্টিবায়োটিক আছে শতাধিক।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসান সাঈদ বলেন, কোনোভাবেই মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যাবে না। কিন্তু কোনো কোনো অসাধু ওষুধ কোম্পানি ও দুর্নীতিবাজ প্রাণিচিকিৎসক মানুষের চিকিৎসায় নির্দেশিত অ্যান্টিবায়োটিকের অনেকগুলোই অতি মুনাফার লোভে ও নিয়ম বিরুদ্ধভাবে প্রাণিচিকিৎসায় ব্যবহার করছেন। এ ছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী প্রাণীর খাবার, পোলট্রি ফিড ও ফিশ-ফিডে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে দিচ্ছে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি বা মাছের কোনো রোগ না হওয়ার আশায়। কোনো রোগ না থাকা সত্ত্বেও এসব প্রাণিদেহে অ্যান্টিবায়োটিক ঢুকার ফলে সেগুলো অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স তৈরি করছে। এসব প্রাণীর গোশত, দুধ ইত্যাদির মাধ্যমে এই অ্যান্টিবায়োটিক মানবদেহে প্রবেশ করছে এবং ওই প্রাণীর মতোই মানবদেহেও অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স তৈরি করছে। আর এই অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স কী ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী ব্যাপার সেটি তো ইতোমধ্যে আমাদের জানা হয়েছে।

প্যাকেটজাত দুধ নিয়ে জনমনে যে উদ্বেগ ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে, তা নিরসনকল্পে মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের কর্তব্য হলো জনস্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত এসব বিষয়ে আরো গবেষণাকে উৎসাহিত করা এবং হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক বাজারে প্রাপ্ত পাস্তুরিত দুধের নমুনা মানসম্পন্ন ও স্বীকৃত ল্যাবে পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া। পরীক্ষায় যদি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক অণুজীব পাওয়া যায় তাহলে এর প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক,
ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম

 


আরো সংবাদ



premium cement