২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পরিবর্তন আসন্ন?

- ফাইল ছবি

শ্রীলঙ্কা ২০১৯ সালেই একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে চলে আসবে বলে মনে হচ্ছে। এর মধ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা আগামী ৭ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা করেছেন। আবার তিনি এও বলেছেন, তার দেশের জনগণ আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে একটি নতুন সরকার পেতে যাচ্ছে। ‘সৎ রাজনীতিকদের’ নিয়ে একটি ‘দেশপ্রেমিক’ সরকার গঠনের বিষয়টি জনগণকে নিশ্চিত করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

প্রাদেশিক নির্বাচন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও সংসদীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে প্রাদেশিক নির্বাচনের স্বাভাবিক সময় বেশ আগেই পেরিয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে হবে আগামী ৭ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যে। সংসদ নির্বাচনের স্বাভাবিক সময় আরো এক বছর পর। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার কথায় সেই সংসদেও আগাম নির্বাচনের প্রতি ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে বলে মনে হয়।

মেয়াদপূর্তির আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে ২০১৯ সালের শুরুতেই তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট সংসদ ভাঙা এবং নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান দুটোই বাতিল করে দিয়েছেন। গত সপ্তাহে বিক্রমাসিংহের সরকারের প্রতি অনাস্থা এনে সংসদে উত্থাপিত এক প্রস্তাবে ভোটাভুটি হয়েছে। সেখানে বিক্রমাসিংহের সরকার টিকে গেছে। এ অবস্থায় কিভাবে আবার পাঁচ মাসের মধ্যে সরকার গঠন হবে সেটি নিশ্চিত নয়। অবশ্য প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা চাইছেন তার নিজের ব্যাপারে একটি অবস্থান নিশ্চিত করতে। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের নতুন দল শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) সাথে বোঝাপড়া করে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার আকাক্সক্ষা পোষণ করেন। কিন্তু এসএলপিপি প্রধান মাহিন্দ রাজাপাকসের ভাই গোতাভায়া রাজাপাকসে নতুন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শ্রীলঙ্কার সংসদে এখনো ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) সরকারের প্রতি আস্থা থাকলেও জনমতের অবস্থা দলটির পক্ষে বলে মনে হয় না। এ কারণে ইউএনপি এসএলপিপির কাছে হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক দিন ধরে প্রাদেশিক নির্বাচন ঝুলিয়ে রেখেছে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যাপক জয় পায় এসএলপিপি। তারা প্রাদেশিক নির্বাচনেও একই ধরনের রেকর্ড জয় পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রাদেশিক নির্বাচন শিগগিরই হবে এমন কোনো নিশ্চিত আভাস নেই।

নানা কারণে প্রাদেশিক নির্বাচনের চেয়েও রাজনৈতিক আলোচনা বেশি হচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে। এই নির্বাচন চলতি বছরের ৭ ডিসেম্বর হবে বলে সিরিসেনা জানিয়েছেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এর আগে পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজনের উপায় খুঁজছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পার্লামেন্ট নির্বাচন হলে তা বিজয়ীর শক্তি বাড়াবে এবং তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করছেন। এ ছাড়া সংসদ নির্বাচন আগে হলে সেখানে সিরিসেনা ও রাজাপাকসের দলের মধ্যে সমঝোতা সহজ হবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আগে হলে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কারণে এই ঐক্যের সম্ভাবনা কমে যাবে।

বর্তমান ইউএনপি সরকারের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ায় তাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা পরবর্তী সব নির্বাচনেই কম। কিন্তু কিভাবে সিরিসেনা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবেন সেটি বড় প্রশ্ন। প্রেসিডেন্ট সংসদের আস্থা ভোটে হেরে না গেলে বিক্রমাসিংহের সরকারকে প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত করতে পারবেন বলে মনে হয় না। এটি করলে আবারো সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই হতে পারে পরিবর্তনের নিয়ামক।

আর সংসদ নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলে সিরিসেনার এসএলএফপি ও রাজাপাকসের এসএলপিপির মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, সিরিসেনাকে নতুন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে রাজাপাকসে মেনে নেবেন বলে মনে হয় না। আর রাজাপাকসের দলের সমর্থন না নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিরিসেনা এককভাবে লড়বেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। তার দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টিও (এসএলএফপি) এখন বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই দলের অনেকে কৌশলে এসএলপিপি’কে সমর্থন দিচ্ছেন।

পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মাহিন্দর নেতৃত্বাধীন এসএলএফপি থেকে আলাদা হয়ে সিরিসেনা রানিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রন্টের (ইউএনএফ) প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছিলেন। তখন নির্বাচনে হেরে গিয়ে মাহিন্দ এসএলএফপির নেতৃত্ব সিরিসেনার হাতে তুলে দেন এবং পরে নিজের দল এসএলপিপি গঠন করেন। নানা হিসাব-নিকাশে সিরিসেনা ও মাহিন্দ আবারো ঘনিষ্ঠ হন। গত বছর অক্টোবরে বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে মাহিন্দকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন সিরিসেনা। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে সিরিসেনার উদ্যোগটি টেকেনি।

সিরিসেনা ক্ষমতায় থাকার জন্য যাই করুন না কেন, তাতে এসএলপিপি শক্তিশালী হবে। আর দলটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারেন সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব ও মাহিন্দ রাজাপাকসের ভাই গোতাভায়া রাজাপাকসে। সিরিসেনার এসএলএফপি ১১ আগস্টের আগেই মাহিন্দর এসএলপিপির সাথে একটি জোট গঠনের বিষয় চূড়ান্ত করে ফেলতে চায়। ওই দিন এসএলপিপি তার প্রথম বার্ষিক কনভেনশনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। তবে মনে হচ্ছে, কোনো রাজনৈতিক জোট গঠিত হলেও সিরিসেনাকে ছাড় দিতে রাজি নয় এসএলপিপি। এই কনভেনশনে এসএলপিপির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন মাহিন্দ রাজাপাকসে।

এপ্রিলের শেষ দিকে মাহিন্দ রাজাপাকসের ভাই গোতাভায়া রাজাপাকসে ঘোষণা করেন, তিনি ২০১৯ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টের মতে, গোতাভায়া রাজাপাকসে এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে পারেন। গোতাভায়া স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে প্রায় তিন দশক ধরে যুদ্ধরত তামিল সংগঠন লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলমকে (এলটিটিই) পরাজিত করার জন্য সুপরিচিত। রাজাপাকসেকে সিংহলি জাতীয়তাবাদী বলে মনে করা হয়, যারা জনসাধারণের অনগ্রসর শ্রেণীকে বিশেষভাবে সমর্থন করে।

১৯৯১ সালে অবসর গ্রহণের আগে গোতাভায়া রাজপাকসে শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনীতে ২১ বছর চাকরি করেন এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। ২০০৫ সালে তিনি ভাই প্রেসিডেন্ট মাহিন্দর অধীনে প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য রাজধানী কলম্বোতে ফিরে আসেন। তিনি দেশের উত্তর ও পূর্বাংশে গৃহযুদ্ধের একটি নিষ্ঠুর সময়ের তত্ত্বাবধান করেছিলেন। এই সময়ে তামিল বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সামরিক কর্তৃপক্ষের অনেক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার অভিযোগ রয়েছে।

রাজাপাকসে তার গৃহযুদ্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্তকারী ভূমিকায় সিংহলি বৌদ্ধদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজন বিস্তৃত থাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো রাজপাকসেকে কম সমর্থন করে। হিন্দু তামিল সম্প্রদায়ের পাশাপাশি মুসলমান (যারা বেশির ভাগ তামিল জাতিগত, কিন্তু একটি স্বতন্ত্র সম্প্রদায় গঠন করে) এবং খ্রিষ্টানরা সংখ্যালঘুদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

২১ এপ্রিল ইস্টার সানডের বোমা হামলা দেশের নিরাপত্তা পরিষেবায় উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা প্রকাশ করে। প্রশাসনের কার্যকারিতা এবং নির্বাহী ও আইন পরিষদের মধ্যে স্থায়ী উত্তেজনা সৃষ্টির কারণে দেশটিতে বিরোধী ক্ষমতার মনোভাব বেশি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাজাপাকসের কর্তৃত্ববাদী ব্যক্তিত্ব ও সন্ত্রাসবাদের ওপর আগ্রাসী মনোভাব তার পক্ষে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন সৃষ্টি করতে পারে।

অনেকের আশঙ্কা, গোতাভায়া জয়ী হলে সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সিংহলি জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণে জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনা থেকে উদ্ভূত সামাজিক অস্থিরতা ইতোমধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা পরিষেবাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হলেও রাজাপাকসের প্রশাসন গৃহযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য সরকারি প্রচেষ্টা বন্ধ করবে। এটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ককে আরো দুর্বল করতে পারে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গোতাভায়া রাজাপাকসের বিরুদ্ধে এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। তিনি নির্বাচিত হলে, শ্রীলঙ্কাকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সে দেশে ভ্রমণে এসব মামলা বাধা হতে পারে। শ্রীলঙ্কার তামিল যুদ্ধের চূড়ান্ত বছরগুলোতে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করার জন্য জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে চাপ বাড়তে পারে। যদিও রাশিয়া ও চীন উভয়ই এ দিক থেকে জাতিসঙ্ঘের কোনো সরকারি পদক্ষেপকে বাধা দেবে।

গোতাভায়া রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট হলে চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়তে পারে। তার ভাইয়ের প্রশাসন বিভিন্ন উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে চীনা ঋণ গ্রহণ করে। ফলস্বরূপ, ২০১৭ সালের শেষের দিকে দেশটিকে একটি ঋণ পুনর্গঠন চুক্তিতে বাধ্য হতে হয় এবং একটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে হাম্বানতোটার বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হয়। গোতাভায়া রাজাপাকসে যদি তার ভাইয়ের মতো একই পথ অনুসরণ করতে থাকেন, তাহলে দেশে ঋণের জাল নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ পুনরুজ্জীবিত হবে। সরকারি ঋণ ২০১৮ সালে জিডিপির ৭৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি ঋণের যেকোনো উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি শ্রীলঙ্কার ব্যালান্স অব পেমেন্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পরিবর্তনের এই দ্বারপ্রান্তে এসে দেশটিতে প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো যার যার মতো করে সক্রিয় হচ্ছে। দৃশ্যত ভারত-মার্কিন বলয় বিক্রমাসিংহের সরকারকে সমর্থন করছে। আর চীনের পক্ষপাতিত্ব সিরিসেনা-রাজাপাকসের প্রতি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

সফররত মার্কিন সেনা সদস্যদের বিষয়ে স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস এগ্রিমেন্ট (সোফা) নিয়ে ওয়াশিংটনের সাথে সম্প্রতি কলম্বোর আলোচনা হয়েছে। এই চুক্তি শ্রীলঙ্কার সার্বভৌমত্বকে খাটো করবে বলে প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারিকে পাত্তা দেননি প্রধানমন্ত্রী। সিরিসেনা জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এমন কোনো সামরিক সহযোগিতা চুক্তি করবেন না, যা দেশের জন্য অনুপযুক্ত। অন্য দিকে বিক্রমাসিংহে সংসদে বলেন, সোফা কোনো সামরিক চুক্তি নয়। এটা হলো মার্কিন সেনারা যদি এ দেশে আসে তাহলে তারা কি অধিকার ও সুবিধা ভোগ করবে সে ব্যাপারে চুক্তি। সোফা হলো শান্তিকালীন চুক্তি, এতে যুদ্ধের নিয়মকানুন, সশস্ত্র সঙ্ঘাতের আইন বা সমুদ্রের আইন সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। এতে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম, তৎপরতা ও মিশনেরও অনুমতি দেয়া হয়নি।

ভারত মহাসাগরে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত শিপিং লাইনের পাশে শ্রীলঙ্কার অবস্থান। চীন কয়েক বছর ধরে এ দেশটিতে বড় বিনিয়োগকারী, বন্দর ও মহাসড়ক নির্মাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। চীনের এই ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিরোধ করতে চাচ্ছে পাশের দেশ ভারত। তার সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান যোগ দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আলাইনা টেপলিজ এই দ্বীপদেশটিতে মার্কিন প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপনে কোনো পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।

কৌশলগত পররাষ্ট্র সম্পর্কের এই টানাপড়েনের মধ্যেই একটি চীনা যুদ্ধজাহাজ কলম্বোতে নোঙর করেছে। চীন ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এটাকে দেখা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা বলেছেন, তিনি তার সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এমন কোনো সামরিক চুক্তি করতে দেবেন না, যার মাধ্যমে দ্বীপে বন্দর সুবিধা পাবে যুক্তরাষ্ট্র। তার ওই মন্তব্যের দুই দিন পরে চীনা ফ্রিগেট কলম্বোতে আসে। ০৫৩ শ্রেণীর এ ফ্রিগেটটি পিএলএ নেভিতে কমিশনপ্রাপ্ত হয় ১৯৯৪ সালে। গত মাসে সাংহাই ডকইয়ার্ডে জাহাজটিকে শ্রীলঙ্কান নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়। ২৩০০ টনের এই জাহাজটি শ্রীলঙ্কার আশপাশে টহল ও অনুসন্ধানী মিশনে যোগ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্বীপরাষ্ট্রটিতে প্রভাব বৃদ্ধির নমুনা হিসেবে এ জাহাজটি উপহার দিয়েছে বেইজিং। শ্রীলঙ্কার অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্য সহযোগী হিসেবে চীন একই সাথে দেশটিতে অবকাঠামো প্রকল্পের সবচেয়ে বড় অর্থায়নকারী হিসেবে ভূমিকা রাখছে।

ভারত মহাসাগরে প্রভাব বিস্তারের ব্যাপারে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। গত বছর ওয়াশিংটন শ্রীলঙ্কার নৌ-নিরাপত্তার উন্নয়নের জন্য ‘ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং’ হিসেবে ৩৯ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দেয়। অন্য দিকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে দ্বীপরাষ্ট্রটির সাথে কৌশলগত সম্পর্কের উন্নয়ন করে চীন। বহু বিলিয়ন ডলারের এই বিনিয়োগ ও অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে চীনের সাথে ১২০টিরও বেশি দেশের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের অফিসের সূত্র উদ্ধৃত করে জেনস ডিফেন্স উইকলি জানিয়েছে, মে মাসে সিরিসেনা যে বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন, সেখানে নিরাপত্তা প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াও জঙ্গিবিরোধী নজরদারি সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কলম্বোকে ১৪ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্রস্তাব দিয়েছে চীন। ২১ এপ্রিলের ইস্টার হামলার পর ওই সফরে যান সিরিসেনা।

শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক পরিবর্তনের যে পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, তাতে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় চীনা পক্ষ অধিক সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অবশ্য এ অবস্থা পাল্টানোর জন্য অন্তরালে নানা তৎপরতা চলতে পারে। ইস্টার সানডের হামলাকে অনেকে এর সাথে যুক্ত বলে মনে করেন। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্রিক খেলার পরিসমাপ্তি ঘটেছে বলে মনে হয়। ফলে ভারত-মার্কিন অক্ষ এ অঞ্চলে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না।

mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement

সকল