২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বন্দী অর্থনীতি ও রবিন হুডের প্রত্যাশা

বন্দী অর্থনীতি ও রবিন হুডের প্রত্যাশা - ছবি : সংগ্রহ

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ বেশখানিকটা বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রের মন্ত্রীপর্যায়ের নীতিনির্ধারক দেশের ব্যাংক খাতকে সবচেয়ে বড় ডাকাত হিসেবে অভিষিক্ত করছেন। এর পরও নতুন নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। অথচ ব্যাংকের ভেতরে এক ধরনের শূন্যতা বেড়ে চলেছে। কাগজ-কলমে ব্যাংকে সবই আছে; কিন্তু উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ পাচ্ছেন না। বিনিয়োগ বা ঋণ বেশির ভাগ ব্যাংকই দিতে পারছে না।

নামে-বেনামে ঋণ দেয়ার অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে। বলা হচ্ছে, এসব তহবিল চলে যাচ্ছে অজ্ঞাত গন্তব্যে। এই অভিযোগ যদি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হতো, তাহলে সেটিকে খুব বেশি আমলে না নিলেও চলত। কিন্তু সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত কমিটি ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার জন্য সরাসরি দায়ী করছে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংককে। কমিটি এমন প্রশ্নও করছে- ব্যাংকগুলোর তদারকিই যদি না হয়, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ কী?

শেয়ারবাজারই হোক অথবা ব্যাংক খাত, কারসাজি রয়েছে অভিযোগের মূল কেন্দ্রে, যার সাথে যুক্ত নীতি-নৈতিকতা। অর্থনীতির সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। অর্থনীতির সাথে নীতিশাস্ত্রের সম্পর্ক থাকা উচিত কি না, সে সম্পর্কে আধুনিক অর্থনীতিবিদদের অভিমত অনেকটাই নেতিবাচক। লিওনিদ বরিস, জন স্টুয়ার্ট মিল, জন কেয়ার্নস নেভিল কেইনস প্রমুখ অর্থনীতিবিদও অর্থনীতির সাথে নীতিশাস্ত্রের সংযুক্তির বিরোধী। তাদের কারো কারো ধারণা, অর্থনীতি হলো একটি বিজ্ঞান, যার সম্পৃক্ততা বাস্তবতার সাথে আর নৈতিকতা হলো মূল্যবোধের বিষয়। বাস্তবতা দিয়ে নৈতিকতা সব সময় বিচার করা যায় না। কেইনস আরো নির্দিষ্টভাবে বলেছেন, অর্থনীতি ও নীতিশাস্ত্র একত্র করে ফেললে তা মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্বচ্ছ ও বিভ্রান্ত উপলব্ধির সৃষ্টি করে, যাতে মানুষ অর্থনীতিকে ইতিবাচক বিজ্ঞান ভাবার পরিবর্তে ‘নীতি’ হিসেবে ভাবতে শুরু করে।

নীতিশাস্ত্রের সম্পৃক্ততা থেকে অর্থনীতিকে বের করে আনার এই প্রবণতা থেকে সম্প্রতি অর্থনীতিবিদেরা বেশখানিকটা বেরিয়ে আসছেন। পুরনো পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদেরা যেখানে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের সূচক হিসেবে তুলে ধরতে চান, সেখানে জোসেফ ই স্টিগলিজের মতো এখনকার নেতৃস্থানীয় অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, নিছক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যথাযথ সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে না। এ জন্য প্রবৃদ্ধির সুষম বণ্টনের বিষয়টি দেখতে হবে। অর্থাৎ স্বল্পসংখ্যকের উন্নয়নের প্রভাবে সামগ্রিক গড়পড়তা উন্নয়ন হলে জনজীবনে স্বস্তি বা সমৃদ্ধিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। উন্নয়ন অন্তর্ভুক্তিমূলক বা সবার হচ্ছে কি না, সেটি দেখতে হবে।
চলতি দশকের প্রথম দিকে অসম উন্নয়ন নিয়ে পাশ্চাত্যে একটি আন্দোলনও গড়ে ওঠে।

আন্দোলনকারীরা দেখিয়েছেন, কিভাবে ১ শতাংশ ধনপতির কাছে সম্পদ ক্রমাগতভাবে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। আর রাষ্ট্রের বাকি জনগোষ্ঠীর বিশেষত স্বল্প সম্পদের মালিকদের আর্থিক সামর্থ্য বা সম্পদ কিভাবে কমছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান যে দু’টি দল রয়েছে, তাদের মধ্যে রিপাবলিকানেরা সব সময় ধনপতিদের কর রেয়াত দেয়ার পক্ষে। তারা মনে করে, একজন উদ্যোক্তা বা করপোরেট মালিক তার মুনাফা বাড়াতে পারলে ‘পুঁজির স্ফীতি’ ঘটবে, আর তা নতুন উদ্যোগে বা উদ্যোগের সম্প্রসারণে বিনিয়োগ হবে। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যার ‘উপচে পড়া’ সুবিধা ভোগ করবে দরিদ্র ব্যক্তিরা।

এর বিপরীতে ডেমোক্র্যাটরা সাধারণ শ্রমজীবীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ধনীদের করের টাকা ব্যয় করে অসচ্ছলদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে চান। কর রেয়াত দান ও সামাজিক খাতে ব্যয় কমানোর ব্যাপারে কট্টর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কট্টর। তিনি ওমাবা কেয়ারের স্বাস্থ্য কর্মসূচি রহিত করে যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ অভিবাসীদের কর্তৃত্ব বাড়ানোর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন। আর এতে এক দিকে বৈষম্য আরো বাড়ছে। একই সাথে সুষম বণ্টন বা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির প্রয়োজনের বিষয়টি তীব্রভাবে উপলব্ধি হচ্ছে।

নীতি-সাম্যবিমুখ অর্থনৈতিক তাত্ত্বিকেরা অর্থনীতিকে চাহিদা ও জোগানের খেলা হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চান। তারা শ্রম, পুঁজি, উদ্যোগ ও ভূমিকে শিল্পের চার অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। চাহিদা ও প্রয়োজনের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, সেটিকে তারা গুরুত্ব দিতে চান না। এখানে মূলত নৈতিকতার বিষয়টি চলে আসে। আরো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে নৈতিকতার যে অর্থনৈতিক একটি মূল্য রয়েছে, সেটিও স্পষ্ট হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশের মতো অনেক রাষ্ট্রই মাদক আর ধর্ষণের মতো সঙ্কট মোকাবেলা করছে। ক্রসফায়ারের মতো অস্ত্র প্রয়োগ করেও ইয়াবার বিস্তার ঠেকানো যাচ্ছে না। মাদকের তীব্র চাহিদা ও এর কারবারে বিপুল অর্থ পাওয়ার কারণে এর দ্রুত বিস্তার হচ্ছে। অন্য দিকে ধর্ষণের যে বিস্তার ঘটছে, তার মূল কারণ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে পর্নোগ্রাফির বিস্তারকে। মোবাইল কোম্পানিগুলো থ্রিজি, ফোরজি, ফাইভজি ইন্টারনেটকে মোবাইলে সহজলভ্য করে দিয়েছে। পর্নো অ্যাপস ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে একটি বেপরোয়া জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে, যাদের কারণে শিশু পর্যন্ত নিরাপদ থাকতে পারছে না।

অর্থনীতির বিষয়টি শুধু চাহিদা জোগান দিয়ে যদি বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে মাদক বা পর্নোগ্রাফি বন্ধ করার জোরদার পদক্ষেপ নেয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। আর যদি চাহিদা জোগানের সাথে প্রয়োজন বা কল্যাণকে যুক্ত করে বিবেচনা করা হয়, তাহলে সমাজের জন্য ক্ষতিকর ও অনুপকারী যেকোনো উৎপাদন বা বাণিজ্যকে নিরুৎসাহিত করা হবে। আর এ কারণে সামাজিক প্রয়োজন বিবেচনার বিষয়টি এখন মুখ্য গুরুত্ব লাভ করছে। বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ইউনূস বিশ্বব্যাপী যে সামাজিক ব্যবসায়ের ধারণা ও উদ্যোগ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন, তার মূলে রয়েছে সমাজের প্রয়োজনের বিষয়টি।

ইসলামী অর্থনীতির মৌলিক একটি ধারণা হলো, হালাল-হারামের বিধিনিষেধ ও সম্পদের নিম্নমুখী প্রবাহ। হালাল-হারাম দিয়ে এখানে চাহিদা জোগানের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। ইয়াবা বা মদ-মাদকের যতই চাহিদা থাকুক না কেন, এর কারখানা স্থাপন ইসলাম অনুমোদন করে না। পর্নোগ্রাফির বিস্তার একই কারণে কঠোরভাবে পরিত্যাজ্য। এখানে চাহিদা জোগানের পাশাপাশি সামাজিক প্রয়োজনের বিষয়টিও বিবেচনায় এসেছে।
অর্থনীতিতে একটি তত্ত্ব রয়েছে অগ্রাধিকার উপযোগ তত্ত্ব। উদঘাটিত অগ্রাধিকার ভোগসংক্রান্ত আচরণের একটি অর্থনৈতিক তত্ত্ব যাতে বলা হয়, ভোক্তাদের পছন্দগুলো পরিমাপ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তাদের ক্রয় আচরণ পর্যবেক্ষণ করা। উদঘাটিত অগ্রাধিকার তত্ত্বটি ক্রয়-সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভোক্তাদের বিকল্পগুলোকে সেট বলে ধরে নিয়ে কাজ করে।

২০ শতকের শুরুতে অর্থনীতিবিদদের ইউটিলিটির ওপর ব্যাপক নির্ভরতা ছিল। এর প্রতিস্থাপন তত্ত্বগুলো বিবেচনা করা হয়েছিল, কিন্তু সমানভাবে এর সমালোচনাও ছিল আমেরিকান অর্থনীতিবিদ পল অ্যান্থনি স্যামুয়েলসনের ১৯৩৮ সালে দেয়া তত্ত্ব না আসা পর্যন্ত। তার ‘প্রতিস্থাপিত পছন্দ তত্ত্বে’ বলা হয়, ভোক্তাদের আচরণ ইউটিলিটির ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং পর্যবেক্ষণযোগ্য আচরণের ওপর নির্ভর করে।

এ তত্ত্বটিকে কিছুটা ভিন্নভাবে প্রয়োগের কথা বলেছেন, বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. এম এ মান্নান। তিনি এটিকে ইসলামী অর্থনৈতিক ধারণার একটি বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো নির্দিষ্ট পেশায় নিয়োজিতদের বৃত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, এমন উন্নত প্রযুক্তির বিকল্প কারখানা ততক্ষণ পর্যন্ত অনুমোদন করা যাবে না, যত দিন ওই পেশার লোকদের বিকল্প পেশা বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না যাবে। যেমন গ্রামীণ তাঁতের বিকল্প কোনো টেক্সটাইল স্থাপনের সময় সংশ্লিষ্ট তাঁতিদের বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যবস্থাটি নিশ্চিত করা গেলে আজ দেশে যে ঐতিহ্যবাহী পেশাজীবী তাঁতি-কামার-কুমারেরা বেকারত্বের মুখে পড়ছে, সেটি হবে না। প্রফেসর ইউনূসের সামাজিক বিনিয়োগেও সমাজের কল্যাণ ও কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ এখন তিনটি বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টির দ্বারপ্রান্তে বলে মনে হচ্ছে। এর একটি হলো কর্মসংস্থানের আকস্মিক বিলুপ্তি। এটি প্রধানত তৈরী পোশাক ও এর পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পে দেখা যাচ্ছে। এই শিল্পের উৎপাদন খরচ এক দিকে বাড়ছে অন্য দিকে এর উৎপাদিত পণ্যের দাম কমছে। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অনেকের কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় সঙ্কটটি হলো পুঁজি জোগান দানের সঙ্কট। শিল্পকারখানার পুঁজি জোগান দানের মূলধন বাজার বা স্টক মার্কেট এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ব্যাংক খাতের পুঁজি কয়েকটি হাউজে নামে-বেনামে জমা হচ্ছে। ফলে ব্যাংক খাত থেকে উদ্যোগ নেয়া বা সম্প্রসারণের জন্য পুঁজির জোগান একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এতে এক দিকে ব্যাংকের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে, অন্য দিকে বিপুল তহবিল খেলাপি হওয়ার বাস্তব ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনিবার্যভাবে একটি বড় আকারের অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়। তৃতীয় বিষয়টি হলো নৈতিক অবক্ষয়।

এক সময় নৈতিকতার অর্থনৈতিক মূল্যকে গুরুত্ব দেয়া হতো না। এখন এটি এতটাই বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির কথা বলে আধুনিক অর্থনীতিবিদেরাও এর গুরুত্ব স্বীকার করে নিচ্ছেন। দু’টি উদাহরণ দিলে নৈতিকতার অর্থনৈতিক মূল্যের বিষয়টি উপলব্ধি করা যাবে। নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অনুপস্থিতির কারণে বাংলাদেশে অনেক সমৃদ্ধ পরিবারেও মাদকের বিস্তৃতি ঘটছে। এতে পরিবারের যে সন্তানটির জন্য লাখ লাখ টাকা পরিবার ও রাষ্ট্র ব্যয় করছে, সেই ছেলেটি পরিবার ও রাষ্ট্রকে তার উৎপাদনশীলতা দিয়ে প্রাপ্য ফেরত দানের সময়ে উল্টো বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমন খবর বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় নিয়মিত পাওয়া যায়, মাদকসেবী ছেলে বাবা-মা, ভাইবোনকে হত্যা করেছে। একটি মাদকাসক্ত সন্তান পরিবারের সব অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে নিঃশেষ করে দেয়। এ ছাড়া পরিবার গঠনে থাকে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ। এ মূল্যবোধ হারিয়ে যাওয়ার কারণে পাশ্চাত্যের অনেক দেশে সমকামিতার বিস্তার ঘটছে। পরিবার গঠন ও সন্তান না হওয়ার কারণে জনসংখ্যা সেখানে নিম্নগামী হয়ে পড়েছে। এতে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশই জনশক্তির সঙ্কটে পড়েছে। শ্রমশক্তির এই সঙ্কটের সাথে সরাসরি নৈতিকতাযুক্ত।

এ অবস্থায় নৈতিকতার অর্থনৈতিক মূল্য অস্বীকারের কোনো অবকাশ নেই। সামাজিক ব্যবসায়, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, সুষম বণ্টন, শ্রমশক্তির বিকাশ প্রভৃতির মাধ্যমে নৈতিকতার অর্থনৈতিক মূল্যের বিষয়টি এখন স্বীকার করে নেয়া হচ্ছে। এ স্বীকৃতির পাশাপাশি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে এর প্রয়োগ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিকেই নিশ্চিত করবে। এ জন্য স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচির পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নীতি, জাতীয় বাজেটে অনুসৃত রাজস্ব নীতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতির দীর্ঘমেয়াদি বিন্যাসেরও প্রয়োজন রয়েছে। যার মূল লক্ষ্য হবে এমন একটি টেকসই ব্যবস্থার প্রবর্তন, যার মাধ্যমে সামাজিক প্রয়োজনমূলক অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে। একই সাথে উৎপাদনের সুষম বণ্টন এমনভাবে নিশ্চিত হবে, যাতে ধনী দরিদ্র সব শ্রেণীর মানুষ এর অংশ পাবে।

রবিন হুড অর্থনীতি বলে একটি কথা চালু রয়েছে। রবিন হুড ধনীদের কাছ থেকে অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতেন। এখন ধনীদের সুবিধা কেটে তা দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করাকে রবিন হুড প্রভাবিত অর্থনৈতিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিশেষভাবে অসমতা কমানো উদ্দেশ্যে নেয়া বিভিন্ন নীতি বা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত রবিন হুড প্রভাবের কারণে নেয়া হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। সারা দেশে সুষম জাতীয় উন্নয়ন, স্বল্প আয়ে স্বল্প কর বেশি আয়ে অধিক আয়কর ব্যবস্থা, স্বল্প পরিষেবা ব্যবহারকারীদের মূল্য সাশ্রয়ী সুবিধা দান- এসব সিদ্ধান্তকে এ ধরনের বিবেচনা করা হয়। আর বিশ্বব্যাপী আয়ের সুষম বণ্টন বা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিকাশের ওপর আজ যে এত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, সেটি করা হচ্ছে সমাজ কাঠামোর ভাঙন রোধ এবং টেকসই অগ্রগতির জন্যই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশ কাজে কর্মে এর উল্টো পথেই হাঁটছে। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েকজন ব্যক্তির কাছে জিম্মি হয়ে আছে। তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে অর্থ জোগান দিতে গিয়ে নামে-বেনামে ব্যাংকের তহবিল বের করে নেয়া হচ্ছে। সাধারণ গ্রাহক তো দূরের কথা, বছরের পর বছর ধরে যারা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করে আসছিল, তারাও ব্যাংকের কাছে বিনিয়োগ পাচ্ছে না। কিছু কিছু ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কর্মসূচি চালু করেছিল। বড়দের ঋণের ক্ষুধা মেটাতে সেই কর্মসূচিও বন্ধ করে দেয়ার চাপ আসছে। হতাশ মানুষ এখন বাংলাদেশে একজন ডিজিটাল রবিন হুডের আবির্ভাবের দিকে তাকিয়ে আছেন, যিনি দানবের হাত থেকে ব্যাংক ব্যবস্থাকে মুক্ত করে আবার সেটাকে জাতীয় পুনর্গঠনের হাতিয়ারের ভূমিকায় ফিরিয়ে দেবেন। সেই রবিন হুড কবে আসবেন, কে জানে?
mrkmmb@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস সৈয়দপুরে জামায়াতের উদ্যোগে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের শুরুতে না থাকার কারণ জানালেন সাকিব ঝালকাঠিতে গ্রাম আদালত কার্যক্রম পরিদর্শনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল

সকল