২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কুরআনে উল্লিখিত ‘হুর ইন’ শব্দের বিশ্লেষণ

- ফাইল ছবি

পরিচিত কিছু মহিলা আমার কাছে জানতে চেয়েছে কুরআনে ব্যবহৃত ‘হুর ইন’ বলতে কী বোঝায়? এ ব্যাপারে ইসলামের মতামত কী? এবং জান্নাতি মেয়েরা ‘হুর ইন’ পাবেন কি না ইত্যাদি? তাদের উত্তরে বললাম, হুর ইন সম্পর্কে কিছু আলেম অর্থ করেছেন ‘পবিত্র স্ত্রী’। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, জান্নাতি মেয়েরা পবিত্র স্বামী পাবেন না কেন? আজকের নিবন্ধে এ ব্যাপারে সব ক’টি মতামত উল্লেখ করব। আল কুরআনের সূরা আহযাবের ৩৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, সব পুরুষ ও নারী জান্নাতে একই পুরস্কার পাবে। ‘নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সওম পালনকারী পুরুষ ও সওম পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাজতকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাজতাকারী নারী, বেশি বেশি আল্লাহ্র জিকিরকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহ এদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন মাগফিরাত আর শ্রেষ্ঠ প্রতিদান।’ (আহযাব ৩৫)

সুতরাং জান্নাতে নারী পুরুষের প্রাপ্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য হবে না। নারী জান্নাতিরাও পবিত্র সঙ্গী বা স্বামী পাবেন।

বিশ^বিখ্যাত তাফসিরকারক মোহাম্মদ আসাদ তার তাফসির গ্রন্থ দি মেসেজ অব দি কুরআনে ‘হুর’ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আর (তাদের সাথে থাকবে) নিষ্কুলষ সঙ্গীরা যারা সবচেয়ে সুন্দর চোখের অধিকারী হবে (কুরআন ৫৬/২২,আসাদের তাফসিরের নোট ৮)। অর্থাৎ মোহাম্মদ আসাদের মতে এবং অন্য একজন তাফসিরকার মাওলানা মোহাম্মদ আলীর মতে, হুর ইন অর্থ হচ্ছে সুন্দর চোখধারী সঙ্গী (পুরুষ/নারী)। তারা হুর ইন শব্দের বেলায় পুরুষ নারী কোনো পার্থক্য করেননি। কেননা ‘হুর’ শব্দটি একটি ফেমিনিন সিঙ্গুলার ‘হাওরার’ বহুবচন, একই সাথে একটি পুরুষ বাচক এক বচন ‘আহওয়া’র বহুবচন। এ ব্যাপারে সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী সূরা সাফফাতের ২৯ নম্বর টীকায় লিখেছেন, ‘সম্ভবত এরা (হুররা) সেসব মেয়ে যারা প্রাপ্ত বয়স্কা হওয়ার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে এবং যাদের পিতা-মাতা জান্নাত লাভের অধিকারী হয়নি। অনুমানের ভিত্তিতে একথা বলা যেতে পারে যে, এ ধরনের ছেলেদের যেমন জান্নাতবাসীদের সেবায় নিযুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা হামেশা বালকই থাকবে, ঠিক তেমনি এ ধরনের মেয়েদের জান্নাতবাসীদের জন্য হুরে পরিণত করা হবে এবং তারা চিরকাল উঠতি বালিকাই থাকবে। অবশ্যই আল্লাহই ভালো জানেন।’

আর সূরা আর রহমানের ৫১ নম্বর টীকায় তিনি হুর সম্পর্কে একইরকম বলেছেন : ‘তারা (হুর) নিজেদের কোনো নেক কাজের ফলে নিজ অধিকারের ভিত্তিতে জান্নাতবাসিনী হবেন না। বরং জান্নাতের অন্যান্য নিয়ামতের মতো একটি নিয়ামত হিসেবে আল্লাহ তাদের যুবতী, সুন্দরী ও রূপবতী নারীর আকৃতি দিয়ে জান্নাতবাসীদের নিয়ামত হিসেবে দান করবেন, যাতে তারা তাদের খেদমত করতে পারেন। তবে কোনো অবস্থাতেই তারা জিন বা পরী শ্রেণীর কোনো সৃষ্ট জীব হবেন না। কারণ, মানুষ কখনো ভিন্ন প্রজাতির খেদমতে অভ্যস্ত ও তৃপ্ত হতে পারে না। এ কারণে খুব সম্ভব তারা হবেন সেসব নিষ্পাপ মেয়ে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাদের পিতা-মাতাও জান্নাত লাভ করেননি, সন্তান হিসেবে পিতা-মাতার সাথে জান্নাতে থাকার সুযোগ পাবেন।’

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, মাওলানা মওদূদী বলেছেন, হুররা হচ্ছে ঐসব অল্পবয়স্ক মেয়ে, যারা জান্নাতে যাবেন আমলের বিনিময়ে নয় বরং তাদের নির্দোষিতার কারণে এবং তারা যে গুনাহ করেননি এ কারণে। তবে এদের আল্লাহতায়ালা বাচ্চা মেয়ে হিসেবে জান্নাতে তুলবেন মানুষের খেদমতের জন্য। কিন্তু স্ত্রী হিসেবে নয়। তেমনিভাবে যেসব বালক অল্প বয়সে মারা যান তারা জান্নাতে যাবেন আমলের কারণে নয়, গুনাহ না করার কারণে। তারা হবেন কুরআনের ভাষায় গেলমান (বালক দল), তারাও জান্নাতিদের খেদমত করবেন। সুতরাং আশা করি, বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। হুর ইন অর্থ হবে সুন্দর চোখ সঙ্গী/সঙ্গিনী অথবা হুর ইন অর্থ হবে বালিকার দল যারা জান্নাতিদের খেদমত করবেন।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement