১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আসামের ‘মিঞা কবিতা’ প্রতিরোধের নতুন আগুন

মিঞা কবি রেহনা সুলতানা - ছবি : সংগ্রহ

সম্প্রতি বরিশালে এক কবিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি স্থানীয় খ্রিষ্টান পাদ্রীর অগ্রহণযোগ্য কাজের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার। বহু যুগ ধরে বহু দেশে এই হাতিয়ার ব্যবহার করে প্রতিবাদী কণ্ঠ চেপে ধরা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। গত এপ্রিলে কলকাতার বিশিষ্ট তরুণ কবি শ্রীজাত-এর বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ ওঠে।

একই ঘটনা এই মুহূর্তে ঘটে চলেছে ভারতের আসামে। সেখানে বাঙালি মুসলমানদের নাগরিকত্ব বাতিল করার প্রক্রিয়া চলছে। এতে করে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হতে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে সেখানে বসবাস করে আসা ৪০ লাখ মুসলমান। গুরুতর এই নাগরিক সমস্যা নিয়ে কবিতা লেখার দায়ে এবার অভিযুক্ত হয়েছেন ১০ বাঙালি কবি। এদের প্রায় সবাই বাঙালি বংশোদ্ভূত মুসলিম। অভিযোগকারী প্রণবজিৎ দলুই নামের অসমীয় ব্যক্তি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য হলো দুনিয়ার কাছে আসামের জনগণকে জাতিবিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করা যা অসমিয়া মানুষের কাছে অত্যন্ত অমঙ্গলজনক এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও ঐক্যবদ্ধ সামাজিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

অভিযুক্ত কবিদের কিছু পরিচয় জানা গেল আসামবাসী একজন বাঙালি চিন্তকের ফেসবুকে দেয়া পোস্ট থেকে। এই কবিরা হলেন, “১. ড. হাফিজ আহমেদ। চর-চাপরি সাহিত্য পরিষদের সভাপতি। ‘লখিপুরর পরা বিটিএডি লৈ’ নামে বই লিখেছেন, যেখানে আসামে সংখ্যালঘুদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা আছে। ২. রেহেনা সুলতানা। কুড়ির ঘরে বয়স। ইতোমধ্যে লিখেছেন ‘চর-চাপরি লোকজীবন আরু ভাষা-সংস্কৃতি’ বইটি। অসমিয়া ভাষায় ডাবল এমএ তিনি। ৩. আবদুর রহিম। শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী। ৪. আশরাফুল হুসেন। সাংবাদিক। বাল্যবিয়ে বিরোধী একটি ঘটনায় খুহপযরহম-এর শিকার। সম্প্রতি এনআরসি সম্পর্কিত মৃত্যু নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি করেছেন। ৫. আবদুল কালাম আজাদ। জাই ফাউন্ডেশন আজাদ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। ওয়্যার, স্ক্রল ডট ইন, আলজাজিরার মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে লেখালিখি করেন। ৬. কাজী শারওয়ার হুসেন : সমধিক পরিচিত কাজি নীল নামে। রোমান্টিক কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন বেশকিছু ‘মিঞা কবিতা’। ৭. সেলিম এম হুসেন। গবেষক-কবি। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার। পিএইচডি করেছেন কাঞ্চন বরুয়ার অসমিয়া উপন্যাস ‘অসীমত হেরাল সীমা’ নিয়ে। ‘মিঞা কবিতা’ সম্পর্কে বহু প্রবন্ধ লিখেছেন ইংরেজিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের পত্র-পত্রিকায়। ৮. করিশ্মা হাজরিকা। অসমিয়া বাদে অন্য কোনো ভাষায় কখনো কিছু লেখেননি। বর্তমানে অসমিয়া ভাষায় পিএইচডি করছেন। ৯. বনমল্লিকা চৌধুরী। ‘কাফে’ বই লিখেছেন যেখানে ‘মিঞা কবিতা’ নিয়ে আলোচনা রয়েছে। ১০. ফরহাদ ভূঞা। বহুকাল ধরে প্রথম সারির অসমিয়া সংবাদপত্র ও সাময়িকীর নিয়মিত লেখক। এরাই এখন হয়ে উঠেছেন অসমিয়া জনজীবনের ‘থ্রেট’, অন্তত এফআইআর-এর ভাষা তাই বলছে।”

পাঠক এরই মধ্যে ‘মিঞা কবিতা’ শব্দবন্ধটি খেয়াল করে থাকবেন। জানা যাচ্ছে, আসামের বাঙালি মুসলমান, যাদের অসমীয়রা ঘৃণাভরে ‘মিঞা’ অভিধা দিয়েছে, তাদের একটি সম্পূর্ণ নতুন ও স্বতন্ত্র কাব্যধারা হয়ে উঠেছে এই প্রতিবাদী কাব্যরীতি। আমরা যখন দেশে বিদেশে প্রতিবাদী বা প্রতিরোধ সাহিত্য বা কবিতা নিয়ে আলোচনা করি, তখন সেখানে অনিবার্যভাবেই নজরুল, সুকান্ত, ফররুখ, সুভাষের পাশাপাশি অ্যালেন গিনসবার্গ, মাহমুদ দারবিশ, মায়া অ্যাঞ্জেলো, নাজিম হিকমাত, নেরুদা, গোর্কি, পস্তেরনাক, ফস্টার, ডব্লিউ বি ইয়েটস, এমনকি ফয়েজ আহমদ ফয়েজ পর্যন্তও যাই। কিন্তু আমাদের পাশে নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষদের জীবন্ত প্রতিরোধের উজ্জ্বল পঙক্তিমালার খোঁজ নিই না। আজ সেই খোঁজ নেয়ার চেষ্টা।

একটি অনলাইন পত্রিকায় জনৈক অভিষেক ঝা তার ‘মিঞা কবিতা : প্রেক্ষিত, নির্বাচন ও অনুবাদ : একটি সংক্ষিপ্ত ইস্তেহার’ শীর্ষক নিবন্ধে লিখছেন, ‘মিঞা’ অতি পরিচিত একটি বাংলা শব্দ, যা জাত হয়েছে বাংলা ভাষার সাথে উর্দু ভাষার আত্মীয়তা সূত্রে। উর্দুতে ‘মিঞা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় পুরুষ লিঙ্গার্থে কোনো সজ্জন ব্যক্তিকে সম্ভাষণ করার সময়, অর্থাৎ ‘মিঞা’র ব্যুৎপত্তিগত আনুষঙ্গিক ধারণাটি ভদ্রতা, সভ্যতা, সৌজন্য ইত্যাদি গুণাবলি। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ‘মিঞা’ সম্ভাষণটি হিন্দুদের ‘বাবু’ সম্ভাষণের ইসলামীয় সংস্করণ বলে ধরা যেতে পারে। যেমন ‘রমেশ বাবু’ ও ‘গহর মিঞা’। ... এটি পরিষ্কার যে, ‘মিঞা’ শব্দটি কখনোই নীচার্থে বা হীনার্থে ব্যবহৃত হয়নি। ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের অসম প্রদেশে ‘মিঞা’ শব্দটির কদর্থ করা শুরু হয় ও স্বাধীন ভারতবর্ষের অসম রাজ্যে ‘মিঞা’ শব্দটি গালিগালাজে রূপান্তরিত হয়। ধর্মীয় পরিচয়ে পৃথকীকরণের হেতুই এদের ‘মিঞা’ বলে দেগে দেয়া হয়, যার অনুষঙ্গে জুড়ে থাকে দারিদ্র্য, অপরিছন্নতা, অসামাজিক কাজকর্ম। দেশ ভাগের পর অবধারিতভাবে জুড়ে যায় সংবিধানকে সাক্ষীগোপাল রাখা সেই ট্যাগ : বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী।”

এরপর অভিষেক ঝা জানাচ্ছেন, মিঞা কবিতা প্রাথমিকভাবে একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার ফসল। আর এই কবিতা জন্ম নিয়েছে আসামের বিশেষ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে। আসামে বাঙালি মুসলমানদের যে, মানবেতর জীবের মতো ঘৃণা করা হয় তা আমরা কিছু কিছু জানি। ১৯৮৩ সালে নেলী নামের একটি জায়গায় কয়েকটি গ্রাম ঘেরাও করে অসমীয় জঙ্গিরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে মাত্র একদিনে পাঁচ হাজারের বেশি মুসলমানকে কচুকাটা করেছিল, সেই নারকীয় গণহত্যার কাহিনী এ দেশের অনেক সচেতন মানুষই কখনোই ভুলতে পারবেন না। সেই নারকীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা মানুষগুলো যাদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড বলে কিছু নেই, এই সাহিত্য, এই কবিতা হচ্ছে তাদেরই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর।
ঝা’র ভাষায়, “বাংলা ভাষা ও কৃষ্টি থেকে দূরত্বজনিত কারণে খুব স্বাভাবিকভাবে জাত হয় ‘দোরান’ নামক ডায়ালেক্ট যা কামতাপুরী, রাজবংশীয়, অহমিয়া, সিলেটি, বাংলা সব ভাষা থেকেই নিজেকে পুষ্ট করেছে। ... মিঞাদের ডায়ালেক্ট এক মিশ্র চরাচর।”
তিনি বলছেন, “‘মিঞা’ স্বর তৈরির প্রথম ধাপ ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের এক কবিতা : মৌলানা বন্দে আলীর ‘এক চরুয়ার শপথ’। গোটা কবিতায় ‘মিঞা’ শব্দটি কোথাও ব্যবহৃত হয়নি, তবু চেনা যায় একটি নতুন ধারা তার খাত খুঁজতে চাইছে, ব্যবহার করছে সেই স্বরের মাটির টান, সেই স্বরের মাটির সুর যেখানে বাঙালি কৃষ্টি অতীত হচ্ছে আর অহমীয়া কৃষ্টি প্রতীয়মান হয়ে উঠছে। সেই বীজ চরের বালিতে পোঁতা থাকল চুয়াল্লিশটা বছর। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র দিয়ে প্রচুর জল বয়ে গেছে। অসম ভেঙেছে, জাতি দাঙ্গায় বারবার রক্তাক্ত হয়েছে এবং বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী ইস্যু ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ (এনআরসি) প্রাসঙ্গিক থেকে প্রাসঙ্গিকতর হয়েছে অসমের রাজনীতিতে এবং ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ছয় ঘণ্টায় দু’হাজারেরও বেশি (এটি ভারতের সরকারি তদন্ত কমিটির হিসাব) বাঙালি কৃষ্টিজাত মুসলমানের গণহত্যার প্রেক্ষিতে ১৯৮৫ সালে কবীর আহমেদ লিখেছিলেন একটি ইংরেজি কবিতা : 'ও ইবম ঃড় ঝঃধঃব ঞযধঃ' যেখানে একটি লাইনে ছিল 'ও ধস ধ ংবঃঃষবৎ, ধ যধঃবফ গরুধ'। এই কবিতাটিই সেই মিঞাত্বের জন্ম দেয় যাদের ভিতর তুষের মতো জ্বলতে থাকে প্রতিবাদী স্বর, এক প্রতি-স্বরের কবিতার ভ্রূণাবস্থা শুরু হয় যার ব্যাপ্তি লাভ করতে তখনো বাকি প্রায় তিন দশক।”

অভিষেক ঝা আসামের হিংসাশ্রয়ী রাজনৈতিক ঘটনাচক্রের বিবরণ তুলে ধরে বলেছেন, “এই সমস্ত প্রেক্ষিতের কবিতা-বিস্ফোরণ হয় ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে এপ্রিল যখন বছর পঞ্চাশের একাডেমিক, সমাজকর্মী ও কবি হাফিজ আহমেদ ইংরেজিতে 'ডৎরঃব উড়হি ও ধস ধ গরুধ' কবিতাটি লিখে ফেলেন; ‘মিঞা কবিতা’র ধারায় এটিই ঘোষিতভাবে প্রথম ‘মিঞা কবিতা’। এই কবিতা দিয়ে হাফিজ আহমেদ ‘মিঞা’ শব্দটির অবমাননাকর কদর্থকে গেরিলা কায়দায় রূপান্তরিত করেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেশের স্বর হিসেবে।”

ঝা লিখছেন, “হাফিজ আহমেদ এই কবিতার ভাষা-রাজনীতির দিকটি নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠেন এবং ইংরেজির চেয়েও বেশি জোর দিতে থাকেন অহমিয়া ‘দোরান’ ডায়ালেক্টে কবিতা লেখায়। আহমেদের ধারা অনুসরণ করে যুব সম্প্রদায়ের একটি অংশ ইংরেজিতে ও অহমিয়া ‘দোরান’ ডায়ালেক্টে ‘মিঞা রাজনীতি’র কবিতা লিখতে শুরু করেন, যার প্রসার এখনও হয়ে চলেছে। এই ভাষা ‘মিঞা কবিতা’কে আলাদা রাজনৈতিক প্রেক্ষিত দেয়।

কারণ বাঙালি কৃষ্টির দোহাই দিয়ে যে অপরীকরণ করা হয়, তার বিরুদ্ধে এই ভাষার ব্যবহার দেখায়, অসমের মাটি ও জলকে কতটা আত্মস্থ করলে এই কবিতা ভাষ্যের নির্মাণ করা যায়। সুতরাং এই প্রেক্ষিত থেকে- অসমে মুসলিমরা অহমিয়া কৃষ্টির পক্ষে বিপজ্জনক, এই তৈরি করা ধর্মীয়-রাজনৈতিক ধারণার বিরুদ্ধেও ‘মিঞা কবিতা’ এক প্রতিবাদ বিশেষ।”
অভিষেক ঝা তার নিবন্ধে তিনজন মিঞা কবির কবিতার অনুবাদ তুলে ধরেছেন। অনুবাদ এমনভাবে করা হয়েছে যেন সেগুলোকে অহমিয়ার কাছাকাছি বাংলার একটি আঞ্চলিক রূপ হিসেবে চেনা যায়। লক্ষ্য করুন, আসামের সম্পূর্ণ নতুন ধারার এই কবিতার ভাষার তীক্ষèতা! প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অপমান, বিদ্রূপ, শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন সবকিছুকে আগুনে পুড়িয়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার চর অঞ্চলের মুসলিম যুবক যুবতীরা হাতে তুলে নিয়েছেন যে কবিতার মশাল; অনুভব করুন তার ভেতরে গুমরে ওঠা মানুষের বুকচাপা কান্নার করুণ আকুতি! দীর্ঘ দিনের বঞ্চনা শোষণ আর বিদ্রূপের কশাঘাতে চর অঞ্চলের মুসলিম যুবসমাজের মধ্যে খুব নীরবে, নিভৃতে যে একটা বিপ্লব দানা বেঁধে উঠেছে, অনুভব করুন তার জ্বালাময় আঁচ!

হাফিজ আহমেদ-এর কবিতার শিরোনাম, ‘লিখে নাও মুই এক মিঞা’:
লিখো/ লিখে নাও/মুই এক মিঞা/ এনারছিতে মোর ছিরিয়াল নং ২০০৫৪৩।/মোর দুই ছেলেপুলে,/সামনের গরমে/আরেকজনা আসিতেছে।/ উয়ারেও ঘেন্না করিবা তো/ যেমন হামারে করো?/ লিখে নাও / মুই এক মিঞা/ হেই গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ, প্রজাতন্ত্রের/ অধিকার লগে অধিকার ছাড়া এক নাগরিক।/ হামার মা’কে ডি-ভোটার বানায় দিল, উয়ার মা বাপ ছিল যদিও ভারতীয়। [মূল কবিতা ইংরেজিতে লেখা ]
সেলিম হুসেন-এর কবিতা, ‘মুর্গি জবাই চলিছে’...

মুর্গি জবাই চলিছে : মুর্গি/ কসাইয়ের কোনো দোষ নাই,/ নাই কোনো ভুল।/ দু এট্টা মুর্গি কোঁক কোঁকাবে ভাবলেও/ কসাইয়ের চোখা ছুরির দিকে চেয়ে/ ভাবনাটা মনে গিলে নিল।/ দু এট্টা ধড়পড়ানো পালক/ জাপটে ধরি/ কসাই শুনাচ্ছে সবাই রে / সাবধানবাণী : ‘খবর্দার ভুলবি না তোরা হামার / পোষা মুর্গি/ যা মন চায়/ তাই করিব/ যাকেই মন চায়/ তাকেই করিব জবাই’। [মূল কবিতা অহমিয়া ‘দোরান’এ লেখা]

খ্যাতিমান কবি কাজী নীল (যার আসল নাম কাজী শারওয়ার হুসেন) এর কবিতা :
আমি আইব বুকের ভিতর বৃষ্টি ভিজা স্বাদ নিয়া/ একটা উপবনের সমস্ত ডাল –পাতা নিয়া/ প্রজননকালীন ব্যাঙের ডাক নিয়া আমি আইব/সেই ধূসর শহরের বন্দরে প্রাচীন এক নাবিকের মতন/ ... একটা আধা গ্রাম আধা শহরের মধ্যে দিয়ে হাঁটি যাই/ মৃত্যুর মতন যন্ত্রণা নিয়া আমি হাঁটি গেছি/ল্যাংড়াইতে ল্যাংড়াইতে...
ঝা’র উল্লিখিত তিন কবির বাইরে কবি রেজওয়ান হুসেন-এর ‘আমাগো বিপ্লব’ কবিতার অংশবিশেষ তুলে কবিতার উদ্ধৃতি শেষ করি : আমাদের তোমরা গালি দেও/হাতের নাগালে পেলে লাথিও মার/নীরবে কিন্তু আমরা তোমাদের/ অট্টালিকা, রাস্তা, দালান বানাতে থাকব/তোমাদের অস্থির, ঘামে ভেজা, চর্বিযুক্ত/শরীরটাকে আমরা কিন্তু রিক্সায় টানতে থাকব।

শেষ কথা : বলা হয়েছে, ‘মিঞা’ কবিতা নির্মাণের প্রথম ধাপ ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে। বন্দে আলীর ‘এক চরুয়ার শপথ’ কবিতা দিয়ে এই ধারার যাত্রা শুরু। আমরা কবি বন্দে আলী মিয়ার ওই শিরোনামের কবিতাটি অনলাইনে খুঁজে পাইনি। তার কোনও কবিতার বইও হাতের কাছে নেই। পাবনায় জন্মগ্রহণকারী এবং কলকাতা, ঢাকা ও রাজশাহীতে কর্মজীবন কাটানো কবি বন্দে আলী মিঞার কবিতা যদি এই নতুন কাব্যধারার সৃজনে ভূমিকা রেখে থাকে তাহলে এই স্বল্পপঠিত কবিকে অতিঅবশ্যই নতুন করে পাঠ করতে হবে। হয়তো এক মহৎ কবিকে নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে আমাদের। সে প্রসঙ্গ আরেক দিন।


আরো সংবাদ



premium cement