২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোদির দ্বিতীয় সরকার ও পাকিস্তান

- ফাইল ছবি

দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর নরেন্দ্র মোদি সরকারের পাকিস্তান নীতি কেমন হবে এটি একটি বিরাট প্রশ্ন। নির্বাচনে মোদির সাফল্যের পেছনে যে কর্মকৌশল কাজ করেছে এর একটি বড় বিষয় ছিল কাশ্মিরের পুলওয়ামার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা এবং সেটিকে পরে নির্বাচনী প্রচার যুদ্ধে পরিণত করা। সে সাথে সংবিধানে কাশ্মিরের জন্য সুরক্ষা সংক্রান্ত ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের অঙ্গীকার করা।

মোদি নির্বাচিত হওয়ার আগেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার বিজয় কামনা করে বলেছিলেন, মোদি জয়ী হলে আবার দু’দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু করা সম্ভব হবে। সেটি ইমরান খানের মনের কথা হোক বা না হোক মোদির বিজয়ের পর ইমরান নরেন্দ্র দামোদর দাসকে উষ্ণ অভিনন্দনই জানিয়েছেন। কিন্তু এর বিপরীতে মোদি তার শপথ অনুষ্ঠানে ইমরান খানকে দাওয়াত দেননি। এর আগে নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমন্ত্রণ না জানালে এ দাওয়াতের বিষয়টি হয়তো সেভাবে প্রাসঙ্গিকও হতো না।

পাকিস্তানকে এড়ানোর জন্য মোদি বিমসটেককে সামনে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) যে একটি নিষ্প্রভ বিষয় তা কে না জানে। স্বল্প পরিচিত বিমসটেকের নেতাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে এক দিকে ভারতীয় মেগা ইভেন্টটিকে ‘আঞ্চলিক’ রং দেয়া এবং সেইসাথে অতিথির তালিকা থেকে পাকিস্তানকে বাদ রাখা। এ ধরনের ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ান সহযোগিতা সংস্থা সার্কই যথাযথ মঞ্চ হতে পারত। কিন্তু মোদি সরকারের তা কাম্য বলে মনে হয়নি।

ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ভদ্রকুমারের মতে, ‘ভারতের এই সিদ্ধান্তের পেছনে আরো বড় কোনো যুক্তি থাকতে পারে। প্রথমত ৩০ মে অনুষ্ঠানটি পুরোপুরি মোদিকে নিয়ে। এখন ইমরান খানের মতো কোনো রকস্টারের উপস্থিতি মোদির ইমেজের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে, কারণ তিনি প্রচারের আলো কেড়ে নিতে পারেন। অবশ্য ইমরান খান আমন্ত্রণ পেলেই ভারতে ছুটতেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। দ্বিতীয়ত, ইমরান খানকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তার অর্থ হতো গত সপ্তাহে নির্বাচনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে বিষোদগার করা হয়েছিল, রাতারাতি সেগুলো বাতিল করে দেয়া। এমন ধরনের ইউ-টার্ন অনেকটাই অপ্রত্যাশিত।’

মোদির দ্বিতীয় সরকার অবশ্যই পাকিস্তানের সাথে সম্পৃক্ত হবেন। তবে তা হবে উপযুক্ত সময়ে এবং এর আগে তিনি মাঠ প্রস্তুত করে নিতে চান। আর ইমরানের সাথে তার দেখা হচ্ছে ১৩-১৪ জুন বিসকেকে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) বৈঠকে। সেখানে মোদি-ইমরান মতবিনিময় করতেই পারেন। সেখানে যোগদানের জন্য পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ভারতীয় বিমান উড়িয়ে নেবার অনুমতি ইসলামাবাদ দিয়েছে সুষমা স্বরাজকে। কাশ্মির উত্তেজনার পর পাকিস্তানের আকাশসীমা ভারতীয় বিমানের জন্য নিষিদ্ধ রয়েছে।

দু’দেশের সম্পর্কের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, ভারতের নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ফলাফল যখন প্রায় স্পষ্ট তখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শাহিন-২ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে সফলভাবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঘোষণা করে যে, পাকিস্তান শাহিন-২ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূমি থেকে সফল নিক্ষেপণ পরীক্ষা করেছে, যা ১৫০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত প্রচলিত ও পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। পাকিস্তানের সামরিক মিডিয়া অফিসের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শাহিন-২ মিসাইল একটি অত্যন্ত সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র যা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা প্রতিবন্ধকতা দূর ও স্থিতিশীলতার রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি পাকিস্তানের কৌশলগত চাহিদা পূরণ করে।’

এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট যে, পাকিস্তান নিজেও মোদির নতুন পররাষ্ট্র নীতি ইসলামাবাদের প্রতি সুপ্রসন্ন হবে এমনটি প্রত্যাশা করে না। আর মোদিও সম্ভবত যে ধরনের পাকিস্তান বিরোধী জাতীয়তাবাদী ঢেউ তুলে নির্বাচনে সাফল্য পেয়েছেন সেখান থেকে খুব দ্রুত অন্য কোনো নীতির দিকে এগোবেন না। এখন প্রশ্ন হলো, মোদি পাকিস্তান নীতিকে কতটা আগ্রাসী করবেন?

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মোদিকে দ্বিতীয় মেয়াদে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। শপথগ্রহণের পর, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মুখোমুখি। এ ব্যাপারে মোদির কৌশল ঠিক করার প্রয়োজন হবে। ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য সস্তা তেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল ইরান। ইরান থেকে তেল কেনার ব্যাপারে ভারতকে যে ছাড় যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছিল, সেটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তার অর্থ হলো মোদিকে তেলের জন্য বিকল্প উৎস বাছাই করতে হবে। এ নিয়ে ইরানের সাথে যেকোনো টানাপড়েনের অর্থই হলো জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সমূহ আশঙ্কা।

নতুন পাঁচ বছরের জন্য মোদি ক্ষমতায় ফিরে আসার পর, বিশ্বব্যাপী নেতারা তার পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করবেন। মোদি এর আগে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি নিরাপত্তা বাফার হিসাবে কাজ করেছেন, তার দেশের বাজার খুলেছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে এখন পরিস্থিতি বেশ খানিকটা ভিন্ন। অবসরপ্রাপ্ত ভারতীয় কূটনীতিক দিলীপ সিনহার মতে, ‘বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুকূলে রাখা মোদির পক্ষে বেশ কঠিন হবে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার চীনা উত্থান রোধে ভারবাহক হিসাবে কাজ চায় ভারতের। কিন্তু একই সাথে এটিও চায় যে মোদি প্রশাসন তার দেশে যে বাণিজ্য বাধা রয়ে গেছে তা নিরসন করুক। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস এই মাসের গোড়ার দিকে নয়াদিল্লির নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে, আমেরিকান কোম্পানিগুলো দরপত্র ও নানা নিয়মকানুনের কারণে ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে বাধার মুখে পড়ছে। বাণিজ্য ভারসাম্য কমাতে সাহায্য করার জন্য ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ১৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু এই চুক্তির বাস্তবায়নে অগ্রগতি সামান্যই হচ্ছে। এবার ক্ষমতায় আসার পর মোদির কাছে ট্রাম্প বাস্তব অগ্রগতি চাইতে পারেন।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ভোক্তাদের বাজারে পরিণত হয়েছে, যা এই বছরের ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। কিন্তু এই বাজারে পুরনোদের পরিবর্তে নতুনদের আগমনই বেশি হচ্ছে। পুরনো পার্টনার রাশিয়ার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল ফ্রান্সের মতো দেশ।

শীতল যুদ্ধ চলাকালীন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ব্যাপকভাবে অবস্থানের কারণে ইসরাইলের সাথে ভারতের সম্পর্ক উন্মুক্ত ছিল না। কিন্তু গত ২৫ বছরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে গেছে। ১৯৯২ সালে ভারত ও ইসরাইল কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। তখন তাদের মধ্যে বাণিজ্য ছিল ২০০ মিলিয়ন ডলার। এখন সেটি ৪.১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। ক্রমবর্ধমান এই সম্পর্ক মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর সাথে ভারতের দীর্ঘতম সম্পর্ককে ঝুঁকিপূর্ণও করে তুলতে পারে।

রাশিয়ার সাথে চীন ও পাকিস্তানের সম্পর্কের বিষয়টি দিল্লির জন্য চ্যালেঞ্জের। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্যাপকভিত্তিক অস্ত্র চুক্তি রাশিয়া-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। মাঝখানে এ ক্ষেত্রে মোদি কিছুটা ভারসাম্য আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। রাশিয়ার সাথে এস ৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনাসহ বেশ কিছু চুক্তি করেছিলেন। তবে নতুন মেয়াদে আবার যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক মজবুত করার ইঙ্গিতই দিয়েছেন মোদি। যুদ্ধবিমান কেনার ব্যাপারে ফ্রান্সের সাথে সাম্প্রতিক চুক্তি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সামরিক হার্ডওয়্যার কেনার ফলে ভারতের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা অংশীদার রাশিয়াকে বেশ খানিকটা বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে দিল্লি। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়টিতে সমর্থন দিয়েছে মস্কো। এটিও মোদির জন্য একটি সতর্কবাণী হতে পারে।

তবে বড় প্রশ্ন হলো, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক কোন দিকে যাচ্ছে? পাকিস্তানের প্রতি কঠোর অবস্থান গ্রহণ তথা প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারের জন্য নতুন মেয়াদের মোদি সরকারকে ভারতীয় ভোটাররা ম্যান্ডেট দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। এই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া বাস্তবে কতটা মোদির পক্ষে সম্ভব সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ।

মোদি চান পাকিস্তানের ওপর এমনভাবে চাপ সৃষ্টি করতে যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য ছোট দেশগুলোর মতো ইসলামাবাদ অনুগত পার্টনারের ভূমিকা নেয়। আর কাশ্মিরে বিদ্রোহ দমাতে ভারতের চাহিদা মতো সহায়তা করে। এ জন্য আফগানিস্তানে শক্ত অবস্থান সৃষ্টির জন্য বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে দিল্লি। যদিও শেষ পর্যন্ত এই বিনিয়োগ পানিতে যাবে কিনা দিল্লির অনেক বিশ্লেষক এখন সেই প্রশ্ন তুলছেন। এ ছাড়া ইরানের চাবাহারে যৌথ উদ্যোগে বন্দর তৈরি করেছে ভারত।

নির্বাচন এলে কারণে অকারণে পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা বৃদ্ধি করা মোদির রুটিন কৌশলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি প্রশ্নসাপেক্ষ রয়ে গেছে। জুনিয়র পার্টনারের ভূমিকা গ্রহণে পাকিস্তান কখনো সাড়া দেয়নি। কাশ্মির সমস্যাসহ নানা ইস্যুতে ছাড় দেবে এমন কোনো আভাসও পাকিস্তান কখনো দেয়নি। কিন্তু স্থানে-অস্থানে এ লক্ষ্যে চাপ দিয়ে যাচ্ছে ভারত।

মোদির মনোভাব অবশ্য কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে কোনো মাথাব্যথা না থাকার মতো নয়। আবার কাশ্মিরে জাতিসঙ্ঘের হস্তক্ষেপও ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বস্তুত, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করার জন্য ইসরাইল যে নীতি অবলম্বন করছে, মোদি সরকারও সেই একই কাজ করার কথা ভাবছে কাশ্মিরে। এখন বিপুল ম্যান্ডেট পেয়ে মোদি সরকার সংবিধানে থাকা কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদার ৩৭০ ধারাটি বাতিল করে দিতে পারে।

ইসলামাবাদ জানে, পাকিস্তানের প্রতি শক্তি প্রদর্শন করার নীতিতে ভারতে ভোট লাভের ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যায় অনেক বেশি। ফলে ভারতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে পাকিস্তানের আশাবাদী হওয়ার অবকাশ কমই আছে। পাকিস্তানকে এবারের নির্বাচনে যেভাবে সামনে আনা হয়েছে, অতীতে কোনো কালেই তা হয়নি। সরকার যত দিন হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শভিত্তিক হবে, তত দিন ভারতের ঘরোয়া রাজনীতি ও সরকারের পাকিস্তান নীতি সহাবস্থান করবে। এ দুটিকে আলাদা করা যাবে না।

এ ব্যাপারে ভদ্রকুমারের মন্তব্যটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ‘(মোদির) নয়া ভারত আশা করে পাকিস্তানের আনুগত্য। এ ব্যাপারে কোনো আপস নয়। ৩০ মের দিল্লির অনুষ্ঠান থেকে ইমরান খানকে বাদ রাখা এই সামগ্রিক নীতির সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

প্রশ্ন হলো, মোদি পাকিস্তানের আনুগত্য পাওয়ার জন্য কী কী উপকরণ ব্যবহার করতে পারবেন? ইসরাইলের সাথে তিনি বিশেষ অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করেছেন। একই সাথে এতদিন ইরানের সাথেও ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। উপসাগরীয় অঞ্চলে এখন উত্তেজনা যে পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে তাতে ইরান আর ইসরাইলের সাথে সমান্তরাল সম্পর্ক রক্ষা ভারতের জন্য কঠিন হতে পারে। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করে সামনে এগোনোও হতে পারে এখন বেশ কঠিন।

ফলে এক দিকে, ঝুঁকতে হবে মোদিকে। নির্বাচনে ব্যাপক ম্যান্ডেট তাকে এ ব্যাপারে দুঃসাহসীও করে তুলতে পারে। কিন্তু ভারতের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা আছে অনেক বেশি। যতটা তার শক্তি রয়েছে বলে ফোটানি দেখা যায়, তার চেয়ে অনেক পেছনে দেশটি। ভারতীয় মিডিয়ার প্রচারণায় মনে হয় মোদির নেতৃত্বে দেশটি এক দুর্দমনীয় শক্তি হয়ে উঠেছে। বাস্তবের গভীর বিশ্লেষণে স্পষ্ট হবে দোকলাম সঙ্কটে চীনের কাছে দিল্লি নতি স্বীকারই করেছে। আর কাশ্মিরের সঙ্কটে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালাতে গিয়ে যে মার খেয়েছে তাতে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্তর্নিহিত দুর্বলতা দিগম্বরভাবে হয়ে পড়েছে।

ফলে মোদি যে সাহস কথার ফুলঝুলিতে দেখান, সেটি বাস্তবে অর্জন করতে বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। প্রচলিত ও পারমাণবিক উভয় যুদ্ধাস্ত্রে মানগত দিক দিয়ে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে পেছনে রয়েছে। তবে বড় দেশের বড় সামরিক বাজেটের করণে সংখ্যাশক্তিতে ভারত এগিয়ে। সে যাই হোক না কেন মোদির উগ্র নীতি ভারতীয় ভোট যেভাবে আকর্ষণ করতে পারে সেভাবে আঞ্চলিক প্রভুত্ব তার সামনে লুটোপুটি খায় না বলে দক্ষিণ এশিয়ার একেকটি করে দেশ তার প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। মোদির চ্যালেঞ্জ হলো এই অবস্থা থেকে কঠিন বাস্তবে উত্তরণ ঘটানো।
mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement

সকল