২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পাশ্চাত্যের অযৌক্তিক অনুকরণ পরিহার করা উচিত

পাশ্চাত্যের অযৌক্তিক অনুকরণ পরিহার করা উচিত - ছবি : সংগ্রহ

কোনো স্বাধীন সত্তায় বিশ্বাসী কোনো জাতির মানুষ অন্য সভ্যতাকে অনুকরণ করে না। ইসলামের বিজয়ের যুগেও মুসলিমরা কখনো অন্যের অনুকরণ করেনি, বরং তাদেরকেই অনুকরণ করা হয়েছে। ইংরেজ জাতি তাদের উন্নতি হওয়ার পরে আর কোনো জাতিকে অনুকরণ করেনি, বরং ভাষা, পোশাক-আশাক ও আইনকানুনে তাদেরকে অনেক জাতি অনুকরণ করেছে। আমরা মুসলিমরা এবং বাংলাদেশীরা অনেক সময় অযৌক্তিক বিষয়েও পাশ্চাত্য বা ভারতের অনুকরণ করে চলেছি। এ বিষয়টি কয়েকটি পয়েন্ট আকারে ব্যাখ্যা করব।

প্রথমে আসি টাই ব্যবহার প্রসঙ্গে এ টাইয়ের প্রচলন শুরু হয়েছিল কয়েক শ’ বছর আগে ইউরোপের ক্রোয়েশিয়ায় ক্যাথলিকদের দ্বারা। তারা ‘যিশুর ক্রুশে মৃত্যুবরণ’কে স্মরণ করার জন্য টাইয়ের প্রচলন করে এটা তাদের বিশ্বাস, এটা মুসলিমের বিশ্বাস নয়)। দুই শ’ বছর আগে টাইয়ের প্রচলন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় এবং ইংরেজ উপনিবেশগুলো বিস্তার লাভ করার পর ওইসব দেশেও টাইয়ের ব্যবহার শুরু হয়। টাই একটি কাপড়ের সরু লম্বা অংশ, যা গলায় বেঁধে রাখা হয়। সত্যিকার অর্থে, এর কোনো কাজ নেই। শার্ট, প্যান্ট, কোট, পায়জামা, পাঞ্জাবি, কামিজ, শেরোয়ানি এসবের একটা ফাংশন বা কাজ আছে, যা প্রয়োজন পূর্ণ করে থাকে। কিন্তু টাইয়ের এ রকম কোনো কাজ নেই। এটা ব্যবহার করতে গেলে বেশ খরচ হয়; অথচ এর কোনো কাজ নেই। টাইয়ের ব্যবহার সম্পর্কে ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনিসহ অনেক আলেম এটাকে হারাম বলেছেন। বেশ কিছু স্কলার একে মাকরুহ (যা ত্রুটিপূর্ণ বলে বাদ দেয়া ভালো) বলেছেন। কিছু লোক এটাকে বলেছেন জায়েজ। আমরা দেখতে পাই, ইরানের নেতৃবৃন্দ টাই পরেন না, পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান টাই পরেন না, তার আগের প্রধানমন্ত্রী খাকান আব্বাসী টাই পরেননি। তদুপরি সৌদি আরবসহ অনেক আরব দেশে জাতীয় পোশাকে টাইয়ের ব্যবহার নেই। মুসলিম বিশ্বে যেখানে টাইয়ের ব্যবহার আছে, সেখানেও সাধারণ মানুষ টাই পরেন না। ওইসব দেশের ধর্মীয় আলেমরা কখনো টাই পরেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে টাই ব্যবহারের কোনো যুক্তি নেই। তাই সবার উচিত, এটা পরিহার করা এবং বন্ধুবান্ধবকে টাই পরতে নিরুৎসাহিত করা।

এখন আরেকটি বিষয়ে বলব, সেটি হচ্ছে পোশাক-আশাক। বিজাতীয় পোশাকের অনুকরণকে ভালো বলা যায় না, তথাপি যেসব পোশাকের ‘ভদ্র ব্যবহার’ রয়েছে, যেমন- কোট, শার্ট, প্যান্ট ইত্যাদি ব্যবহারের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। অবশ্য মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় লোকজন এবং আলেমরা কখনো পাশ্চাত্যের পোশাক পরেন না। যে বিষয়টি সঙ্গত নই বলে মনে করি, সেটি হচ্ছে- খুব টাইট ফিটিং পোশাক পরা (যাতে নামাজ পড়তে অসুবিধা হয়), হ্যাফপ্যান্ট পরা (কিছু লোক হ্যাফপ্যান্ট পরা শুরু করেছে বিশেষ করে ঘরে), নারীদের বুকে ভালো করে ওড়না না দেয়া (যেটা ইসলামী শরিয়তে ফরজ করেছে, কুরআনের সূরা নূর দ্রষ্টব্য), এ ধরনের সব পোশাক পরিহার করতে হবে। মুসলিম সমাজকে অনুরোধ জানাই, তারা যেন এসব গর্হিত কাজ থেকে নিজে বাঁচেন এবং অন্যদের বাঁচান। যেখানেই সম্ভব, ইসলামের ঐতিহ্যবাহী পোশাক যেমন- পায়জামা, পাঞ্জাবি-পরিধান করা উচিত।

এখন বিজ্ঞাপন নিয়ে কিছু কথা বলছি। বিজ্ঞাপনে নারীর অযৌক্তিক ও কুৎসিত ব্যবহার সম্পূর্ণ অসঙ্গত। এতে নারীদের অবমাননা করা হয়। তারা পুরুষদেরই মা, বোন, স্ত্রী। অশ্লীল বিজ্ঞাপন না দিলে পণ্যের বিক্রি হতো না-তো বলা নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি। বিজ্ঞাপন ছবি ছাড়া হলেও কোনো ক্ষতি নেই। চাল ও গোশতের কোনো বিজ্ঞাপন দিতে হয় না, কিন্তু এগুলোর বিক্রি বেড়েই চলেছে।

এখন সর্বাবস্থায় খেলাধুলা নিয়ে দুটো কথা বলব। পুরুষ হোক কিংবা নারী, খেলাধুলার পোশাক ইসলামসম্মত হওয়া উচিত। খেলাধুলায় পুরুষ বা নারী কিছুতেই হাফপ্যান্ট পরা উচিত নয়। কারণ, এটা শরিয়তে জায়েজ নয়। ফুল প্যান্ট পরে ক্রিকেট খেলা হয়, তাতে কোনো অসুবিধা নেই। ফুটবল ও হকিতেও তাই করা উচিত। এতে প্রত্যেক মুসলিম দেশের জাতীয় খেলাধুলা প্রতিযোগিতায় কোনো অসুবিধা হবে না। কিছু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অসুবিধা হতে পারে। অর্থাৎ চ্যাম্পিায়ন হতে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে।

আমার প্রশ্ন- আল্লাহর হুকুম বড় নাকি দু-একটি প্রাইজ পাওয়া বড়? আশা করি, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাই বিশেষ করে ভেবে দেখবেন। খেলাধুলার উদ্দেশ্য প্রাইজ প্রাপ্তি কিংবা প্রথম বা দ্বিতীয় হওয়া নয়। খেলাধুলার উদ্দেশ্য- মূলত নিয়মিত শরীরচর্চার পরিবেশ সৃষ্টি করা। মুসলিম নারীদের খেলার সময় মাথায় স্কার্ফ পরা উচিত। কারণ, এটাও শরিয়তে ফরজ। আমরা মনে করি, পোশাক-আশাকের ব্যাপারে সবারই ইসলামী নীতিমালা অনুসরণ করা উচিত।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement