২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পিছু ছাড়ছে না অর্থনীতির দুঃসংবাদ

টাকা - ছবি : সংগ্রহ

সরকারের মন্ত্রী-মিনিস্টারদের মুখে এক আওয়াজ- দেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে। দেশ শুধু এগিয়েই যাচ্ছে অপপ্রতিরোধ্য গতিতে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ক্রমেই বাড়ছে। সরকার পক্ষ প্রবৃদ্ধির যে হার মাঝে মধ্যে প্রকাশ করছে, তা নিয়ে কখনো কখনো প্রশ্ন তুলছে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ বিভিন্ন দেশী-বিদেশী থিংকট্যাংক। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, উন্নয়ন যেটুকু হয়েছে, তার সুফল সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছাচ্ছে না। এর একটি বড় কারণ, আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা জোরালোভাবে বৈষম্যপূর্ণ। আর অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে কার্যকর রয়েছে নানা সিন্ডিকেট। এরাই অর্থনীতির সব লাভ তুলে নেয় আর তলানিতে যে অবশেষ থাকে তা জোটে দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যে। ফলে ধনী আরো ধনী হচ্ছে এবং গরিব আরো গরিব হচ্ছে। আর মাঝ থেকে নিঃস্ব হওয়ার পথে। অপর দিকে আমাদের অর্থনীতির দ্বিতীয় উপসর্গ হচ্ছে দুর্নীতি। অর্থনীতির পরতে পরতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কিছু দুর্নীতিবাজ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। ফলে আমাদের গণমাধ্যমে তাদের অবলম্বিত দুর্নীতির ছিটেফোঁটা খবর প্রকাশিত হলেও কার্যত এরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরেই। শাস্তি যদি কিছু হয়, তবে তা জোটে চুনোপুঁটিদের ভাগে। ফলে পিছু ছাড়ছে না আমাদের অর্থনীতির নানা দুঃসংবাদ। গণমাধ্যমে থেকে থেকে প্রকাশ পাচ্ছে এসব দুঃসংবাদ। এসব দুঃসংবাদ যেন থামছেই না।

আর এসব কারণেই কথিত উন্নয়নের প্রতিফলন নেই সার্বিক অর্থনীতিতে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। বছরের পর বছর বাড়ছে বেকারত্ব। স্বীকার করতেই হবে, দেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বিশেষ করে স্বল্পশিক্ষিত যুবসমাজের বেকারত্ব পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। গত বছর নভেম্বরের দিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত সাত বছরে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আইএলও-এর ‘এশিয়া প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল আউটলুক ২০১৮’-এ উল্লেখ করা হয় ১৫-২৫ বছর বয়সী যুবসমাজের বেকারত্বের হার ২০১৭ সালে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ, যেখানে ২০০০ সালে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ। চাকরি, লেখাপড়া কিংবা প্রশিক্ষণে সংশ্লিষ্ট নয় এমন যুবকদের বেকারত্বের হার ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

গ্রামীণ অর্থনীতিতে চলছে দুঃসময়। জাতীয় পর্যায়েই শুধু বিনিয়োগ কমছে না, গ্রাম এলাকায় ক্ষুদ্র শিল্পের বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। বছরখানেক আগে থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে বিনিয়োগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ মাসিক পরিসংখ্যান মতে, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক অনুযায়ী নন-ফার্ম রুরাল ক্রেডিটে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এই হার ছিল শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ। গত বছরের প্রথম সাত মাসে যেখানে এ খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল দুই হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, চলতি বছরে এসে একই সময়ে তা কমে নেমেছে দুই হাজার ৪৫৭ কোটি টাকায়। গ্রামীণ শিল্পে বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়ে পড়ায় সঙ্কুচিত হয়ে আসছে কর্মসংস্থান, কমছে টাকার প্রবাহ। ব্যাংকারদের মতে, শহরের চেয়ে গ্রামের অবকাঠামো সুবিধা কম। শহরে যে হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, গ্রামে তা করা হয় না। এমনও এলাকা আছে, যেখানে রাত-দিনে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় না। এর সাথে রয়েছে বিনিয়োগের স্থবিরতা। এ ছাড়া, গ্রামীণ অর্থনীতিতে রয়েছে আরো নানা সমস্যা, যার আলোকপাত একটি মাত্র লেখায় প্রকাশ করা সম্ভব হবে না।

গত ২৮ এপ্রিলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে স্বীকার করেছেন- দেশের পুঁজিবাজারে নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যাংক খাতের অবস্থাও নাজুক। জাতীয় সংসদে আলাদা দু’টি সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। তবে তিনি এ সময় আশ্বাস দিয়ে বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য আগামী বাজেটে প্রণোদনা থাকবে। আর ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানের কাজও শুরু হয়েছে। পুঁজিবাজার সম্পর্কিত সম্পূরক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেই, সেটাও বলব না। পুঁজিবাজারে যেসব সমস্যা আছে, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। একে একে সব সমস্যার সমাধান করে দেবো।

জানি না, কোন জাদুর কাঠির ছোঁয়ার নিয়ন্ত্রণহীন পুঁজিবাজারের সব সমস্যা একে একে সমাধান তিনি করে দেবেন। কারণ, বর্তমান সরকারের সুদীর্ঘ শাসনামলেই শেয়ার বাজারে সমস্যার পর সমস্যার পাহাড় জমলেও সমাধান মেলেনি। তবে সরকারের আশ্বাস জারি ছিল বরাবর। অপর দিকে অর্থমন্ত্রী যেদিন সংসদে এ কথা বলেন, সেদিনই একটি জাতীয় দৈনিকে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত খবরের শিরোনাম ছিল- ‘শেয়ারবাজারের পতন থামছেই না।’ জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া শেয়ারবাজারের সর্বশেষ দরপতন থেমে গেছে, তা বলার সময় এখনো আসেনি। টানা দরপতনের প্রতিবাদে রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন একদল বিনিয়োগকারী। তারা বলেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দরপতন ঠেকাতে ব্যর্থ। এর দুই দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ এপ্রিল একাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বলেছেন, শেয়ারবাজার নিয়ে কেউ কোনো ধরনের খেলা খেলতে চাইলে অবশ্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে একই সাথে এটিও বলব, শেয়ারবাজার অনেকটা জুয়া খেলার মতো, যারা শেয়ারবাজারে যাবে তাদের সেটা বিবেচনা করেই যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারকে জুয়ার সাথে তুলনা করে এই বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে অনেকটা হালকা করেই দিলেন বলে মনে হলো। বলা বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম শাসনামলে শেয়ারবাজার ধসে হাজার হাজার বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছিলেন। অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছিলেন।

এ দিকে গত ২৬ এপ্রিল দৈনিক সমকাল এবং ২৮ এপ্রিল প্রথম আলো আমাদের ব্যাংক খাত নিয়ে আলাদা আলাদা দু’টি দুঃসংবাদ ছাপে। সমকালে প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম ছিল- ‘রাজনৈতিক প্রভাবে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে ব্যাংক খাত’। আর প্রথম আলোতে প্রকাশিত সংবাদটির শিরোনাম ছিল- ‘অযাচিত হস্তক্ষেপে পিছিয়েছে ব্যাংক খাত’।
সমকালের প্রতিবেদন মতে, ব্যাংক মালিকেরা বিভিন্ন সময় সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। তারা কথা দিয়েছিলেন, ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনবেন। কিন্তু সুদের হার কমেনি। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে গত ৩১ মার্চ জাতীয় শিল্পমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ব্যাংক মালিকদের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন- সুদের হার কমালেন না কেন?

ব্যাংক মালিকেরা বেশ কিছু সুবিধা নিয়েছেন : ব্যাংক ব্যবসায়ে করপোরেট কর কমানো হয়েছে আড়াই শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেসরকারি ব্যাংকের নগদ জমার হার (সিআরআর) ১ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। টানা ৯ বছর ব্যাংকের পরিচালক থাকা এবং একই পরিবারের চারজনকে ব্যাংকের পর্ষদে থাকার সুযোগ দিয়ে সংশোধন করা হয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন। এমনকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সরকারি আমানত গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংক মালিকেরা এতটাই প্রভাবশালী যে, তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে তাদের ব্যাংকঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনেননি; বরং এখনো কোনো ব্যাংকের সুদের হার ১৬ শতাংশ পর্যন্ত রয়ে গেছে। একটি সূত্র মতে, বর্তমানে আমানতের সুদহার ৯-১১ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার ১৩-১৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। ঋণের এই উচ্চ সুদহার ব্যাংক খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এটি এ খাতের একটি বড় সমস্যা। ব্যাংক মালিকদের সংগঠন ‘ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ ব্যাংকঋণের সুদহার ৬-৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদহার ও খেলাপি ঋণের বিস্তারসহ নানা কারণে সুদহার কমছে না। সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর প্রশ্নও উঠেছে। এসব সমস্যার সমাধানসহ ব্যাংক খাত সংস্কারের আলোচনাও উঠে এসেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক খাতে রয়েছে সুশাসনের অভাব। বিষয়টি তীব্র রূপ নিয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বহু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সার্বিক অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যাংক ভালো না থাকলে অর্থনীতিও ভালো থাকে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, প্রভাবশালীরা ব্যাংক খাতের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে চাপিয়ে দেন। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, শুধু নির্দেশনা আকারে সেটি জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের সিআরআর কমানো, নতুন ব্যাংকের অনুমোদন, পরিচালক সংখ্যা বা মেয়াদ নির্ধারণ- সব ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত। এ ব্যাপারে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে আমরা বিভিন্ন সময় বহুবার উষ্মা প্রকাশ করতে দেখেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে অনুসরণ করতে হয়েছে ক্ষমতাশালীদের সিদ্ধান্তই।

সাধারণ মানুষ প্রায়ই গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছে, কোনো ধরনের বাছ-বিচার না করেই শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় একের পর এক নতুন ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ মহলের সমালোচনার মুখেও। গত ফেব্রুয়ারি মাসেও তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যদিও নতুন আর কোনো ব্যাংক অনুমোদন না দেয়ার ব্যাপারে বারবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি দেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে। এসব চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে অনুমোদন দেয়া ৯টি ব্যাংক বেশির ভাগ শর্ত পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট তথ্যাভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় এ খাতে এখন অসম প্রতিযোগিতা বাড়ছে। নতুন ব্যাংকগুলো ভালো গ্রাহক না পেয়ে অন্য ব্যাংক থেকে গ্রাহক ভাগিয়ে নিতে অনৈতিক চর্চা করছে। কোনো ব্যাংক অন্য ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিনে নিচ্ছে। নামীদামি গ্রুপের পেছনে ছুটছে বিভিন্ন ব্যাংক।

ব্যাংক খাতের দুরবস্থার চিত্র সম্প্রতি উঠে এসেছে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমালোচনামূলক আলোচনা সভায়ও। গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাংক খাত এক সময় বিশ্বমানের ছিল। এখন তা থেকে আমাদের ব্যাংক খাত পিছিয়ে গেছে। কেন গেছে, এর কারণও তিনি বলেছেন। সাবেক ব্যাংক কমিশনের এই চেয়ারম্যানের মতে, পিছিয়ে যাওয়ার কারণ তিনটি। পরিচালনা পর্ষদের অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণ, ঋণ পুনর্গঠনের শর্ত শিথিল করা এবং খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন। রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান তথা বিআইডিএসের ‘ক্রিটিক্যাল কনভারসেশন ২০১৯’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় অনেক বক্তাই ব্যাংক খাতের দুরবস্থার কথা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরেন।

প্রসঙ্গক্রমে, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে কিছু খাতে বিশ্বমান অর্জন করতে হবে। এর মধ্যে আর্থিক খাত অন্যতম। এ খাতে বিশ্বমান অর্জন না হলে বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ আরো ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। তিনি প্রশ্ন তোলেন- কত দিন পর কুঋণ বলব? ৬ মাস, ৯ মাস যা-ই হোক না কেন, ঋণের কত অংশ ফিরে আসতে পারে? নিরাপত্তার স্বার্থে কী পরিমাণ অর্থ সঞ্চিতি হিসেবে রাখা হবে? গবেষণা করে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। গবেষণা করে ঠিক করা না হলে মনে করব, ব্যবসায়ীদের চাপে করা হচ্ছে। তাহলে ব্যাংক খাত কখনোই বিশ্বমানের হতে পারবে না।

আমাদের অর্থনীতিতে কত টাকা যে কতভাবে গচ্চা দেয়া হয়, তার ইয়াত্তা নেই। অনেক ক্ষেত্রে হুজুগের মাথায় কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিচ্ছি বড় বড় পরিকল্পনা। কিন্তু মাঝপথে গিয়ে আমাদের তা বাতিল করতে হয় অনেক টাকা গচ্চা দেয়ার পর। এমন একটি উদাহরণ টেনে বলা যায়, গ্যাস নেই জেনেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় পাইপলাইন বসানোর দু’টি অবাস্তব প্রকল্পের কথা, যে দু’টি প্রকল্পের কাজ চলছে চার সরকারের আমলে। খুলনা, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় গ্যাস সরবরাহের জন্য গত চারটি সরকার ১২০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু ১৪ বছরেও সেসব জেলায় গ্যাস যায়নি। এখন গ্যাস সরবরাহের পুরো প্রকল্পই বাদ দেয়া হয়েছে; ১২০০ কোটি টাকা নিট গচ্চা। সরকার টাকাটা খরচ করেছে দু’টি বড় প্রকল্পের মাধ্যমে।

গত ২৯ এপ্রিলের একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় ছবি ছাপা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার আরপিএন শহীদ শাহজাহান কবির উচ্চবিদ্যালয়ে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। এ ধরনের খোলা আকাশের নিচে পাঠদানের ছবি প্রায়ই দৈনিক পত্রিকাগুলোতে ছাপা হতে দেখি। বেশির ভাগ প্রাইমারি স্কুলের বেলায় এ ধরনের ছবি ছাপা হয়। গতকাল আরেকটি জাতীয় দৈনিক জানিয়েছে- মাগুরার মহম্মদপুরে ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলো রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। ভবনের ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ছাদের কিছু স্থানে বের হয়ে আছে রড। এমনি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করছে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ের ছাদ ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে সবার। তা ছাড়া, প্রাইমারি স্কুলগুলোতে যে রয়েছে শিক্ষকের ব্যাপক অভাব, তার খবরও আমরা গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি। এটি আমাদের শিক্ষা খাতের দৈন্যদশারই পরিচায়ক। সমালোচকেরা বলেন, সরকার উন্নয়নের জারিজুরি গেয়ে অহরহ যেসব পোস্টার ছাপা হয়, সে পয়সাও যদি আমাদের শিক্ষা খাতে খরচ করত, তবে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হতো। খোলা আকাশের নিচে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হতো না।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
‘১ টাকার কাজ ১০০ টাকায়, ৯৯ যায় মুজিব কোটে’ রাত পোহাতেই রুদ্ধদ্বার অনুশীলন শুরু বাংলাদেশের সাটুরিয়ায় প্রশান্তির বৃষ্টি চেয়ে সালাতুল ইসতিসকা আদায় ইরান নিয়ে মার্কিন হুঁশিয়ারি পাকিস্তানকে গাজায় গণকবরের বিষয়ে ইসরাইলের কাছে ‘জবাব’ চেয়েছে হোয়াইট হাউস দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি ক্যাম্পাসগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন বাইডেন: মুখপাত্র নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ

সকল